শুরুটা সহজ ছিল না। আদিবাসী গ্রামের মহিলাদের
নিয়ে কৃষক দল তৈরি করা। জৈব পদ্ধতির অচেনা চাষে তাঁদের উৎসাহী করা। তবে রঘুনাথপুরের
সিজা গ্রামে শেষ পর্যন্ত সবই হয়েছে ভালয় ভালয়। আর তার অনেকটাই কিরিন হাঁসদার জন্য।
বছর পঁয়তাল্লিশের কিরিন কৃষি দফতরের থেকে
‘কৃষিরত্ন’পুরস্কার পেয়েছেন বুধবার, কৃষক দিবসে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় এই প্রথম কোনও মহিলা
চাষি কৃষিরত্ন পুরস্কার পেলেন বলে দাবি কৃষি দফতরের কর্তাদের। পুরস্কার পেয়ে অবশ্য
বিশেষ কোনও হেলদোল নেই কিরিনের। বৃহস্পতিবারই গ্রামের মহিলাদের নিয়ে দফতরের কর্তাদের
সঙ্গে গিয়েছেন বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকে। আধুনিক প্রযুক্তির চাষ শিখতে।
ছ’টি ব্লকের একটি করে আর্দশ গ্রাম তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে রঘুনাথপুর
মহকুমা প্রশাসন। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতের আদিবাসী প্রধান গ্রাম সিজা
রয়েছে তালিকায়। গ্রামের বাসিন্দা, বিশেষ করে মহিলাদের আর্থ-সমাজিক উন্নয়নের কাজ করছে
কৃষি দফতর। আত্মা প্রকল্পে গ্রামের চল্লিশ জন আদিবাসী মহিলাকে নিয়ে দু’টি কৃষক দল তৈরি করা
হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে উচ্চফলনশীল পেঁপে চাষ করেছেন তাঁরা। শীতকালে ফলিয়েছেন ফুলকপি,
বাঁধাকপি, টোম্যাটো। মাঝে মাশরুম, হলুদ আর টিস্যু কালচার করা কলা। এখন শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন
আনাজ চাষ। সঙ্গে ক্যাম্পবেল হাঁস পালন। লক্ষ্যের দিকে সব কিছু এগোচ্ছে ঝঞ্ঝাট ছাড়া।
আর এই কাজে কৃষি দফতর প্রথম পাশে পেয়েছিল কিরিনকে।
বছর দুয়েক আগের কথা। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা কৃষ্ণেন্দু হাইত জানান,
আর্দশ গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেই আত্মা প্রকল্পে কৃষক দল তৈরি করতে
সিজায় গিয়েছিলেন তাঁরা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বুঝিয়েছিলেন, কেন এটা জরুরি। কৃষ্ণেন্দুবাবু
বলেন, ‘‘কাজটা বিশেষ সহজ ছিল না। সেই সময়ে এগিয়ে এসেছিলেন কিরিন হাঁসদা। তিনি পুরো
বিষয়টি বুঝে অন্য মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।”
বছর পঁয়তাল্লিশের কিরিন প্রথাগত পড়াশোনার
সুযোগ বেশি পাননি। কিন্তু তার জন্য দুরদর্শীতায় কোনও খামতি হয়নি। প্রথমে কিরিনকে দলনেত্রী
করে কুড়িজন মহিলাকে নিয়ে ‘মাদার টেরেজা কৃষক দল’তৈরি হয়। পরে তাঁরই উদ্যোগে তৈরি হয়ে ‘জয় ভারত’নামের দ্বিতীয় দলটি।
গত দু’বছরে নিজেও সাফল্যের সঙ্গে চাষ করেছেন কিরিন। কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, হলুদ চাষের
কথা তাঁরা যখন ভাবছেন, তার আগেই নিজের জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে হলুদ চাষ করে ফেলেছিলেন
তিনি। সেই চাষ দেখে অন্য মহিলারাও এগিয়ে আসেন। তবে কিরিন অল্প কথার মানুষ। তিনি বলেন,
‘‘কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা গ্রামে এসে বুঝিয়েছিলেন। মনে হয়েছিল, দল গড়ে জৈব পদ্ধতিতে
চাষ করলে মহিলাদের উপকার হবে। সেটাই শুধু করেছি।”
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, শুভ্রপ্রকাশ
মণ্ডল, ১৭/০৩/২০১৮।
No comments:
Post a Comment