আরও অনেক মেয়ের মতোই তার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা
করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। হাজার বাধা টপকে সে পথে এগোলেও বাধ সেধেছিল বাবা মা। জোর
করে স্কুল ছাড়িয়ে শ্রমিকের কাজ করার জন্য তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল অন্য জেলায়। কিন্তু
সেখান থেকে ফিরে আবার স্কুলে নাম লেখানোয় তাঁদের রোষে পড়ে যায় মেয়েটি। মারধর করে সুলেখা
সোরেনকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁরা। স্কুলে গিয়ে সব জানানোর পরে এখন শিক্ষকদের পাশাপাশি
মালদহের হবিবপুরের মেয়ে সুলেখার পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও। থানায় অভিযোগ
দায়ের করা হয়েছে তার মা বাবার বিরুদ্ধে। প্রশাসনের উদ্যোগে আপাতত হোমে ঠাঁই হয়েছে সুলেখার।
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ চায় হোম নয়, স্কুলের হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করুক সুলেখা।
হবিবপুর ব্লকের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম পান্নাপুর।
ওই গ্রামেরই মেয়ে সুলেখা। তার বয়স যখন দু’বছর, তখন মারা যায় বাবা বরকা সোরেন। দিনমজুরি করে সুলেখাকে বড়
করেছেন মা মিরিতা হাঁসদা। ২০১৫ সালে কবিরাজ হেমব্রম নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন মিরিতা।
সেই সময় সুলেখা দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। অভিযোগ, এরপরেই
কবিরাজ ও মিরিতা সুলেখার লেখাপড়া বন্ধ করে তাকে শ্রমিকের কাজ করতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে
বর্ধমানে পাঠিয়ে দেন।
সম্প্রতি গ্রামে ফিরে এসেছে সুলেখা। আর স্কুলছুটদের
আবার পড়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে জানতে পেরেই বাড়ির অমতে ফের স্কুলে ভর্তি হয়ে যায় সে।
তাতেই বাধে বিপত্তি। স্কুলে ভর্তির খবর জানতে পেরে সুলেখাকে মারধর শুরু করে কবিরাজ।
ফের কাজে যাওয়ার জন্যেও চাপ দিতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকালে মারধর করে তাকে ঘর থেকে বার
করে দিয়ে কাজে চলে যান কবিরাজ ও স্ত্রী মিরিতা।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হইচই পড়ে যায় গ্রামে।
স্কুলে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি জানায় সুলেখা। খবর যায় ব্লক প্রশাসন স্তরে। এর
পরেই শুক্রবার থানায় সুলেখার বাবা মায়ের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার পরেই
হোমে পাঠানো হয় মেয়েটিকে।
সুলেখার বাবা-মায়ের কেন এ রকম করলেন তা জানতে
চাইলে মেয়েটির মামা মাইকেল সোরেন বলেন, “মেয়ে কাজ করলে দু’পয়সা রোজগার করতে পারবে।
তাই তাকে দিদি ও জামাইবাবু পড়া ছাড়িয়ে কাজে পাঠাতে চাইছে। তবে ও পড়তে চায়।”
দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক
জয়দেব লাহিড়ি বলেন, “আমরা চাই ওকে হোমের পরিবর্তে হোস্টেলে রেখে পড়াতে। মাধ্যমিক
পরীক্ষা মিটলে সুলেখাকে হোম থেকে হস্টেলে ফেরানোর চেষ্টা চালাব।”সুলেখার পাশে থাকার
আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও রেণুকা খাতুনও। তিনি বলেন, “মেয়েটিকে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করা
হবে।”পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা গ্রাম ছাড়া। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, অভিজিৎ সাহা,
১৯/০৩/২০১৮।
No comments:
Post a Comment