Saturday, March 31, 2018

ভারতীয় সংবিধান প্রণেতা ডাঃ বাবা সাহেব অম্বেডকরের মূর্তির মুণ্ডচ্ছেদ ।


সংবিধান প্রণেতা, দলিত নেতা ভীমরাও রামজি অম্বেডকরের মূর্তি ভাঙচুর করে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করল অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদের ঝাঁসি এলাকার ত্রিবেণীপুরমে, অম্বেডকর পার্কে।
পুলিশ জানাচ্ছে, অম্বেডকর পার্কে যেখানে প্রয়াত দলিত নেতা অম্বেডকরের মূর্তি বসানো ছিল, স্থানীয় বাসিন্দারা শনিবার সকালে দেখেন, তার থেকে কয়েক ফুট দূরে পড়ে রয়েছে মূর্তির মুণ্ডটি। মূর্তির বেদিও ভাঙচুর করা হয়েছে। এই নিয়ে শুধু এই মাসেই উত্তরপ্রদেশে অম্বেকরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল তৃতীয় বার। স্থানীয় বাসিন্দারাই খবর দেন পুলিশে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অম্বেডকর পার্কে পৌঁছে যান সমাজবাদী পার্টি (সপা) ও বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা)-র নেতারা। তাঁরা পার্কে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে। ফুলপুরের সাংসদ নগেন্দ্র সিংহ পটেলও পৌঁছে যান অম্বেডকর পার্কে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রান্স গঙ্গা) সুনীল কুমার সিংহ বলেছেন, ‘‘শুক্রবার রাতেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে অনুমান। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫ (এ) এবং ৪২৭ নম্বর ধারায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।’’
এই মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই তোপ দাগতে শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
বসপা-র ইলাহাবাদ জোনের সভাপতি আর কে গৌতম বলেছেন, ‘‘এই পার্কে এই নিয়ে চার বার ভাঙচুর করা হল অম্বেডকরের মূর্তি। তাই আমরা অনেক দিন ধরেই পার্কে পুলিশ চৌকি বসানোর দাবি জানিয়ে আসছিলাম প্রশাসনের কাছে।’’
ও দিকে, ফুলপুরের সাংসদ নগেন্দ্র সিংহ পটেল বলেছেন, ‘‘অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি পার্কে অম্বেডকরের বড় মূর্তি বসানোরও দাবি জানানো হয়েছে প্রশাসনের কাছে।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১/০৩/২০১৮।

দলিত মহাসম্মেলন ডাকছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।


মোদী জমানায় দলিতদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বেড়েছে বলে অভিযোগ ছিলই। তাকে হাতিয়ার করে, দলিত নেতাদের পাশে টেনে গুজরাতের ভোটে ফায়দাও পেয়েছে কংগ্রেস। এ বার লোকসভা ভোটের আগে দলিতদের পাশে পেতে দিল্লিতে দলিত মহাসম্মেলন ডাকছেন রাহুল গাঁধী। আগামী ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ রাজধানী দিল্লীর তালকাটোরা স্টেডিয়ামে কংগ্রেসের আয়োজনে ওই সম্মেলনে অন্যান্য দলের দলিত নেতাদেরও আহ্বান জানানো হবে।
রাহুলের এই পরিকল্পনায় অশনি সঙ্কেত দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ এই মুহূর্তে দলিত প্রশ্নে তাঁরা কিছুটা বেকায়দায়। মোদী সরকার কেন সুপ্রিম কোর্টে দলিত নির্যাতন বিরোধী আইন লঘু করার পক্ষে সায় দিয়েছে, তা নিয়ে বিরোধীরা আক্রমণ করছেন। রাহুল নিজে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করেছেন। গত কালই কর্নাটকে খোদ অমিত শাহকে এই প্রশ্নেই দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। কর্নাটকের বিজেপি নেতা অনন্তকুমার হেগড়ে দলিতদের ‘কুকুর’ বলে সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছিলেন। তার প্রতিবাদেই কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। অথচ দলিতদের ক্ষোভ মেটানোর জন্যই ওই সভা ডাকা হয়েছিল।
গত কালের পর অমিত শাহকে আজ ফের বলতে হয়েছে, হেগড়ের মন্তব্যের সঙ্গে দল একমত নয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবিধানে বদলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, হেগড়ের সঙ্গে একমত না হলে তিনি কেন্দ্রে মন্ত্রী কেন!
দলিতদের কাছে টানতে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকার অম্বেডকরের নাম ভীমরাও রামজি হিসেবে লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আজই আবার ইলাহাবাদে অম্বেডকরের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। দলিতদের প্রতি বিজেপির নীতি নিয়ে অখিলেশ যাদব এবং মায়াবতী একসুরে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। মায়ার যুক্তি, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থে বাবাসাহেবের পরিচিতি বদলে না দিয়ে বিজেপি বরঞ্চ দলিত বিরোধী মামলাগুলিতে দোষীদের শাস্তি দিক।’’ এই ক্ষোভ কাজে লাগিয়েই সবাইকে একজোট করতে চাইছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ০১/০৪/২০১৮।

Thursday, March 29, 2018

SC/ST POA Act, 1989 নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিতর্ক কেন ?


তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন, ১৯৮৯ (SC/ST Prevention of Attrocity Act, 1989) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিতর্ক কেন ?

তফসিলি জাতি ও তফসিলি জনজাতি সম্পর্কিত একটি আইন লইয়া সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়টি কিন্তু একেবারেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নহে। জাতিগত বৈষম্য বা নির্যাতন আটকাইবার জন্য আইনটি তৈরি হইয়াছিল ১৯৮৯ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর উৎসাহে। আইনটির উদ্দেশ্য ছিল, সামাজিক বৈষম্য কমানো। গত তিন দশকে, আরও অনেক আইনের মতোই, এই আইনেরও অনেক অপব্যবহার ঘটিয়াছে, এবং সেই অপব্যবহারের সুযোগে আইনটির একটি উচ্চবর্ণীয় বিরোধিতা তৈরি হইয়াছে। বলা হইতেছে, এই আইন এখন নিম্নবর্ণের হাতেই একটি জাতভিত্তিক অস্ত্র বা উচ্চবর্ণকে ‘মজা বুঝাইবারপ্রকরণ মাত্র। এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্টের নিদান, অপব্যবহার আটকানো ও ব্যক্তি অধিকার বিনাশ আটকানোর জন্য আইনটির মধ্যে অতঃপর এমন রক্ষাকবচ রাখিতে হইবে, যাহাতে শাস্তিদানের পথ সহজ না হয়। সুতরাং সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত, সরকারি কর্মী অভিযুক্ত হইলে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার করা যাইবে না, এবং গ্রেফতারের অন্তত সাত দিন আগে পুলিশি তদন্ত হইতে হইবে। সংগত ভাবেই, রায়টির বিরুদ্ধে এখন তীব্র সমালোচনাআইনের মধ্যে এই ধরনের ‘রক্ষাকবচআমদানি করিলে আইনটিই অর্থহীন হইয়া পড়ে, নিম্নবর্ণের মানুষের পক্ষে সামাজিক প্রতিরোধ এড়াইয়া কোনও অভিযোগ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি কিংবা সাত দিন সময়, ইত্যাদির সুযোগে উচ্চবর্ণ-নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ‘অপরাধঢাকিবার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা হইবে, এবং সামাজিক ক্ষমতাহীন গোষ্ঠীর পক্ষে সুবিচারের আশা দূর হইতে দূরতর হইবে ভয় ইহাই।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সমাজে বহু জরুরি আইনেরই অপব্যবহার ঘটিয়া থাকে। বিশেষত দুর্বল শ্রেণি বা গোষ্ঠীর সুরক্ষার আইনের ক্ষেত্রে এমন কাণ্ড হামেশাই দেখা যায়, যেমন শিশু নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’, বা ভারতীয় দণ্ডবিধির বধূ নির্যাতন বিরোধী ৪৯৮-এ ধারা। কিন্তু সমস্যার নিরাময়ার্থে যদি আইনটিকেই বানচাল করিবার ব্যবস্থা হয়, তাহা দুর্ভাগ্যের কথা। বরং আইনের অপব্যবহার কী ভাবে আটকানো যায়, সে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা প্রাথমিক সূত্রটি ঠিকই দিয়াছিলেন, নিরপরাধ ব্যক্তি উচ্চবর্ণ হইলেও তাঁহার অধিকারের দলনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হইবে। কিন্তু ইহাও কি মানিতে হইবে না যে, প্রতিকারের সময় দুই তরফের অধিকারের কথাই মাথায় রাখা উচিত? বিশেষত যে সমাজে ক্ষমতার ভারসাম্য স্পষ্টতই এক দিকে হেলিয়া আছে, সেখানে বিচার বিশেষ ভাবে সংবেদনশীল হওয়া দরকার? হয়তো একটি সাধারণ রক্ষাকবচের বদলে ক্ষেত্রভিত্তিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থাই অধিক কার্যকর হইত। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী তাঁহার সমালোচনায় এই কথাটির উপরেই জোর দিয়াছেন।
রাহুল গাঁধীরা এখন সরকারি অবস্থানের বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানাইতেছেন, যেহেতু মামলাটি আদালতে আসিয়াছে সরকারি কর্মীর তরফে। এই আইনের পরিবর্তন নিম্নবর্ণের স্বার্থবিরোধী, এই মর্মে শুরু হইয়াছে জোরদার সরকারবিরোধী প্রচার। যেহেতু রাজীব গাঁধী স্বয়ং আইনটির কর্ণধার ছিলেন, কংগ্রেসের পক্ষে দলিত-আদিবাসী স্বার্থসুরক্ষার কথা বলিয়া রাজনৈতিক পয়েন্ট তোলা সহজ হইয়া গিয়াছে। এবং বিপরীতে, বিজেপি পড়িয়াছে মোক্ষম প্যাঁচে। এক দিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাইয়া আইন সংশোধন করিলে দলিত ভোট আরও হাতছাড়া হইবার সম্ভাবনা। অন্য দিকে আইন পরিবর্তন না করিলে উচ্চবর্ণ হিন্দুদের ক্রোধের লক্ষ্য হইবার ভয়। এক ও একক হিন্দু ভারত গড়িবার পথে যে দলিত কাঁটাটিই কঠিনতম প্রতিরোধ, আবারও বিজেপি টের পাইতেছে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩/০৩/২০১৮।

SC/ST POA Act, 1989 নিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আর্জির পথে কেন্দ্র।



তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন, ১৯৮৯ (SC/ST Prevention of Attrocity Act, 1989) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আর্জির পথে কেন্দ্র।

ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের দলিত আইন সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। কী ভাবে শীর্ষ আদালতে ওই আর্জি জানানো হবে তা খতিয়ে দেখতে আইন মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় মন্ত্রক। কিন্তু সরকারের একটি অংশ এখনও মনে করে যে, এ নিয়ে শীর্ষ আদালত যা রায় দিয়েছে তা সঠিক। যুক্তি হিসেবে সংসদে তিন বছরের (২০১৪-১৬) তথ্য তুলে ধরে মোদী সরকার দেখিয়েছে, কী ভাবে ওই আইনের অপপ্রয়োগ হওয়ায় সাধারণ মানুষকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের এক শীর্ষ কর্তার মতে, দল ও বিরোধীদের চাপে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইনের অপব্যবহার করে এক শ্রেণির মানুষ যে ফায়দা নিচ্ছে তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।
তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিগ্রহ রুখতে ১৯৮৯ সালে আইন তৈরি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী। ওই আইনের অপপ্রয়োগের অভিযোগ জানিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব ছিলেন উচ্চবর্ণের মানুষ। গত কাল রাজ্যসভায় ঠাকুর নেতা অমর সিংহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে জানতে চান, সাম্প্রতিক সময়ে ওই আইনের ধারায় অভিযোগ দায়ের হওয়া কতগুলি মামলা শেষ পর্যন্ত ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়েছে? যার জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহির সংসদকে জানান, গোটা দেশে তফসিলি জাতির ক্ষেত্রে গড়ে ১৫ শতাংশ অভিযোগ ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্য দিকে তফসিলি জনজাতির ক্ষেত্রে প্রায় ১৭ শতাংশ অভিযোগ সঠিক নয়।
বেশ কিছু দিন ধরেই পণপ্রথা বিরোধী আইনের মতো এতেও কিছু রক্ষাকবচের দাবিতে সরব ছিলেন বিজেপির উচ্চবর্ণের নেতাদের একাংশ। যে যুক্তি মেনে নেয় সরকারও। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা উঠলে তাই সরকার রক্ষাকবচের পক্ষে সওয়াল করে। সুপ্রিম কোর্টও রায়ে জানায়, মামলা দায়েরের আগে প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে। আগাম জামিনের প্রশ্নেও সায় দেয় আদালত। ওই রায় আসতেই তা দলিত বিরোধী বলে বিরোধী শিবির প্রচার শুরু করায় অস্বস্তিতে পড়ে যান নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা।
ওই সিদ্ধান্তে দলিত সমাজের কাছে ভুল বার্তা গিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষোভ জানিয়েছেন শাসক ও শরিক দলের দলিত নেতারাও। পুনর্বিবেচনার দাবিতে গত কালই প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন শরিক দলের নেতা রামবিলাস পাসোয়ান ও রামদাস অটওয়ালেরা। আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেই আজ সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয় আইন মন্ত্রককে। দুই মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কী ভাবে পুনর্বিবেচনার আর্জি করা হবে তা দুই মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা বসে ঠিক করবেন।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩০/০৩/২০১৮।

উত্তরপ্রদেশে যোগীরাজ্যে ‘রামজি’ হলেন ডাঃ বাবা সাহেব অম্বেডকরও।


রাম-রাজ্যে রেহাই নেই বাবাসাহেবেরও! ভীমরাও অম্বেডকর নামের মধ্যে শেষে ‘রামজি’ জুড়ল উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার। উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আর এক ‘রাম’ — রাম নাইকের সুপারিশে। সব সরকারি কাজে এ বার থেকে পরিবর্তিত নামই ব্যবহার হবে। বিজেপি’র এক নেতা তো বলেই দিলেন, ‘‘বাবাসাহেব হিন্দু ধর্ম ছেড়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ‘রামজি’ জুড়ে ফের হিন্দু হলেন তিনি। এটি তাঁর ঘর-ওয়াপসি।’’
‘রামজি’ অম্বেডকরের বাবার নাম। উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপালের মতে, মরাঠিতে বাবার নাম নিজের নামে যুক্ত করাই রেওয়াজ। উত্তর ভারতে এতদিন অম্বেডকরের ভুল নাম প্রচার হত। আর এই নিয়েই তুলকালাম রাজনীতিতে। বসপা নেত্রী মায়াবতী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাবাসাহেবের অনুগামীদের উপরে অত্যাচার করা হচ্ছে। অথচ সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এই নামবদল করা হল।’’ বিরোধীরা তো বটেই, বিজেপির সাংসদদেরও অসন্তোষ, বাবাসাহেবের নাম বদলের দরকারটা কী? ঘরোয়া মহলে বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘দরকার’ অনেক। মায়াবতীর দলের রাজ্যসভার প্রার্থী ‘ভীমরাও অম্বেডকর’কে সদ্য হারিয়ে দিয়েছে বিজেপি। বিরোধীরা প্রচার করছে, নরেন্দ্র মোদী ‘দলিত-বিরোধী’। সুপ্রিম কোর্টে দলিত আইন লঘু হওয়ার পর বিরোধীদের একজোট করে পথে নেমেছেন রাহুল গাঁধী। আর গোরক্ষপুর, ফুলপুর উপনির্বাচনের ফল দেখিয়েছে, বিজেপি থেকে দূরে সরছে দলিতরা। ফলে বাবাসাহেবের সঙ্গে তাঁর বাবার নাম জুড়ে ‘দলিত-রাম-অম্বেডকর’—এক ঢিলে তিন ক্ষেত্রে ফায়দা তুলতে চাইল বিজেপি। ১৪ এপ্রিল অম্বেডকরের জন্মদিনেও তেড়েফুঁড়ে আসরে নামছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশেই দলিতদের মন টানতে সকলকে হিন্দু-ছাতার তলায় আসার ডাক দিয়েছিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। সেই সূত্র ধরেই ‘দলিত আইকন’-এর নামে হিন্দুত্বের ছোঁয়া লাগাল বিজেপি। তবে সরকারের যুক্তি, সংবিধানেও বাবাসাহেব সই করেছিলেন ‘ভীমরাও রামজি অম্বেডকর’ বলে। ১৯৭৩ সালে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছিল এই নামে। ইংরেজিতে ‘বি আর অম্বেডকর’-এ ‘আর’ শব্দটি তাঁর বাবার নাম— রামজি।
মায়াবতীর পাশাপাশি সমাজবাদী পার্টির একাধিক নেতা আজ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সপা-বসপা জোটে ভয় পেয়েই বিজেপি নতুন ফন্দি আঁটছে। এতেও তাদের ব্যর্থতা ঘুচবে না।’’ কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার মতে, ‘‘মোদী দলিত-আদিবাসীদের অবজ্ঞা করার ফল পাচ্ছেন ভোটে। তাই দিশাহারা হয়ে প্রতীকী বদল করছেন।’’
দলিতদের সম্পর্কে সরকারি মনোভাবে এমনিতেই ক্ষুব্ধ বিজেপির নেতারা। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ সাবিত্রী ফুলে কার্যত বিদ্রোহী হয়ে এপ্রিলের গোড়ায় বিক্ষোভ-কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন। বিজেপির দলিত সাংসদ উদিত রাজও বলেন, ‘‘অহেতুক বিতর্ক বাধিয়ে নাম বদলের কী দরকার ছিল? দলিতদের মধ্যে এই নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩০/০৩/২০১৮।

Wednesday, March 28, 2018

SC/ST Prevention of Atrocities Act, 1989।


প্রতিবেদনে – শরদিন্দু উদ্দীপন (Saradindu Uddipan)

ভারতীয়  সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা হয়েছেঃ
“ WE, THE PEOPLE OF INDIA, having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST SECULAR DEMOCRATIC REPUBLIC and to secure to all its citizens:
JUSTICE, social, economic and political;
LIBERTY, of thought, expression, belief, faith and worship;
EQUALITY of status and of opportunity;
and to promote among them all
FRATERNITY assuring the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation;
IN OUR CONSTITUENT ASSEMBLY this twenty-sixth day of November, 1949, DO HEREBY ADOPT, ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS CONSTITUTION.

ভারতের সংবিধানে সমস্ত মানুষকে সমান মর্যাদা দানের কথা উল্লেখ করলেও সমাজ ব্যবস্থায় রয়ে গেছে জাতপাতের বিভেদ তথাকথিত স্বাধীনতার ৭১ বছর পেরিয়ে এসেও ভারতের জাতিগত বৈষম্যের প্রভাব এতটুকুও কমেনি এখনো এদেশের ভদ্রলোক নাগরিকেরা বঞ্চিত মানুষদের পশুর থেকেও খারাপ নজরে দেখে এই মানসিকতা আরো প্রকট হয়ে দেখা দেয় জাতপাতের  প্রশ্নে এই জাতপাতের ধারনা ভারতের নাগরিক সমাজের মধ্যে এত প্রবল যে মানব জাতি এখানে ৬,৭৪৮ টি জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে (Anthropological Survey of India, Oxford University Press, 1998) এবং এই বিভাজনের পরতে পরতে রয়েছে দুর্ভেদ্য বিভেদ ও ঘৃণার বেড়াজাল এই বিভেদ আবার ধর্মীয় রসায়নে জারিত হয়ে ভারতের মানুষের মজ্জায় মজ্জায় গিয়ে একটি স্থায়ী রূপ ধারন করেছে এবং জন্মান্তরের সাথে প্রথিত হয়ে গেছে
বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকর ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে জাতপাত বিলুপ্তির জন্য নানা অবকাশ রাখলেও মানুষের মন থেকে জাতের বৈষম্য ঘোচে নি মেটানো যায় নি অস্পৃশ্যতার গ্লানি ভারত সরকারকে তাই Untouchability (Offences) Act, 1955 প্রয়োগ করে জাতপাত এবং অস্পৃশ্যতার ঘৃণাকে নিয়ন্ত্রিত করতে হয় ১৯৫৫ সালে এই আইন নিপীড়িত নিষ্পেষিত মানুষগুলিকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে যুক্ত করে এই আইনকে Protection of Civil Rights Act, 1955 এ রূপান্তরিত করা হয়
ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে এবং জাতপাত ধ্বংস করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেভারতের প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে সমান বর্ণ, ধর্ম জাত, জাতি, জন্মস্থান, লিঙ্গ বৈষম্য বা ভেদাভেদ সংবিধানে নিষেধ করা হয়েছে অনুচ্ছেদ ১৭তে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে অস্পৃশ্যতা তবুও তথাকথিত উচ্চবর্ণের দ্বারা এসসি/এসটি (SC/ST) মানুষেরা চরম ভাবে নির্যাতিত হয়েছে উচ্চবর্ণের মানুষেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত মিলিটারী বাহিনী তৈরি করে সংগঠিত ভাবে জল-জঙ্গল-জমির উপর দখলদারী করেছে এসসি /এসটিদের (SC/ST) ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছে নির্বিচারে কেড়ে নিয়েছে তাঁদের ভিটে মাটি নারীদের ইজ্জৎ লুটেছে, ল্যাংটো করে ঘোরানো হয়েছে এবং খুন করে গাছে টাঙ্গিয়ে দিয়েছে নরনারীর লাশ রাস্তা কেটে, পানীয় জল বন্ধ করে এমনকি হাটবাজার বন্ধ করে চলেছে সামাজিক বয়কট এই ধরণের পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন ফুলন দেবী যাকে রাজপুত বা ঠাকুর সমাজের গুন্ডা বাহিনী ধর্ষণ করে উলঙ্গ ভাবে সমগ্র গ্রাম ঘুরিয়েছিল তাঁদের অত্যাচারে ফুলন গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন এবং প্রতিশোধ নেবার জন্য গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী
এসসি/এসটিদের (SC/ST) উপর যে নির্মম অত্যাচার চলত তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করে সাইমন কমিশন ১৯২৮ সালের ২৯শে মে বাবা সাহেব আম্বেদকর বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভার পক্ষ থেকে এসসি এবং এসটিদের উপর সংগঠিত নানা অত্যাচারের ঘটনাকে উল্লেখ করে  সাইমন কমিশনকে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন
ব্রিটিশের কাছ থেকে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে সারা ভারত জুড়ে এই অত্যাচার আরো বেড়ে যায় ইমানুয়েল শেখরণ নামে তামিলনাডুর একজন শিক্ষিত দলিত নেতা অস্পৃশ্যতা সম্পর্কিত কেসগুলি নিয়ে হাইকোর্টে লড়াই শুরু করলে তাকে হত্যা করা হয় এই হত্যার প্রতিবাদে ১৯৫৭ সালে তামিলনাডুর রামানাথপুরমে শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা ১৯৬৮ সালে তামিলনাডুর কিলাভেনমানিতে গণহত্যার শিকার হয় ৪২জন দলিত ১৯৬৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের কাঞ্চিকাচেরলার দলিত নেতা কোটেসুকে হত্যা করা হয় ১৯৭৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের ইন্দ্রভেলিতে জমি নিয়ে বিবাদের ফলে ১০ জন আদিবাসীকে হত্যা করে ব্রাহ্মন্যবাদিরা ১৯৭৯ সালে বিহারের বেলচি এবং ১৯৮০ সালে পিপরাতে গণহত্যার শিকার হয় এসসিরা ওই বছরে উত্তর প্রদেশের এক দলিত ঘোড়ার পিঠে চড়ে বরযাত্রী নিয়ে যাবার অপরাধে খুন হয়ে যায় ১৯৮৫ সালে বিহারের শিবগঞ্জ জেলার বানঝিতে পুলিশের গুলিতে মারা যায় ১৫জন আদিবাসী
এই সব অত্যাচার এবং হত্যার প্রতিবাদে দলিত নেতা এবং এমপিরা কংগ্রেস সরকারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেন ১৯৮৭ সালের ১৫ই আগস্টের ভাষণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এসসি/এসটিদের (SC/ST) উপর নির্যাতন এবং নিপীড়ন বন্ধ করার জন্যে একটি কঠোর আইন তৈরি করবেন বলে ঘোষণা করেন (Wikipedia, Scheduled Caste and Scheduled Tribe (Prevention of Atrocities) Act, 1989)

এসসি এবং এসটিদের উপর নিপীড়ন নিয়ন্ত্রণ আইন, No. 33 OF 1989 [11th September, 1989]
আইনটির মধ্যে ৫টি অধ্যায় এবং ২৩টি ধারা রয়েছে আইনটিতে ভারতীয় সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে অস্পৃশ্যতা, অত্যাচার, জাতের নামে অপমান এবং ঘৃণা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে অধ্যাদেশ রয়েছে তার অধীনে এসসি/এসটিদের (SC/ST) আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে
এই আইনটি ভারতের সমস্ত এসসি এবং এসটিদের উপর নিপীড়ন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতীয় সংসদ দ্বারা ১১ই সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ সালে পাশ করা হয়েছে এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি সই করে সরকারী গেজেটে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে ১৯৯০ সালের ৩০শে জানুয়ারী থেকে এই আইন সমগ্র দেশে কার্যকরী করা হয়
এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যেঃ
/() আইনটিকে Scheduled Castes and the Scheduled Tribes (Prevention of Atrocities) Act, 1989 হিসেবে গণ্য করা হবে
() এই আইন জম্মু-কাশ্মীর ছাড়া ভারতের সকল রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের জন্য কার্যকরী হবে
() কেন্দ্রীয় সরকারের গেজেটে বিবৃতি দিয়ে এই আইন বলবত করা হবে
/() এই আইনে নিপীড়নের সংজ্ঞাকে সেকশন ৩ ধারার অধীনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে
/দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে নৃশংসতা জনিত অসন্তোষ এবং তার শাস্তি বিধান
এখাণে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি সে যদি এসসি বা এসটি সমাজের কেউ না হয়, তবে সে যদি
() দলিত সমাজের কোন ব্যক্তিকে অখাদ্য খেতে বাধ্য করে
() আঘাত করে, জাতপাত তুলে ব্যঙ্গ করে, বাডির পাশে নোংরা আবর্জনা, বিষ্ঠা বা হানিকারক কোন পদার্থ জমা করে,
() জোর করে কাপড় খুলে নেয়, বিবস্ত্র করে লোকালয়ে ঘোরাতে বাধ্য করে, মুখে চুনকালি লাগায় বা কোন ধরণের অমানবিক আচরণ করে যা অমর্যাদাকর
() অন্যায় ভাবে চাষের জমি, ঘরবাড়ি, তার আওতায় থাকা কোন সম্পত্তি দখল করে নেয়,
() এসসি এবং এসটির দখলে থাকা কোন জঙ্গল, জলাভূমি, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়,
() দলিত সমাজের কোন সরকারী চাকরীজীবীকে যদি জোর করে ভিখারী, কৃতদাস বানানোর চেষ্টা করা হয়,
() দলিত সমাজের কারুর বিরুদ্ধে যদি মিথ্যে বিদ্বেষপূর্ণ, হয়রানীকর   প্রাতিষ্ঠানিক ষড়যন্ত্র করা হয়,
() দলিত সমাজের চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে যদি কোন মিথ্যে অসার গুজব রটানো হয় যা ওই ব্যক্তির আইনি অধিকারকে ক্ষুন্ন করে,
() দলিত সমাজের কোন নারীকে আঘাত করা, তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা বা তাকে যৌন নির্যাতন করা, তার সম্মানহানী করা,
(১০) দলিত সমাজ যেখান থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে তা নোংরা করা, বন্ধ করে দেওয়া,
(১১) দলিত সমাজের মানুষকে ঘর, বাড়ি, জমি জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে তাকে বিতাড়িত করা এই সবই চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ

বিশেষ আদালতঃ
দ্রুত শুনানি এবং বিচারের জন্য এই আইনে একটি বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে রুল ১৩()এ বলা হয়েছে যে বিচারক এই কেসগুলিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিবেচনা করে এই কেসের দ্রুত রায় দেবেন এই সমস্ত অপরাধগুলিকেই Non-Bailable (জামিন অযোগ্য) ধারায় নিতে হবে এই আইনে ন্যুনতম ৬ মাস প্রয়োজনে ৫ বছরের জেলের বিধান দেওয়া হয়েছে হত্যা এবং সম্পদ লুন্ঠনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে

তদন্ত ব্যবস্থাঃ
রুল ৭() অনুযায়ী SC/ST Atrocities Act, 1989 এর তদন্ত একজন ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি) এর নিচে কোন অফিসারকে দিয়ে করা যাবে না

ক্ষতিপূরণঃ
দাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ বা নির্যাতনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসসি/এসটি (SC/ST) সমাজের মানুষেরা দারুন ভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাঁদের পুনর্বাসন এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এই আইনে রাজ্য সরকারকে যথোপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

সদিচ্ছার অভাবঃ
SC/ST Atrocities Act, 1989 এর মধ্যে দলিত মানুষদের সমস্ত সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকারগুলির এই আইন প্রয়োগ করার ব্যাপারে সদিচ্ছার অভাব এবং অনীহা রয়েছে সমস্ত রাজ্যে নামমাত্র বিশেষ আদালত গঠন করলেও সাধারণ মানুষ এই আইন সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ রয়ে গেছে সরকারী প্রচার মাধ্যমেও এই আইন সম্পর্কে দলিত মানুষদের সচেতনতা বাড়ানোর কোন ব্যবস্থা করা হয় নি দলিত মানুষ এই আদালতের সুযোগ কিছু নিলেও ৮০% কেস বকেয়া হয়ে পড়ে আছে একটি ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই বিশেষ আদালতের জন্য ৭৭,০০০ দলিত মানুষের জন্য একজন আইপিএস অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে

দেশে দলিতদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অত্যাচার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেশে এতবড় একটি রক্ষা কবচ থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট অন্য কথা বলছে
২০১১ এর সরকারী পরিসংখ্যান  বলছে-
ক) অপরাধের ক্ষেত্রে দলিত হওয়ার কারণে,
) প্রতি ১৮ মিনিটে একজন দলিত হেনস্থার শিকার হয়
) প্রতি দিন ৩ জন দলিত নারী ধর্ষিতা হয়
) প্রতি দিন ২  জন দলিতকে হত্যা করা হয়
) প্রতি দিন ২ টি দলিত বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়
) প্রতি দিন কম বেশী একজন দলিতকে অপহরণ করা হয় [সপ্তাহে ৬ টি]

গ্রামের অবস্থা আরো খারাপঃ
) গ্রাম্য এলাকায় প্রতি ৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত পক্ষে একটি বিদ্যালয়ে দলিতদের জন্য আলাদা করে বসার ব্যবস্থা থাকে
) ২৭.৬ শতাংশ গ্রামের দলিতদের থানায় ঢুকতে দেওয়া হয় না
) ৩টি দলিত বাড়ির মধ্যে অন্তত ১টি বাড়িতে স্বাস্থ্য কর্মীরা যেতে অস্বীকার করেন
) অন্তত অর্ধেক গ্রামে একই জায়গা থেকে দলিতদের জল নিতে দেওয়া হয় না
) ৭০ শতাংশ গ্রামে দলিতদের সাথে উঁচু জাতের মানুষেরা এক সাথে খেতে অস্বীকার করেন

দলিত মেয়েদের উপরে নির্যাতনঃ
) প্রতিদিন ৩ জন দলিত মেয়ে ধর্ষিতা হয়
) গ্রামের অন্তত ৭০ শতাংশ দলিত মেয়ে নিরক্ষর
) হাজারে হাজারে দলিত মেয়ে তাঁদের বয়ঃসন্ধি হওয়ার আগেই পতিতালয়ে পাচার হয়ে যায় এবং দেশের পতিতালয়ের অন্তত ৯০ শতাংশই দলিত
) দেশে যত ধর্ষণ হয় তাঁর সিংহ ভাগই দলিত মহিলা বেশিরভাগই তাঁদের ভূ-স্বামী অর্থাৎ যাদের জমিতে খেটে খায় তাঁদের দ্বারাই ধর্ষিতা হয় আর এই ধর্ষণের মাত্র ৫ শতাংশ থানায় রিপোর্ট হয়! যার ভেতরে ৩০ শতাংশ রিপোর্ট পুলিশ মানতে অস্বীকার করে কারণ উঁচু জাতের সামাজিক প্রতিপত্তির কথা ভেবে [তথ্য সুত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নিউজ ন্যাশন্যাল জিওগ্রাফিক এ আশঙ্কাও করেছে যে অনেকেই সংখ্যার এই পরিসংখ্যান মানতে চাইবেন না, কারণ এতটাই ভয়ংকর পরিসংখ্যান!(“No one believes these numbers are anywhere close to the reality of crimes committed against Dalits. Because the police, village councils, and government officials often support the caste system…”)]

দলিতদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থাঃ
) দেশে দলিত সম্প্রদায়, মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকেও দরিদ্র! ২০১১ সালের পরিসংখ্যানে এমনটাই বলছে সরকারের রিপোর্ট গ্রামের ৪৪.৮ শতাংশ ST এবং ৩৩.৮ শতাংশ SC দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে; যেখানে মুসলিমদের শতাংশ হল ৩০.৮ শতাংশ শহরে ST ২৭.৩ এবং SC ২১.৮ শতাংশ দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে যেখানে মুসলিম ২৬.৫ শতাংশ [সুত্রঃ DNA INDIA]
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কর্ণাটকে, সেখানে ৯৩ শতাংশ দলিত পরিবার দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে!!! [সুত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ২০১৩]
) প্রায় অর্ধেকের বেশী(৫৪%) দলিত শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে
) ১০০০ এর ভেতর ৮৩ জন দলিত শিশু জন্মের একবছরের মধ্যে মারা যায়

এতো সব কিছুর পরেও যারা দাবী করেন যে, এখন তো অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে তাঁদের জন্য গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দিইঃ
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (NCRB) –র তথ্য অনুযায়ীঃ
) ২০০৯= হত্যা-৬২৪; ধর্ষণ-,৩৪৬; মোট অপরাধ-৩৩,৫৯৪
) ২০১০= হত্যা-৫৭০ ; ধর্ষণ-,৩১৯ ; মোট অপরাধ-৩২,৭১২
) ২০১১= হত্যা-৬৭৩ ; ধর্ষণ-,৫৫৭ ; মোট অপরাধ-৩৩,৭১৯
) ২০১২= হত্যা-৬৫১ ; ধর্ষণ-,৫৭৬ ; মোট অপরাধ-৩৩,৬৫৫
) ২০১৩= হত্যা-৬৭৬ ; ধর্ষণ-,০৭৩ ; মোট অপরাধ-৩৯,৪০৮
) ২০১৪= হত্যা- ; ধর্ষণ-,২৩৩ ; মোট অপরাধ-৪৭,০৬৪

সম্প্রতি ঘটনা এবং দলিত আইনের প্রয়োগঃ
SC/ST Atrocities Act, 1989 এর আওতায় যে ২০% কেস হয় তার যে কি দশা হয় তা রোহিত ভেমুলার প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার কেস থেকে প্রমানিত এই কেসের অন্যতম আসামী ছিলেন তৎকালীন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী, বাঙ্গারু দত্তাত্রেয় এবং হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আপ্পা রাও সরকার প্রথমেই এই কেসকে দুর্বল করে দেবার জন্য রোহিত ভেমুলার জাতি সূচক শংসাপত্রকে জাল প্রমান করার চেষ্টা শুরু করে তদন্তের পর ম্যাজিস্ট্রেট এই শংসাপত্রকে সঠিক বললেও পরে তা আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয় ঝুলে থাকে রোহিতের কেস
উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে দলিত ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করে রানা প্রতাপের জন্মদিন পালন করে রাজপুত সমাজ এতে ৭০ জনেরো বেশী রাজপুতদের উপরে এই দলিত আইন অনুসারে কেস করা হয় এই কেসের পরে পুলিশ আসামীদের ছেড়ে দিলেও ভীম আর্মির চন্দ্রশেখর আজাদ সহ একাধিক দলিতের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুসারে কেস করে এবং বিজেপির যোগী সরকার অত্যাচারী রাজপুতদের বিরুদ্ধে সমস্ত কেস তুলে নেয়
২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারী ছিল ভীমা কোরেগাঁওয়ের শৌর্য দিবসের ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান এই অনুষ্ঠানকে বানচাল করে দেবার জন্য একেবারে অতর্কিতে সন্ত্রাসবাদী কায়দায়  আক্রমণ করে "ব্রাহ্মণ সভা" তারা আগুন জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং নিরীহ, নিরস্ত্র নারীপুরুষের উপরে লাঠি, রড, পাথর চালিয়ে রক্তাক্ত করে দেয় এই ঘটনায় প্রতক্ষ্য সংযোগ থাকার জন্য মিলিন্দ একবোটে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির গুরুজী সাম্বাজী ভীড়ের বিরুদ্ধে SC/ST (Prevention of Atrocities) Act, 1989  অনুসারে কেস হয় এই কেসে মিলন্দ একবোটে এরেস্ট হলেও এখনো সাম্বাজী ভিড়েকে এরেস্ট করা হয় নি

রক্ষা কবচ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রঃ
ঠিক এই সময় SLP (Crl.) No. 5661 of 2017, Subhash Kashinath Mahajan v. State of Maharashtra. Vide its order dated 20.11.2017, একটি ৮৯ পাতার নির্দেশিকা জারি করে SC/ST (Prevention of Atrocities) Act, 1989 কে দুর্বল এবং কার্যত অকেজো করে দেওয়া হল
সুত্র :-