পুরুলিয়া জেলার সাঁতুড়িতে
আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে উদ্যোগী তৃণমূল কংগ্রেস।
পুরুলিয়া জেলার সাঁতুড়ি
ব্লকে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল। নির্বাচনকে সামনে রেখে
ব্লকের প্রতিটি আদিবাসী অধ্যুষিত বুথে ১০জন করে আদিবাসী নেতাকে বিশেষ নির্বাচনী দায়িত্ব
দেওয়া হয়েছে। ওই আদিবাসী নেতারাই বুথ স্তরে দেওয়াল লিখন, পোস্টারিং থেকে প্রচারের
কাজ করছেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ব্লকের আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ককে ধরে রাখতে পারলে তৃণমূলের
জয় নিশ্চিত। তাই আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে তৃণমূল জোর তৎপরতা শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, সাঁতুড়ি ব্লকের
১০৪টি গ্রামের মধ্যে ৭২টি গ্রাম আদিবাসী অধ্যুষিত। ফলে এখানে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক একটা
বড় ফ্যাক্টর। আদিবাসীদের ভোট যে দিকে যায় সেই দলই জয়লাভ করে বলে দাবি রাজনৈতিক দলগুলির।
এক সময় আদিবাসী ভোটের উপর ভর করে সিপিএম এখানে রাজত্ব করেছিল। পরিবর্তনের হাওয়ায় আদিবাসীদের
সেই ভোট তৃণমূলের দিকে যাওয়ায় ২০১৪ সালের লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে ব্লকে ব্যাপক
লিড পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সেই ভোটব্যাঙ্কে
থাবা বসায় বিজেপি।
ব্লকের সমীক্ষানুসারে
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসীদের ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকে
যায়। তবে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, নেতাদের
আত্ম অহংকার, ঠিকাদারির দালালি ও নেতাদের চালচলনের জন্যই হারের মুখ দেখতে হয়েছিল। তবে
নির্বাচনের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন সেই সব নেতাকে দল থেকে বের করে দিয়েছে,
তেমনই যারা সক্রিয় ও পার্টির হয়ে কাজ করে তাদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে
তৃণমূল জেলা পরিষদের আসনটি দখল করলেও ১৩ আসন বিশিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল ৬টি,
বিজেপি ৬টি ও সিপিএম ১টি আসন দখল করে। পরবর্তীকালে ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতে সমিতির বিজেপি
ও সিপিএমের একজন করে জয়ী সদস্য উন্নয়নের তাগিদে তৃণমূলে যোগদান করায় সমিতি তৃণমূলের
দখলে আসে। তবে ৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল মাত্র ২টি পঞ্চায়েতের দখল পায়। আদিবাসী
অধ্যুষিত সাঁতুড়ি, টাঁড়াবাড়ি, গড়শিকা ও রামচন্দ্রপুর-কোটালডি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে
তৃণমূল। তাই ওই চারটি পঞ্চায়েতে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য তৃণমূল বিশেষ উদ্যোগ
নিয়েছে।
এবিষয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন
জেলা পরিষদ সদস্য তথা আদিবাসী নেতা বড়কারাম টুডু বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ব্লক
স্তরের কিছু নেতার অহংকার, আদিবাসীদের বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ায় হারের মুখ দেখতে হয়েছিল।
অন্যদিকে, সিপিএম একাধিক জায়গায় তাদের প্রার্থী দেয়নি, তাই বুথ স্তরের ভোটে আমরা পরাজিত
হয়েছিলাম। কিন্তু, জেলা পরিষদে সব দল প্রার্থী দেওয়ায় তৃণমূল ব্যাপক ভোটে জয়ী হয়।
আর এর থেকেই প্রমাণ হয় মানুষ কিছু নেতাকে জবাব দিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।
কিন্তু, জেলা পরিষদের পরিসংখ্যান বলছে, মানুষ এখনও তৃণমূলের সঙ্গে আছে।
ব্লকের আদিবাসী নেতা তথা
সংগঠক প্রথম মুর্মু বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসীরা বিজেপিকে ভোট দিয়ে বুঝতে পেরেছে,
বিজেপি কী চায়? আজ ১০শতাংশ জেনারেল সংরক্ষণ করার চক্রান্ত হচ্ছে। আদিবাসীরা তাদের জল,
জমি, বাসস্থান নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। আদিবাসীদের হয়ে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই
করে চলেছে। তাই লোকসভা নির্বাচনে আদিবাসীরা তৃণমূলকেই ভোট দেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
উন্নয়ন ও আগামী দিনের কর্মসূচির বিষয়ে জানানোর জন্য বুথ প্রতি ১০জনকে দায়িত্ব দেওয়া
হয়েছে।
কাশীকুড়ি ও কেন্দথোল
বুথের দায়িত্বে থাকা ছতর কিস্কু, সহদেব হাঁসদা, অর্জুন বাস্কে, মনিলাল হাঁসদা বলেন,
দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেই দায়িত্ব মতো কাজ করে চলেছি। দেওয়াল লিখনের কাজ শেষ হয়ে
গিয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে প্রচার চালানো হচ্ছে। এবিষয়ে বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন,
আদিবাসীদের সক্রিয়তা ও তাদের প্রবল চেষ্টা তৃণমূলকে ব্লক এলাকায় ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য
করছে। তাই তাদের উপর জেলার নেতাদের বিশেষ নজর রয়েছে।
এবিষয়ে বিজেপির ব্লক সভাপতি
অরূপ আচার্য কটাক্ষ করে বলেন, আদিবাসীরা তৃণমূলের আসল চেহারা ধরে ফেলেছে। ওরা আদিবাসীদের
উন্নয়নের নামে নিজেদের উন্নয়নে করছে। তাই আদিবাসীরা তৃণমূলকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
সৌজন্য
– বর্তমান পত্রিকা, সজল মণ্ডল, ১৭/০৪/২০১৯।
No comments:
Post a Comment