Thursday, April 25, 2019

বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেস দলে যোগ দিলেন দলিত নেতা উদিত রাজ।

উত্তর-পশ্চিম দিল্লি থেকে টিকিট না পাওয়ার পর চব্বিশ ঘণ্টাও কাটল না, দলিত নেতা উদিত রাজ দলবদল করে বিজেপি থেকে কংগ্রেসে চলে গেলেন৷ প্রথমে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করলেন, তারপর দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের উপস্থিতিতে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিলেন৷
উদিত রাজকে সঙ্গে পেয়ে কংগ্রেসের কতটা সুবিধা হল এই প্রশ্নে শীলা দীক্ষিত বলেন এই দলিত নেতাকে কুড়ি বছর ধরে চেনেন৷ তাঁর দাবি, ‘এ বার অনেক আসন যা আগে জিততে পারতাম না, সেগুলি জিতব৷ উদিত রাজের জন্যই জিতব।’ কোন আসন তা অবশ্য তিনি খুলে বলেননি৷ তবে উত্তর পশ্চিম দিল্লি হল দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসন৷ সেখানে তিনি একটা প্রভাব ফেলতে পারেন৷ এ ছাড়া পূর্ব ও উত্তর পূর্ব দিল্লিতে দলিতরা ভালো সংখ্যায় রয়েছে৷ সেখানেও উদিত রাজকে দিয়ে প্রচার করাবে কংগ্রেস৷ উত্তর পূর্ব দিল্লিতে লড়ছেন শীলা দীক্ষিত৷ লাগাতার পনেরো বছরের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর প্রচুর ভরসা কংগ্রেসের৷ ফলে তাঁরও কিছুটা লাভ হতে পারে উদিত রাজ প্রচার করলে৷
উদিত রাজ প্রচারটা অবশ্য এ দিন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন৷ বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে প্রচার৷ তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি দলিতদের ঘৃণা করে৷ আমি সেটা অনুভব করেছি৷ সমঝদার দলিত জীবনে বিজেপি-কে একটা ভোটও দেবে না৷’ এরপরই বিজেপির প্রাক্তন সাংসদের স্বীকারোক্তি, ‘মিথ্যা কথা বলব না৷ বিজেপি টিকিট দিলে লড়তাম৷ বিজেপি কতটা দলিত-বিরোধী তা প্রমাণ হয়ে গেল৷ আমাকে কেউ সেরা সাংসদ ও কেউ দ্বিতীয় সেরা সাংসদের খেতাব দিয়েছে৷ বিজেপিতে প্রচার, সকলে সেখানে ন্যায় পায়৷ বিজেপির চারটি অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বলেছিল, আমি এক নম্বরে৷ ২০১৮-তে দলিতরা ভারত বন্‌ধ করে, আমি সমর্থন করি৷ আমি মূক-বধির ছিলান মা৷ মূক-বধির হলে প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন৷ কথা বললেই মুশকিল৷’
এরপরই উদিত রাজের বিস্ফোরক দাবি, ২০১৪-র ২০ মে রামনাথ কোবিন্দের বায়োডেটা নিয়ে তাঁর কাছে আসেন বিবেক সোনকর৷ তিনি বলেন, ভাইসাব কিছু করুন৷ উনি লড়তে চেয়েছিলেন৷ সেটা হয়নি৷ কিন্তু তিনি চুপ করে থাকার পুরস্কার পেয়েছেন (অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি হয়েছেন)৷ চুপ করে থাকলে তাঁকেও কখনও না কখনও বিজেপি প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিতে পারত বলে তাঁর বিশ্বাস৷ তিনিও দশ-পনেরো বার দলের স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে গিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, ‘স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়ায় বলা হয়েছিল, দলিতদের বিশেষভাবে ঋণ দেওয়া হবে ব্যাঙ্ক থেকে যাতে তাঁরা অন্যদেরও চাকরি দিতে পারেন৷ মোট ঋণপ্রাপকদের মধ্যে দলিতদের সংখ্যা মাত্র ৬ শতাংশ৷ রাজীব গান্ধী স্কলারশিপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ এসসি-এসটি সব প্ল্যান সরকার বন্ধ করে দিয়েছে৷ ৪৯০ কোটির দলিত হাব হবে বলা হয়েছিল৷ শুধু ৭২ কোটি টাকা প্রচারে লাগানো হয়েছে৷ বাকিটা পড়ে আছে৷ মুদ্রা ব্যাঙ্কে বড় ব্যবসায়ীরা, দলিত ড্রাইভার, পিওনরা ঋণ পেয়েছেন৷ নতুন নিয়োগ করা ৩৮ জন ভাইস চ্যান্সেলারের মধ্যে একজনও দলিত নেই৷ একজন দলিত সচিব নেই৷’ কংগ্রেসের আমলে কখনও এমন হত না বলে তাঁর দাবি৷
এই সুযোগে উদিতকে সামনে রেখে কংগ্রেসও প্রচার শুরু করে দিয়েছে যে, দলিতদের বিরুদ্ধে মোদী সরকার সমানে অন্যায় করে চলেছে৷ উদিত রাজ তাঁর শেষতম উদাহরণ৷ কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, ‘যাঁরা দলিতদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রার্থী করা হয়নি৷ সেই তালিকায় আছেন সাবিত্রী ফুলে, ছোটে লাল, অশোক কুমার দোহরে ও উদিত রাজ৷’ এর মধ্যে সাবিত্রী ফুলে আগেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন এবং উত্তরপ্রদেশে ভোটেও লড়ছেন৷ উদিত রাজ এ বার কংগ্রেসে যোগ দিলেন৷
সৌজন্য – এইসময়, ২৪/০৪/২০১৯।

No comments:

Post a Comment