আদিবাসীদের
ভোট পেতে “জাহের থান” এর পাট্টা প্রদানকে টোপ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করল
বিরোধীরা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
পবিত্র
“জাহের থান” এ বহু বছর ধরে আদিবাসীরা পুজো করে এলেও সেই জায়গা আদিবাসীদের হাতে ছিল
না। এই ধর্মীয়স্থান ‘জাহের থান’-এর অধিকার দিতে বছর চারেক আগে আদিবাসীদের
জমি পাট্টা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার। লোকসভা
ভোটের মুখে পূর্ব বর্ধমানের আদিবাসী এলাকায় সেই ‘জাহের থান’
নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘ফাঁকা আশ্বাস’
দেওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। একই ক্ষোভ একাধিক আদিবাসী
সংগঠনেরও। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানেনি।
পূর্ব
বর্ধমান জেলায় মোট ভোটার ৩৮,৮০,৯০১ জন। এর মধ্যে
১৪.২৭ শতাংশ আদিবাসী ভোটার। তাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন আউশগ্রাম, জামালপুর, মেমারি ১-২, ভাতার ও
কালনায়। জেলা পরিষদের দাবি, ‘কমিউনিটি পাট্টা’র মাধ্যমে আদিবাসীদের ২৪৬টি জায়গা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নানা আদিবাসী
সংগঠনের অভিযোগ, সেই জায়গাগুলির মধ্যে ‘জাহের থান’-এর নামে সরকারি ভাবে জেলায় জায়গা মিলেছে
মাত্র পাঁচটি। আর বিরোধীদের দাবি, আদিবাসী ভোটের স্বার্থে ‘জাহের থান’-কে ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে শাসকদল। যদিও জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা
তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলছেন, ‘‘অভিযোগ ঠিক নয়। জেলায়
৬৫-৭০টি জায়গায় ‘জাহের থান’-এর কাজ
চলছে।’’
জেলায়
আদিবাসী ভোটের উপরে নজর রয়েছে সব দলেরই। বিরোধীদের দাবি, এই
সব অঞ্চলে আদিবাসীদের একটি বড় অংশ তৃণমূলের সঙ্গে নেই। গত কয়েক বছরে নানা ‘সুবিধা’ পাওয়ার জন্য যাঁরা শাসকদলের দিকে ঝুঁকেছিলেন,
তাঁরাও সরে এসেছেন। তৃণমূলের সরকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যে দাবি
করে, আদিবাসী এলাকায় তা আদৌ হয়নি। বরং, আদিবাসীদের একটা বড় অংশ নিজেদের ‘বঞ্চিত’ বলে মনে করেন। সেটা বুঝেই তৃণমূল ভোটের স্বার্থে ‘জাহের
থান’ নিয়ে রাজনীতি করছে বলে তাদের অভিযোগ।
সিপিএমের
জেলা কমিটির সদস্য সুরেন হেমব্রমের দাবি, ‘‘আদিবাসী সমাজ কাজ চায়।
খাদ্য চায়। জাহের থান নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোড়ন নেই। কিন্তু ভোটের মুখে জাহের থানকে
ব্যবহার করতে চাইছে তৃণমূল।’’ দলের আর এক নেতা রবিন টুডুর
দাবি, “জাহের থানের জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় জমি পাট্টা না দিয়েই
তৃণমূল বড়-বড় কথা বলছে। আদিবাসীদের কী ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তা ভোট-প্রচারে আনছি।’’ বিজেপি নেতাদেরও দাবি,
আদিবাসীদের ‘জাহের থান’-এর
জমি পাট্টা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কার্যত গোটা ব্যাপারটিই ঝুলিয়ে রেখে
ভোটের আশায় রয়েছে তৃণমূল।
আদিবাসীদের
একটি সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান জেলার নেতা, পেশায় শিক্ষক জগন্নাথ টুডু
দাবি করেন, ‘‘রাজ্যে ৩২৩টি জায়গায় জাহের থানের নামে সরকারি
পাট্টা দেওয়া হয়েছে। আমাদের জেলায় আউশগ্রামে দু’টি এবং ভাতার,
বর্ধমান ২ ও মেমারি ২ ব্লকে একটি করে, মোট
পাঁচ জায়গায় তা তৈরি হয়েছে। সংখ্যাটা বাড়লে ভাল।’’
বিরোধীদের
দাবি, আদিবাসীরা যে তাঁদের উপরে ‘ক্ষুব্ধ’, সে কথা বুঝে ভোটের আগে আদিবাসী এলাকায় গিয়ে আড্ডায় বসে ‘মন ভোলানোর’ চেষ্টা করছেন শাসকদলের নেতারা। দেবুবাবু
অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সমাজের জন্য কী করেছেন,
ওই সব আড্ডায় সে কথা বলা হচ্ছে। জাহের থান পাকাপাকি ভাবে আদিবাসীদের
হাতে তুলে দেওয়ার ভাবনাও মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি ছাড়া আমাদের সমাজের জন্য আগে কেউ কি
ভেবেছিলেন?” ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর রাজ্য নেতা উপেল মাড্ডি শুধু বলেন, “আদিবাসীদের
ধর্মীয়স্থান নিয়ে রাজনীতি হওয়া উচিত নয়।’’
সৌজন্য –
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৭/০৪/২০১৯। (ছবি - প্রতীকী)
No comments:
Post a Comment