Sunday, April 28, 2019

অস্তিত্ব রক্ষায় পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে দানা বাঁধছে নয়া আন্দোলন।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওদের ভোট নিয়ে কিচ্ছু যায় আসে না। তাই ওরা মরল কি বাঁচলো জানার দরকার নেই। ওরা পুরুলিয়ার আদিবাসী। জাপানি সংস্থা জিকা’-র পাম্পড স্টোরেজ প্রোজেক্টের জেরে যাদের আগামী দিন ভয়ঙ্কর হতে চলেছে বলে দাবি অযোদিয়া বুরু বাঁচাও আন্দোলন সংহতি মঞ্চপ্রকৃতি বাঁচাও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ
আদিবাসীরা নারাজ তাদের ভূমিছাড়তে কিন্তু কোথাও যেন এই আন্দোলন একটা সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের মতো ভোট ব্যাংকের জন্য কোনও বড় ইস্যু হয়ে উঠবে না বলে মনে করছে আন্দোলনকারীরা। তাই রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি বা কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে না। তাছাড়া তাঁরা এও জানাচ্ছেন, ‘জিকা’-র পাম্পড স্টোরেজ প্রোজেক্টটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প। প্রকল্প হলে সুবিধা পাবে রাজ্য সরকার, কারণ সঙ্গে রয়েছে ট্যুরিজম। লাভের অংশ থাকবে কেন্দ্রেরও। তাই আদিবাসীদের পেটের ভাত গেলেও এখানে কোনও দলেরই কিছু যায় আসবে না বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। এরই বিরুদ্ধে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে দুই সংস্থা। তাদের প্রশ্ন কেন্দ্র, রাজ্য দুই পক্ষই আদিবাসীদের নিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। এক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুতির কোনও পাত্তাই নেই।
আযোদিয়া বুরু বাঁচাও আন্দোলন সংহতি মঞ্চে’-র পক্ষে সৌরভ প্রকৃতিবাদী বলেন, “পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে ঠুড়্গা নদীর ওপর প্রকল্পিত ঠুড়গা পাম্পড স্টোরেজ প্রোজেক্ট ঘিরে অযোধ্যাবাসীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। জাপানি সংস্থা জিকা’-র সহযোগিতায় প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পকে স্থানীয় মানুষজনের অধিকাংশ চাইছেন না। কারণ এর আগে বামনি নদীর ওপর এমনই একটি প্রকল্প যেভাবে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির নামে তাদের জীবন-জীবিকায় তথা সংলগ্ন প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল তার পুনরাবৃত্তি চাইছে না তারা।একইসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রকল্পের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে এই প্রকল্প করা হচ্ছে বলে সরকারপক্ষের দাবী। তবে যেটা দেখা যাচ্ছে আসলে এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্যকারিতা যথেষ্টই কম। ফলতঃ সার্বিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের নীতি তথা বিদ্যুৎ-উন্নয়নের নীতি নিয়ে।
অতীতে বামনি ফলসের উপর প্রজেক্টে আদিবাসীদের কোনও লাভ হয়নি বলে জানাচ্ছে আয়োদিয়া বুরু বাঁচাও আন্দোলন সংহতি মঞ্চ। আদিবাসীদের পক্ষে তাদের দাবি, ‘সেই সময় বলা হয়েছিল কর্মসংস্থান হবে, মানুষ বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পাবে। আদতে তার উল্টো হয়েছে। অধিকাংশের বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেই, কারণ তাদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি। বিদ্যুতের বিল দিতে তারা সক্ষম নয় তাই অন্ধকারেই থেকে গিয়েছেন আদিবাসীরা।পাশাপাশি এও জানা যাচ্ছে যে, বামনি ফলসের প্রকল্পে যারা কাজ পেয়েছিলেন তারা সবাই ঠিকা শ্রমিক ছিলেন। প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পর তাদের কারও কাজ নেই। যারা এখন কাজ করছেন তারা কেউই পুরুলিয়ার পাহাড়বাসী নয়। আশঙ্কা, এবারের নতুন প্রজেক্টে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি কারণ এই প্রকল্প শুধুমাত্র একটি বিকল্প প্রজেক্ট। বিকল্প প্রজেক্টের জন্য প্রচুর কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা কম। ফলে আদিবাসীরা চাইছেন না আরও একবার ঠকতে। চাইছেন না আন্দোলনরিরাও। সৌরভ প্রকৃতিবাদী বলেন, “সবমিলিয়ে ওদের জনসংখ্যা হাজার পাঁচেক। লোকসভার মতো বিশাল নির্বাচনের ভোট ব্যাঙ্কের নিরিখে এই পরিমাণ জনগণের ভোট কিছুই প্রভাব ফেলতে পারবে না তাই ওদের দিকে কেউ তাকিয়েও দেখবে না।
এদিকে, সরকারপক্ষের দাবি ছিল, ঠুড়্গা প্রকল্পের ২৯৪ হেক্টর বনভূমিতে মাত্র ৬৬০০ গাছ (৩০০০ বড় এবং ৩৬০০ ছোটো ও মাঝারি) কাটা যাবে, অথচ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উপায়ে গণনার মাধ্যমে দেখা গিয়েছিল প্রায় তিন লক্ষ বড় গাছ কাটা যেতে পারে। শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত বান্দু ও কাঁঠালজোল প্রকল্প হলে ওই এলাকায় আরও নয় লক্ষ অর্থাৎ ঠুড়্গা, বান্দু আর কাঁঠালজোল মিলিয়ে প্রায় বারো লক্ষ গাছ কাটা পড়তে পারে। এর জেরে বিপুল সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে স্থানীয় হাতির দলসহ অয্যোধ্যার বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণ। নষ্ট হতে পারে আদিবাসী সমাজের সাংস্কৃতিক মিলনস্থল ঐতিহ্যশালী সুতানটান্ডি।
এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনকারী স্থানীয় মানুষজন হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছিল। আদালত ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে এই প্রকল্পের ওপর প্রথম স্থগিতাদেশ দেয়। তারপর স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও সার্ভে করার নামে গাছ কাটা শুরু করার অভিযোগ উঠেছিল। মানুষের প্রতিরোধের সামনে পড়ে তা ফের আটকে যায়। সম্প্রতি আদালত সরকারপক্ষকে ভুল প্রক্রিয়ায় কার্যসমাধার জন্য ভর্ৎসনা করেছে। ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে প্রকল্প বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু প্রকৃতিপ্রেমী ও আদিবাসীরা।
সৌজন্য – কলকাতা ২৪*৭, সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৬/০৪/২০১৯।

No comments:

Post a Comment