আদিবাসী
সংগঠন “ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল” থেকে ৫ বছরের জন্য সাসপেন্ড হলেন রবীন টুডু ও
যজ্ঞেশ্বর হেমরম।
ঝাড়গ্রাম
লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বীরবাহা সোরেন টুডুর স্বামী রবিন টুডুকে
এবং জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী যজ্ঞেশ্বর হেমরমকে আগামী ৫ বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হল
আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাৎ মাঝি পারগানা মহল’ থেকে। রবিন টুডু ‘ভারত
জাকাৎ মাঝি পারগানা মহলের’ ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর
জেলার জেলা পারগানা ছিলেন। যজ্ঞেশ্বর হেমব্রম ওই সংগঠনের ঝাড়গ্রাম তল্লাটের
পারানিক ছিলেন। ‘ভারত জাকাৎ মাঝি পারগানা মহল’ এর ‘পনৎ পারগানা’ অর্থাৎ
রাজ্য সভাপতি বাদল কিস্কু বলেন, ‘আমাদের সামাজিক সংগঠনের
সংবিধানেই রয়েছে যে সংগঠনের দায়িত্বে থেকে কেউ সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে
পারবেন না। ওঁরা সংগঠনের দায়িত্ব ছেড়ে রাজনীতি করুন। তাতে আমাদের কোন অসুবিধা
নেই। কারণ ভোট তো কাউকে না কাউকে দিতেই হয়। তাই আমরা ওই দু’জনকে
ই-মেল করে সংগঠনের পদ থেকে সাসপেন্ডের কথা জানিয়েছি।’ বাদল
বাবু এও বলেন, ‘‘সামাজিক সংগঠনের পদে থেকেও রাজনীতি করার
জন্য রবিন টুডু ও যজ্ঞেশ্বর হেমব্রমকে সামাজিক পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু আমাদের সমাজের অনুশাসন অনুযায়ী সামাজিক পদে
থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিধান নেই। তাই রাজ্যস্তরের বিষয়ে সর্বসম্মত ভাবে
এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ভোট যে যাকে ইচ্ছে দেবেন। এ বিষয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য
নেই।’’
যদিও রবিন
টুডু জানিয়েছেন,
এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই। কংগ্রেস প্রার্থী যজ্ঞেশ্বর
হেমব্রম বলেন, ‘প্রার্থী হওয়ার পর আমি নিজেই সামাজিক সংগঠনের
দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতে চেয়ে আবেদন করেছিলাম। তাই সাসপেন্ডের কোনও প্রশ্নই
আসে না।’
ভারত জাকাত
মাঝি পারগানা মহলের সর্বভারতীয় সুপ্রিমো ‘দিশম পারগানা’ অবশ্য আগেও রবীন টুডুর পক্ষ নিয়েছিলেন এখনও পক্ষ নিয়েছেন। নিত্যানন্দ
হেমব্রম বাবু বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে আলোচনা না করেই এই
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংগঠনের সর্বভারতীয় স্তরে আলোচনা
করা উচিত ছিল। বিষয়টি দেখছি।’’
রবিন টুডুর
স্ত্রী বীরবাহা সরেন টুডু তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই আদিবাসীদের
সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’ - এর নেতারা বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেন। সংগঠনের নেতারা রবিন টুডুর
বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। শেষ পর্যন্ত গত ৭ এপ্রিল তাঁদের পদত্যাগ
করার জন্য রাজ্য বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আদিবাসী সাঁওতাল
সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে
চলেছে ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। সেই পারগানা মহলের ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম
মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সামাজিক নেতা ‘জেলা
পারগানা’ রবিনের স্ত্রী বিরবাহা তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার
পরেই সংগঠনের অন্দরে চরম বিভাজন দেখা দেয়। রবিনের পক্ষ নেন নিত্যানন্দ। সংগঠনের
রাজ্য নেতৃত্ব সাফ জানিয়ে দেন, বিরবাহা সরেন রাজনৈতিক দলের
প্রার্থী হলে রবিনকে সংগঠনের সামাজিক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। গত ৭ এপ্রিল
বর্ধমানে রাজ্য নেতৃত্বের এক বৈঠকে বিভিন্ন জেলার পারগানা বাবা-রা একযোগে
সিদ্ধান্ত নেন, যে রবিনকে ইস্তফা দিতে হবে। সাতদিনের মধ্যে
তিনি ইস্তফা না দিলে তাঁকে পদ থেকে সরানো হবে। সামাজিক সংগঠনের পদে থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের
সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যজ্ঞেশ্বর হেমরম। জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি তিনি। কিন্তু
এ বিষয়টি জানত না সামাজিক সংগঠন। তাই যজ্ঞেশ্বর হেমরমকেও সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেয়
সংগঠন।
সৌজন্য –
আনন্দবাজার পত্রিকা ও এইসময়, ১৮/০৪/২০১৯।
No comments:
Post a Comment