ঝাড়খণ্ডী
ঐক্য দৃঢ় হোক। আদিবাসী দের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং জল-জঙ্গল-জমিন রক্ষার
স্বার্থে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) ও
ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির জোট প্রার্থী বীরবাহা হাঁসদা কে সমর্থন করল ঝাড়খণ্ড
মুক্তি মোর্চা । উপস্থিত ছিলেন জেএমএম (JMM) রাজ্য সভাপতি পরেশ
মারান্ডী, রাজ্য সম্পাদক বিটু মুর্মু, পুরুলিয়া
লোকসভা ঝামুমো প্রার্থী দিপেন্দু মাহাত এবং ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) সুপ্রিমো
চুনীবালা হাঁসদা, ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্র ঝাড়খণ্ড পার্টি
(নরেন) ও ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির জোট প্রার্থী বীরবাহা হাঁসদা ।
Monday, April 29, 2019
জলের জন্য আদিবাসী মহিলাদের কুয়োর দেওয়াল বেয়ে দড়ি ধরে ওঠা-নামা করতে হয়।
স্বাধীনতার
এত বছর পরেও মহারাষ্ট্রের গ্রামে জলের জন্য আদিবাসী মহিলাদের কুয়োর দেওয়াল বেয়ে
দড়ি ধরে ওঠা-নামা করতে হয়।
জলের জন্য
কুয়োর দেওয়াল বেয়ে দড়ি ধরে আদিবাসী মেয়েদের ওঠা-নামা করতে হয় দেশ স্বাধীনতার এত
বছর পরেও। মহারাষ্ট্রের নাশিক থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরের বরডে-চি-ওয়াড়ি গ্রামের
মহিলাদের কাছে এ হল বেঁচে থাকার লড়াই। প্রয়োজনীয় জলটুকু জোটাতে এই আদিবাসী
গ্রামের মহিলারা দড়ি বেয়ে রোজ নেমে যান কুয়োর অতলে। জল নিয়ে আবার উঠে আসেন। দেখে
লজ্জা পাবে সরীসৃপও।
এমনটাই গত
দেড়-দু’দশক ধরে চলে আসছে ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের অদূরে আদিবাসী-অধ্যুষিত এই
এলাকাগুলিতে। ভোটের মুখে নেতারাও আরও এক বার জলকষ্ট ঘোচানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
শুধু বরডে-চি-ওয়াড়ি নয়, নাশিক তালুকের অন্তত ১১০টি গ্রাম
ফি-বছর জলের সমস্যায় ভুগে থাকে। অথচ নাশিকের কাছেই ইগতপুরীতে রয়েছে বৈতরণা জলাধার।
এলাকার বাড়তি বৃষ্টিপাতের জল ধরে রেখে মুম্বইয়ে জোগান দেয় এই জলাধার। কিন্তু
প্রদীপের নীচের অন্ধকারের মতো ওই জলাধারেরই দশ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা
গ্রামগুলি ভোগে তীব্র জলসঙ্কটে। একাধিক বার ওই জলাধার থেকে পাইপে করে গ্রামগুলিতে
জল পৌঁছনোর পরিকল্পনা করা হলেও সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এখনও জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন জমি থেকে তিন-চারতলা বাড়ির সমান নীচে নামতে হয়
বিভা-কুসুমদের।
কার্যত
পাতাল-প্রবেশ। বিশাল হাঁ-করা কুয়োয় জল একেবারে তলানিতে। বালতি ঝুলিয়েও নাগাল পাওয়া
মুশকিল। তাই কুয়োর ভিতরের দেওয়ালের গা-বেয়ে নামানো আছে দড়ি। সেই দড়িকে দু’হাতে
আর পায়ের দু’আঙুলের ফাঁকে চেপে ধরে সরসর করে নেমে যান
বিভারা। শাড়ি পরেও দিব্যি ভারসাম্য রেখে ট্রাপিজ খেলোয়াড়দের মতো ওঠা-নামা করেন,
কোনও সমস্যা হয় না। এক-এক বারে ৪-৫ লিটার জল তুলে ফেলতে পারলেই
দিনের মতো নিশ্চিন্ত। নীচে পাওয়া জল বালতিতে ভরে দড়িতে হাল্কা টান দেন কুসুম।
উপরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে নীতা তখন টেনে নেন সেই বালতি।
আর হ্যাঁ, প্রাণ
হাতে নিয়ে শুধু মেয়েদেরই এ ভাবে জল তুলতে দেখা যায় কুয়ো থেকে। গ্রামের পুরুষেরা
নাকি ভয় পান দড়ি ধরে ওঠানামা করতে!
বিষয়টি নিয়ে
অনেক দিন ধরেই সরব ভগবান মেধার মতো একাধিক সমাজকর্মী। তাঁদের মতে, মুম্বই
যে এলাকার জলে বেঁচে রয়েছে, সেখানকার জন্যই কোনও জল নেই —
এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হতে পারে না। দীর্ঘদিনের সমস্যা, অথচ কারও এতে নজর নেই। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও রাজ্য স্তরে একাধিক বার দরবার
করেছে স্থানীয় শ্রমজীবী সংগঠন। তার জেরে তীব্র গরমের সময়ে অন্তত ট্যাঙ্কার আসা
শুরু হয়েছে কিছু এলাকায়।
এরই মধ্যে
শুরু হয়েছে লোকসভা ভোট। নাশিক কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে জল সমস্যার পাকাপাকি সমাধান করার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এনসিপি প্রার্থী সমীর ভুজবল। গত পাঁচ বছরে রাজ্য ও কেন্দ্রে
বিজেপি সরকার থাকা সত্ত্বেও জলের সমস্যা না-মেটায় শিবসেনার বিদায়ী সাংসদ হেমন্ত
গডসের উপরে তাঁরা ভরসা হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নাশিকের মতো লাগোয়া
দিন্দৌরি কেন্দ্রের সমস্যাও একই। সেখানেও জলাভাব তীব্র।
সমস্যা
মেটাতে ছোট ছোট জলাধার বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী জে পি গাভিট।
বিশেষজ্ঞদের মতে,
ওই এলাকায় চাষের জন্য মাটির তলা থেকে পরিকল্পনাহীন ভাবে জল তুলে
নেওয়া চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। ফলে জলস্তর ক্রমশ নেমে গিয়েছে। দ্রুত ওই জলস্তর ‘রিচার্জ’ না-করলে এর পরে জল পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে
পড়বে। স্থানীয় সিপিএম নেতা সুনীল মালসারের মতে, এলাকায়
বৃষ্টিপাত ভালই হয়। কিন্তু সেই জল গোদাবরী দিয়ে বয়ে যায় আরব সাগরে। তাই ছোট ছোট
জলাধার করে বাড়তি বৃষ্টির জল ধরে রাখতে হবে। তাতে এক দিকে জল মাটির নীচে পৌঁছবে।
অন্য দিকে, প্রয়োজনে জলাধারের জল নিজেদের প্রয়োজনে কাজে
লাগাতে পারবেন গ্রামবাসীরা। সুনীলের দাবি, বিষয়টি
সময়সাপেক্ষ। কিন্তু সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের এ ছাড়া কোনও পথ নেই।
সৌজন্য –
আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯।
Sunday, April 28, 2019
সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার আদিবাসীরা।
বহু বছর ধরে
পুরসভা এলাকায় বসবাস করলেও সমস্ত রকম সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত অশোকনগর-কল্যাণগড়
পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইগাছি এলাকার সর্দারপাড়ার আদিবাসীরা।
বহু বছর ধরে
তাঁরা পুরসভা এলাকায় বসবাস করলেও সমস্ত রকম সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত
হচ্ছেন বলে অভিযোগ। এঁরা সকলেই অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইগাছি
এলাকার সর্দারপাড়ার বাসিন্দা, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ভুক্ত। শৌচাগার কম, দীর্ঘ
লাইনে আদিবাসী বাসিন্দাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গোটা এলাকায় হাতে গোনা কয়েকটি বাড়িতে
রয়েছে শৌচাগার। সরকারি প্রকল্পে বেশির ভাগ পরিবারই এখনও পাকা বাড়ি পাননি। রয়েছে
পানীয় জলের সমস্যাও। এখানে সব মিলিয়ে
পরিবারের সংখ্যা শতাধিক। বেশির ভাগই আদিবাসী পরিবার।
পুরসভা ভোট
হোক বা লোকসভা — প্রতিটি ভোটের আগে রাজনৈতিক
দলগুলির তরফে আদিবাসী মানুষকে গালভরা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। প্রতিবারই মানুষ এই
প্রত্যাশা নিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়ান, এ বার হয় তো ভোট শেষে
তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। বাস্তবে অবশ্য তেমনটা হয় না। সামনেই লোকসভা ভোট।
এলাকাবাসী রোজনামচায় উঠে আসছে বঞ্চনার সাতকাহন।
এলাকার
বাসিন্দা মনিকা সর্দার জানান, ‘‘এ বার আর আমাদের ভোট নিয়ে কোনও আগ্রহ
নেই। সরকারি প্রকল্পে পাকা ঘর পাইনি, শৌচাগার পাইনি। পানীয়
জলের সমস্যা রয়েছে। এরপর আর আমরা ভোট নিয়ে ভাবতে রাজি নই।’’ রত্না
মুন্ডা বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে এলাকায় এসে নেতারা বলেন, আমাদের এই দেবেন, ওই দেবেন। ভোট মিটে গেলে আর কেউ
আসেন না আমাদের কেউ দেখেনও না।’’ বৃদ্ধ শ্যাম মুন্ডার কথায়,
‘‘নেতারা শুধু নিতেই আসেন। আমাদের কিছু দিচ্ছেন না। চোখের সামনে
দেখি, ভাল বাড়ি ভেঙে সরকারি পাকা বাড়ি হচ্ছে। অথচ আমাদের
ভাঙাচোরা বাড়িঘর আর পাকা হয় না।’’
এলাকার
বাসিন্দারা মূলত খেতমজুরি,
দিনমজুরি করেন। অনেকে ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছেন কাজের খোঁজে। এলাকায়
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বেশির ভাগই মাটির বাড়ি। পলিথিন দিয়ে ঘেরা ঘরও রয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, মাত্র তিনটি পরিবার এখনও পর্যন্ত সরকারি
প্রকল্পে পাকা বাড়ির অনুমোদন পেয়েছে।
স্থানীয় একটি
সাংস্কৃতিক সংস্থার তরফে দু’টি শৌচাগার ও একটি স্নানঘর তৈরি করে দেওয়া
হয়েছে। ভোর রাত থেকে ওই দু’টি শৌচাগারের সামনে মহিলা-পুরুষের
দীর্ঘ লাইন পড়ে। এলাকার বাসিন্দা মামনি মুন্ডা বলেন, ‘‘অনেকে
মাঠেঘাটে যেতে বাধ্য হন। লজ্জা লাগে। শৌচাগারের সামনে আমাদের রেশন দোকানের মতো
লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’’
এলাকায় মাত্র
২০টি পরিবারে পাকা শৌচালয় রয়েছে। যাঁদের শৌচালয় রয়েছে, তাঁদের
আবার জলের সমস্যা। এলাকার বাসিন্দা এক মহিলার কথায়, ‘‘ভোরে
অন্ধকার থাকতে অনেকেই ঘুম থেকে উঠে মাঠে গিয়ে শৌচকর্ম সেরে আসি।’’ বাড়িঘরের এমন ভাঙাচোরা দশা, জোরে হাওয়া দিলেও
বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকেন। বৃষ্টি শুরু হলে অনেকেই ভয়ে সাংস্কৃতিক সংস্থার ঘরে গিয়ে
আশ্রয় নেন।
রয়েছে
আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল ও জমা জল নিকাশির সমস্যা। এক বৃদ্ধ হতাশ হয়ে জানান, ‘‘ভোটের
সময় ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের এখানে দেখা মেলে না। একবার এক জনপ্রতিনিধি এলাকার বাইরের
রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিলেন। আমরা তাঁর গাড়ি আটকাই। বসিয়ে চা খাইয়ে অনুরোধ
করেছিলাম, আমাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করে দিতে। উনি কথা
দিয়েছিলেন। তারপরেও বহু দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ বাসিন্দারা জানান, বাম ও তৃণমূল সরকার কেউই কিছু
করেননি। এ বার তাঁরা ভোট দেবেন কিনা তা নিজেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
স্থানীয়
কাউন্সিলর তৃণমূলের সিদ্ধার্থ সরকার অবশ্য জানান যে, ‘‘ওঁদের
উন্নয়নে আমরা সব সময়ে সচেষ্ট। অনেকেরই জমি-বাড়ির দলিল নেই। ফলে সরকারি নিয়মে আটকে
যায়। অনেককেই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। অনেকে সে জন্য আবেদন করেননি।’’
শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তাঁর দাবি।
অশোকনগরের
বিধায়ক ধীমান রায় অবশ্য জানান যে, ‘‘সকলেই দারিদ্র্যসীমার নীচে
বসবাস করেন। শোচনীয় পরিস্থিতি। সমস্যা হচ্ছে, অনেকেরই ভোটার
তালিকায় নাম নেই। আমরা চেষ্টা করছি সকলকে বাড়ি ও শৌচাগার তৈরি করে দিতে।’’
সৌজন্য
– আনন্দবাজার পত্রিকা, সীমান্ত মৈত্র, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯।
সার্বিক উন্নয়ন থেকে এখনও বহু দূরে আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা।
সুদিনের অপেক্ষায় বসে
আছে আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা। কিছুটা উন্নয়ন হলেও প্রকৃতির আপন দেশে 'নেই'-এর
তালিকা দীর্ঘ। ২ টাকা কেজির চাল পান না সবাই, সব জায়গায় নেই পরিস্রুত জল, শৌচাগার।
ভোট এলেই ছোটে প্রতিশ্রুতির বান। কিন্তু, আদিবাসী অধ্যুষিত মহল্লা থেকে যায় তিমিরেই।
আউশগ্রাম শহর থেকে ১১
মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত জঙ্গল এলাকা। শাল-পিয়ালের জঙ্গলের মধ্যে লাল মোরামের রাস্তা।
এই রাস্তার ধারেই রয়েছে আদিবাসীদের গ্রাম। গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এক ফালি রাস্তা গ্রামের
ভিতরে চলে গিয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী আউশগ্রাম-১ ব্লকের ৫৮টি মৌজায় ১৫,৫৭৭
জন আদিবাসীর বাস। আউশগ্রাম-২ ব্লকের ১২০টি পাড়ায় থাকেন ২১,৭৫৯ জন আদিবাসী। আউশগ্রাম
অঞ্চলের কুঁচিডাঙা, সুখাডাঙা, জরকাডাঙা, হরগরিয়া, ওয়ারিশপুর, দোখলগঞ্জ, অর্জুনপাড়া
আদিবাসী অধ্যুষিত। এই এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা জনমজুরি, শালপাতা তৈরি, বাঁশের
কাজ, কুঁচিকাঠির ঝাঁটা তৈরি ইত্যাদি।
সুখাডাঙা গ্রামে অধিকাংশ
মানুষ এখনও সরকারি প্রকল্পের ঘর পাননি। গ্রামে অধিকাংশ স্থানে ঢালাই রাস্তা হয়নি। রয়েছে
কয়েকটি হাতে গোনা শৌচাগার। শিল্পীর কার্ড পাননি অনেকে। স্থানীয় গ্রামবাসী কালো হাঁসদা
বলেন, ‘আদিবাসীরা যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমনই আছে। সরকার যতই বলুক এখানে উন্নয়ন হচ্ছে,
কিন্তু বাস্তবে তার ছিটেফোঁটা এসেছে আমাদের গ্রামে। অনেক পরিবার ২ টাকা কেজি দরে চাল-গমও
পায় না।’
উন্নয়ন একেবারে হয়নি,
তা নয়। তবে গতি অত্যন্ত ধীর। এ সব গ্রামে ঢুকলে মদের গন্ধ পাওয়া যেত, এখন আর তেমন পাওয়া
যায় না। আদিবাসী ছেলেমেয়েরা এখন স্কুলে যায়। সুখাডাঙার পাশের গ্রাম কুঁচিডাঙা গ্রামে
নেই পরিস্রুত পানীয় জল, রাস্তা ও শৌচাগার। অথচ পানীয় জলের জন্য পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে
বছরে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করা হয়। গ্রামে একটা সাবমার্সিবল বসেছে, সেখান থেকে
কবে জল মিলবে, তার প্রতীক্ষায় এলাকার মানুষ। ৯০টি আদিবাসী পরিবার বসবাস এখানে। বাধ্য
হয়েই তাদের ব্যবহার করতে হয় পাতকুয়ো। গাছের পাতা এবং অন্যান্য আবর্জনা কুয়োর জলে মেশে।
ফলে জল হয়ে পড়ে দূষিত। সেই জল পান করার পাশাপাশি ওই কুয়োর জলেই স্থানীয় বাসিন্দারা
বাসন মাজেন, কাপড় কাচেন, স্নান করেন, এমনকি গবাদি পশুকেও স্নানও করান। সামাজিক সহায়তা
প্রকল্পের ভাতা পান না স্থানীয় বাসিন্দারা। সকলের কাছে নেই ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড।
বুদি সোরেন ও মোঙ্গলা মারডি বলেন, ‘পঞ্চায়েতের কোনও প্রতিনিধির দেখা মেলে না গ্রামে।
অকেজো নলকূপের কথা পঞ্চায়েতে বারবার বলা হলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে সমস্যার সুরাহা
হয়নি।’ ভোট এলেই মেলে নয়া প্রতিশ্রুতি। কিন্তু, ভোট মিটে গেলেও বদলায় না কুঁচিডাঙা।
দিগনগর-২ পঞ্চায়েতের ঝাড়গরিয়া,
যাদবগঞ্জ, বনপাড়া, মোলডাঙ্গা, দ্বারিয়াপুরের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার মানুষও খুব
ভালো নেই। যাদবগঞ্জে এখনও রয়েছে কাঁচা রাস্তা, গ্রামে সবাই পাননি শিল্পী কার্ড। তবে
জলের সমস্যা আর নেই যাদবগঞ্জে। এখানে অনেকে পেয়েছেন সরকারি ভাতা, আবাস যোজনার ঘর। স্থানীয়
গ্রামবাসী সুফল সোরেন বলেন, ‘উন্নয়ন বলতে এখন আমাদের সমাজের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে,
পড়াশোনা করছে। রোগ হলে হাসপাতালে গিয়ে ভালো ভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি। ১০০ দিনের কাজ
পাচ্ছি। তবে অনেক কাজই বাকি।’
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে
সঙ্গে মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে জঙ্গলবাসীদেরও। কাউকে ডাইনি অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা প্রায়
নেই। তবে আদিবাসীরা এখনও সার্বিক উন্নয়ন থেকে দূরে। স্বাধীনতার কয়েক দশক পরেও। উৎসবে
ধামসা-মাদলে মেতে ওঠে আউশগ্রামের জঙ্গলমহল। শিকারে বেরিয়ে পড়ে তীর-ধনুক হাতে। নিশানায়
থাকে খটাস, খরগোশ, বনমোরগ। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নির্বাচন আদিবাসীদের নাড়া দেয়
না। অনেক কিছু ছাড়া বেঁচে থাকাটাই তাঁদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে!
সৌজন্য – এইসময়, প্রত্যুষ
চক্রবর্তী, ১৪/০৪/২০১৯।
অস্তিত্ব রক্ষায় পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে দানা বাঁধছে নয়া আন্দোলন।
আসন্ন লোকসভা
নির্বাচনে ওদের ভোট নিয়ে কিচ্ছু যায় আসে না। তাই ওরা মরল কি বাঁচলো জানার দরকার
নেই। ওরা পুরুলিয়ার আদিবাসী। জাপানি সংস্থা ‘জিকা’-র
পাম্পড স্টোরেজ প্রোজেক্টের জেরে যাদের আগামী দিন ভয়ঙ্কর হতে চলেছে বলে দাবি ‘অযোদিয়া বুরু বাঁচাও আন্দোলন সংহতি মঞ্চ’ ও ‘প্রকৃতি বাঁচাও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ’।
আদিবাসীরা
নারাজ তাদের ‘ভূমি’ ছাড়তে কিন্তু কোথাও যেন এই আন্দোলন একটা
সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের মতো ভোট ব্যাংকের জন্য কোনও বড় ইস্যু হয়ে উঠবে না বলে মনে
করছে আন্দোলনকারীরা। তাই রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি বা কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের
অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে না। তাছাড়া তাঁরা এও
জানাচ্ছেন, ‘জিকা’-র পাম্পড স্টোরেজ
প্রোজেক্টটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প। প্রকল্প হলে সুবিধা
পাবে রাজ্য সরকার, কারণ সঙ্গে রয়েছে ট্যুরিজম। লাভের অংশ
থাকবে কেন্দ্রেরও। তাই আদিবাসীদের পেটের ভাত গেলেও এখানে কোনও দলেরই কিছু যায় আসবে
না বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। এরই বিরুদ্ধে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে দুই
সংস্থা। তাদের প্রশ্ন কেন্দ্র, রাজ্য দুই পক্ষই আদিবাসীদের
নিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। এক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুতির কোনও পাত্তাই নেই।
‘আযোদিয়া
বুরু বাঁচাও আন্দোলন সংহতি মঞ্চে’-র পক্ষে সৌরভ প্রকৃতিবাদী বলেন, “পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে ঠুড়্গা নদীর ওপর প্রকল্পিত ঠুড়গা পাম্পড স্টোরেজ
প্রোজেক্ট ঘিরে অযোধ্যাবাসীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। জাপানি সংস্থা ‘জিকা’-র সহযোগিতায় প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার এই
প্রকল্পকে স্থানীয় মানুষজনের অধিকাংশ চাইছেন না। কারণ এর আগে বামনি নদীর ওপর এমনই
একটি প্রকল্প যেভাবে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির নামে তাদের জীবন-জীবিকায় তথা
সংলগ্ন প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল তার পুনরাবৃত্তি চাইছে না
তারা।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রকল্পের
উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিদ্যুতের
অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে এই প্রকল্প করা হচ্ছে ব’লে
সরকারপক্ষের দাবী। তবে যেটা দেখা যাচ্ছে আসলে এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের
কার্যকারিতা যথেষ্টই কম। ফলতঃ সার্বিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও
বিদ্যুৎ ব্যবহারের নীতি তথা বিদ্যুৎ-উন্নয়নের নীতি নিয়ে।”
অতীতে বামনি
ফলসের উপর প্রজেক্টে আদিবাসীদের কোনও লাভ হয়নি বলে জানাচ্ছে ‘আয়োদিয়া
বুরু বাঁচাও আন্দোলন সংহতি মঞ্চ’। আদিবাসীদের পক্ষে তাদের
দাবি, ‘সেই সময় বলা হয়েছিল কর্মসংস্থান হবে, মানুষ বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পাবে। আদতে তার উল্টো হয়েছে। অধিকাংশের বাড়িতেই
বিদ্যুৎ নেই, কারণ তাদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি।
বিদ্যুতের বিল দিতে তারা সক্ষম নয় তাই অন্ধকারেই থেকে গিয়েছেন আদিবাসীরা।’ পাশাপাশি এও জানা যাচ্ছে যে, বামনি ফলসের প্রকল্পে
যারা কাজ পেয়েছিলেন তারা সবাই ঠিকা শ্রমিক ছিলেন। প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পর তাদের
কারও কাজ নেই। যারা এখন কাজ করছেন তারা কেউই পুরুলিয়ার পাহাড়বাসী নয়। আশঙ্কা,
এবারের নতুন প্রজেক্টে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা আরও
বেশি কারণ এই প্রকল্প শুধুমাত্র একটি বিকল্প প্রজেক্ট। বিকল্প প্রজেক্টের জন্য
প্রচুর কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা কম। ফলে আদিবাসীরা চাইছেন না আরও একবার ঠকতে।
চাইছেন না আন্দোলনরিরাও। সৌরভ প্রকৃতিবাদী বলেন, “সবমিলিয়ে
ওদের জনসংখ্যা হাজার পাঁচেক। লোকসভার মতো বিশাল নির্বাচনের ভোট ব্যাঙ্কের নিরিখে
এই পরিমাণ জনগণের ভোট কিছুই প্রভাব ফেলতে পারবে না তাই ওদের দিকে কেউ তাকিয়েও
দেখবে না।”
এদিকে, সরকারপক্ষের
দাবি ছিল, ঠুড়্গা প্রকল্পের ২৯৪ হেক্টর বনভূমিতে মাত্র ৬৬০০
গাছ (৩০০০ বড় এবং ৩৬০০ ছোটো ও মাঝারি) কাটা যাবে, অথচ
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উপায়ে গণনার মাধ্যমে দেখা গিয়েছিল প্রায় তিন লক্ষ বড় গাছ কাটা
যেতে পারে। শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত বান্দু ও কাঁঠালজোল
প্রকল্প হলে ওই এলাকায় আরও নয় লক্ষ অর্থাৎ ঠুড়্গা, বান্দু আর
কাঁঠালজোল মিলিয়ে প্রায় বারো লক্ষ গাছ কাটা পড়তে পারে। এর জেরে বিপুল সঙ্কটের মুখে
পড়তে পারে স্থানীয় হাতির দলসহ অয্যোধ্যার বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণ। নষ্ট হতে পারে
আদিবাসী সমাজের সাংস্কৃতিক মিলনস্থল ঐতিহ্যশালী সুতানটান্ডি।
এই সমস্ত
অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনকারী স্থানীয় মানুষজন হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছিল। আদালত ২০১৮
সালের অক্টোবর মাসে এই প্রকল্পের ওপর প্রথম স্থগিতাদেশ দেয়। তারপর স্থগিতাদেশ থাকা
সত্ত্বেও সার্ভে করার নামে গাছ কাটা শুরু করার অভিযোগ উঠেছিল। মানুষের প্রতিরোধের
সামনে প’ড়ে তা ফের আটকে যায়। সম্প্রতি আদালত সরকারপক্ষকে ভুল প্রক্রিয়ায়
কার্যসমাধার জন্য ভর্ৎসনা করেছে। ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে স্থগিতাদেশ দেওয়া
হয়েছে। আন্দোলন আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে প্রকল্প বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু
প্রকৃতিপ্রেমী ও আদিবাসীরা।
সৌজন্য
– কলকাতা ২৪*৭, সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৬/০৪/২০১৯।ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন কেশিয়ারির আদিবাসী গ্রাম।
পাকা রাস্তা
ও জমির পাট্টার দাবীতে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন কেশিয়ারির আদিবাসী গ্রাম।
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের কেশিয়ারির একাংশের বাসিন্দারা। গ্রামের আদিবাসী
সম্প্রদায়ের মানুষদের অভিযোগ একদিকে তাঁরা যেমন জমির পাট্টা পাননি, ঠিক
তেমনই এলাকায় পাকা রাস্তা নেই। ৯০ টি পরিবারের প্রায় ৩০০ ভোটার এই ভোট বয়কটে
সামিল হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এর আগে রাস্তার দাবি নিয়ে ভোট বয়কট করার ডাক
দিয়েছিলেন গোয়ালতোড় এলাকার একটি গ্রামের বাসিন্দারা। একই পথে হেঁটেছিলেন
বেলপাহাড়ির এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারাও। এবার একই পথে হাঁটল মেদিনীপুর
লোকসভা কেন্দ্রের কেশিয়াড়ির দক্ষিণডিহা গ্রামে ৯০ টি পরিবারের ৩০০ -র বেশি ভোটার।
তারাও ভোট বয়কট করছেন বলে জানিয়েছেন। সেই মতো গ্রামের মোড়ে মোড়ে ফ্লেক্স টাঙিয়ে
দেওয়া হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই ফ্লেক্স ঘিরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গ্রামে
দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের। তবে তাঁদের কোনও পাট্টা
নেই। গ্রামের রাস্তাও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ করেছে ওইসব পরিবারগুলি। একাধিকবার
প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জমা দিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন
তাঁরা। এমন কী ওই গ্রামে কোনও রাজনৈতিক দলকেও প্রচার করতে দেওয়া হবে না বলেও
হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। কেশিয়াড়ির বিডিও সৌগত রায় জানান, ভোটের
পর রাস্তা হয়ে যাবে। কিন্তু পাট্টা দেওয়ার বিষয়টি তিনি তাঁর উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে
জানাবেন। ভোট বয়কটের ডাক দেওয়া, গোবর্ধন মান্ডি ও
সোমেন্দ্রনাথ মান্ডি জানিয়েছেন, তাদের দাবি না মিটলে ভোট
বয়কট করবেন। এছাড়াও আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
সৌজন্য – oneindiabengali, ২৭/০৪/২০১৯।
বেলপাহাড়ির জামাইমারি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেন নেই রাজ্যের দেশ।
জঙ্গলমহলের
আদিবাসী অধ্যুষিত বেলপাহাড়ির জামাইমারি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেন
নেই রাজ্যের দেশ।
সরকারি
প্রাথমিক স্কুল অথচ টিনের ছাদে অজস্র ফুটো। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভিজে যায় পড়ুয়ারা।
ঝেঁপে বৃষ্টি হলে জলে ভাসে ক্লাসঘর। ভিজে নষ্ট হয় পড়ুয়াদের বইখাতা। ঝাড়খণ্ড
রাজ্যের সীমানাবর্তী বেলপাহাড়ির জামাইমারি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেন
নেই রাজ্যের দেশ।
অভিভাবকেরা
জানান, পাহাড়ি এলাকার এই স্কুলটি পরিদর্শন করে গিয়েছেন ঝাড়গ্রাম জেলার জেলাশাসক
আয়েষা রানি। তারপরও হাল ফেরেনি স্কুলের। এক সময় শিমূলপাল গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গম
জামাইমারি গ্রামে যাওয়ার রাস্তাই ছিল না। শিমূলপাল থেকে চৌকিশাল হয়ে জামাইমারি
গ্রামে যওয়ার পাহাড়ি দুর্গম আগের সেই পথ এখন পিচের হয়েছে। জামাইমারি গ্রামে অবশ্য
কংক্রিটের ঢালাই রাস্তাটি বানিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। কারণ, রাস্তার
একদিকে জামাইমারি গ্রাম। অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার চাকুলিয়া
থানার পাকুড়িয়াশোল গ্রাম। রাস্তা ভাল হওয়ায় এখন শিমূলপাল থেকে অনায়াসে গাড়িতে
জামাইমারি যাতায়াত করা যায়। বছর দশেক আগে এই চৌকিশালের জঙ্গল রাস্তায় মাওবাদীরা
মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের একটি মোবাইল ভ্যান। চিকিৎসক ও
নার্স সহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। রাত বিরেতে ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে এক সময় এলাকায়
মাওবাদীদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল।
১৯৮১ সালে
জামাইমারি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চালু হয়। টিনের ছাউনি দেওয়া স্কুলের
পুরনো ভবনের একটি ক্লাসঘরে শিশু শ্রেণি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির
ক্লাস হয়। সর্বশিক্ষার অনুদানে তৈরি স্কুলের নতুন ভবনের আরেকটি শ্রেণিকক্ষে তৃতীয়
ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা বসে। স্কুলের মোট পড়ুয়া ৩৬ জন। পড়ুয়াদের আর্ধেক আদিবাসী,
বাকিরা অনগ্রসর শ্রেণির। সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে পানীয় জলের
ব্যবস্থা ও শৌচাগার থাকলেও পুরনো ভবনের টিনের ছাদটি সংস্কার করা হয়নি। তাই বৃষ্টি
হলে পড়ুয়াদের ভেজা ছাড়া উপায় নেই। স্কুলের খুদে পড়ুয়া উমেশ মুর্মু, লোকেশ নায়েক, ছিতা মুর্মু, লৈতনি
হাঁসদা জানায়, ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তারা
ভিজে যায়। তখন অন্য ক্লাসঘরে গিয়ে বসতে হয়। স্কুলের টিচার-ইনচার্জ সুব্রত শীট বলেন,
‘‘বর্ষায় স্কুল করতে খুবই সমস্যা হয়। মাস তিনেক আগে জেলাশাসক আমাদের
স্কুল পরিদর্শন করে গিয়েছেন।’’
স্কুলের
পাঁচিল না থাকায় শিশু পড়ুয়াদের নিয়ে চিন্তায় থাকেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুলের ধার
ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে মাঝে মধ্যেই গাড়ি যাতায়াত করে। এখনও এই স্কুলে মিড ডে মিল
খাওয়ার ‘ডাইনিং হল’ হয়নি। তাই অপরিসর বারন্দায় বসে খেতে হয়
পড়ুয়াদের। অন্য সরকারি প্রাথমিক স্কুলে দোলনা, স্লিপার,
ঢেঁকি-র মতো বিনোদনের নানা উপকরণ দেওয়া হলেও জামাইমারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে সে সব দেওয়া হয়নি। এই নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। অভিভাবকদের
অভিযোগ, জামাইমারি গ্রামটি একেবারে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী
প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার গ্রামের স্কুল বলেই উপেক্ষিত হয়ে রয়েছে। এক সময়
বাসিন্দাদের বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে এলাকায় প্রভাব বাড়িয়েছিল মাওবাদীরা। এমন একটি
এলাকার সরকারি স্কুল কেন এভাবে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে, তা
নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
সৌজন্য –
আনন্দবাজার পত্রিকা, কিংশুক গুপ্ত, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯।
Saturday, April 27, 2019
পান্তা ভাত খেয়েই প্রচার ঝাড়খণ্ডী জোট প্রার্থী বীরবাহা হাঁসদা।
প্রিয় পান্তা
ভাত খেয়েই প্রচারে বেরচ্ছেন ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)
এবং ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির জোট প্রার্থী বীরবাহা হাঁসদা।
এ বার ঝাড়গ্রাম
লোকসভা আসনে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) এবং ঝাড়খণ্ড অনুশীলন
পার্টির জোট প্রার্থী হয়েছেন বীরবাহা হাঁসদা। তিনি প্রার্থী
হওয়ায় শাসক ও বিরোধী শিবিরে ভোট কাটাকুটি হিসেব-নিকেশ শুরু হয়ে গিয়েছে। শাসকের অভিযোগ, বিরোধীদের
সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই প্রার্থী হয়েছেন সাঁওতালি সিনেমার এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। বিরোধীদের বক্তব্য, বীরবাহা
প্রার্থী হওয়ায় আদিবাসী ভোট কাটাকুটি খেলায় শাসকের লাভ হবে। যদিও বীরবাহা
জানাচ্ছেন বড় রাজনৈতিক দল তৃণমূল আর বিজেপি কেউই আদিবাসীদের ভালর কথা ভাবে না। আদিবাসীদের তারা
ব্যবহার করে।
তাই
আদিবাসীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। বীরবাহা বলেন, ‘‘জঙ্গমহলের
আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনকে সর্বভারতীয় স্তরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই রাজনৈতিক
ভাবে প্রচারে আসতে চাই। সেই জন্য লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়েছি।’’
রুটিন ডায়েট
চার্ট পান্তা ভাতের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে প্রচারে যাচ্ছেন সাঁওতালি সিনেমার মহানায়িকা
বীরবাহা হাঁসদা।
পরণে
আদিবাসী প্রথার পাঞ্চি শাড়ি। প্রসাধনহীন মুখে স্নিগ্ধ হাসি।
সাঁওতালি সিনেমার
এই অভিনেত্রী দু’বেলা ভাত খান। সকালে ও দুপুরে পান্তা ভাত আর রাতে গরম ভাত। ভোটের প্রচারেও
খুব একটা হেরফের হচ্ছে না এই রুটিনের। বীরবাহা জানালেন, রোজ সকাল
৬ টায় ঘুম থেকে উঠে পড়েন তিনি। ব্যায়ামের পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পরে স্নান
সেরে পাঞ্চি শাড়ি পরে তৈরি হয়ে যান প্রচারে বেরোনোর জন্য। কর্মীরাও ততক্ষণে
এসে পড়েন।
ঝাড়গ্রাম
শহরের বিদ্যাসাগর পল্লির বাড়ির উঠোনে অপেক্ষায় থাকে বীরবাহার নিজস্ব সাদা রঙের গাড়ি (বলেরো)। বীরবাহা বলেন, ‘‘নিজেকে
সুন্দর করে রাখতে স্নিগ্ধ মনে খাওয়া দরকার। তাই আমি হাসিমুখেই খাই।’’ খাওয়া
শেষ করে প্রচারে বেরোন বীরবাহা। সঙ্গে ঝোলা ব্যাগে নেন টিফিন বক্স ভর্তি মুড়ি আর
চারটি বড় জলের বোতল। বাড়ির বাগানের কাঁচা আম খান কতক। নুন লঙ্কা গুঁড়োও
কাগজের প্যাকেটে করে সঙ্গে রাখেন অভিনেত্রী। প্রচারে বেরিয়ে কখনও লিকার চা আর শুকনো মুড়ি। তবে দুপুরে কোনও
গ্রামে পরিচিত জনের বাড়ি পেলে সেখানে একবাটি পান্তা ভাত আর কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে লাঞ্চ
সরেন।
এই সময় জঙ্গল
মহলে কেন্দু গাছের কেঁদ ফল পাকার মরসুম। প্রচারে গিয়ে জঙ্গলে প্রান্তরে গাছ থেকে পাকা কেঁদ
ফল পেড়েও খান বলে জানান বীরবাহা। সেই ফলের মিষ্টি স্বাদে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। সন্ধ্যের আগেই
প্রচার থেকে ফিরে ঠান্ডা জলে স্নান। তারপর লিকার চা খেয়ে মা ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)
সভানেত্রী ও প্রাত্তন বিধায়িকা চুনিবালা হাঁসদার সঙ্গে হাঁটতে বেরোন
বীরবাহা।
বাইরের
খাবার প্রায় খান না। ইচ্ছে হলে কখনও বাড়িতে পেঁয়াজি বানিয়ে খান। তবে রাতে চাই
গরম ভাত।
সঙ্গে
চার রকম আনাজ আর মাছের নানা পদ। তবে সুস্থ আর সতেজ থাকতে পান্তা ভাত তাঁর চাই।
সৌজন্য – আনন্দবাজার
পত্রিকা, ২৭/০৪/২০১৯।
আদিবাসী ভোটারদের মন জয়ে চেষ্টা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের।
জঙ্গলমহলে
গিয়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলের ‘আদিবাসী’ ক্ষত উস্কে
দেওয়ার চেষ্টা করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী নির্মলা সীতারমন। গত বুধবার
২৪/০৪/২০১৯ ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমরমের সমর্থনে
গোপীবল্লভপুরে সভা করেন নির্মলা সীতারামন। আগামী ৫ মে
ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রমের সমর্থনে সভা করতে আসতে পারেন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে জঙ্গলমহলে পৌঁছে উন্নয়ন নিয়ে কটাক্ষ করলেন
নির্মলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, তাঁর
আমলে জঙ্গলমহলের প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। যাঁরা যে উন্নয়ন দেখতে পান না তাঁদের
দৃষ্টিশক্তি নিয়েও মাঝেমাঝে ব্যঙ্গ করতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিন যাত্রা
ময়দানের সভায় নির্মলা বললেন, ‘‘দিদি ঝাড়গ্রামের এসে বলুন আট
বছরে কী কাজ করেছেন। উন্নয়নের তালিকা দিন।’’ আদিবাসীরা এ
রাজ্যে কী অবস্থায় রয়েছেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে গরিব মানুষের অবস্থা খুব খারাপ। আদিবাসীরাও
খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের থাকার বাড়ি নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। কাঠের
জ্বালানিতে তাঁদের রান্না করতে হয়।’’
মোদীর সুরে
আয়ুষ্মান ভারতের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘উন্নয়ন বিরোধী’ বলে কটাক্ষ করেছেন নির্মলা। কুনারের সমর্থনে বলতে গিয়ে নির্মলা যেমন
রেলপথের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তেমনি আদিবাসীদের মর্যাদা দেওয়ার কথাও বলেছেন
প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীনতা আন্দোলনে
আদিবাসীদের বিশেষ যোগদান রয়েছে যাদের অনেকের কথাই অজানা থেকে গিয়েছে। সেইসব
আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মারক নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সমস্ত
আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা মানুষকে জানাতে চান। তাঁদের পাদ প্রদীপের আলো
নিয়ে আসতে চান। তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই আমরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে,
নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের একাংশের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি
হয়েছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলেই তার প্রমাণ মিলেছে। নির্মলা সে ক্ষোভকেই
কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন।
যদিও কটাক্ষ
করতে ছাড়েনি তৃণমূল। নেত্রীর সুরেই ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুকুমার
হাঁসদা বলেন,
‘‘নির্মলা সীতারামন চোখে ঠুলি পরে আছেন, তাই
জঙ্গলমহলে উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’’
গোপীবল্লভপুরে
আগে নির্মলার সভা ছিল খড়্গপুরের ধানসিংহ ময়দানে। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের
বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের সমর্থনে এক সভা করেন নির্মলা সীতারামন।
সৌজন্য –
আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫/০৪/২০১৯।
Thursday, April 25, 2019
বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেস দলে যোগ দিলেন দলিত নেতা উদিত রাজ।
উত্তর-পশ্চিম দিল্লি থেকে
টিকিট না পাওয়ার পর চব্বিশ ঘণ্টাও কাটল না, দলিত নেতা উদিত রাজ দলবদল করে বিজেপি থেকে
কংগ্রেসে চলে গেলেন৷ প্রথমে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করলেন, তারপর দিল্লির প্রাক্তন
মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের উপস্থিতিতে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিলেন৷
উদিত রাজকে সঙ্গে পেয়ে
কংগ্রেসের কতটা সুবিধা হল এই প্রশ্নে শীলা দীক্ষিত বলেন এই দলিত নেতাকে কুড়ি বছর ধরে
চেনেন৷ তাঁর দাবি, ‘এ বার অনেক আসন যা আগে জিততে পারতাম না, সেগুলি জিতব৷ উদিত রাজের
জন্যই জিতব।’ কোন আসন তা অবশ্য তিনি খুলে বলেননি৷ তবে উত্তর পশ্চিম দিল্লি হল দলিতদের
জন্য সংরক্ষিত আসন৷ সেখানে তিনি একটা প্রভাব ফেলতে পারেন৷ এ ছাড়া পূর্ব ও উত্তর পূর্ব
দিল্লিতে দলিতরা ভালো সংখ্যায় রয়েছে৷ সেখানেও উদিত রাজকে দিয়ে প্রচার করাবে কংগ্রেস৷
উত্তর পূর্ব দিল্লিতে লড়ছেন শীলা দীক্ষিত৷ লাগাতার পনেরো বছরের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর প্রচুর
ভরসা কংগ্রেসের৷ ফলে তাঁরও কিছুটা লাভ হতে পারে উদিত রাজ প্রচার করলে৷
উদিত রাজ প্রচারটা অবশ্য
এ দিন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন৷ বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে প্রচার৷ তিনি
বলেছেন, ‘বিজেপি দলিতদের ঘৃণা করে৷ আমি সেটা অনুভব করেছি৷ সমঝদার দলিত জীবনে বিজেপি-কে
একটা ভোটও দেবে না৷’ এরপরই বিজেপির প্রাক্তন সাংসদের স্বীকারোক্তি, ‘মিথ্যা কথা বলব
না৷ বিজেপি টিকিট দিলে লড়তাম৷ বিজেপি কতটা দলিত-বিরোধী তা প্রমাণ হয়ে গেল৷ আমাকে কেউ
সেরা সাংসদ ও কেউ দ্বিতীয় সেরা সাংসদের খেতাব দিয়েছে৷ বিজেপিতে প্রচার, সকলে সেখানে
ন্যায় পায়৷ বিজেপির চারটি অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বলেছিল, আমি এক নম্বরে৷ ২০১৮-তে দলিতরা
ভারত বন্ধ করে, আমি সমর্থন করি৷ আমি মূক-বধির ছিলান মা৷ মূক-বধির হলে প্রধানমন্ত্রীও
হতে পারেন৷ কথা বললেই মুশকিল৷’
এরপরই উদিত রাজের বিস্ফোরক
দাবি, ২০১৪-র ২০ মে রামনাথ কোবিন্দের বায়োডেটা নিয়ে তাঁর কাছে আসেন বিবেক সোনকর৷ তিনি
বলেন, ভাইসাব কিছু করুন৷ উনি লড়তে চেয়েছিলেন৷ সেটা হয়নি৷ কিন্তু তিনি চুপ করে থাকার
পুরস্কার পেয়েছেন (অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি হয়েছেন)৷ চুপ করে থাকলে তাঁকেও কখনও না কখনও বিজেপি
প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিতে পারত বলে তাঁর বিশ্বাস৷ তিনিও দশ-পনেরো বার দলের স্ট্যান্ডের
বিরুদ্ধে গিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, ‘স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়ায় বলা হয়েছিল, দলিতদের বিশেষভাবে
ঋণ দেওয়া হবে ব্যাঙ্ক থেকে যাতে তাঁরা অন্যদেরও চাকরি দিতে পারেন৷ মোট ঋণপ্রাপকদের
মধ্যে দলিতদের সংখ্যা মাত্র ৬ শতাংশ৷ রাজীব গান্ধী স্কলারশিপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
এসসি-এসটি সব প্ল্যান সরকার বন্ধ করে দিয়েছে৷ ৪৯০ কোটির দলিত হাব হবে বলা হয়েছিল৷ শুধু
৭২ কোটি টাকা প্রচারে লাগানো হয়েছে৷ বাকিটা পড়ে আছে৷ মুদ্রা ব্যাঙ্কে বড় ব্যবসায়ীরা,
দলিত ড্রাইভার, পিওনরা ঋণ পেয়েছেন৷ নতুন নিয়োগ করা ৩৮ জন ভাইস চ্যান্সেলারের মধ্যে
একজনও দলিত নেই৷ একজন দলিত সচিব নেই৷’ কংগ্রেসের আমলে কখনও এমন হত না বলে তাঁর দাবি৷
এই সুযোগে উদিতকে সামনে
রেখে কংগ্রেসও প্রচার শুরু করে দিয়েছে যে, দলিতদের বিরুদ্ধে মোদী সরকার সমানে অন্যায়
করে চলেছে৷ উদিত রাজ তাঁর শেষতম উদাহরণ৷ কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন,
‘যাঁরা দলিতদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন,
তাঁদের প্রার্থী করা হয়নি৷ সেই তালিকায় আছেন সাবিত্রী ফুলে, ছোটে লাল, অশোক কুমার দোহরে
ও উদিত রাজ৷’ এর মধ্যে সাবিত্রী ফুলে আগেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন এবং উত্তরপ্রদেশে ভোটেও
লড়ছেন৷ উদিত রাজ এ বার কংগ্রেসে যোগ দিলেন৷
সৌজন্য
– এইসময়, ২৪/০৪/২০১৯।Tuesday, April 23, 2019
পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া আদিবাসী যুবকের জননী আজও সংগ্রামে অবিচল।
উড়িষ্যার কলিঙ্গনগরে আদিবাসীদের
উচ্ছেদ করে টাটা কোম্পানির কারখানার পাঁচিল তৈরি রুখতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা
যাওয়া আদিবাসী যুবকের জননী আজও সংগ্রামে অবিচল।
তিনি জন আন্দোলনের পোড় খাওয়া
নেত্রী। জমি বাঁচানোর লড়াইয়ে ছেলে হারিয়ে শোক করা তাঁর সাজে না। কিন্তু ২৫ বছরের
তরতাজা ছেলেটা পুলিশের গুলি বুকে নিয়ে ‘জল, জল’ বলে
চিৎকার করছে, তার পর হাত-পা ধরে তাকে ছুড়ে দেওয়া হল গাড়ির
ভিতরে — এমন স্মৃতি বুকে নিয়ে কোন মা নিজেকে শান্ত রাখতে
পারেন। চোয়াল শক্ত হয় সিনি সয়ের, গলা ধরে আসে।
২০০৬-এর ২ জানুয়ারি। টাটাদের ইস্পাত
কারখানার জমিতে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে গোলমালের জেরে কলিঙ্গনগরে গুলি চালাল পুলিশ। সব
মিলিয়ে মারা গেলেন ১৩ জন। তাঁদের মধ্যে তিন জন মহিলা, এক জন নাবালক।
প্রাক্তন বিচারপতি প্রদ্যুম্নকুমার মহান্তির রিপোর্ট বলছে, কাঁদানে
গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে, শূন্যে গুলি
চালিয়ে উন্মত্ত জনতাকে ঠেকানো যায়নি। তখন গুলি চালানোর আদেশ না দিয়ে কোনও উপায় ছিল
না। ওই ঘটনার জন্য পুলিশ দায়ী নয়। মহান্তি কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণ করেছে নবীন
পট্টনায়কের সরকার।
কলিঙ্গনগরে কারখানা করার জন্য রাজ্য
সরকার আদিবাসীদের কাছ থেকে জমি নিয়েছিল ১৯৯০-৯১ সালে। তার পর ১৫ বছর চুপচাপ।
খাতায়কলমে জমি সরকারের হলেও আদিবাসীরা সেখানেই চাষআবাদ করেন। ২০০৫-এ ফের কারখানা
গড়ার তোড়জোড় মাথাচাড়া দিল। আপত্তি জানালেন আদিবাসীরা। দাবি করলেন, বর্তমান বাজার দরে
জমির দাম চোকাতে হবে। কেউ কেউ আবার জমি ছাড়তেই আপত্তি করলেন।
দু’একটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনার
পরে শেষ পর্যন্ত ইস্পাত কারখানা গড়ার জন্য টাটাদের জমি দিতে মনস্থ করল ওড়িশা
সরকার। জমিতে পাঁচিল তোলার তোড়জোড় শুরু হতেই গোলমাল তুঙ্গে।
কটকের কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করলেও
চাকরি করার কথা ভাবেননি ভগবান সয়। বলেছিলেন, পরের গোলামি করব না। কিন্তু মাথার উপরে বাবা নেই,
সংসারটা তো চালাতে হবে। চাষবাসেই ছেলের মন দেখে ট্রাক্টর কিনে
দিয়েছিলেন সিনি। তাঁদের সংসার তো চলতই, আরও চার-পাঁচটা
দিনমজুরের সংসার প্রতিপালন হয়ে যেত।
“আগের দিন নতুন বছর।
ছেলে বলল, একটু খাওয়াদাওয়া হোক। দু’টো
ছাগল কাটা হল। কত লোক খেল।” বলছিলেন সিনি। পরের দিন সকালে
খবর এল, জমিতে পাঁচিল তোলা নিয়ে চম্পাকুইলায় গোলমাল হয়েছে।
পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও রেয়াত করেনি বলে অভিযোগ। কোলের ছেলেকে ফেলে
রেখে বাবা-মা পালিয়েছেন।
২০০৫ থেকেই জমি আন্দোলনের সঙ্গে
ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছেন সিনি। বিস্থাপন বিরোধী জনমঞ্চের নেত্রী। চম্পাকুইলায়
গোলমালের খবর পেয়েই ছুটলেন। “আমাদের দাবি ছিল, গ্রামসভার
সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে কোম্পানিকে। প্রশাসন শুনল না। গোলমাল তর্কাতর্কির
মধ্যেই আচমকা মাটিতে পোঁতা ডিনামাইট ফাটল। পাঁচিল গড়ার জন্য ঠিকাদারেরাই পুঁতেছিল
ডিনামাইট। আর তার পরেই শুরু হল গুলি চালানো,” বললেন সিনি।
ঝাড়খণ্ড মাইনস এরিয়া কো-অর্ডিনেশন
কমিটি এবং ঝাড়খণ্ডস কমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের গড়া যৌথ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট
বলছে, সে দিনের ঘটনায় প্রথম ‘শহিদ’ ভগবান
সয়। আর সিনি বলছেন, “আমি যখন বেরোই, ছেলেটা
বাড়িতেই ছিল। তার পর কখন গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে! হঠাৎ শুনি সবাই বলছে, ভগবানের গুলি লেগেছে। ছুটে গেলাম। দেখি জল, জল বলে
কাতরাচ্ছে। কিন্তু কাছে যেতে পারলাম না। পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিল। তার পর
চার জনে মিলে হাত-পা ধরে ওকে একটা গাড়ির ভিতরে ছুড়ে দিল। তখনও বেঁচে ছিল ছেলেটা।”
রিপোর্ট বলছে, সে দিন ঘটনাস্থলেই
মারা যান ৬ জন। বাকিরা হাসপাতালে। সিনিদের অভিযোগ, হাসপাতালের
দরজা বন্ধ করে রেখে আহতদের ঢুকতে দেয়নি সরকার। তাঁদের রাস্তায় শুইয়ে শুরু হয়
প্রতিবাদ। তবে দরজা খোলে। আহতদের উপরেও পুলিশ অত্যাচার করেছে বলে অভিযোগ। প্রশাসন
যা মানেনি।
ক’দিন পরে দেহ এল ভগবানের। দু’টো হাত কব্জি থেকে কাটা। তাঁর মতো আরও পাঁচ জনেরও একই দশা। শোনা গেল,
আঙুলের ছাপ মিলিয়ে শনাক্তকরণের জন্য হাত কেটে রাখা হয়েছিল
ময়নাতদন্তের সময়। ফের তোলপাড়। নিন্দার ঝড় উঠল। এ বার অবশ্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের
শাস্তি দিল সরকার।
ছেলেকে হারিয়েও থামেননি সিনি। গ্রামে
গ্রামে ঘুরে সংগঠন করেছেন জমি দখলের বিরুদ্ধে। ‘মাওবাদী’ তকমা
লেগেছে গায়ে। ২০১২-এ গ্রেফতার হয়েছেন। দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেছে সরকার। দেড় বছর
পরে তাঁকে বেকসুর ঘোষণা করেছে কটক হাইকোর্ট।
কিন্তু সভ্যতা এগিয়ে চলবে, এটাই তো সত্য। আর
তার জন্য কিছু মানুষ উৎখাত হবেন, তা-ও যুগ যুগ ধরেই সত্য।
সিনি বলছেন, তার বিরুদ্ধে মানুষ লড়াই করে চলবে, সত্য সেটাও। “উন্নয়ন আর শিল্পায়নের নামে সবাই আমাদের
মতো আদিবাসীদের জমি দখল করে নিতে চায়। বলে বদলে পুনর্বাসন তো দিচ্ছি। পুনর্বাসন
মানে তো দু’কামরার এক চিলতে ঘর, আর
ঘিঞ্জি কলোনি। কেউ বুঝতে চায় না, মাটি আর প্রকৃতির সঙ্গে
আদিবাসীদের সংস্কৃতি কতটা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।”
কলিঙ্গনগরে টাটাদের কারখানা চালু
হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে কারখানা সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও হচ্ছে। কিন্তু সিনি বলছেন, “আমি হার মানব না।
যত দিন বাঁচি লড়াই চলবে। ছেলের কসম।”
সৌজন্য –
আনন্দবাজার পত্রিকা, সৈকত বসু, ১০ এপ্রিল, ২০১৯।
Saturday, April 20, 2019
শিকার উৎসব ঘিরে আদিবাসীদের মধ্যে উন্মাদনা।
বাঁকুড়া
জেলার বিষ্ণুপুর ও জয়পুরের জঙ্গলে শিকার উৎসব ঘিরে আদিবাসীদের মধ্যে উন্মাদনা।
অন্যান্য
বছরের মতো এবারও শুক্রবার বিষ্ণুপুর ও জয়পুরের জঙ্গলে শিকার উৎসবে মাতলেন আদিবাসী
সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ। এদিন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে আদিবাসী
সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা শিকার উৎসবে শামিল হন। স্থানীয় অনেক বাসিন্দাও শিকার উৎসব
দেখতে জঙ্গলে ভিড় জমান। এদিন বিষ্ণুপুরে মন্দির দেখতে এসে ইংল্যাণ্ডের এক
পরিবেশপ্রেমী পর্যটক ওই উৎসবে যোগ দিতে বাসুদেবপুরে আসেন। বন দপ্তর সূত্রে জানা
গিয়েছে, এদিন বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুর এবং জয়পুরের কুচিয়াকোল
ও তাঁতিপুকুরের জঙ্গলে হাজার হাজার বাসিন্দা তির, ধনুক ও
বল্লম নিয়ে তিন এলাকার শাল জঙ্গল চষে বেড়ান। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জঙ্গল
ঘন থাকায় ঝুলিতে শিকার ভালোই হয়েছে। তিন এলাকায় অন্তত ৩০টিরও বেশি বন্য শুয়োর
শিকার মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিকারিরা অবশ্য বলেন, আমাদের কাছে পশু শিকার বড় নয়। শিকার উপলক্ষে উৎসবে আনন্দ উপভোগ করাই
মুখ্য।
বিষ্ণুপুর
পাঞ্চেতের ডিএফও নীলরতন পাণ্ডা বলেন, শিকার উৎসবে বন্যপ্রাণীর
ক্ষতি রুখতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাদের নিয়ে ইতিমধ্যে বৈঠক
করা হয়েছে। এদিন সকালেও শিকারিদের সতর্ক করে জঙ্গলে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া
জঙ্গলে সচেতনতামূলক ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু বন্য শুয়োর মারা
হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এবিষয়ে আরও সচেতনতা বাড়ানো হবে।
স্থানীয়
সূত্রে জানা গিয়েছে,
বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুর এবং জয়পুরের কুচিয়াকোল ও তাঁতিপুকুরে
বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ঘন শাল জঙ্গল রয়েছে। ওই জঙ্গলে বন্য শুয়ার, চিতল হরিণ, খরগোশ সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অবাধ
বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। তাই ওই তিন জঙ্গলে আদিবাসীরা প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ৫ তারিখ
দল বেঁধে শিকারে আসেন। জঙ্গলে বন্যপ্রাণী শিকার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও
আদিবাসীদের ভাবাবেগের কথা চিন্তা করে এই দিনে বন দপ্তর কড়া অবস্থান থেকে কিছুটা
সরে আসে। একইসঙ্গে আইনের বিষয়টি নিয়ে শিকারিদের সচেতন করার জন্য জঙ্গলে মাইকিং করা
হয়।
সিমলাপালের
কালাবতী গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল হাঁসদা বলেন, আমরা প্রায় ৬০ জন বাসিন্দা
গাড়িতে করে আগের দিন রাতে জঙ্গলে পৌঁছে গিয়েছিলাম। ভোরের আলো ফুটতেই বনদেবীর
পুজো করে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করি। আগেরমতো প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়নি। প্রাচীনকাল
থেকেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে শিকার উৎসবের প্রচলন। আজও একইভাবে এই রীতি চলছে।
তবে আগের চেয়ে পুজোর রীতি অনেক বদলে গিয়েছে। প্রথা অনুযায়ী শিকারের পর জঙ্গলেই
রাত কাটাতে হয়। কিন্তু, এখন অধিকাংশই শিকারের পর বাড়ি ফিরে
যান। তবে শিকারের পর জঙ্গলে বনদেবীর সামনে মৃত জন্তু রেখে পুজো করা হয়। যে শিকারি
আগে জন্তুটিকে দেখেন, তাঁকে তার পা দেওয়া হয়। শিকারকে
কেন্দ্র করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের গ্রামও উৎসবের মেজাজে থাকে। অপেক্ষায় থাকেন
গ্রামের মহিলারা। সন্ধ্যার পর পুরুষ শিকারিরা গ্রামে ফিরলে মহিলারা তাঁদের পা
ধুইয়ে তেল মাখিয়ে বরণ করেন। তারপর শিকার করে আনা জন্তু এক জায়গায় রান্না করে
গ্রামের বাসিন্দারা সকলে একসঙ্গে খান। এরপর সারারাত ধরে নাচগান চলে। প্রাচীনকালের
শিকার উৎসবের এই রীতি আজও একইভাবে চলে আসছে।
বন দপ্তর
সূত্রে জানা গিয়েছে,
শিকার উৎসবে বন্যজন্তু নিধন রোধে কয়েকদিন আগে মহকুমা প্রশাসন ও বন
দপ্তর যৌথভাবে আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে। উৎসবে
শিকারের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু, আদিবাসীরা তাতে রাজি হননি। বহু বছরের পরম্পরা মেনে এবারও শিকার উৎসবে
হাজার হাজার বাসিন্দা শামিল হন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শিকারিরা জঙ্গলে
প্রবেশ করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেশ কিছু বন্য শুয়োর শিকার করা হয়। তাই বন দপ্তর
সচেতনতার উপরেই ভরসা করছে। বন্যপ্রাণ হত্যা হাইকোর্টের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো
আঙুল দেখিয়ে শুক্রবার মহা ধুমধামে শিকার উৎসব পালন করলেন বাঁকুড়ার স্থানীয়
আদিবাসীরা। বিষ্ণুপুর ও জয়পুরের জঙ্গলে ঢুকে মারা হল বেশ কয়েকটি বুনো শুয়োর।
পাশাপাশি বন্যপ্রাণী হত্যা করে আইন লঙ্ঘন না করার আবেদন জানিয়ে মাইকে প্রচার চালাল
বন দপ্তর।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিভি নায়ার রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি
বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের মুখ্য বনপালকে নির্দেশ দেয়, উৎসবের
নামে প্রাণী হত্যা বন্ধ করতেই হবে। তবু এদিন শিকার উৎসব ঘিরে দিনভর সরগরম রইল
বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুর জঙ্গল, জয়পুর এবং কুচিয়াকোলের জঙ্গল।
শিকার উৎসবকে ঘিরে এদিন রীতিমতো মেলার চেহারা নিয়েছিল বাসুদেবপুর চাতাল। বিভিন্ন
খাবার-সহ হরেক দোকানও পসরা সাজিয়ে বসেছিল সেখানে।
সৌজন্য –
বর্তমান ও এইসময়, ২০/০৪/২০১৯।
Thursday, April 18, 2019
প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী বালুরঘাটের সোমরা ওঁরাও।
টানা আঠারো
দিন ধরে লড়াইয়ের পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী সোমরা ওঁরাও।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল একশো
দশ বছর। গত ১ এপ্রিল, ২০১৯ থেকে তিনি বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে ভরতি
ছিলেন।
সোমরা ওঁরাও
ছিলেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আদিবাসী একমাত্র জীবিত স্বাধীনতা সংগ্রামী। বয়স জনিত
বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে।
হাসপাতাল
সূত্রে জানা গিয়েছে শ্বাসকষ্ট ও রক্তচাপ জনিত বিভিন্ন সমস্যায় গত ১ এপ্রিল নাতি
দিলীপ ওঁরাও তাঁকে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ভরতি করেন। সেখানেই সিসিইউ’তে
ডাঃ সুকান্ত মান্নার অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। দিন দুয়েক ধরে চিকিৎসায় সারা
দিচ্ছিলেন না সোমরা ওঁরাও।
১৯৪২ এর ভারত
ছাড়ো আন্দোলনে বালুরঘাট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পারিলাহাটে ব্রিটিশের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকশো মানুষ। সেদিনের তরুণ সোমরার ডাকে অন্যান্য
সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আদিবাসীরাও পরাধীনতার শৃংখল থেকে দেশমাতাকে উদ্ধার করতে
তীর-ধনুক নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।
১৯৪২ সালের
১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় কৈকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা সোমরা ওঁরাও-এর নেতৃত্বে
পারিলাহাটে কয়েকশাও আদিবাসী তীর ধনুক নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধে নেমে
পড়েছিলেন।
সেদিনের
লড়াইয়ে ব্রিটিশের গুলিতে শহিদ হয়েছিলেন চারজন। পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম হয়েছিলেন
কুড়ি জনেরও বেশি। পায়ে গুলি লেগেছিল সোমরা ওঁরাও এর৷ দেশ স্বাধীন হবার পর ভারত
সরকার তাঁকে তাম্রফলক দিয়ে সম্মানীত করেছে। বহুদিন ধরেই তিনি অসুখে ভুগছিলেন বলে
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।
সৌজন্য –
কলকাতা ২৪ x৭, শংকর দাস, April 18,
2019
স্কুলের আধিকারিকদের লালসার শিকার হল দুই আদিবাসী নাবালিকা!
মহারাষ্ট্রের
চন্দ্রপুর জেলায় স্কুলের আধিকারিকদের লালসার শিকার হল দুই আদিবাসী নাবালিকা! ধর্ষণ
করে ফেলে রাখা হয় তাদের।
স্কুলের
আধিকারিকদের লালসার শিকার হল দুই আদিবাসী নাবালিকা। ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের
চন্দ্রপুর জেলায়। এখানে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের জন্য একটি আবাসিক স্কুল রয়েছে। সেই
আবাসিক স্কুলের মধ্যেই এই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এতে আদিবাসী
সম্প্রদায়ের মানুষজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই আধিকারিককে
গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিস সূত্রে
খবর, ওই আবাসিক স্কুলের হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট ছবন পচারি এবং ডেপুটি
সুপারিনটেনডেন্ট নরেন্দ্র ভিরুতকর এই কুকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। তারাই দু'জন আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কাজে সাহায্য করার
অভিযোগে দুই মহিলা হোস্টেল ওয়ার্ডেন কল্পনা ঠাকরে এবং লতা কনকে-কে গ্রেপ্তার করা
হয়েছে।
ছাত্রী দু'জন
অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় এই খবর বেরিয়ে আসে। তাদের চন্দ্রপুরের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়েছে। মেডিকেল পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে তাদের ওপর যৌন নির্যাতন করা হয়েছে।
পুলিস সুপার
মহেশ্বর রেড্ডি জানান,
তল্লাশি করে হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট ছবন পচারির অফিস-ঘর থেকে
প্রচুর কন্ডোম এবং ভায়াগ্রা পিল পাওয়া গিয়েছে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের পুলিস
হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই ঘটনার পর স্কুলের সরকারি স্বীকৃতি বাতিল
করে দেওয়া হয়েছে।
সৌজন্য - News18
Bangla, April 17, 2019।
রেল স্টেশনের দেওয়াল থেকে মোছা হল ফুলন দেবীর ছবি। প্রতিবাদ মধ্যপ্রদেশ মাঝি মাছুয়া এবং আদিবাসী মহাসঙ্ঘের।
রাজপুত
সম্প্রদায়ের আপত্তিতে রেল স্টেশনের দেওয়াল থেকে মোছা হল প্রাক্তন দস্যুনেত্রী ও
পরে সক্রিয় রাজনীতিতে আসা ফুলন দেবীর ছবি। প্রতিবাদে সোচ্চার মধ্যপ্রদেশ মাঝি
মাছুয়া এবং আদিবাসী মহাসঙ্ঘ।
রেলস্টেশনের
দেওয়াল সাজাতে আঁকা হয়েছিল বিখ্যাত মহিলা ব্যক্তিত্বদের ছবি। তাতে ছিল প্রাক্তন
দস্যুনেত্রী ও পরে সক্রিয় রাজনীতিতে আসা ফুলন দেবীর ছবিও। আর তা থেকেই ইনদওরে শুরু
বিতর্কের। এক দিকে রাজপুত,
অন্য দিকে মাল্লা সম্প্রদায় — টানাপড়েনের
মুখে সেই ছবি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মুছে ফেললেও বিতর্ক থামেনি। বরং আরও বেড়েছে মাল্লা
সম্প্রদায়ের ক্ষোভ।
গত ১৩ এপ্রিল,
২০১৯ সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্প (সিএসআর)-এর আওতায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
উদ্যোগে ইনদওরের একটি রেলস্টেশনের দেওয়ালে আঁকা হয়েছিল বিখ্যাত ৩৫ জন মহিলা
ব্যক্তিত্বের ছবি। নিছক সৌন্দর্যায়নের খাতিরেই।
তার মধ্যে যেমন ছিল মাদার টেরেসা বা ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের ছবি, তেমনই
ছিল ফুলন দেবীর ছবিও।
কেন ফুলন
দেবীর ছবি দেওয়ালে আঁকা হল,
তা নিয়ে সম্প্রতি রাজপুত সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়।
সারা ভারত ক্ষত্রিয় মহাসভার ইনদওর এককের পক্ষ থেকে মোহন সেনগর বলেন, ‘‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে, ফুলন দেবী সমাজের জন্য
এমন কী কাজ করেছেন? কেন তাঁর ছবি মাদার টেরেসা বা রানী
লক্ষ্মীবাঈয়ের মতো মহান নারীদের ছবির সঙ্গে আঁকার অনুমতি দেওয়া হল?’’
বিতর্কের
মুখে ফুলন দেবীর ছবিটি দেওয়াল থেকে সরিয়ে দেন রেল কর্তৃপক্ষ। তাতে আবার বিক্ষোভে
ফেটে পড়ে স্থানীয় মাল্লা সম্প্রদায়। ফুলন ওই সম্প্রদায়েরই মানুষ ছিলেন। মধ্যপ্রদেশ
মাঝি মাছুয়া এবং আদিবাসী মহাসঙ্ঘের সভাপতি চন্দ্রশেখর রাইকোয়ার বলেন, ‘‘যে
ভাবে ছবিটি সরিয়ে দেওয়া হল তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। খুব শীঘ্রই আমাদের প্রতিনিধি রেল
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গিয়ে কথা বলে ছবিটি ফের দেওয়ালে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাবেন।’’
পাশাপাশি চন্দ্রশেখরের দাবি, ফুলন দেবীর জীবন
আসলে এক নারীর সংগ্রামের গল্প।
এ বিষয়ে রতলম
রেল ডিভিশনের ডিভিশনাল ম্যানেজার আর এল সুনকরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রেল
কর্তৃপক্ষ বিতর্কিত ছবিটি সম্পর্কে জানার পরেই তা সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সুনকর
আরও জানান, যে সংস্থা ওই ছবি আঁকার বরাত পেয়েছিল তাদের আগেই
স্পষ্ট জানানো হয় যে রেলের অনুমতি ছাড়া কোনও ব্যক্তিত্বের ছবি আঁকা যাবে না।
সৌজন্য –
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৮/০৪/২০১৯।
Subscribe to:
Posts (Atom)