Wednesday, May 29, 2019

উচ্চমাধ্যমিকে স্টার নম্বর পেয়ে ডাইনি অপবাদের জবাব দিলেন আদিবাসী কন্যা বাসন্তী কিস্কু।

বছর তিনেক আগে এক আদিবাসী পরিবারকে ডাইনি অপবাদ দিয়েছিল গ্রামবাসীরা। ডাইনি অপবাদে মার জুটেছিল। সপরিবার ছিলেন ঘরছাড়া। সেই পরিবারের মেয়ে বাসন্তী কিস্কু ছাত্রী-নিবাসে থেকে নাছোড় লড়াইয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় স্টার নম্বর ৩৯০ পেল।
তিন বছর আগে শান্তিনিকেতন থানার রূপপুর পঞ্চায়েতের বিনোদপুর গ্রামে মা-বাবা, মাসি-দিদার সঙ্গে থাকত বাসন্তী কিস্কু। গ্রামের এক বৃদ্ধ রোগে মারা যান। পাঁচ দিনের মাথায় ওই বৃদ্ধের ছেলেকেও সাপে কাটে। তাঁকে ঝাড়খণ্ডের এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ওঝার নিদান ছিল, ‘গ্রামে ডাইনি পরিবার রয়েছে। পরপর মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী। ওঝার নিদান! তাই চিকিৎসার অভাবে ওই যুবকের মৃত্যু সত্ত্বেও গ্রামবাসীর সমস্ত আক্রোশ পড়ে বাসন্তীর পরিবারের উপরে। পরিবারের সকলকে বেধড়ক মার, বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। আহত অবস্থায় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে কিছু দিন ভর্তিও থাকতে হয় বাসন্তী এবং বাড়ির লোকেদের।
এর পরে বাসন্তীর পড়াশোনায় ছেদ পড়ে। একটা সময় বাসন্তী ভেবেছিলেন, পড়া ছেড়ে দেবেন। তার পরে মন বদলালেন। অপবাদ মাথায় নিয়ে বাঁচবেন না বলে ঠিক করলেন বাসন্তী কিস্কু। লড়াইয়ের সেই শুরু। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে বাড়ি ছেড়ে মোলডাঙা বীণাপাণি আদিবাসী ছাত্রী-নিবাস থেকে পড়াশোনা শুরু করেন বাসন্তী। পরীক্ষার কিছু দিন আগে গ্রামে ফিরে উচ্চমাধ্যমিক দেন বিনুড়িয়া সুমিত্রা বালিকা বিদ্যালয় থেকে। বাসন্তী ভাল ভাবে পাশ করলেও গ্রামের লোকেরা খবরটুকুও নেয়নি। বাসন্তী বলছেন, ‘‘গ্রামের লোক আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। বাড়িতেও কেউ আসে না।’’
জেলায় জেলায় ডাইনি অপবাদে মারধর, ঘরছাড়া করার ঘটনা নতুন নয়। বহু সচেতনতা শিবির, আইনি উদ্যোগেও অনেকের মন থেকেই বহুলালিত এই অন্ধবিশ্বাস মুছে ফেলা যায়নি। বিনোদপুরের বাসিন্দা ফুলুই বেসরা মানলেন, ‘‘গ্রামের পালা-পরবেও ওই পরিবারের কাউকে ডাকা হয় না।’’ গ্রামের মোড়ল কালীচরণ হাঁসদা অবশ্য বলেন, ‘‘সমাজ থেকে ব্রাত্য করে রাখা হয়নি। ওরাই গ্রামের মানুষের সঙ্গে কম মেলামেশা করেন।’’
সে তর্ক সরিয়ে এমন মেয়ের লড়াইকে কুর্নিশ করছেন বিনুড়িয়া সুমিত্রা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অদিতি মুখোপাধ্যায় মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘‘কুসংস্কারকে জয় করে যে ভাবে বাসন্তী পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে, সেটা দৃষ্টান্ত। নিশ্চয়ই অনেকে অনুপ্রাণিত হবে।’’
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, বাসুদেব ঘোষ, ৩০ মে, ২০১৯।

4 comments:

  1. ব্লগটা উন্নত করো। একটা ভালো হেডার ফটো দাও

    আর থিম অপশনে গিয়ে কালারটাও চেঞ্জ করো। সাথে গুগল সার্চে এড করে দাও

    ReplyDelete