ভোট মানে
অধিকার। ভোট মানে একটা পরিচয়। কিন্তু যাঁদের পরিচয়টাই নেই? উত্তরবঙ্গের
ধীমালরা লড়ছেন তপশিলি উপজাতি হওয়ার আশায়। প্রতিবার ভোটের আগে পরিচয় দেওয়ার
প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা। ধীমালদের ভোটও পান। তবে ধীমালরা থেকে যায় ব্রাত্যই।
শিলিগুড়ি
শহর থেকে খুব দূরে নয়। নেপাল সীমান্তের দিকে যেতে নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি,
মাটিগাড়া ব্লক। মাত্র ২৫-৩০ কিলোমিটার হবে। সেখানে যেন এক আলাদা
দেশ। থাকেন ধীমালরা। ভাষা আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা, সেই দেশ
বাঁচে নিজের খেয়ালে।
পাশিংডো বা
দোতারা,
তুলজাই বা ঢোল, উড়নি, টুমনা,
মরচুঙ্গা, গোমনার মতো বাঁশের তৈরি
বাদ্যযন্ত্রে এখানে সুর বাজে। শিকার করার নাচকে ধীমালরা বলেন লেইয়াদা, গ্রামীণ পুজো এখানে ডেরাদি। পুলিশ প্রশাসন নয়, ধীমালদের
সমস্যা মেটান প্রধান বা মাঝি। মাঝিরা খবর পান লানডার থেকে। দোষীদের শাস্তি দেয়
মাঝির নেতৃত্বে পঞ্চ।
উত্তরবঙ্গের
তরাইয়ের অন্যতম প্রাচীন জনজাতি ধীমাল। ১৪টি গ্রামে প্রায় ৪০০ বছর ধরে ধীমালদের বাস।
এখন জনসংখ্যা ১ হাজার ১৫ জন। এঁদের মধ্যে ভোটার ৩০০ জন। এঁরা ঝুম চাষ এবং শিকার
নির্ভর জনজাতি।
বিভিন্ন
গবেষণা বলছে,
ধীমালরা মঙ্গোলীয় উপজাতির। কোচ, মেচ, রাভা, লিম্বু জনজাতির সঙ্গে ধীমালদের কিছু মিল
থাকলেও বেশিরভাগটাই অমিল। অস্তিত্বের লড়াইয়ে নেমে তাঁরা বারবার দাবি জানিয়েছেন,
তপশিলি উপজাতি হওয়ার। প্রতি ভোটে নিয়ম করে ভোটও দিয়েছেন, তবে দাবি
মেটেনি। উলটে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন। এই জনজাতির মধ্যে প্রথম
স্নাতক গর্জন মল্লিক স্থানীয় পানিঘাটা হাইস্কুলের শিক্ষক। তাঁর প্রশ্ন, সংখ্যায় কম বলেই কি অবহেলা ?
বিজেপির
ইশতেহারে গতবারের মত এবারেও জায়গা পেয়েছে ধীমালদের মর্যাদার দাবি। তবে প্রতিবারই
বিশ্বাস ভাঙে ধীমালদের। কেউ কথা রাখে না। ধীমালরা নিজেদের জীবনেই খোঁজে খুশির আলো।
শুধু অস্তিত্বের অন্ধকার মুছতে চাওয়ার দাবি। ভোট দিলেও কেন ব্রাত্য থাকা? প্রশ্ন
তোলে প্রাচীন জনজাতি।
সংবাদ সৌজন্য
- News18 Bangla, April 17, 2019।
No comments:
Post a Comment