জঞ্জালের স্তূপ থেকে কাগজ কুড়ত আদিবাসী কিশোর জিতেন টুডু,
সহৃদয় যুবক মহম্মদ মুসা জিতেনকে স্কুলে ভরতি করে দিলে সবাইকে তাক লাগিয়ে
উচ্চমাধ্যমিকে ৭৫ শতাংশ বা স্টার নম্বর নিয়ে পাশ করেছে।
দশ বছর আগের কথা। উত্তর দিনাজপুরের এক সামান্য কৃষক মহম্মদ মুসা
একদিন এক কাগজ কুড়নো ছেলেকে লক্ষ্য করেন। সারা গায়ে ধুলো মাখা একটা বাচ্চা ছেলে
রাস্তা থেকে কাগজ কুড়িয়ে সেই কাগজটাই মন দিয়ে পড়ছে। তারপর কাগজের টুকরোটা ঝোলায়
পুরে আবার একটা ছেঁড়া,
ফেলে দেওয়া কাগজের খোঁজ করে। মুসা খোঁজ করে জানতে পারেন, জিতেন টুডু নামে সেই আদিবাসী ছেলের বাড়ি তাঁদের পাশের গ্রামেই। সেই
ছেলেকে মুসা যেন নিজের ছেলেই করে নেন। তাকে ঘরে নিয়ে আসেন। ভর্তি করিয়ে দেন
স্কুলে। সেই জিতেন টুডু এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৫ শতাংশ বা স্টার নম্বর নিয়ে পাশ
করেছে।
মহম্মদ মুসা নিজে মাধ্যমিক পাশ। ছোট চাষি। সামান্য জমি
রয়েছে। থাকেন উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায়। পাশের গ্রাম গোয়ালগাঁওয়ে বাড়ি জিতেন
টুডুর। তিন বছর বয়স থেকে থাকতেন দিদা ফুলমণি ওরাওঁর কাছে। দিদা সংসার চালাতে
পারতেন না। কিছুটা বড় হয়ে ওঠার পরে জিতেন দিদার সঙ্গে পথে কাগজ কুড়োত। স্থানীয়
বাসিন্দারা জানান,
জিতেনের যখন তিন বছর বয়স, ফুলমণির কাছে তাঁকে
রেখে তাঁর মা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। কিছু দিন পর বাবাও চলে যান ভিন্ রাজ্যে। দু’জনেই আর ফেরেননি।
তার মধ্যেই যতটুকু সম্ভব পড়াশোনা করতেন জিতেন। স্থানীয়
একটি স্কুলে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলে যাওয়া আর হত না। তখনই পাশে পান
মুসাকে। মুসাই গিয়ে ফুলমণির সঙ্গে কথা বলে জিতেনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। সোমবার
মুসা বলেন,
‘‘প্রতি দিন সাইকেল চেপে ১২ কিলোমিটার দূরে চাকুলিয়া হাইস্কুল গিয়ে
পড়াশোনা করত। ওর মধ্যে জেদ রয়েছে। মেধা রয়েছে। ওর পাশে আমরা আছি।’’
মহম্মদ মুসার চার ছেলেমেয়ে। তাঁর স্ত্রী রহিমা জানান, জিতেনও
তাঁদেরই সন্তান। তাঁদের সংসারের সুখ-দুঃখ জিতেনেরও সুখ দুঃখ।
জিতেনেরও বক্তব্য তাই। তাঁর কথায়, ‘‘আমার
জন্মদাতা বাবা-মা কোথায় জানি না। কিন্তু তার পরে আমি বাবা পেয়েছি। মা পেয়েছি।
সংসার, ভাইবোন পেয়েছি। এ বার আমারও ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। আমি
ভাল করে পড়াশোনা করে যেতে চাই। পরে শিক্ষকতা করব।’’
খুশি ফুলমণিও। খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। স্কুলের প্রধান
শিক্ষক বাসুদেব দে বলেন,
‘‘জিতুর জন্য যত গর্ব হচ্ছে, মুসার জন্য তার
চেয়ে কম হচ্ছে না। আজ মুসারই জয়ের দিন।’’
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, মেহেদি হেদায়েতুল্লা,
২৮/০৫/২০১৯।
No comments:
Post a Comment