Saturday, May 11, 2019

সরকারী সুযোগ সুবিধে ও উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত ভাঙ্গড়ের আদিবাসী মহল্লা।


আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বেজায় ক্ষিপ্ত ভাঙড়ের আদিবাসী মহল্লা। ফি বছর নির্বাচন এলেই দেখা মেলে নেতাদের। হাতজোড় করে তাঁরা গ্রামে আসেন ভোট ভিক্ষা করতে। গালভরা প্রতিশ্রুতি দেন এলাকার উন্নয়ন নিয়ে। পানীয় জল, বিদ্যুৎ, বেহাল রাস্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সরকারি আবাসের কথা বলেন। কিন্তু কোথায় কী? ভোট মিটে গেলেই সব ফক্কা। ধুলোয় গড়াগড়ি খায় সব প্রতিশ্রুতি। যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায় ভাঙড়ের আদিবাসী মহল্লা। বাম-ডান সব আমলেই এখানে না জ্বলে বাতি, না পড়ে পিচের প্রলেপ, না জোটে মাথার উপর ছাদ। বছরভর কষ্ট করেই দিন কাটে আদিবাসী মানুষের। তাই এ বার আর বুথমুখী হবেন না বলে ঠিক করেছেন বেওতা কুলবেড়ের নতুন পাড়া, ঘাসখালির বাসিন্দারা। ভোটের কথা শুনলেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন ওঁরা। গুচ্ছের অভিযোগ। গুচ্ছের বঞ্চনা। ওঁরা তাই ঠিক করেছেন, ভোট দিতেই যাবেন না। কোন নেতা কথা রাখে না। তাই ভোটে আগ্রহ নেই ভাঙড়ের আদিবাসী মহল্লার, বলছেন এলাকার আদিবাসীরা।
কুলবেড়িয়া নতুন পাড়াতেই বাস সাবিত্রী সরদার, আলপনা সরদারদের। সাবিত্রী দেবী বলেন, ‘প্রতিদিন এখান থেকে সাইকেল চালিয়ে নিউটাউনে যাই পরিচারিকার কাজ করতে। আজও এখানকার একমাত্র রাস্তা পাকা হল না, কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠল না। ভোট এলে নেতারা আসেন, প্রতিশ্রুতি দেন, তার পর ভোট মিটে গেলে নেতারাও হাওয়ায় মিলিয়ে যান।সরদার পাড়ার খালপাড়ে বাড়ি কাশী সরদারের। পেট চালাতে তিনি এবং এক নাবালক ছেলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। সেই কাশীর ঝোপড়পট্টি কালবৈশাখির ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। কাশীর স্ত্রী সোনামণি সরদার বলেন, ‘একটা ঘরের জন্য পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস সর্বত্র ছোটাছুটি করলাম। কিন্তু ঘর আমরা পেলাম না। তাই এ বার আমরা ভোট দিতে যাব না বলে ঠিক করেছি।’
ভাঙড় ২ ব্লকের একেবারে শেষ প্রান্তে নিউটাউন লাগোয়া বেওতা ১ অঞ্চলের ঘাসখালি এবং বেওতা ২ অঞ্চলের কুলবেড়িয়া নতুন পাড়ায় প্রায় দুশো আদিবাসী পরিবার আছে। সমগ্র ভাঙড়ে উন্নয়নের ছিটেফোঁটা দেখা গেলেও বরাবরই বঞ্চিত আদিবাসী মহল্লা। যা নিয়ে বারেবারেই ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন আদিবাসীরা।
আদিবাসী গৃহবধূ সরস্বতী সরদার বলেন, ‘ভোটের দিন নেতারা আমাদের জন্য অটো, টোটো পাঠান বুথে যাওয়ার জন্য। কোনও কোনও রাজনৈতিক দল আবার বিরিয়ানি, মিষ্টির প্যাকেটের ব্যবস্থা করেন। আমাদের মতো গরিব মানুষ সে-সব পেয়ে সব ভুলে যান। কিন্তু ভোট মিটলেই আর কেউ আমাদের চিনতে পারেন না। পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, বিধায়ক কেউই আর এ তল্লাটে আসেন না আমাদের সুখদুঃখের খবর নিতে।এই পাড়া থেকে ভেড়ির পাড় ধরে চল্লিশ মিনিট সাইকেল চালিয়ে বামনঘাটায় যান কলেজ পড়ুয়া পূজা সরদার। সেখান থেকে আবার দুটো বাস পাল্টে গড়িয়াহাটের কলেজ। পূজার অভিযোগ, ‘যোগাযোগ অবস্থার উন্নতি না-হওয়ার জন্য এখানাকার বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
বেওতা ২ এর আদিবাসী পাড়াটি ৩৬ নং বুথের অন্তর্গত। ওই বুথের ৮৫০ জন ভোটারের মধ্যে ৪০০ ভোটার আদিবাসী। আদিবাসীদের অভিযোগ, তাঁরা ভোটে নির্ণায়ক শক্তি হলেও সরকারি শৌচালয়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর, বাংলা আবাস যোজনার ঘর, বিশুদ্ধ পানীয় জল কিছুই জোটে না তাঁদের কপালে। এ নিয়ে আদিবাসীদের সংগঠন ‘অল আদিবাসী সাদ্রি সুশার অ্যাসোসিয়েশন’ জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে। বেওতা ২-এর উপপ্রধান সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমরা আদিবাসীদের জন্য যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। ওঁদের জন্য সরকারি স্তরে যা করণীয় তা করা হয়।ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও কৌশিককুমার মাইতি বলেন, ‘ওই এলাকায় ১৮০ টির মতো পরিবার আছে। কিছুদিন আগে আধিকারিকরা গিয়ে প্রতিটি বাড়িই সার্ভে করেছেন। যাঁরা সঠিক দাবিদার তাঁরা সকলেই সরকারি আবাস যোজনার ঘর পাবেন।
সংবাদ সৌজন্য – এইসময়, প্রশান্ত ঘোষ, ১১/০৫/২০১৯।       

No comments:

Post a Comment