Saturday, May 4, 2019

আদিবাসী সমাজের বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানের জন্য মজুত হাড়িয়া নষ্ট করল আবগারি দপ্তর।

আদিবাসী সমাজের বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানের জন্য মজুত হাড়িয়া নষ্ট করল আবগারি দপ্তর, প্রতিবাদে ৪ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ আদিবাসীদের।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর থানার বৈরাঠায় আদিবাসীদের সামাজিক অনুষ্ঠানে আবগারি দপ্তরের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরই প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে হরিরামপুরের বৈরাঠায় স্থানীয় আদিবাসী পরিবারের লোকেরা রাস্তা অবরোধ করেন। ওই অবরোধে নব দম্পতিও শামিল হন। টানা চার ঘণ্টা অবরোধ চলার পর পুলিসের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর থানার বৈরাঠায় এক আদিবাসী যুবকের বিয়ের অষ্টমঙ্গলায় নববধূর পরিবারের আত্মীয়দের এদিন জামাই বাড়িতে আমন্ত্রণ ছিল। সেই মতো বরপক্ষ আদিবাসী রীতি মেনে হাড়িয়া তৈরি করে। এছাড়াও মাছ, মাংস খাওয়ানোর আয়োজন চলছিল। কিন্তু অভিযোগ, জেলা আবগারি দপ্তর ও মালদহ আবগারি রেঞ্জ সকালে অভিযান চালিয়ে অনুষ্ঠানবাড়িতে মজুত হাড়িয়া নষ্ট করে দেয়। ওসব তৈরির সামগ্রী ও হাড়িয়া বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। এতেই স্থানীয় আদিবাসী পরিবারগুলি ক্ষিপ্ত হয়ে সকাল ১০টা থেকে হরিরামপুর-বৈরাঠা গ্রামীণ রাস্তা অবরোধ করে। এতে ওই রাস্তা ব্যবহারকারীরা দুর্ভোগে পড়েন। হরিরামপুর থানার পুলিস পৌঁছে বেলা ২টো নাগাদ তাঁদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়।
আদিবাসী সমাজের গ্রাম প্রধান মাঝি বাবা জয়রাম হেমব্রম বলেন, গত শুক্রবার পাড়ার ছেলে নিতাই বেসরার সঙ্গে বেজপুকুরের শেফালী বাস্কের বিয়ে হয়। আমাদের আদিবাসী সমাজের রীতি অনুযায়ী বিয়ের সাতদিন পরে কনেপক্ষকে বরপক্ষ নিমন্ত্রণ করে খাওয়ায়। ওই অনুষ্ঠানে হাড়িয়া খাওয়ানো হয়। কিন্তু এদিন সকালে আবগারি দপ্তর বিয়েবাড়িতে এসে তাণ্ডব চালায়। বানানো হাড়িয়া নষ্ট করে দেয়। কিছু হাড়িয়া নিয়েও যায়। বাড়ির মহিলারা তাঁদের অনুরোধ করলেও অভিযানে আসা কর্মীরা তা শোনেননি। এরই প্রতিবাদে গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা অবরোধ করে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা আবগারি দপ্তরের সুপারিনটেনডেন্ট শুভেন্দু শেঠ বলেন, হরিরামপুরের বৈরাঠায় এদিন সকালে আমাদের একটি দল অবৈধভাবে মজুত চোলাই মদের কারবার বন্ধ করতে অভিযানে যায়। ওই অভিযানে মালদহ বিভাগের অফিসাররাও ছিলেন। একটি আদিবাসীর বাড়িতে রাখা হাড়িয়া নষ্ট করে দেওয়া হয়। প্রায় ৪০ লিটার হাড়িয়া বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আমরা পরে যখন জানতে পারি সেখানে আদিবাসীদের বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছে তখন বেরিয়ে আসি। পরবর্তীতে শুনেছি সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। আমাদের অভিযান নিয়মিত চলবে।
গঙ্গারামপুরের এসডিপিও বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বৈরাঠায় অদিবাসী সমাজের বিয়ের অনুষ্ঠানে সমস্যার খবর পেয়ে সেখানে পুলিস কর্মীরা যান। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হয়। তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। তাঁদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেওয়া হয়।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর থানা বৈরাঠায় আবগারি দপ্তর আদিবাসীদের বিয়ের অনুষ্ঠানে মজুত হাড়িয়া নষ্ট করায় এদিন স্থানীয় শতাধিক আদিবাসী তীর, ধনুক ও মাদল নিয়ে রাস্তায় চলে আসে। বাড়ির মহিলারা ঝাঁটা নিয়ে প্রতিবাদে শামিল হন। তাঁরা সকলে হরিরামপুর-বৈরাঠা গ্রামীণ সড়কে গাছ ফেলে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। রাস্তা অবরোধের জেরে গ্রামের সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। আদিবাসীদের পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ মানুষও পরে ঘটনা স্থলে গিয়ে তাঁদের আন্দোলনে যুক্ত হন। তাঁরা সকলেই আবগারি দপ্তরের আধিকারিকদের সেখানে আসার দাবি জানাতে থাকেন। হরিরামপুর থানার পুলিস ঘটনা স্থলে গিয়ে আদিবাসী সমাজের স্থানীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। বেলা ২টো নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সংবাদ সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ০৪/০৫/২০১৯।

No comments:

Post a Comment