সাঁওতালি ভাষায় এফ এম রেডিয়োর অনুষ্ঠান, রেডিয়ো জকির
ভুমিকায় আদিবাসী সাঁওতালি তরুণী আর যে শিখা মান্ডি।
সানাম ক ইঞা জোহার আর দুলেড়ঃ...
প্রথমদিন যখন এফএম স্টুডিওয় লাইভ মাইকে কথাগুলো বলছিলেন, শিখা
নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না! বাংলায় বাক্যটার অর্থ, ‘সবাইকে আমার নমস্কার ও ভালবাসা’।
বলতে বলতে শিখার মনে হচ্ছিল, স্বপ্ন দেখছেন না তো!
মাতৃভাষা সাঁওতালিতে রেডিও অনুষ্ঠান করার স্বপ্ন সত্যি হবে শিখা
মান্ডি ভাবেননি। ছাপোষা পরিবারের মেয়ের রেডিও জকি-র কেরিয়ার গড়ার চল এখনও তেমন নেই।
তাছাড়া সরকারি আকাশবাণী ছাড়া বেসরকারি কোনও এফএম চ্যানেলেই সাঁওতালিতে অনুষ্ঠান হয়
না। তাই নিজের ভাষায় রেডিওতে অনুষ্ঠানের কথা ভাবাটা আদিবাসী তরুণীর কাছে আকাশকুসুমের
সামিল ছিল।
সেই কল্পনাই এখন বাস্তব। ঝাড়গ্রাম শহরের একটি এফএম চ্যানেলে
‘আরজে শিখা’ নিজের শো করেন সপ্তাহে পাঁচদিন। কলকাতায় কলেজে পড়েছেন আদতে বেলপাহাড়ির
গজপাথর গ্রামের মেয়ে শিখা। কিন্তু চেনা পথে কেরিয়ার না গড়ে শিকড়ের টানে ফিরেছেন ঝাড়গ্রামে।
আজ, বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজের অনুষ্ঠানে বিশেষ পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর।
শিখার কাছে অবশ্য প্রতিটি দিনই মাতৃভাষা দিবস। তাঁর অনুষ্ঠানে
যাঁরা ফোন করেন, তাঁদের সকলকেই তিনি বলেন সাঁওতালিতে কথা বলতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সবাইকে
বলি নিজের মাতৃভাষায় কথা বলা গর্বের। তাই পড়াশোনা, কেরিয়ারের প্রয়োজনে অন্য ভাষা শিখতে
হলেও মাতৃভাষা শিখতেই হবে। আমি যে সামান্য ক্ষেত্রে আমার শিকড়ের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে
চেষ্টা করি, সেটাই আমার কাছে ভাষা দিবস উদ্যাপন।’’
জঙ্গলমহলও সেই উদযাপনে সামিল। তাই শিখার শো, জোহার ঝাড়গ্রাম
(নমস্কার ঝাড়গ্রাম) শুরুর পরে এতই জনপ্রিয় হয় যে সময় এক ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে করতে হয়েছে
দু’ঘণ্টা। চ্যানেলেরই আরেক আরজে ট্যামি (তন্ময়) জানালেন, প্রায় এক লক্ষ মানুষ অনুষ্ঠান
শোনেন।
শিখা নিজে যে সব আরজেদের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা পান তাঁদের মধ্যে
অন্যতম মীর। সেই মীরও গর্ব অনুভব করছেন শিখার কথা জেনে। মীর বলছেন, ‘‘ইওরোপে দেখেছি
সব দেশের মানুষ নিজেদের ভাষায় কথা বলতে অসম্ভব গর্ব অনুভব করেন। আর এ দেশে জাতীয় ভাষা
কী তা নিয়ে কাজিয়া চলে, প্রাদেশিক ভাষায় কথা বললে হেয় করা হয়।’’ শিখার কাজকে মীর তাই
তুলনা করছেন আগুনের শিখার সঙ্গেই। তাঁর কথায়, ‘‘এমন শিখাকে জ্বালিয়ে রাখা আমাদের সকলের
কর্তব্য।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, সুজিষ্ণু মাহাতো, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment