ইংরাজী ১৯৫২ সালে
পাহাড়িয়া সেবা মন্ডল বার্ষিক রিপোর্টে এই কথা বলা হয় যে, "মানভূম জেলায় শ্রী সারদা প্রসাদ কিস্কু 'ভুরকাঃ ইপিল' কবিতা
পুস্তক লিখিয়া সাঁওতালি ভাষার এক নতুন জিনিষ দিয়েছেন এবং প্রমান করিলেন যে
সাঁওতালি ভাষায় মৌলিক উপায়েও উচ্চ স্তরের ভাবপূর্ণ কবিতা লেখা যাইতে পারে। ইহা
অন্যান্য কবিগনকে প্রেরনা যোগাইবে"। Bulletin of Cultural Research Institution, Santal Song,
different types by S.S.Bhattacharya বলেছেন - Most Powerful Poet in the Language (Santali)।
কবি, সাহিত্যিক, সমাজ
সংস্কারক ও আদর্শ শিক্ষক সারদা প্রসাদ কিস্কুর জন্ম ১৯২৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী। পুরুলিয়া জেলার
দাঁড়িকাডোবা (ভালুকবাসা) গ্রামে। পিতা- চরন কিস্কু। খুব গরীব ছিলেন। চরন বাবুর
চার কন্যা। আর এক মাত্র পুত্র - সারদা প্রসাদ। ১৯৩৮ সালে জোরোবাড়ি নিম্ন প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে হাতেখড়ি। পরবর্তীকালে বড়গেড়িয়া উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রথম
বিভাগে কৃতকার্য হন ১৯৪০ সালে। পরে বাঁকুড়া জেলার রানীবাঁধ মিডিল স্কুলে ভর্তি
হন। ১৯৪৩ সালে মেরিট স্কলারশিপ পান। রানীবাঁধ স্কুল থেকে পাশ করার পর খাতড়া হাই
ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৪৮ সালে সেখান থেকে
ফার্স্ট ডিভিশনে ম্যাট্রিক পাশ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য বাঁকুড়া জেলার
বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজে আই.এস.সি. তে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু খরচের অভাবে অল্প
দিনের মধ্যে লেখা পড়ায় ইতি টানতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে বান্দোয়ান হিন্দি
শিক্ষন কেন্দ্রে ট্রেনিং নেন। ট্রেনিং ছিল
তিন মাসের। হঠাৎই জামতোড়িয়া সিনিয়র বেসিক স্কুলে শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন।
১৯৬১ সাল পর্যন্ত জামতোড়িয়া স্কুলেই শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালে বান্দোয়ান বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস দলের পক্ষ
থেকে ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন কিন্তু লোক সেবক সংঘের প্রার্থী ক্ষুদিরাম মাঝির কাছে
পরাজিত হন। জিততে না পারার জন্য আবার শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন সিংরাইডি গ্রামে।
পরে নিজের বাড়ীর কাছেই বড়দিহি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। সেখান থেকেই ১৯৮৯ সালের জানুয়ারী মাসে অবসর গ্রহন করেন। আদর্শ
শিক্ষক হিসাবে ১৯৭৩ সালে রাজধানী দিল্লী তে রাষ্ট্রপতি ভি.ভি.গিরির হাত থেকে আদর্শ
শিক্ষকের পুরস্কার নেন।
কবি কিস্কু যৌবনে সুন্দর
গান করতেন এবং মিষ্টি সুরে বাঁশি বাজাতে পারতেন। যেখানেই যেতেন গানের খাতা সঙ্গে
নিয়ে যেতেন। কবি কিস্কুর কবিতা-য় একটা নতুন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। সমস্ত
কবিতার ছন্দের গাবান খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর প্রথম কবিতার বই - "ভুরকাঃ
ইপিল"। এটা ১৯৫৩ সালে সাঁওতাল পাহাড়িয়া সেবা মন্ডল, দেওঘর থেকে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় বই -
"কুহু বাউ" (১৯৬০)। আর তৃতীয় বই "গাম গাঁদার" (১৯৬৭) প্রকাশিত
হয়। সমস্ত গান, কবিতায় পাওয়া যায় কল্পনা
জগতের সমস্ত কিছুই। পাওয়া যায়
পৃথিবীর মানুষ, পশু,পাখী, গাছ গাছালির খুব গভীরের কথা। সাঁওতালি ভাষা
সাহিত্যের উপর এত বেশি প্রেম ও উদ্যোগ খুব কম জনের মধ্যে পাওয়া যায়।
১৩৭৭ সালের ১৩ই কার্ত্তিক অর্ধ
সাপ্তাহিক আনন্দবাজার পত্রিকায় অধ্যাপক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সাঁওতাল নবজাগৃতি শ্রীসারদা প্রসাদ কিস্কু আধুনিক সাঁওতালির
সর্বাপেক্ষা প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন কবি।", 'হড়
সম্বাদ' পত্রিকার সম্পাদক ডমন সাহু
'সমীর' বলেছিলেন - Up To Bottom কবি উনি। মহাশ্বেতা দেবী বলেছেন, “কবি সারদা
প্রসাদ মস্ত বড় মাপের মানুষ, শ্রদ্ধা করি তাঁকে”। কবি কিস্কুর মৃত্যুর পর মহাশ্বেতা দেবী
বলেছিলেন – “আমার কাছে বড় এটা বনস্পতির মৃত্যু”।
সারদা বাবু কবি হিসাবে
নিশ্চয় বড় ছিলেন। কিন্তু দায়িত্ববান, বিবেকী, নির্ভীক, এ
সব বিচারে তিনি মানুষ হিসাবে আরও বড় ছিলেন। বহুমাত্রিক ব্যাক্তিত্ব ছিলেন তিনি। বড় বড় ঘা খাওয়া সারদাবাবুর জীবনে
নিত্য সঙ্গী ছিল। কিন্তু তিনি এমন লোক
ছিলেন যিনি নিজের স্বার্থের কথা বলতে পারতেন না। অত্যন্ত প্রখর ছিল তাঁর
আত্মসম্মানবোধ। সারদা বাবু শুরুতে প্রকৃতির কবি ছিলেন। পরবর্তীকালে দুঃখের কবি।
শেষকালে বিপ্লবী কবি। জীবনে অনেক গান লিখে গেছেন। তিনি শিশু সাহিত্য "গিদরা
বাউলি" ও বেশ কিছু লিখেছেন। বাংলাতেও খুব সুন্দর প্রবন্ধ লিখতে পারতেন।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রত্রিকাতেও লিখেছেন। সমাজের অনেক সমস্যা তুলে ধরতেন।
অনুবাদ সাহিত্যেও তাঁর অসীম শক্তি ছিল। তিনি রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা সাঁওতালিতে
অনুবাদ করেন। কবি কিস্কু বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, সংঘের সংঘে যুক্ত থেকে সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি
বাঁচিয়ে রেখে সাঁওতাল জাতিকে উন্নত করার চেষ্টা করে গেছেন সারা জীবন। তিনি ছিলেন
"সুসার গাঁওতা" পুরুলিয়ার সভাপতি। পশ্চিমবঙ্গ সরকাররের Santali Language
Committee (সাঁওতালি ভাষা কমিটি)-র সদস্য। পুরুলিয়া সান্তালি লিটারেরী
সোসাইটির সভাপতি। পিপলস ইউনিয়ন ফর সিবিল লিবার্টিজ (Peoples Union for
Civil Liberties), পুরুলিয়া শাখার সভাপতি।
খেরওয়াল গাঁওতা, জামতোড়িয়ার সভাপতি।
খেরওয়াল আড়াং (১৯৫৭-৫৮) ও সুসার ডাহার (১৯৭২-৭৩) পত্রিকার সম্পাদক। কবি কিস্কুর
রচিত ও প্রকাশিত বইপত্র - (১) ভুরকাঃ ইপিল (১৯৫৩), (২) কুহু বাউ (১৯৬০), (৩) গাম গঁদার (১৯৬৭) (৪), লাহাঃ হররে (১৯৮৫), (৫)সলম লটম (কাহিনী) (১৯৮৮), ( ৬) জুডাসি অনল মালা (১৯৯৪), (৭) বিদাঃ বেড়া (১৯৯৭) (৮) সঙ্গীতিকা (১৯৯৮)।
ইত্যাদি।
কবি, আদর্শ শিক্ষক ও সমাজ সংস্কারক সারদা প্রসাদ
কিস্কুকে তাঁর অবদান ও মহত্বের জন্য বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন
সংস্থা, সংগঠন তাঁকে সম্বর্ধনা, স্মারকপত্র, পুরস্কার প্রদান করেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে আদর্শ
শিক্ষক হিসাবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে কলকাতার "আবওয়াঃ গাঁওতা" কর্তৃক
আদর্শ শিক্ষক হিসাবে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। ঐ গাঁওতা কর্তৃক ১৯৬৩ সালে স্মারকপত্র
(সারহাও সাকাম) প্রদান। ১৯৭৩ সালে ভারতীয়
সাহিত্য সংঘ, দেওঘর, বিহার কর্তৃক মানপত্র প্রদান। মহারাজনগর
আদিবাসী ক্লাব, সেনেড়া, পুরুলিয়া কর্তৃক ১৯৮১ সালে মানপত্র প্রদান।
১৯৮২ সালে বিক্রমশীলা হিন্দি বিদ্যাপীঠ কর্তৃক কবিরত্ন প্রদান। সাঁওতালি রাইটার্স
রিসেপসন কমিটি, সাঁতরাগাছি, হাওড়া কর্তৃক হিহিড়ি পিপিড়ি প্রদান।
১৯৮৬-৮৭ সালে বিহার সরকার, রাজভাষা বিভাগ কর্তৃক
জনজাতীয় পুরস্কার ঘোষনা করা হয়। ১৯৮৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে গুণীজন
সম্বধর্নায় তাম্রপত্র তাপ্রদান করা হয়। ২৬ শে সেপ্টম্বর ১৯৯২ তারিখে আদর্শ শিক্ষক, ডাইনী বিরোধী আন্দোলন ও ভাষা সাহিত্যে
অবদানের জন্য স্মারক প্রদান করা হয়। সানতালি সাহিত্য পরিষদ, করহড়বিল, দুমকা
থেকে "গুরু গমকে সারহাও" প্রদান করা হয়। কবি কিস্কু আদিবাসী সাঁওতাল
সমাজ কে এক উচ্চ স্তরে তুলে দিয়ে, সাঁওতালি সাহিত্য সম্ভার
সমৃদ্ধ করে ১৯৯৬ সালের ১৮ ই মার্চ বাংলা-১৪০২ সালের ৪ঠা চৈত্র সুন্দর এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তাঁর
বিদায় কালে মহাশ্বেতা দেবী দেশবাসীকে স্মরন করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন- "বিজ্ঞানের ও
মানবতার স্বপক্ষে প্রতিটি সংগ্রামী পদক্ষেপ হবে সারদা প্রসাদের মরণোত্তর স্বীকৃতি।
সারদা প্রসাদ কিস্কুর জীবনী স্কুল পাঠ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে না কেন ? মানুষ ছিলেন তিনি, আমরা পিগমিয়।" মহাশ্বেতা দেবী বেঁচে
থাকতে জেনেছেন কিনা জানা নেই - তাঁর অনেক লেখা ঝাড়খন্ডের রাঁচী, ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.এ., বি.এ. ক্লাসের সিলেবাসে স্থান পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের
সাঁওতালি সিলেবাসে জায়গা হয়েছে। পশ্চিম বঙ্গ সরকাররের পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি আকাদেমী
থেকে কবি সারদা প্রসাদ কিস্কু স্মৃতি পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
কবি সারদা প্রসাদ কিস্কু
পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং উড়িষ্যার
বাসিন্দাদের কাছে অবিস্মরণীয়। সেই সাথে বিশ্বায়নের এই যুগে তিনি এশিয়ার সমস্ত
শোষিত আদিবাসী জনজাতির জন্য এক অনুপ্রেরণা। ভারতীয় উপমহাদেশে গণতন্ত্র অগ্রযাত্রার
একজন পথিকৃৎ হিসেবেও তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি ষাটের দশকে নিজেকে শুধমাত্র একজন
রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখেন নি। কৌম সমাজ সংস্কারেও তিনি মনোনিবেশ
করেছিলেন। জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়াতে আদিবাসীদেরকে সমাজের কু-সংস্কারের
বিষয়ে সচেতন করেছিলেন। মেয়েদেরকে ‘ডাইনী’ অপবাদে আখ্যা দিয়ে ‘সমাজচ্যূত ও হত্যা’ নিরোধের বিরুদ্ধে তিনি শক্তিশালী সামাজিক
আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি অসাধারন নৈপূণ্যে
তৎকালীন আদিবাসী কৌম সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে সচেতনতা মূলক প্রবন্ধ, কবিতা, উপন্যাস, কবিতা ও গান লিখেছেন। আদিবাসী সমাজের অন্ধকার
দিক নিয়েও তিনি কলম ধরেছিলেন। তাঁর লেখনী কুসংস্কারে আচ্ছন্ন আদিবাসী সমাজের ভিতকে
কাঁপিয়ে দিয়েছিল। অদম্য লেখনীর মাধ্যমে আদিবাসী সামাজিক প্রথা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, চিন্তা-ধ্যান, এবং
ধর্মীয় মতবাদ তিনি পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। অজ পাড়া গাঁয়ের দরিদ্র-অবহেলিত
সাঁওতাল পল্লীতে তাঁর কবি প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তিনি
সম-সাময়িক বাঙ্গালী সাহিত্যিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে লেখা শুরু করেন। কলমের মাধ্যমে
আদিবাসী জীবন-জীবিকা সাহসের সাথে তুলে ধরার জন্য তৎকালীন স্বাধীনতা আন্দোলনের
অন্যতম কর্মী ও সংগঠকে তিনি রুপান্তরিত হয়েছিলেন।
সারা বিশ্বে ৩৭ কোটি আদিবাসীর
দুই-তৃতীয়াশের বসবাস এশিয়া মহাদেশে। এশিয়ার প্রায় প্রত্যেকটি দেশে আদিবাসী জনজাতির
মানুষ বসবাস করেন। উপমহাদেশে আদিবাসীরা পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। স্বকীয়
সরলতা, সামাজিক রীতিনীতি, কৃষ্টি-কালচার, সংস্কৃতির, দর্শণ ও মতবাদের জন্যে সমাজের মূল জনস্রোতের
কাছে তারা অবহেলিত। ইউরোপীয়ানদের পাশাপাশি আর্য সভ্যতার অনেক খ্যতিমান
সাহিত্যিকেরাই আদিবাসী সভ্যতাকে জংলী সভ্যতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অনেক
বুদ্ধিজীবি পর্যন্ত মনে ভূল ধারণা পোষণ করেন - আদিবাসীদের সাহিত্য-কৃষ্টি আদিম এবং
অসভ্য।
আদিবাসীরা পশ্চিমা
সম্রাজ্যবাদ এবং স্বাধীনোত্তর মূল জনস্রোতের সাথে প্রতিযোগিতায় না পেরে বর্তমানে
প্রান্তিকতার শীর্ষে রয়েছে। অনেক আগেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী আদিবাসীদের সংস্কৃতির
শেকড় হতে বিচ্ছিন্ন করেছিল। শোষণ-নীতির বেড়াজালে পুরার জন্যে পশ্চিমারা আদিবাসীদের
দর্শণ টাকেই পাল্টে দিয়েছিল। আদিবাসীদের কৌশলে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল - ‘আদিবাসী সমাজের দর্শণ-চিন্তা, সামাজিক রীতি-নীতি ও কৃষ্টি অবৈজ্ঞানিক।
হিন্দুদের ধর্মীয় সংঘ ও খ্রিষ্টান মিশনারীর দল আদিবাসীদের দাসত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ
রাখার জন্যে ব্যপকভাবে ধর্ম প্রচারের কাজ শুরু করেন। তোষণ বা শোষণের এই বেড়াজাল
সম্পর্কে আদিবাসীরা সচেতন হয়েছিলন। বীর বীরসা মুন্ডার ‘উলগুলান’ বা
বিদ্রোহের ডাক সেটারই প্রতিফলন।
আঠার-উনিশ শতকের মাঝামাঝি
পশ্চিমা মিশনারীরা দলে দলে আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকাতে যেতেন আদিবাসীদের খ্রিষ্ট
ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য। এবং মিশনারীরা সফল হয়েছেন। চরম দরিদ্রের কবলে একটু সুখের
টানে মানুষ ঠিকই প্রলোভনে পা দিয়েছিল। আঠার শতকের শেষে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে
সচেতনতার ফলে আদিবাসীরা আবার শেকড়ের টানে নিজ সংস্কৃতিতে ফিরে যেতে শুরু করেন।
শেকড়ের টানে নিজ সংস্কৃতিতে ফেরার অনুভবতা আদিবাসীদের মধ্যে এমনিতে জাগ্রত হয়নি।
কবি সাহিত্যিকদের চেতনামূলক অসংখ্য গান, কবিতা, প্রবন্ধ, ও
সাহিত্যের অনুপ্রেরণায় শেকড়ে ফেরার চেতনা
জাগিয়েছিল আদিবাসীদের।
কালজয়ী সেসব কবি প্রতিভার
মধ্যে ছিলেন- সাধু রামচাঁদ মুরমু এবং পন্ডিত রঘুনাথ মুরমু। তাঁরা ছিলেন সারদা
প্রসাদ কিস্কু’র সমসাময়িক বিখ্যাত কবি।
সারদা প্রসাদ কিস্কু ছিলেন সাধু রামচাঁদ মুরমু’র
অনুসারী ও ভক্ত। কবি সারদা প্রসাদ কিস্কু রচিত ‘বঙ্গা-সোড়ে’ কবিতাটি তৎকালীন পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট
আদিবাসী সাঁওতালদের নিজ সংস্কৃতিতে ফেরার ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
ঋণ স্বীকার – সারসাগুন পত্রিকা
ও মারিও সুইটেন মুরমু।
No comments:
Post a Comment