দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডির দেহাবন্দে আদিবাসী যুবতীকে ধর্ষণে
অভিযুক্তদের শাস্তি এবং নির্যাতিতার সুচিকিৎসার দাবিতে শুক্রবার এলাকা উত্তাল হয়ে ওঠে।
এদিন উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েকশো আদিবাসী এলাকায় বিক্ষোভ
মিছিল করেন। উত্তেজিত জনতা ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত রামপ্রসাদ শর্মা সহ তার তিন আত্মীয়ের
বাড়ি ও দু’টি কাঠের দোকান ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভয়ে এদিন একাংশ বাসিন্দা
গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। আদিবাসীদের অভিযোগ, ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছে। পুলিস
ঠিকভাবে তদন্ত না করায় এখনও তারা গ্রেপ্তার হয়নি। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে
যে বিকেলের পর থেকে গ্রামে বহিরাগত কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও
এদিন ঘটনার সময়ে গ্রামে ঢুকতে পুলিস বাধা দেয়। ক্যামেরার ছবিও পুলিস জোর করে মুছে দেয়
বলে অভিযোগ। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় রাতে সেখানে পুলিস পিকেট বসেছে। সমগ্র ঘটনা নিয়ে
জেলা পুলিস মুখে কুলুপ এঁটেছে। ঘটনার খবর নিতে এদিন জেলার একাধিক পুলিস অফিসারকে ফোন
করা হলে তাঁরা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকলে বংশীহারির ধুমসা দিঘিতে
উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় হাজার তিনেক আদিবাসী সমাজের
মানুষ জমায়েত হন। তাদের প্রত্যেকের হাতেই তির ধনুক, ধারালো অস্ত্র ছিল। গণ্ডগোলের আগাম
আঁচ পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিস সুপার, ডেপুটি পুলিস সুপার, গঙ্গারামপুরের এসডিপিও
সহ কুশমণ্ডি, হরিরামপুর থানার পুলিস কর্মীরা উপস্থিত হন। দুপুর ১টা নাগাদ আদিবাসীদের
বিক্ষোভ মিছিল ঘাটপাড়ায় যায়। মিছিল থেকেই কিছু লোক ধর্ষণ কাণ্ডে ধৃত রামপ্রসাদ সহ তার
তিন প্রতিবেশীর বাড়িতে চড়াও হয়। তালাবন্ধ বাড়িতে তারা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি
কয়েকটি দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেয়। এলাকা নিমেষের মধ্যে উত্তাল হয়ে ওঠে। উত্তেজনা ছড়িয়ে
পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিস থাকলেও তারা তির ধনুক নিয়ে আসা বিক্ষোভকারীদের আটকানোর সাহস দেখাতে
পারেনি। আতঙ্কিত হয়ে একাংশ গ্রামবাসী ঘরে তালা মেরে পালিয়ে যান। কুশমণ্ডি থেকে ইটাহারগামী
সড়কে পুলিস যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এদিকে, এলাকায় মিছিল ও বিক্ষোভ থাকায় ঠিক সময়ে
দমকলের ইঞ্জিনও পৌঁছতে পারেনি। বেশ কয়েকটি বাড়ি ও দোকান ভস্মীভূত হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নির্যাতিতা যুবতীকে মালদহ মেডিকেলে
ফেলে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার দাবিও তারা করে। পাশবিক
ওই ঘটনায় জড়িত সকলকে খুঁজে বের করার দাবি জানানোর পাশাপাশি ধৃতদের কঠোর শাস্তির দাবি
জানানো হয়। প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া না হলে জেলাজুড়ে বৃহত্তর
আন্দোলনের হুমকিও দেন বিক্ষোভকারীরা। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী যুবতীকে ধর্ষণের
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। মালদহ মেডিকেল কলেজে গিয়ে তিনি নির্যাতিতাকে দেখে আসেন।
চিকিৎসা এবং ওই মহিলা যাতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন সেজন্য সরকারের তরফে তাঁকে চার
লক্ষেরও বেশি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ২৪/০২/২০১৮। (ছবি - ইন্টারনেট)
No comments:
Post a Comment