মহারাষ্ট্রের আবাসিক আশ্রম
স্কুলগুলির ৫০০ বালিকার রহস্য-মৃত্যু নিয়ে নড়েচড়ে বসল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ২৪
জানুয়ারি, ২০১৭ তারা এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে রিপোর্ট চেয়ে
পাঠিয়েছে। ছ’ সপ্তাহের মধ্যে সেই
রিপোর্ট দিল্লি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, এই ঘটনাগুলি জানার পর রাজ্য প্রশাসন কী ব্যবস্থা
নিয়েছে। আদৌ এ ব্যাপারে প্রশাসন কতটা ওয়াকিবহাল সে সম্পর্কেও কমিশনের চিঠিতে
প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের এই আশ্রম
স্কুলগুলিতে আদিবাসী মেয়েরা পড়াশোনা করে। গত ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ একটি মারাঠি
সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী কমিশন জানতে পেরেছে স্কুলগুলিতে নাকি
নির্বিচারে মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়। এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুললে তাঁকে প্রাণে মেরে
ফেলার হুমিক দেওয়া হয়। গত দশ বছরে হয় প্রতিবাদ করায় আর নয়তো বাড়ির লোক জেনে ফেলায়
৫০০ আদিবাসী মেয়েকে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। কখনও বলা হয়েছে শরীর খারাপ থাকার কারণে
মৃত্যু হয়েছে। কখনও বা নিছক দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছে। ঘটনাগুলি যে ভাবে
ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে তাতে বেশ বোঝা যায় এর সঙ্গে একটি বা একাধিক চক্র
জড়িয়ে আছে। তারা মেয়ে পাচারের কাজেও সিদ্ধহস্ত। কারণ বহু আশ্রমিক স্কুলের মেয়েদের
পরবর্তীকালে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও রিপোর্ট এসেছে। এরা পুলিশ ও প্রশাসনের
সঙ্গে যোগসাজশ রেখে কাজ করত। উল্লেখ্য, নয়ের
দশকে মহারাষ্ট্রের জলগাঁওতে ঠিক এ ভাবেই একটি বীভৎস যৌনচক্রের খোঁজ পাওয়া যায়।
সেখানে অসহায় মেয়েদের হয় ব্ল্যাকমেল করে, নয়তো
প্রাণের ভয় দেখিয়ে যৌনচক্রে অংশগ্রহণ করা এবং পর্নোগ্রাফিতে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য
করা হত। সেখানেও প্রশাসনের একাংশের এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।
এ ব্যাপারে সংবাদপত্রে
প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০১৬-র অক্টোবরে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল গত দশ
বছরে আদিবাসী আশ্রম স্কুলগুলিতে গত দশ বছরে ৭৪০ জন ছাত্রছাত্রী মারা গিয়েছে। জাতীয়
মানবাধিকার কমিশন ঠিক তার পর ২৬ নভেম্বর সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট উদ্ধৃত করে
সরকারের জবাবদিহি চায়। কিন্তু বিজেপি-শিবসেনা সরকার জবাব দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে
করেনি।
গত ১৪ জানুয়ারি ফের
সংবাদপত্রে যে রিপোর্ট বের হয় তাতে বলা হয়েছে, এই
ধরনের স্কুলগুলিতে মেয়েদের নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করা হত। শুধু তা-ই নয়, তাদের ঋতুমতী হওয়ার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা
হত। কিন্তু এ ধরনের পরীক্ষা বা সংরক্ষণের কী প্রয়োজন তার কোনও সঠিক ব্যাখ্যা
স্কুল কর্তৃপক্ষ দেয়নি। আসলে যৌন নির্যাতনের পর কোনও মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে
কিনা তা দেখতেই এই ব্যবস্থা বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি দেওয়ালির ছুটি কাটিয়ে একটি
ছাত্রী স্কুলে ফেরার পর তাঁর পেটে ব্যথা হচ্ছে বলে রিপোর্ট করে। জানা যায়, স্কুলে যৌন হেনস্থার শিকার হয়ে মেয়েটি
অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। মহারাষ্ট্রের ধুলধানা জেলার খামগাও তালুকের ১২ বছরের একটি
মেয়ে অভিযোগ করে স্কুলের জমাদার নাকি তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছে। ওই আবাসিক
স্কুলটিতে সত্তর জন ছাত্রী আছে কিন্তু তার কোনও মহিলা সুপার নেই।
মহারাষ্ট্রে এই মুহূর্তে
১১০০টি এই ধরনের সরকার পরিচালিত আশ্রম-স্কুল রয়েছে। সেখানে দেড় লক্ষেরও বেশি মেয়ে
এবং প্রায় আড়াই লক্ষ আদিবাসী ছেলে পড়াশোনা করে। সংবাদপত্রের রিপোর্টে প্রকাশ এই
স্কুলগুলিতে গত ১৫ বছরে ১৫০০ ছাত্রছাত্রীর মৃত্যু হয়েছ যার মধ্যে প্রায় ৭৫০
অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক ছাত্রী। এই মৃত্যুর পিছনে যৌন নির্যাতন অন্যতম প্রধান কারণ
বলে মনে করে মহারাষ্ট্রে এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি।
সৌজন্য – খবর অনলাইন, ০৮০২/২০১৭,
শৈবাল বিশ্বাস।
No comments:
Post a Comment