পুরুলিয়ার কাশীপুরে আবাস যোজনায় ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ সামনে আনলেন
বিজেপি নেতা। দুই বছর আগে আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত গোপিনাথ মান্ডির
নামে আবাস যোজনায় অর্থ বরাদ্দ হলেও তিনি টাকা পাননি।
টালি ও মাটির আধভাঙা ঘরে কোনওরকমে ছেলে-বৌ নিয়ে তিনি বাস করেন।
অথচ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, ইন্দিরা আবাস যোজনায় তাঁর নামে তিন কিস্তিতে
বরাদ্দ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এমনকী সেই নতুন ঘরের ছবিও রয়েছে ওয়েবসাইটে। তাহলে সেই
ঘর গেল কোথায়? টাকাই বা কে পেল? এই প্রশ্ন তুলে কাশীপুরের কালীদহ পঞ্চায়েতের লহাট গ্রামের
দিনমজুর গোপীনাথ মান্ডি জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তদন্ত চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন
পুরুলিয়া আদালতেও।
তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে গোপীনাথ ও ফুলমণির সংসার। এলাকায় কাজের
সুবিধা না থাকায় স্বামী-স্ত্রীতে আসানসোলে দিনমজুরের কাজে যান। দিনভর কাজ করে দেড়শো
টাকার মতো রোজগার করেন। তাই কিছু দিন আগে যখন তিনি জানতে পারেন, বছর দুয়েক আগে তিনি
ইন্দিরা আবাসে ঘর পেয়েছেন বলে সরকারি খাতায় উল্লেখ রয়েছে, তখন কার্যত আকাশ থেকে পড়েন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত বলেন, ‘‘ঘটনাটি
আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের। তবে অভিযোগ হাতে এলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। যদি এমন ঘটনা
ঘটে থাকে এবং গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকার বাসিন্দা তথা বিজেপি-র কাশীপুর ব্লকের নেতা হরেন্দ্রনাথ
মাহাতোই প্রথম গোপীনাথের নজরে ওই বেনিয়মের ঘটনাটি নিয়ে আসেন। তিনি এর আগে ওই ওয়েবসাইট
ঘেঁটে কালীদহ পঞ্চায়েতেরই কেলাহি গ্রামের এক বাসিন্দার নামে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে
একই রকমের দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। হরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘ওয়েবসাইটে গোপীনাথবাবুর
নামে ইন্দিরা আবাসের ঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ ওই ঘর তৈরিই
হয়নি। পরে গোপীনাথের কাছে জানতে পারি, ওই প্রকল্পে যে তাঁর নাম উঠেছিল, সে খবরই তিনি
জানেন না। টাকা পাওয়া তো দূরের কথা!’’
জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে গোপীনাথবাবু জানিয়েছেন, ওয়েবসাইটে
উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩-’১৪ আর্থিক বর্ষে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি
তাঁর নামে বাড়ি বরাদ্দ হয়। দাবি করা হয়েছে, তিনটি কিস্তিতে ৭৫ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের ১৫ জুন তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে শেষ কিস্তির ১১,২৫০ টাকা দেওয়া হয়েছে।
তাঁর দাবি, ‘‘ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে আমার নামে বাড়ি তৈরি হয়েছে, অথচ আমি নিজেই
জানি না! আমার কোনও বাড়িও নির্মাণ হয়নি। পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করেছি।”
হরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘এই ঘটনায় কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়েবসাইটে এই অসত্য তথ্য কে আপলোড করলেন? ওই টাকাই বা কোথায় গেল?
ওয়েবসাইটে একটি নবনির্মিত বাড়ির ছবিও দেওয়া রয়েছে। সেই বাড়ি কোথায়? ওয়েবসাইটে দেখা
যাচ্ছে যে শঙ্কর বাউরি নামে এক ব্যক্তি নির্মাণের তিন পর্যায়ে সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট
দিয়েছেন। এটাই বা কী করে সম্ভব? যদি বাড়িটাই নির্মাণ না হয়ে থাকে তাহলে কী ভাবে তিনটি
পর্যায়ের সরেজমিন তদন্ত হল?’’
সমস্ত প্রশ্নেই দায় এড়িয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত কালীদহ পঞ্চায়েতের
প্রধান ও আধিকারিকেরা। কালীদহ পঞ্চায়েতের প্রধান উত্তম মণ্ডলের দাবি, ‘‘এই কাজগুলি
পঞ্চায়েতের আধিকারিকেরা করেন। কী ভাবে এমনটা ঘটল বলতে পারব না।” ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের
সচিব শঙ্কর বাউরি দাবি করেন, ‘‘কী ভাবে এমনটা ঘটল বলতে পারব না।” তবে ব্লকের এক আধিকারিক
দাবি করেছেন, ‘‘ওই ব্যক্তির বাড়িটি হয়তো নির্মাণ হয়নি। তবে তাঁর নামে বরাদ্দ করা টাকা
ব্যাঙ্কে জমা রয়েছে। ওই ব্যক্তিকে অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দিতে বলা হয়েছে।”
হরেন্দ্রনাথবাবুর প্রশ্ন, ‘‘অভিযোগ তোলার পরে এখন প্রশাসন গোপীনাথবাবুর
কাছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চাইছে! তাজ্জব ব্যাপার। কার গাফিলতিতে এমনটা হল,
তা তদন্ত করতেই হবে।”
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রশান্ত পাল, ২৪/০২/২০১৮।
No comments:
Post a Comment