Thursday, February 8, 2018

নকশালবাড়ির স্মৃতি অটুট, ৪ বার বিজেপি-র ডাক ফিরিয়ে দিয়েছেন আদিবাসী নেত্রী শান্তি মুন্ডা।


শান্তি মুন্ডা। ৭৪ বছর বয়স। ২৪মে, ১৯৬৭ সালে ১৫ দিনের কন্যা সন্তানকে নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। লড়াই করতে গিয়েছিলেন পুলিশের বিরুদ্ধে। তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। গ্রামের রাস্তা পাকা হয়েছে। হাইওয়ে চওড়া হয়েছে। রাষ্ট্র ক্ষমতার বদল চেয়েছিলেন। তা হয়নি। তবে বদল গেছে অনেক কিছু। যে জমি দখলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল আন্দোলন, সেই জমি কৃষকরা বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রমোটারদের কাছে। নকশালবাড়ি তো বটেই, তার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এই হাতিঘিষাতেও একই ছবি।
শান্তি মুন্ডা জানালেন, ‘‘চাষ থেকে আয় কী, যে কৃষকেরা খাবে। তাই তাঁরা জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ক্ষেত মজুর হিসাবে যারা কাজ করতেন তারা অন্যত্র কাজ করতে যাচ্ছেন।’’ চারপাশে তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে এলাকায় কৃষির উন্নতি নিয়ে কারোও তেমন মাথা ব্যাথা নেই। অথচ রাস্তা পাকা হচ্ছে। সড়ক চওড়া হচ্ছে। গ্রামে ঢোকার মুখে দোকানগুলোতে চাইলেই মিনারেল ওয়াটার মেলে।
কিছুদিন আগে নকশালবাড়ি খবরের শিরোনামে এসেছিল। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ নকশালবাড়িতে এক আদিবাসী বাড়িতে ভাত খেয়েছিলেন। পরের দিনই ওই আদিবাসী পরিবার তৃণমূলে যোগ দেয়। বির্তক উঠেছিল, ভয় দেখিয়ে তৃণমূল এই কাণ্ড করেছে। কিন্তু শুধু কি ভয় ছিল? এর আগে ওই আদিবাসী পরিবার বিজেপিতে গিয়েছিলেন কি খুব জেনে বুঝে? শান্তি মুন্ডার কথায়, ‘‘যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে লোক সেই দলে যোগ দিয়েছে। যখন তৃণমূল ক্ষমতায় এল দলে দলে লোক তৃণমূলে যোগ দিল। যারা সিপিএম করত তারাও। তারপর এখন বিজেপির ক্ষমতা বাড়ছে, লোক বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে।’’ ইতিমধ্যেই বার চারেক শান্তি মুন্ডার কাছে বিজেপির স্থানীয় নেতা এসেছিলেন। তাঁকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধও করেছেন। বলেছেন,‘‘ আপনারা যা চেয়ে আন্দোলন করেছিলেন তাই এখন মোদীজি করছেন।’’ একটু হেসে ওই নেতাকে শান্তি মুন্ডা বলেছিলেন,‘‘ আমরা তো দালাল পুঁজিপতির বিরোধিতা করেছিলাম। মোদীজি কি তাই করছেন। যদি করে থাকেন তবে আমি বিজেপিতে যোগ দেবো।’’ ভোট বয়কটের রাজনীতি থেকে অনেক আগেই সরে এসেছেন। ১৯৮২ এবং ৮৭ সালে বিধানসভা ভোটেও দাড়িয়েছেন শান্তি মুন্ডা।
কৃষক নেই, ক্ষেত মজুর নেই, নকশালবাড়ির আন্দোলন আর কি প্রাসঙ্গিক থাকছে? তিনি জানালেন,‘‘জমির আন্দোলন থাকবে। এখানে না হয় অন্য কোথাও। দেখছেন না ভাঙড়ে আন্দোলন হচ্ছে। এ রকম ছোটখাটো তো হচ্ছেই, কখন যে বড় কিছু ঘটবে কেউ বলতে পারে না।’’
ওঁর বাড়ির থেকে হাত কয়েক দূরেই কানু স্যান্যালের পার্টি অফিস। পার্টি অফিসটি চালায় বিভক্ত হয়ে যাওয়া কানু সান্যালের পার্টির অন্য একটি গোষ্ঠী। কানুবাবুকে নিজের নেতা হিসাবে দাবি করে শান্তি মুন্ডা জানালেন,‘‘ আমরাই কানু স্যান্যাল প্রতিষ্ঠিত পার্টি করি।’’ তাহলে ওরা? ‘‘ওরাও কানু স্যান্যাল আমরাও কানু স্যান্যাল,’’ বললেন তিনি। কমিউনিস্ট পার্টিগুলির এইভাবে ক্রমশ বিভক্ত হয়ে যাওয়া একটা সমস্যা তা হাড়েহদ্দে বোঝেন তিনি। নিজে বললেন, ‘‘মানুষকে জড়ো করা যাচ্ছে না। কারণ আপনার মাথার চুল গোনা যাবে কিন্তু ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির সংখ্যা গোনা যাবে না।’’
তবুও তিনি মনে করেন, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাঁচাতে গেলে লড়তে হবে। লড়াই ছাড়া বাঁচার পথ নাই’’
সৌজন্য – খবর অনলাইন, May 24, 2017, চিরঞ্জীব পাল।

No comments:

Post a Comment