Thursday, June 1, 2017

কুসংস্কারের সঙ্গে লড়তে চায় গ্রামের প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পাস্ আদিবাসী মেয়ে উর্মিলা সরেন।


শালবনিএকবগ্গা চেহারা৷ একঝলক দেখে বোঝার উপায় নেই, তলে তলে তৈরি হচ্ছে মেয়েটা৷ শালবনির ঝর্নাডাঙা গ্রামে মেয়ে হিসাবে এই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ফের নতুন লড়াইয়ে তৈরি হচ্ছে ঊর্মিলা৷ চোয়াল শক্ত করে বলছে, আমার লড়াই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে৷
মেরেকেটে ৭০টি আদিবাসী পরিবারের বাস শালবনির ঝর্নাডাঙায়৷ গত ত্রিশ-চল্লিশ বছরে তাঁদের ঘরের কোনও মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে বলে গোটা আদিবাসী পাড়ার কেউ ই মনে করতে পারছেন না৷ এর আগে ওই গ্রাম থেকে কয়েক জন ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেও, মেয়েদের খবর নেই৷ বছর তিনেক আগে এই গ্রামের কঙ্কা হেমব্রমের মেয়ে মামণি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল বটে কিন্ত্ত পাশ করতে না পারায় বিয়ে দিয়ে দেয় তাঁর পরিবার৷ সেই হিসেবে ঊর্মিলাই প্রথম মেয়ে, যে এই গ্রাম থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে পড়তে যাবে৷ ঊর্মিলার সাফল্যে তাই খুশি পানমণি, সন্ধ্যা, সরস্বতীরা৷ বাবা হারুলাল সরেন দু’বিঘা জমির মালিক৷ স্বামী-স্ত্রী মিলে গোটা বছর নিজেদের সামান্য জমিতে চাষাবাদ, আর অন্যের জমিতে জনমজুরি করে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন সন্তানদের৷ ঊর্মিলারা চার ভাইবোন৷ মেজটা পড়ে দশম শ্রেণিতে৷ ভাই ষষ্ঠ, ছোট বোন প্রতিবন্ধী৷ নিজে কলেজে পড়ার পাশাপাশি ভাইবোনদেরও শিক্ষিত করতে চায় ঊর্মিলা৷ মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর এখন সংস্কৃত বা শারীরশিক্ষায় অনার্স নিয়ে পড়তে চায় সে৷
ডিএলএড পড়ার সুযোগ আসলে হাতছাড়া করতে রাজি নয় সে৷ যেমন করেই হোক স্কুল শিক্ষিক হতে হতে হবে তাকে৷ উদ্দেশ একটাই, আদিবাসী সমাজের অন্ধ বিশ্বাস, ডাইনি প্রথা দূর করতে গেলে শিক্ষক ছাড়া অন্য পেশায় গিয়ে তা সম্ভব হবে না৷ ঊর্মিলা বলে, ‘স্কুল পড়ুয়াদের থেকে কাজটা করলে সহজ হবে৷ শিশুমনে আলো জ্বালাতে পারলেই তারা বড় হয়ে অন্ধবিশ্বাসের আর দাসত্ব করবে না৷’ বাবা-মা লেখাপড়া জানে না৷ বাবা কোনওরকমে নিজের নাম সই করতে পারলেও মা তাও পারে না৷ স্বাক্ষর করতে নিয়ম করে মাকে রোজ পড়তে বসায় মেয়ে৷ মা পড়েন৷ সঙ্গে মেয়েও৷ ঊর্মিলার বাবা হারুলাল বলেন, ‘আমরা লেখাপড়া জানি না তাই ছেলেমেয়েদের শেখাতে চাই৷ যত কষ্টই হোক মেয়েকে কলেজে পড়াবো৷’

http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32147&boxid=161536500

No comments:

Post a Comment