শালবনি। একবগ্গা চেহারা৷ একঝলক দেখে বোঝার উপায় নেই, তলে তলে তৈরি হচ্ছে মেয়েটা৷
শালবনির ঝর্নাডাঙা গ্রামে মেয়ে হিসাবে এই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ফের নতুন
লড়াইয়ে তৈরি হচ্ছে ঊর্মিলা৷ চোয়াল শক্ত করে বলছে, আমার লড়াই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে৷
মেরেকেটে
৭০টি আদিবাসী পরিবারের বাস শালবনির ঝর্নাডাঙায়৷ গত ত্রিশ-চল্লিশ বছরে তাঁদের ঘরের কোনও
মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে বলে গোটা আদিবাসী পাড়ার কেউ ই মনে করতে পারছেন না৷ এর
আগে ওই গ্রাম থেকে কয়েক জন ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেও, মেয়েদের খবর নেই৷ বছর তিনেক
আগে এই গ্রামের কঙ্কা হেমব্রমের মেয়ে মামণি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল বটে কিন্ত্ত
পাশ করতে না পারায় বিয়ে দিয়ে দেয় তাঁর পরিবার৷ সেই হিসেবে ঊর্মিলাই প্রথম মেয়ে, যে
এই গ্রাম থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে পড়তে যাবে৷ ঊর্মিলার সাফল্যে তাই খুশি পানমণি,
সন্ধ্যা, সরস্বতীরা৷ বাবা হারুলাল সরেন দু’বিঘা জমির মালিক৷ স্বামী-স্ত্রী মিলে গোটা
বছর নিজেদের সামান্য জমিতে চাষাবাদ, আর অন্যের জমিতে জনমজুরি করে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন
সন্তানদের৷ ঊর্মিলারা চার ভাইবোন৷ মেজটা পড়ে দশম শ্রেণিতে৷ ভাই ষষ্ঠ, ছোট বোন প্রতিবন্ধী৷
নিজে কলেজে পড়ার পাশাপাশি ভাইবোনদেরও শিক্ষিত করতে চায় ঊর্মিলা৷ মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ
থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর এখন সংস্কৃত বা শারীরশিক্ষায় অনার্স নিয়ে পড়তে চায়
সে৷
ডিএলএড
পড়ার সুযোগ আসলে হাতছাড়া করতে রাজি নয় সে৷ যেমন করেই হোক স্কুল শিক্ষিক হতে হতে হবে
তাকে৷ উদ্দেশ একটাই, আদিবাসী সমাজের অন্ধ বিশ্বাস, ডাইনি প্রথা দূর করতে গেলে শিক্ষক
ছাড়া অন্য পেশায় গিয়ে তা সম্ভব হবে না৷ ঊর্মিলা বলে, ‘স্কুল পড়ুয়াদের থেকে কাজটা করলে
সহজ হবে৷ শিশুমনে আলো জ্বালাতে পারলেই তারা বড় হয়ে অন্ধবিশ্বাসের আর দাসত্ব করবে না৷’
বাবা-মা লেখাপড়া জানে না৷ বাবা কোনওরকমে নিজের নাম সই করতে পারলেও মা তাও পারে না৷
স্বাক্ষর করতে নিয়ম করে মাকে রোজ পড়তে বসায় মেয়ে৷ মা পড়েন৷ সঙ্গে মেয়েও৷ ঊর্মিলার বাবা
হারুলাল বলেন, ‘আমরা লেখাপড়া জানি না তাই ছেলেমেয়েদের শেখাতে চাই৷ যত কষ্টই হোক মেয়েকে
কলেজে পড়াবো৷’
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32147&boxid=161536500
No comments:
Post a Comment