Tuesday, June 20, 2017

আদিবাসী ল্যাম্পস (LAMPS) নির্বাচনী সংঘর্ষে গুলি, রাজনগরে নিহত তৃণমূল নেতা।


রাজনগর : পাড়ুইয়ের বদলা রাজনগরে৷ ফের লার্জ সাইজড মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড বা ল্যাম্পস নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তাল হল বীরভূম৷ গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এক তৃণমূল নেতার৷ আহত অন্তত পাঁচ জন৷ প্রকাশ্যে বোমা-গুলি-তির উঁচিয়ে চলে ক্ষমতা প্রদর্শন৷ তবে পাড়ুইয়ের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার রীতিমতো প্রস্ত্ততি নিয়ে এসেছিল বিজেপি৷ ফলে তাদের আক্রমণে পিছু হটতে হয় তৃণমূল কর্মীদের৷ গোটা ঘটনায় বিজেপি-সিপিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূল৷ এমনকী ঘটনার সঙ্গে মাওবাদী যোগের তত্ত্ব শুনিয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ এ দিন তিনি বলেন, ‘ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদীদের নিয়ে এসে যথেচ্ছ বোমা-গুলি চালিয়েছে ওঁরা৷ ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া যায় স্প্রিং-বোমা৷ যা স্পঞ্জে মোড়া ছিল৷ এই ধরনের বোমা বীরভূমে নয়, ব্যবহার করা ঝাড়খণ্ডে৷’ তবে যথেচ্ছ বোমাবাজির সময় পুলিশ কর্তাদের দফায় দফায় ফোন করা হলেও তাঁদের টিকি পাওয়া যায়নি বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা৷ বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে৷ খুনের ঘটনায় সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷’ সোমবার রাজনগরে আলিগড় শিশাল ফার্ম হাইস্কুলে আদিবাসী ল্যাম্পসের নির্বাচন ছিল৷ শাসকদলকে রুখতে মনোনয়নের দিন থেকেই একজোট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিরোধীরা৷ তাদের গোপন ব্লু-প্রিন্টের খবর পেয়ে বিভিন্ন প্রান্তের নেতা-কর্মীদের এনে রাজনগরে জড়ো করতে শুরু করে তৃণমূল৷ এদিন সকাল ৭টা থেকেই বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামের রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন তৃণমূল কমীরা৷ তাঁরা ভোটারদের পথ আটকাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ৷ স্থানীয় আদিবাসী নেতা মিলন সোরেন বলেন, ‘ল্যাম্পের নির্বাচন আগে তেমন ভাবে হত না৷ সিপিএমের আমলে মুখে মুখেই ঠিক হয়ে যেত৷ এই প্রথম সব দল প্রার্থী দিয়েছিল৷ কিন্তু শাসকদল ল্যাম্প দখলের জন্য বহিরাগতদের নিয়ে এসেছিল৷ একের পর এক গ্রামের মুখে দাঁড়িয়ে থেকে ভয় দেখাতে শুরু করে৷ যাতে ভোটাররা ভোট দিতে যেতেই না পারেন৷ পুলিশকে সকাল থেকে বারবার বলেও দেখা পাওয়া যায়নি৷’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটারদের আটকাতে এদিন সকাল থেকেই জয়পুর-আলিগড় রাস্তায় শুরু হয় বোমাবাজি৷ বিরোধীরা একজোট হয়ে আসার চেষ্টা করলে তাঁদের লক্ষ করে বোমা ছুঁড়তে শুরু করেন তৃণমূল সমর্থকরা৷ প্রথমে মোকাবিলা করতে না-পারলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তির-ধনুক-লাঠি-বোমা-বন্দুক নিয়ে শাসকবাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে তারা৷ মুহুর্তে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা৷ ১০-১২টি বাইক ভাঙচুর করেন আদিবাসীরা৷ লড়াইয়ের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন রাজনগর ব্লক তৃণমূল সদস্য বলরাম মণ্ডল৷ সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ পাঁচ দিন আগে বোমাবাজি-গুলিতে অগ্নিগর্ভ হয়েছিল পাড়ুই এলাকা৷ আহমেদপুর-গড়গড়িয়া রাস্তায় তিন দিক থেকে ঘিরে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ আক্রমণের জেরে পাড়ুইয়ে ল্যাম্পস নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি বিজেপি৷
মৃত তৃণমূল নেতার সঙ্গে থাকা রাজনগর ব্লক যুব সভাপতি রানাপ্রতাপ রায় বলেন, ‘সদ্য নকশাল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মিলন শেখের নেতৃত্বে গুলি চলেছে৷’ বীরভূম জেলা বিজেপি সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘আমাদের নেতাদের গ্রেন্তার করার জন্য দোষ চাপাচ্ছে তৃণমূল৷’ সিপিএমের মনসা হাঁসদা বলেন, ‘রাজনগরে মাওবাদীদের হাতে আমাদের দুই নেতা খুন হয়েছিলেন৷ আজ তারা বন্ধু হয়ে গেল!’
সৌজন্য - এই সময়, ২০/০৬/২০১৭।

http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32603&boxid=143421113

No comments:

Post a Comment