ডায়মন্ড
হারবার : নীতিপুলিশির বাড়াবাড়ি এ বার অত্যাচারের প্রায় সব সীমা লঙ্ঘন করল৷ নামখানার
চন্দ্রনগর গ্রামে এক গৃহবধূকে পরকীয়া করার অপবাদ দিয়ে প্রায় বিবস্ত্র করে দিনভর চলল
অত্যাচার৷ মাথা নেড়া করে ঘোরানো হল গ্রামে, পাল্লা দিয়ে চলল মারধর৷ মঙ্গলবার দিনভর
লাগাতার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওই গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ কিন্তু তার পরেও তাঁকে
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ স্ত্রীর উপরে এমন নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ
জানিয়েছিলেন তাঁর স্বামী৷ কিন্তু তাতে জুটেছে বেদম মারধর৷ খবর পেয়ে সন্ধে নাগাদ নামখানা
থানার পুলিশ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করতে যায়৷ কিন্তু তাদেরও ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়৷ রাতে
স্থানীয়দের হাত থেকে ওই বধূকে উদ্ধার করে স্থানীয় দ্বারিকনগর হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ৷
বুধবার দুপুরে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতার স্বামী৷ অভিযোগের ভিত্তিতে
তদন্তে নেমে পুলিশ এ দিন বিকেলে প্রতিবেশী গণেশ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে৷ ধৃতের বিরুদ্ধে
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৩৫৪এ, ৩৫৪বি, ১২০বি, ৩৭৯, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় মামলা
রুজু করেছে পুলিশ৷ সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে
মামলা রুজু করা হয়েছে৷ একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ ধৃতকে জেরা করে বাকি অভিযুক্তদের
খোঁজ চলছে৷’ তবে ঘটনার তীব্র নিন্দা করে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়
বলেন, ‘ঘটনার নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই৷ পুলিশকে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলব৷’
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের খবর, নির্যাতিতার স্বামী পেশায় মৎস্যজীবী৷ গ্রামের অন্য প্রান্তেই
বাপের বাড়ি নির্যাতিতার৷ সোমবার বাপের বাড়ি যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন৷ ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে
ছিলেন স্বামী৷ মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ স্থানীয় খাটুয়ার বাজারে স্ত্রীকে আটকে রেখে
মারধরের খবর পান তিনি৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, স্ত্রীকে ঘিরে রয়েছেন পুরুষ-মহিলা মিলে
শ’খানেক গ্রামবাসী৷ বিবস্ত্র অবস্থায় মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন স্ত্রী৷ লাঠি-বাঁশ
দিয়ে চলছে প্রহার৷ এর মধ্যেই জনাচারেক যুবক ধারালো ব্লেড দিয়ে মাথার
সামনের চুল কাটতে শুরু করে৷ অতি উৎসাহী কয়েকজন সেই ছবি মোবাইলে বন্দি করতে ব্যস্ত৷
হাসপাতালে নির্যাতিতা বলেন, ‘এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আমার পরিবারের সুসম্পর্ক সহ্য করতে
না-পেরে বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী ফন্দি এঁটে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে৷ আমাকে বিবস্ত্র করে
মারধর করেছে, চুল কেটে গোটা গ্রাম ঘুরিয়েছে৷ আমাদের গ্রামছাড়া করতে এত সব পরিকল্পনা৷
ওদের শাস্তি চাই৷’ হাসপাতালে চিকিৎসক বীরেন্দ্র সাঁতরা জানান, ‘নির্যাতিতার সারা শরীরে
আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ মাথার সামনের চুলও কেটে নেওয়া হয়েছে৷ এমনকি উনি গোপনাঙ্গেও আঘাত
পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন৷’
এই
সময়, বুধবার।
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32313&boxid=153619238
No comments:
Post a Comment