এই
সময় : আজ সোমবার থেকে কলেজ স্ট্রিট ও কলেজ স্কোয়ার চত্বরে নিষিদ্ধ হচ্ছে মিছিল
-মিটিং -সমাবেশ৷ বহু আন্দোলনের পীঠস্থান এই এলাকার সঙ্গে জুড়ে আছে অসংখ্য মানুষের
নানা স্মৃতি৷ প্রতিবাদ সরণিতে মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ হওয়ার প্রাক্কালে ‘এই সময় ’-এর
কাছে স্মৃতিচারণা করলেন কয়েকজন।
পেটোর
শব্দ শুনে বুঝে যেতাম কারা মারল। ষাট-সত্তরের দশক বঙ্গ রাজনীতির বড় অধ্যায়৷ তার
আঁতুড়ঘর ছিল কলেজ স্ট্রিট-কলেজ স্কোয়্যার৷ আমার রাজনীতির হাতেখড়ি থেকে প্রতিষ্ঠা
সবই এখান থেকে৷ মস্তিস্ক থেকে পেশির লড়াই সবেরই পীঠস্থান ছিল কলেজ স্ট্রিট৷ রোজ
জীবন বাজি রেখে যেতাম৷ দিনের পর দিন ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরত না তখন৷ বাড়ির লোক কাগজ
খুলে খুন হওয়া মানুষের নাম-পরিচয় দেখে নিত৷ পেটোর আওয়াজ শুনে বুঝে যেতাম সেটা
নকশাল, সিপিএম, না আমাদের (কংগ্রেস) ছেলেরা, কে মারল৷ মির্জাপুরের কিছুটা অংশ ছিল
কংগ্রেসিদের দখলে৷ তাড়া খেয়ে বেশির ভাগ দিন আশ্রয় নিতাম মহাজাতি সদনে৷ এই সবের
মাঝে কফি হাউজের সময়টুকুই ছিল একান্ত ব্যক্তিগত৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায়| পঞ্চায়েত মন্ত্রী।
অকুপাই
কলেজ স্ট্রিট। ম্যাকনামারার ভারত ভ্রমণের বিরোধিতা থেকে ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধি, ও দিকে নকশালবাড়িতে নিরস্ত্র কৃষকের উপর পুলিশের
গুলি, সবেতেই উত্তাল হয়ে উঠেছে বইপাড়া৷ কত পুলিশের গুলি, টিয়ার গ্যাস, লাঠির
বাড়ি সহ্য করে রুখে দাঁড়ানোর দলিল যে কলেজ স্ট্রিট জুড়ে ছড়িয়ে আছে সে আর বলার
অপেক্ষা রাখে না৷ ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল প্রেসিডেন্সি কলেজ ১৯৬৬ সালে চারমাস ধরে
বন্ধ৷ দিন রাত কলেজে গেটে আমরা তখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছি৷ এরই মধ্যে খবর এল পুলিশের
সাহায্যে কর্তৃপক্ষ জোর করে কলেজ খোলার চেষ্টা করছেন৷ সে দিন কলকাতার রাজপথ
দেখেছিল ছাত্র শক্তির ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব কাকে বলে৷ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে
সেদিন বাস-ট্রাম পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর মতো ক্ষমতা জাহির করেছিল বাংলার ছাত্রদল৷
অসীম চট্টোপাধ্যায়| প্রাক্তন নকশাল নেতা।
হাতে
হাতে কমরেড, ব্ল্যাকবোর্ডে ব্যারিকেড। পুলিশের
টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচার কোনও উপায় ছিল না সে দিন৷ ১৯৬৫ কি ৬৬-এর ঘটনা৷ পুলিশ লাঠি
উঁচিয়ে আসছে৷ আর কলেজ স্ট্রিটে অবরোধ করে আছি আমরা, ছাত্রছাত্রীরা৷
টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রুম থেকে ব্ল্যাকবোর্ড তুলে
এনে ঢাল করে হাজার হাজার ছাত্ররা ব্যারিকেড বানাল৷ টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচতে আমরা
সবাই ব্ল্যাকবোর্ডের আড়ালে লুকোলাম। সব্যসাচী দেব| কবি।
প্রথম
প্রেমের মতো। হুগলি থেকে তখন রোজ ট্রেনে চেপে আমি আর দ্রোণ (কবি দ্রোণাচার্য ঘোষ)
কলেজ স্ট্রিটে আসি সভা সমিতিতে৷ ১৯৬৮ সাল৷ কলকাতার কিছুই চিনি না৷ দ্রোণের চোখ
দিয়েই শহরটাকে দেখতে চিনছি৷ আন্দোলনের মাঝেই ওর সঙ্গে কলেজ স্কোয়্যারে কেটেছে
দিনের পর দিন৷ আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকার সময় আদিবাসী গ্রামে গ্রামবাসীদের উৎসাহে
আমাদের বিয়ে৷ ১৯৭২ সালে জেল ভেঙে পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে দ্রোণের মৃত্যু৷
সবেরই সাক্ষী বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশ। কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়| প্রাক্তন নকশাল নেত্রী।
রক্তে
ভেজা কলেজপাড়া। সিটি কলেজে পড়ার সময় থেকেই কলেজ স্ট্রিটে আনাগোনা৷ তখন আশির দশক৷
জুনিয়র ডাক্তার মুভমেন্ট, ট্রাম-বাস ভাড়া বৃদ্ধির
আন্দোলন, বন্দিমুক্তি থেকে সিঙ্গুর
আন্দোলন, কম মিছিলের সাক্ষী নই৷ বহু আন্দোলনের রক্তে ভেসে গেছে কলেজ স্ট্রিট।
সীতাংশু শেখর (ডাকু)| সমাজকর্মী৷
No comments:
Post a Comment