ভোপাল
: গুলির মুখে পড়লেও মধ্যপ্রদেশে কৃষকদের বিক্ষোভ থামছে না৷ বুধবারও রাস্তা অবরোধ, গাড়িতে
অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে৷ হেনস্থার মুখে পড়েছেন মান্দাসৌরের জেলাশাসক৷ তবে সার্বিক
ভাবে হিংসার আঁচ কিছুটা কমেছে৷ এ দিন রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন প্রধানমন্ত্রী৷
পরিস্থিতি সামলাতে মধ্যপ্রদেশ সরকার কৃষকদের জন্য নয়া প্রকল্প আনার কথা ঘোষণা করেছে৷
কিন্তু, বিরোধীদের পাশাপাশি সঙ্গী শিবসেনা তুমুল সমালোচনা করায় বিজেপি স্বস্তিতে নেই৷
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাহুল গান্ধী নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন
মান্দাসৌরে৷ রাজ্য ও জেলা প্রশাসন কংগ্রেসের সহ সভাপতিকে অনুমতি না দিলেও, তিনিও অনড়৷
পুলিশের গুলিতে নিহত কৃষকদের ‘শ্রদ্ধা’ জানাতে তিনি যাবেনই৷ কৃষকদের উপর গুলিচালনার
ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস এ দিন তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে৷ একটি বিবৃতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
দল জানিয়েছে, ‘যখন বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্য কৃষকের উপর গুলি চালায়, তখন নজর ঘোরানোর
জন্য দল তার অন্য ব্যাখ্যা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷’ ঋণ মকুব ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য
বৃদ্ধির দাবিতে ১ জুন থেকে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা৷ মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে পাঁচ
কৃষকের মৃত্যুতে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে৷ মন্দসৌরে বেরখেদা পন্থ এলাকায় মহাসড়ক
অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা৷ ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে
ঘটনাস্থলে যান জেলাশাসক এস কে সিং৷ সঙ্গে ছিলেন মন্দসৌরের পুলিশ সুপার ওমপ্রকাশ ত্রিপাঠি৷
দু’জনেই হেনস্থার মুখে পড়েন৷ বেরখেদার পঞ্চায়েত প্রধান দীনেশ জানান, ‘বিক্ষোভকারীরা
চড়াও হয় জেলাশাসকের উপর৷ তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করে৷’ কৃষকদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ
সিং চৌহানকে মন্দসৌরে আসতে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য৷ মঙ্গলবার মূলত পিপলিয়া মাণ্ডি
গ্রামে হিংসা হয়েছিল৷ তা এ দিন ছড়িয়ে পড়ে সীতামৌ গ্রামে৷ একটি খামারবাড়ি ও কারখানায়
আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা৷ কয়েকটি ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে আগুন ধরানো হয়৷ পুলিশ ঘটনাস্থলে
পৌঁছলে জনতার সঙ্গে তাদের গন্ডগোল বাধে৷ পুলিশের সঙ্গে সিআরপিএফ জওয়ানরা থাকলেও তাদের
সংখ্যা ছিল খুবই কম৷ কৃষকদের ক্ষোভ সামলাতে নেমেছে বিজেপি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী এ ব্যাপারে কথা বলেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে৷ কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন
সিংকে এ দিনের নির্ধারিত সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করে দেন৷ কৃষকদের জন্য নয়া কৃষি প্রকল্প
আনার কথা ঘোষণা করেছে শিবরাজ সিং চৌহান সরকার৷ রাজ্যের মন্ত্রী এ চিটনিস জানান, তাঁরা
কৃষি ঋণ সমাধান যোজনা আনতে চলেছেন৷ এই প্রকল্পে ঋণ শোধ করতে না পারা কৃষকরা নতুন করে
ঋণ পাবেন৷ এই ঋণ দেওয়া হবে কম সুদে৷ এর আগেই গুলিচালনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
দিয়েছে রাজ্য৷ তবে, ক্ষোভ সামলাতে এ সব পথ পর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে না৷ জনতার আন্দোলন
ও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে রাজ্য সরকার ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে৷ সরকার ও বিরোধীদের
মধ্যে চাপান উতোর বাড়ছে৷ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা কমলনাথের দাবি,
‘অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে৷ ৫-১০ লাখ বা এক কোটি টাকা বিলিয়ে ক্ষোভ
শান্ত করতে চাইছেন তিনি৷’ জেডিইউ নেতা শরদ যাদবের মন্তব্য, ‘বিজেপি সরকার কৃষকদের সন্ত্রাসবাদী
ভাবছে৷ তাই গুলি চালিয়ে তাঁদের ক্ষোভ দমাতে চাইছে৷’ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম
ইয়েচুরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিজ্ঞাপন দিয়ে টুইট করেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘কৃষকদের
হাতিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী প্রচার চালাচ্ছেন, অথচ কৃষকরা গুলি খাচ্ছেন বা আত্মঘাতী
হচ্ছেন৷’ মধ্যপ্রদেশের বিরোধী দল কংগ্রেসের দিকে অশান্তির জন্য আঙুল তুলছে বিজেপি৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডুর অভিযোগ, ‘রাজনৈতিক ভাবে শিবরাজের মোকাবিলা করতে
না পেরে কংগ্রেস কৃষকদের প্ররোচনা দিচ্ছে৷ তাই দেশের সবচেয়ে শান্ত রাজ্যে অশান্তি হচ্ছে৷’
কিন্তু, বিজেপির সঙ্গী শিবসেনাই তাদের বিরুদ্ধে সরব৷ মুখপত্র ‘সামনা’য় লেখা হয়েছে,
‘বিমুদ্রাকরণের ফলে কৃষকরা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন৷’ মহারাষ্ট্রেও কৃষকরা বিক্ষোভ
দেখাচ্ছেন ঋণ মকুবের দাবিতে৷ এ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ বৈঠক ডাকলেও
তা বয়কট করে শিবসেনা৷ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশে কৃষিঋণ মকুব করে দেশের
কৃষকদের পথ দেখিয়েছেন৷ সেই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া সামলাতে এখন হিমশিম খাচ্ছে বিজেপি৷
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32321&boxid=15254814
No comments:
Post a Comment