দেশের রাজনৈতিক মহলে প্রায়
অপরিচিত কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বাছাই করে সাম্প্রতিক কালের সেরা রাজনৈতিক চমক
দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বিজেপি নেতাদের দাবি, এটা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক
মাস্টারস্ট্রোক৷ চলতি বছরের শেষে নিজের রাজ্য গুজরাট ও দু’বছর পরে লোকসভা নির্বাচনে
দলিত ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপিকে তাই অনেকটাই এগিয়ে রাখলেন মোদী৷ এবং এমন একটা সময়,
যখন দলিতদের উপর অত্যাচারের কিছু ঘটনা ঘটায় বিজেপি-র দলিত ভোট পাওয়া নিয়ে একটা সামান্য
সংশয় দেখা যাচ্ছিল৷ দেশের রাজনীতিতে কোবিন্দ পরিচিত মুখ নন৷ যদিও তিনি দু’দফায় রাজ্যসভার
সাংসদ ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন, বিজেপি-র তফসিলি মোর্চার দীর্ঘদিনের প্রধান
ছিলেন৷ তা সত্ত্বেও তাঁর নাম সেরকম সুপরিচিত নয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও
তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, দেশে অনেক বড় দলিত নেতা আছেন৷ তাঁদের ছেড়ে রামনাথকে যে রাষ্ট্রপতি
পদে প্রার্থী করা হল তার কারণ, তিনি বিজেপি-র তফসিলি মোর্চার প্রধান৷’ দেশের লোক এতদিনে
বুঝে গিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদীর চিন্তাভাবনাটা একটু আলাদা৷ রামনাথকে প্রার্থী করা তাঁর
নিজস্ব চিন্তার ফসল৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে বলা হত, তিনি দিল্লির
যে ক্ষমতার বৃত্ত আছে, তার বাইরের লোক৷ এই ক্ষমতার বৃত্তে থাকা লোকেরা চলনে-বলনে-চিন্তায়-চেতনায়
বেশ কিছুটা আলাদা৷ তাঁরা হলেন অভিজাত রাজনীতিক৷ মোদী এই ক্ষমতার বলয়ে থাকা লোকেদের
ও তাঁদের সংস্কৃতিকে যে বিশেষ পছন্দ করেন এমন নয়৷ তাই বারেবারে তিনি এমন লোকেদের গুরুত্ব
দিচ্ছেন, যাঁরা এর বাইরের লোক৷
দলিত নেত্রী মায়াবতীকে রাজ্যসভায়
নিয়ে আসতে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি ও রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস মোটামুটি একমত৷ তার মানে
উত্তরপ্রদেশে দলিত-যাদব-সংখ্যালঘু ভোট পরের লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের দিকে যাওয়ার একটা
সম্ভাবনা ছিল৷ বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে কৃষকদের ক্ষোভ বেরিয়ে এসেছে৷
সেই অবস্থায় কানপুর দেহাতের অ-জাটভ দলিতের প্রতিনিধি ও গরিব কৃষক ঘরের সন্তানকে দেশের
সর্বোচ্চ পদে বসাচ্ছেন মোদী৷ উত্তরপ্রদেশে দলিতদের মধ্যে জাটভরা হচ্ছেন মায়াবতীর অনুগামী৷
তাঁদের বাদ দিয়ে অ-জাটভ ভোট বিজেপি-র দিকে আসতে বাধা রইল না৷ তবে এ হেন কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি
হওয়ার জন্য সম্ভবত বিরোধী প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হবে৷ কারণ, কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ
অন্য বিরোধী দলগুলি তাঁদের প্রার্থী দাঁড় করানোর সিদ্ধান্তে কার্যত অনড়৷ তাঁরাও কোনও
পরিচিত দলিত ব্যক্তিত্বকে প্রার্থী করার কথা ভাবছেন৷ মীরা কুমার বা সুশীল কুমার শিন্ডের
নাম প্রস্তাব করা হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে দলিত তাস থাকবে বিরোধীদের হাতেও৷ আগামী ২২
তারিখ বিরোধীদের বৈঠকে নাম সুনিশ্চিত করা হবে৷ রাতেই দিল্লি পৌঁছে গেছেন বিহারের রাজ্যপাল৷
তিনি বলেন, ‘আমাকে মনোনীত করার জন্য নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে ধন্যবাদ৷ আশা করি, আমাকে
সকলেই সমর্থন করবেন৷’ যদিও তা বোধহয় হবে না৷ পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক থেকেই সমর্থন
চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ফোনে সনিয়া গান্ধী ও মনমোহন সিংকে ফোন করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁরা সমর্থনের
কথা জানাননি৷ তেমনই বেঁকে বসেছে শরিক শিবসেনাও৷ যদিও তাতে আনকোরা কোবিন্দের রাইসিনা
হিলসে পা রাখতে কোনও সমস্যা হবে না৷
সৌজন্য - গৌতম হোড়। এইসময়,
২০/০৬/২০১৭।
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32594&boxid=135745200
No comments:
Post a Comment