Tuesday, June 20, 2017

রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন বিহারের বর্তমান রাজ্যপাল, কানপুর দেহাতের দলিত নেতা, গরিব কৃষক ঘরের সন্তান, আরএসএসের ঘনিষ্ঠ রামনাথ কোবিন্দ।


দেশের রাজনৈতিক মহলে প্রায় অপরিচিত কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বাছাই করে সাম্প্রতিক কালের সেরা রাজনৈতিক চমক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বিজেপি নেতাদের দাবি, এটা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক মাস্টারস্ট্রোক৷ চলতি বছরের শেষে নিজের রাজ্য গুজরাট ও দু’বছর পরে লোকসভা নির্বাচনে দলিত ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপিকে তাই অনেকটাই এগিয়ে রাখলেন মোদী৷ এবং এমন একটা সময়, যখন দলিতদের উপর অত্যাচারের কিছু ঘটনা ঘটায় বিজেপি-র দলিত ভোট পাওয়া নিয়ে একটা সামান্য সংশয় দেখা যাচ্ছিল৷ দেশের রাজনীতিতে কোবিন্দ পরিচিত মুখ নন৷ যদিও তিনি দু’দফায় রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন, বিজেপি-র তফসিলি মোর্চার দীর্ঘদিনের প্রধান ছিলেন৷ তা সত্ত্বেও তাঁর নাম সেরকম সুপরিচিত নয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, দেশে অনেক বড় দলিত নেতা আছেন৷ তাঁদের ছেড়ে রামনাথকে যে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করা হল তার কারণ, তিনি বিজেপি-র তফসিলি মোর্চার প্রধান৷’ দেশের লোক এতদিনে বুঝে গিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদীর চিন্তাভাবনাটা একটু আলাদা৷ রামনাথকে প্রার্থী করা তাঁর নিজস্ব চিন্তার ফসল৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে বলা হত, তিনি দিল্লির যে ক্ষমতার বৃত্ত আছে, তার বাইরের লোক৷ এই ক্ষমতার বৃত্তে থাকা লোকেরা চলনে-বলনে-চিন্তায়-চেতনায় বেশ কিছুটা আলাদা৷ তাঁরা হলেন অভিজাত রাজনীতিক৷ মোদী এই ক্ষমতার বলয়ে থাকা লোকেদের ও তাঁদের সংস্কৃতিকে যে বিশেষ পছন্দ করেন এমন নয়৷ তাই বারেবারে তিনি এমন লোকেদের গুরুত্ব দিচ্ছেন, যাঁরা এর বাইরের লোক৷
দলিত নেত্রী মায়াবতীকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসতে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি ও রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস মোটামুটি একমত৷ তার মানে উত্তরপ্রদেশে দলিত-যাদব-সংখ্যালঘু ভোট পরের লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের দিকে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল৷ বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে কৃষকদের ক্ষোভ বেরিয়ে এসেছে৷ সেই অবস্থায় কানপুর দেহাতের অ-জাটভ দলিতের প্রতিনিধি ও গরিব কৃষক ঘরের সন্তানকে দেশের সর্বোচ্চ পদে বসাচ্ছেন মোদী৷ উত্তরপ্রদেশে দলিতদের মধ্যে জাটভরা হচ্ছেন মায়াবতীর অনুগামী৷ তাঁদের বাদ দিয়ে অ-জাটভ ভোট বিজেপি-র দিকে আসতে বাধা রইল না৷ তবে এ হেন কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য সম্ভবত বিরোধী প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হবে৷ কারণ, কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি তাঁদের প্রার্থী দাঁড় করানোর সিদ্ধান্তে কার্যত অনড়৷ তাঁরাও কোনও পরিচিত দলিত ব্যক্তিত্বকে প্রার্থী করার কথা ভাবছেন৷ মীরা কুমার বা সুশীল কুমার শিন্ডের নাম প্রস্তাব করা হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে দলিত তাস থাকবে বিরোধীদের হাতেও৷ আগামী ২২ তারিখ বিরোধীদের বৈঠকে নাম সুনিশ্চিত করা হবে৷ রাতেই দিল্লি পৌঁছে গেছেন বিহারের রাজ্যপাল৷ তিনি বলেন, ‘আমাকে মনোনীত করার জন্য নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে ধন্যবাদ৷ আশা করি, আমাকে সকলেই সমর্থন করবেন৷’ যদিও তা বোধহয় হবে না৷ পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক থেকেই সমর্থন চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ফোনে সনিয়া গান্ধী ও মনমোহন সিংকে ফোন করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁরা সমর্থনের কথা জানাননি৷ তেমনই বেঁকে বসেছে শরিক শিবসেনাও৷ যদিও তাতে আনকোরা কোবিন্দের রাইসিনা হিলসে পা রাখতে কোনও সমস্যা হবে না৷
সৌজন্য - গৌতম হোড়। এইসময়, ২০/০৬/২০১৭।

http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32594&boxid=135745200

No comments:

Post a Comment