ইন্দোর
: এক দিকে যখন ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন নরেন্দ্র
মোদী, তখন মধ্যপ্রদেশে আয়
বৃদ্ধির দাবিতে ও কৃষি ঋণ মকুবের আন্দোলন করতে গিয়েই পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিতে হল
৫ কৃষককে৷ জখম হলেন আরও কয়েক জন৷ পিপলিয়া, রতলাম, মন্দসৌরের মতো জায়গায় আন্দোলনকারীদের হঠাতে
মঙ্গলবার নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ কার্ফু জারি করা হয় চারটি জায়গায়, উজ্জয়িনী সহ একাধিক জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়৷ এলাকায় মোতায়েন হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ ৫ কৃষকের
মৃত্যু ঘিরে যখন তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশজুড়ে, ঠিক
তখনই বিতর্ক ধামাচাপা দিতে বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, পুলিশ নয়, গুলি
চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা ! দিনের শেষে যা বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালে৷ তড়িঘড়ি মধ্যপ্রদেশ
সরকার ঘোষণা করে, নিহতদের পরিবারকে এক কোটি
করে ও আহতদের ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷ নিহতদের পরিবারের একজনকে
চাকরির প্রতিশ্রীতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান৷ তবে এর পিছনে
কংগ্রেসের হাত আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ টুইটে চৌহান জানান, এর বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে৷ ডাল, পেঁয়াজ সহ অন্যান্য কৃষিজাত
পণ্যের সহায়ক মূল্যের দাবিতে ১ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন
পশ্চিম মধ্যপ্রদেশের কৃষকরা৷ মন্দসৌর, রতলাম
এবং পিপলিয়া মান্ডি এলাকায় আচমকাই পথে নেমে গাড়ি ভাঙচুর করতে শুরু করেন
বিক্ষোভকারীরা৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০ টিরও বেশি ট্রাক এবং ৩টি বাইকে৷ গুঁড়িয়ে
দেওয়া হয় রাস্তায় পাশের দোকানপাট৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু জায়গায়
প্রবল লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ কাঁদানে গ্যাসের সেলও ফাটানো হয়৷ এতে পরিস্থিতি আরও
বিগড়ে যায়৷ দালোডা এলাকায় রেললাইন উপড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন ক্ষুব্ধ কৃষকেরা৷
পুলিশের দাবি, তখনই গুলি
চালাতে বাধ্য হয় তারা৷ ঘটনাস্থলেই মারা যান ২ আন্দোলনকারী৷ পরে হাসপাতালে মৃত্যু
হয় আরও ৩ জনের৷ একই ছবি ধরা পড়েছে ইন্দোরে৷ আন্দোলনকারী কৃষকদের দাবি, তাঁদের দুর্দশার কথা কারও কানে যাচ্ছে না৷
প্রতিশ্রুতি ছাড়া সরকার কিছু দিতেই রাজি নয়৷ চৌহান এ দিনের ‘দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক’ ঘটনায় ‘ব্যথিত’ হলেও তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা আলোচনায় সমস্যা সমাধানে সবসময়ই আগ্রহী৷
কিন্তু এ দিন সমাজবিরোধীরা এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে৷’ প্রতিবাদে
আজ, বুধবার বন্ধ ডেকেছে বেশ
কিছু কৃষক সংগঠন৷ কংগ্রেস তাকে সমর্থন করছে৷ কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে কী এমন হল যার
জন্য পুলিশ গুলি চালাল ? উজ্জয়িনী ডিভিশনের
কমিশনার ও এম ঝায়ের বক্তব্য,
দুপুর
২টো নাগাদ পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়৷ তখন গুলি চালানো ছাড়া আর কোনও উপায়
ছিল না৷ আন্দোলনকারীদের পাল্টা দাবি, পরিস্থিতি
বিগড়ে যাওয়ার দায় সরকারেরই৷ ক’দিন আগে চৌহানই সহায়ক
মূল্যের জন্য তহবিল গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন৷ যদিও, তা
এখনও গড়া হয়নি৷ যাতে কৃষকদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে বিজেপি সরকারকে এক
হাত নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা৷ টুইটারে রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, সরকার এখন কৃষকদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে৷ এর
তদন্তে নিজেদের বিধায়কদের নিয়ে দল গড়েছে কংগ্রেস৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে
লিখেছেন, ‘ঘটনা অত্যন্ত
দুর্ভাগ্যজনক৷ মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা রইল৷ আমরা সর্বদা আমাদের
কৃষকদের পাশে রয়েছি৷’ চৌহানের পদত্যাগ দাবি
করেছে আপ৷ কৃষক হত্যার নিন্দা করে বিবৃতি জারি করে সিপিএমের পলিটব্যুরো৷ সিপিএমের
সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘বিজেপির জমানায় যাঁরাই প্রতিবাদ করেন, তাঁদের উপর গুলি চালানোই কি তাদের একমাত্র
কাজ ? তা ছাড়া ইন্টারনেট সংযোগও
বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে৷ আমাদের মৌন প্রধানমন্ত্রী তো শুধু বিদেশে কারও মৃত্যু হলে
বিচলিত হন!’ পাল্টা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে
কৃষকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ করছেন শিবরাজ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষকদের এই আন্দোলন এখন মোদীর গলার কাঁটা হয়ে
দাঁড়িয়েছে৷ কারণ তাঁরই দলের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ৷ যিনি ক্ষমতায় এসেই
কৃষিঋণের একটা বড় অংশ মকুব করে দিয়েছেন৷ যে উদাহরণকে সামনে রেখে আন্দোলনে নেমেছেন
মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের কৃষকেরা৷ ঘটনাচক্রে যেগুলিতে বিজেপিরই সরকার৷
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জানিয়েছেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সবচেয়ে বড় কৃষিঋণ মকুব
করা হবে৷ তাতে প্রায় দু’কোটি কৃষক উপকৃত হবেন৷
তাতে চাপ আরও বেড়েছে শিবরাজের ওপর৷ এ দিনের ঘটনা নিঃসন্দেহে তাঁর অস্বস্তিও বাড়িয়ে
দিল৷
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32298&boxid=151556439
No comments:
Post a Comment