দীর্ঘদিন
ধরে নানা হম্বিতম্বি করার পর অবশেষে ভাবাদিঘির রেল প্রকল্প নিয়ে সুর নরম করল তৃণমূল৷
গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার পূর্ব রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে সম্প্রতি এক চিঠিতে
দিঘি বাঁচিয়ে রেল লাইন করার কথা বলেছেন৷ চিঠিতে তিনি রেলকর্তার উদ্দেশে লিখেছেন, ‘দিঘি
বাঁচিয়ে যদি আপনাদের পক্ষে রেল লাইন করা সম্ভব হয়, তাহলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই৷ আমরা
চাই, তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর লাইনের ওই সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তি হোক৷’ সূত্রের খবর, রেল
বিধায়ককে তাঁর চিঠির জবাবে লিখিত ভাবে কিছু জানায়নি৷ তবে মৌখিক ভাবে তাঁকে জানানো হয়েছে,
এই মুহূর্তে লাইন ঘোরানো সম্ভব নয়৷ স্থানীয় বিধায়কের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ভাবাদিঘি
বাঁচাও কমিটি৷ তার অন্যতম মুখপাত্র স্বপন রায় বলেন, ‘এত দিনে তাহলে ঘুম ভাঙল ? আমরা
তো এই কথাই প্রথম থেকে বলে আসছি৷ আমরা রেল লাইনের জন্য দিঘির উত্তর পারের জায়গা ছেড়ে
দেব৷’ ভাবাদিঘির মানুষ দিঘি বাঁচিয়ে রেল লাইন করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷
সেই আন্দোলনকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের তাবড় নেতা-মন্ত্রী
বিভিন্ন সময়ে কটাক্ষ করেছেন৷ মাস তিনেক আগে বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী
হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘ওটা আমার স্বপ্নের প্রকল্প৷ আমাকে কেউ চমকাতে আসবেন না৷
ওই জায়গা দিয়েই রেল লাইন হবে৷ দরকার হলে পাশ দিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ দিঘি কাটিয়ে দেব৷’
মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রয়োজনে আলোচনায় বসার কথাও বলেছিলেন৷ যদিও তার
পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বা সরকারের তরফ থেকে কেউ আন্দোলনকারীদের আলোচনার টেবিলে ডাকেননি৷
এর আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়ও গোঘাটে গিয়ে নানা প্রতিশ্রীতি দিয়ে
এসেছিলেন৷ তবে তিনিও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেননি৷ বিধায়ক রেলকে লেখা চিঠিতে জানান,
তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্প গোঘাট স্টেশনের অনতিদূরে ভাবাদিঘির পারে গিয়ে অংশীদারদের
কিছু অংশের বাধায় থমকে গিয়েছে৷ তারা কোনও ভাবেই দিঘির উপর দিয়ে প্রকল্প নিয়ে যেতে রাজি
হচ্ছিল না৷ এই অবস্থায় রেলের কাজ দ্রুত শুরু করার স্বার্থে মানুষদের আন্দোলন থেকে সরে
আসতে একগুচ্ছ প্রতিশ্রীতি দেওয়া হয়েছে৷ তা পূরণ হলে আন্দোলনকারীরা রেলের কাজ শুরু করতে
দিতে রাজি আছেন৷ মানস বলেন, ‘রেলের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা মানুষকে বুঝিয়ে ছিলাম,
দিঘির দুই প্রান্তের কাজ যেখানে প্রায় শেষ, সেখানে রেলের পক্ষে অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন
করা অসম্ভব৷ তার পরও কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বলছে, রেল মনে করলে অ্যালাইমেন্ট বদল
করে দিঘির জল বাদ দিয়ে উত্তর পারের ডাঙার উপর লাইন ঘোরাতে পারে৷ আমরা নাকি তাতে বাধা
দিচ্ছি৷’ এই অবস্থায় তৃণমূল বিধায়ক জানাচ্ছেন, রেল যদি দিঘি বাঁচিয়ে রেল লাইন করতে
পারে, তাহলে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই৷ এদিকে বুধবারই ভাবাদিঘি নিয়ে কলকাতায় পূর্ব রেলের
জেনারেল ম্যানেজার হরিন্দ্র রাওয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন সেভ ডেমোক্র্যাসির এক প্রতিনিধিদল৷
তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদেরও কয়েক জন ছিলেন৷ রেলকর্তা তাঁদের জানান, রেল বিষয়টি নিয়ে
ভাবছে৷ বৃহস্পতিবার গোঘাটের বিধায়ক বলেন, ‘যাতে রেলের কাজ দ্রুত শেষ করা যায়, তার জন্যই
আমি চিঠি দিয়েছি৷ আমরা বাগড়া দিচ্ছি বলে একটা প্রচার চলছে৷ আমরাও চাই, দিঘি বাঁচুক৷
রেল লাইনটি হলে সাধারণ মানুষের উপকার হবে৷’ গত ১৬ মার্চ, ২০১৭ ভাবাদিঘি নিয়ে প্রথম
আন্দোলনের সূচনা হয়৷ তাতে মারধর, আগুন লাগিয়ে দেওয়া, গাড়ি ভাঙচুর সবই চলে৷ পুলিশের
সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মারামারি হয়৷ তার পর দীর্ঘ প্রায় তিন মাস রেলের কাজ বন্ধ হয়ে
পড়ে রয়েছে৷
দেবাশিস
দাশগুন্ত ও দিব্যেন্দু সরকার, এই সময়।
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=32508&boxid=144254875
No comments:
Post a Comment