Tuesday, July 17, 2018

বাঁকুড়া জেলায় আদিবাসীদের জন্য এক জানলা পরিষেবা কেন্দ্র চালু করল প্রশাসন।


বাঁকুড়া জেলায় আদিবাসীদের সরকারি দপ্তরে গিয়ে এ-টেবিল থেকে ও-টেবিলে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানোর দিন শেষ। এবার থেকে এক ছাদের তলায় এক টেবিলে গেলেই যেকোন সমস্যার সমাধান পাবেন আদিবাসীরা। সমস্যা ছোট হোক কিংবা বড়। আবেদনের এক মাসের মধ্যেই মিলবে সুরাহা। আদিবাসীদের জন্য রাজ্যে এই প্রথম এমন পরিষেবা চালু হল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে।
কয়েক দিন আগে বাঁকুড়ায় গত ৩০ শে জুন, ২০১৮ হুল দিবসের অনুষ্ঠানে আদিবাসীদের জন্য ওই পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস। সেই ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই চালু হয়েছে ‘সিঙ্গল উইন্ডো সার্ভিস সিস্টেম’ বা একক কেন্দ্রিক সহায়তা কেন্দ্র। খাতড়া মহকুমা অফিসে এই একক কেন্দ্রিক সহায়তা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন রানিবাঁধের বিধায়ক শ্রীমতী জ্যোৎস্না মান্ডি ও জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস। আদিবাসীদের এই সহায়তা কেন্দ্রের পোষাকি নাম সাঁওতালি ভাষায় দেওয়া হয়েছে ‘সপহৎ’, অর্থাৎ সাহায্য করা।
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের মধ্যে খাতড়া মহকুমার সবকটি ব্লকে চালু করা হবে এই একক কেন্দ্রিক সহায়তা কেন্দ্র। পরে বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া সদর মহকুমার ব্লকগুলিতেও আদিবাসীদের জন্য ওই সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হবে।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশংকর এস বলেন, ‘আদিবাসীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য এই ধরনের একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা ছোট কাজের জন্যেও বিভিন্ন অফিসে এতদিন আদিবাসীদের বারে বারে ঘুরতে হত। এবার থেকে তাঁরা একটা টেবিলে গিয়েই তাঁদের সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানাতে পারবেন। আবেদনকারীকে বার বার আসতেও হবে না। আমাদের অফিসের কর্মীরাই সেই আবেদনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এক মাসের মধ্যেই আবেদনকারীর সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা মনে করছি। এর ফলে আদিবাসী মানুষদের হয়রানিও কমবে।’
রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি বলেন, ‘আদিবাসীরা সরকারি অফিসে গিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে নাজেহাল হয়ে পড়তেন। সারাদিন নাকাল হয়ে তাঁদের খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হত। অনেক সময় সমস্যার কথা ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারতেন না। এবার থেকে ‘সপহৎ’ ভীষণ ভাবে আদিবাসীদের সাহায্য করবে। তাঁদের আর সব জায়গায় ছুটে বেড়াতে হবে না। জেলা প্রশাসনই তাঁদের সেই সমস্যার সমাধান করে দেবে।’
বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত এসসিএসটি সেলের চেয়ারম্যান শ্রী গৌর টুডু বলেন, ‘সরকারি ভাবে জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ খুবই ভালো। টিঁকিয়ে রাখতে পারলে আদিবাসীদের সুবিধা হবে। জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভ্রান্ত হন। অনেকে প্রতারিতও হয়েছেন। তবে জেলা প্রশাসনের এই ধরনের সহায়তা কেন্দ্র থেকে আদিবাসীরা উপকৃত হবেন বলেই আমি মনে করি।’
আদিবাসী একতা মঞ্চের বাঁকুড়া জেলার সভাপতি রবীনাথ মান্ডি অবশ্য বলেন, ‘বাম আমলে তো বটেই এই আমলেও আদিবাসীদের জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাস্তবে তার সঠিক রূপায়ণ হয়নি। তাই সপহৎ কতটা সার্থক হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
ঠিক হয়েছে, সমস্যায় পড়লে একক কেন্দ্রিক সহায়তা কেন্দ্রে আদিবাসীরা এসে সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানাবেন। ব্লক স্তরে প্রথমে দু’সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। না হলে, পরের এক সপ্তাহ সেই সমস্যা মেটানোর জন্য মহকুমা স্তরে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরপরেও সুরাহা না-হলে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবে জেলাশাসকের দপ্তর। গোটা বিষয়টি তদারকি করবেন জেলাশাসক স্বয়ং।

No comments:

Post a Comment