বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর ১ নম্বর ব্লকের মল্লারপুর থানার তালোয়া গ্রামে গত পাঁচদিন
ধরে অনাহারে ছিলেন এক আদিবাসী মা ও ছেলে। আদিবাসী মহিলা লক্ষ্মী
মুর্মু ষাটোর্ধ হলেও পান না বার্ধক্যভাতা। সরকারি সাহায্য বলতে রেশনের চাল গম। কিন্তু
অর্থাভাবে সেই সামগ্রীও দোকান থেকে তোলার ক্ষমতা নেই। ফলে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছেলেকে
নিয়ে অর্ধাহার অনাহারে দিন কাটাচ্ছে আদিবাসী পরিবারটি। সংবাদ মাধ্যেমের কাছ থেকে খবর
পেয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চায়েতে প্রধান।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গিয়েছে যে বছর দশেক আগে আদিবাসী মহিলা লক্ষ্মী মুর্মুর
স্বামী রাম মুর্মু কাজের খোঁজে দিল্লি চলে যান। তারপর থেকে তাঁর সাথে পরিবারের কোন
যোগাযোগ নেই। স্বামীর অবর্তমানে দুই ছেলেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে বড় করে তুলেছিলেন লক্ষ্মী
মুর্মু। কিন্তু বড় ছেলে উপার্জন শুরু করতেই পৃথক থাকতে শুরু করে। ফলে পক্ষাঘাত রোগে
আক্রান্ত ছোট ছেলে সুকুল মুর্মুকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ লক্ষ্মী
মুর্মু। কয়েকদিন থেকে বৃষ্টি আর শারীরিক অসুস্থতায় ভিক্ষাবৃত্তিতে বের হতে পারছেন না
লক্ষী মুর্মু। ফলে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে অসহায় ভাবে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন পাঁচ দিন ধরে।
লক্ষী মুর্মু বলেন, "বয়সের ভারে সব দিন ভিক্ষা করতে বের হতে পারছি না। ফলে
পাঁচ দিন ধরে অনাহারে রয়েছি। বার্ধক্যভাতার জন্য বার বার পঞ্চায়েতে আবেদন করেছি। কিন্তু
কোন উত্তর পাইনি। সরকারি সাহায্য বলতে রেশন সামগ্রী। কিন্তু হাতে পয়সা না থাকলে সেই
সামগ্রী কিনব কিভাবে"? গ্রামের বাসিন্দা ফুলমনি হাঁসদা, লক্ষণ টুডুরা বলেন,
"আমরা মাঝে মধ্যে ওদের খাবার দিই। কিন্তু আমাদেরও সামর্থ্য কম। সারাদিন দিনমজুরি
খেটে বাড়ি ফিরে সব দিন ওদের খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে ওদের মাঝে মধ্যেই অনাহারে
থাকতে হয়"।
পঞ্চায়েত প্রধান হজ মহম্মদ শেখ বলেন, "আমি জানতাম না। সংবাদ মাধ্যমের কাছে
জানলাম। আজই আমরা চাল, টাকা দিয়ে সাহায্য করব। দিন কয়েকের মধ্যে বার্ধক্যভাতা সহ সরকারি
যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা আছে তা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো"।
অবশেষে অনাহার ক্লিষ্ট আদিবাসী পরিবারের বাড়িতে পৌঁছাল ব্লক প্রশাসন এবং খাদ্য
দফতরের আধিকারিকরা। একই সঙ্গে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল গ্রামে গিয়ে পরিবারের হাতে
খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়। বিষয়টি সোমবার বিধানসভায় তুলবেন বলে জানিয়েছেন হাঁসন কেন্দ্রের
কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ।
এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর রবিবার ওই বাড়িতে যান ময়ৃরেশ্বর ১ নম্বর ব্লকের জয়েন্ট
বিডিও দেবজ্যোতি বড়াল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রামপুরহাট
মহকুমা খাদ্য নিয়ামক রমেশ চন্দ্র রহমান।
ধীরেন্দ্রবাবু বলেন, "ওই পরিবারের একটি সরকারি বাড়ি পাওয়া উচিত ছিল। অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে রয়েছে। বার্ধক্যভাতা সহ আরও সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার
কথা। কিন্তু তা পায়নি। এটা দেখার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আশা কর্মীদের। কিন্তু কেউই
নজর না দেওয়ায় তাদের অনাহারে থাকতে হয়েছে। আমারা ২০ কেজি চাল, ১০ কেজি ডাল, সবজি
তেল পৌঁছে দিয়েছি। সোমবার বাড়ি এবং বার্ধক্যভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে"।
কংগ্রেসের পক্ষে এ এম কামরুজ্জামান ওই বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন।
বিধায়ক মিল্টন রশিদ বলেন, "এদিন আমাদের কর্মীরা খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে।
আমি জেলা শাসকের সঙ্গে কথা বললাম। ওই মহিলাকে বাড়ি এবং বার্ধক্যভাতা দেওয়ার আবেদন
করেছি। সোমবার বিষয়টি বিধানসভায় তুলব"।
সৌজন্য - আমাদের ভারত.কম।
No comments:
Post a Comment