Sunday, July 22, 2018

৯ ই আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ডাক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।


৯ ই আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ডাক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

২১ শে জুলাই, ২০১৮ তৃণমূল কংগ্রেসের ২৫ তম শহীদ স্মরণ দিবসে কলকাতার ধর্মতলা সমাবেশ থেকে ৯ ই আগস্ট, ২০১৮ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ডাক দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আগে গত বুধবার ১১ ই জুলাই, ২০১৮ উত্তরবঙ্গের উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক সভা থেকেও ৯ ই আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ডাক দিয়েছিলেন। এ বার তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সরকারী বেসরকারি উদ্যোগে বিপুল উৎসাহে ৩০ শে জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ ‘হুল’ দিবস পালন করা হয়েছিল সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে।
৯ ই আগস্ট আদিবাসী দিবস কি ?
রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাতায় ৯ অগস্ট দিনটি ইন্টারন্যাশনাল ডে অব ওয়ার্ল্ড ইন্ডিজেনাস পিপলহিসেবে স্বীকৃত। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা তথা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই দিনটি ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ হিসেবে ১৯৯৪ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে।
সংযুক্ত রাষ্ট্র সংঘ (United Nations Organizations - UNO) আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৩ সালকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী বর্ষঘোষণা করে। ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রতিবছর ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দশকঘোষণা করা হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র ২০০৭অনুসারে আদিবাসীদের ৪৬টি অধিকারের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। আদিবাসী এলাকার খনিজ, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ আদিবাসীদের অনুমতি ছাড়া সরকার ব্যবহার করতে পারবে না। 
প্রতিবছর এ দিন সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের ৭০টি দেশের প্রায় ৩৭ কোটি আদিবাসী জনগণ দিবসটি পালন করছে। ভারতে প্রায় ১০.৪ কোটি আদিবাসী বসবাস করেন যা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৬ %। পশ্চিমবাংলায় প্রায় ৬০ লক্ষ আদিবাসীর বাস যা পশ্চিমবাংলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ %। মূলধারার জনগোষ্ঠীর থেকে আদিবাসীদের পৃথক জীবন, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস আছে। পশ্চিমবাংলায় মোট ৪০ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সরকারী সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য।
পশ্চিমবঙ্গে তালিকাভুক্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ গোষ্ঠীগুলি – ১) ASUR, ২) KORWA, ৩) BAIGA, ৪) LEPCHA, ৫) BEDIA, BEDIYA, ৬) LODHA, KHERIA, KHARIA, ৭) BHUMIJ, ৮) LOHARA, LOHRA, ৯) BHUTIA, SHERPA, TOTO, DUKPA, KAGATAY, TIBETAN, YOLMO, ১০) MAGH, ১১) BIRHOR, ১২) MAHALI, ১৩) BIRJIA, ১৪) MAHLI, ১৫) CHAKMA, ১৬) MAL PAHARIYA, ১৭) CHERO, ১৮) MECH, ১৯) CHIK BARAIK, ২০) MRU, ২১) GARO, ২২) MUNDA, ২৩) GOND, ২৪) NAGESIA, ২৫) GORAIT, ২৬) ORAON, ২৭) HAJANG, ২৮) PARHAIYA, ২৯) HO, ৩০) RABHA, ৩১) KARMALI, ৩২) SANTAL, ৩৩) KHARWAR, ৩৪) SAURIA PAHARIA, ৩৫) KHOND, ৩৬) SAVAR, ৩৭) KISAN, ৩৮) LIMBU, ৩৯) KORA, ৪০) TAMANG
পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২ টি আসন আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের জন্য সংরক্ষিত – ঝাড়গ্রাম ও আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসন দুটি। পশ্চিমবাংলার মোট ২৯৪ টি বিধানসভার আসনের মধ্যে ১৬ টি বিধানসভা আসন আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের জন্য সংরক্ষিত – ১) Kumargram, ২) Kalchini, ৩) Madarihat, ৪) Mal, ৫) Nagrakata, ৬) Phansidewa, ৭) Tapan, ৮) Habibpur, ৯) Sandeshkhali, ১০) Nayagram, ১১) Keshiary, ১২) Binpur, ১৩) Bandwan, ১৪) Manbazar, ১৫) Ranibandh, ১৬) Raipur। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে শিক্ষা, চাকরি ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৬% আসন আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের জন্য সংরক্ষিত। প্রতিটি সরকারী প্রকল্প রুপায়নের ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের অগ্রাধিকার দেবার কথা সরকারী গাইডলাইনে পরিষ্কার ভাবে বলা থাকে। এত সুযোগ সুবিধা ও সুরক্ষা কবচ থাকা সত্ত্বেও আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের যথাযথ উন্নয়ন হচ্ছে না। সরকারী পরিকল্পনা ও বঞ্চিত আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ মানুষদের মধ্যে বিশাল ফারাক থেকে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রথমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদাধিকারী ব্যক্তি ৯ ই আগস্ট আদিবাসী দিবস পালনের ডাক দেওয়ায় আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের মধ্যে আশার আলো জাগছে। এইবার সম্ববত আদিবাসীদের সমস্যার প্রতি সরকারী দৃষ্টি যত্নবান হবে।

No comments:

Post a Comment