এক ৪০ বছর বয়সি আদিবাসী গৃহবধূকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল স্থানীয় কয়েকজন আদিবাসী
যুবকের বিরুদ্ধে। গত বুধবার ১১ ই জুলাই, ২০১৮ বিকেলে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে বীরভূম
জেলার মহম্মদবাজার থানার দুবনি গ্রাম লাগোয়া উদয়ডিহি জঙ্গলে। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে
পুলিস স্থানীয় তিনজন আদিবাসী যুবককে গ্রেপ্তার করে। যদিও তারা নির্দোষ বলে থানায় জমায়েত
করে ‘বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা’ সংগঠনের লোকজন। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের সিউড়ি আদালতে
তোলা হলে বিচারক তিনদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলার পুলিস সুপার কুণাল আগরওয়াল বলেন, মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তিন অভিযুক্তকে
গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। মহিলার শারীরিক পরীক্ষার জন্য সিউড়ি হাসপাতালে
পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে অত্যাচারের প্রমাণ মিলেছে। পুলিস
ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবনি গ্রামের নির্যাতিতা ওই আদিবাসী গৃহবধূ গ্রামের
কয়েকজনের সঙ্গে বুধবার বিকেলে উদয়ডিহির জঙ্গলে পাতা ও ছাতু সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
সেই সময়ে দলের বাকি সদস্যদের সঙ্গে দলছুট হয়ে জঙ্গলে একা হয়ে যান। জঙ্গলের ভিতরে কয়েকজন
যুবক মদ্যপান করছিল। মহিলার অভিযোগ, তারা একা পেয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে। সন্ধ্যা নাগাদ
আলুথালু পোশাকে তাঁকে খয়রাডিহি গ্রামে দেখতে পাওয়া যায়। পুলিস খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার
করে থানায় নিয়ে আসে। মহিলার বয়ানের উপর ভিত্তি করে পুলিস প্রাথমিকভাবে তিনজনকে আটক
করে। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকার আদিবাসীরা থানায় ভিড় জমান। নির্যাতিতার মাও উপস্থিত
হন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আটক তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপর নির্যাতিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস কিছু সূত্র পায়। সেই সূত্র ধরেই থানায়
আসা আদিবাসীদের মধ্যে টিআই প্যারেড করায় পুলিস। সেখানেই নির্যাতিতা তিনজনকে চিহ্নিত
করেন। পুলিস দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে। ধৃত আনন্দ সোরেন, বাবুরাম মুর্মু, বাবলু সোরেন
স্থানীয় আমগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মহিলার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় দেহে বেশ কয়েক
জায়গায় ক্ষত পাওয়া যায়। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস ছ’জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে।
অন্যদিকে, গ্রেপ্তারির খবর ছড়িয়ে পড়তেই আদিবাসী গ্রামগুলি থেকে বহু মানুষ থানায়
ভিড় করে। অভিযুক্তদের তারা নির্দোষ বলে দাবি করে। এমনকী পুলিসকে তাদের ছেড়ে দিতে চাপ
দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিস এই গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে কোনও চাপের কাছে নতিস্বীকার
করেনি। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩৭৬(ডি) গণধর্ষণের ধারায় মামলা রুজু করা হয়। যদিও বীরভূম আদিবাসী
গাঁওতা সংগঠনের নেতা রবিন সোরেন, সুনীল সোরেন বলেন, পুলিস উপযুক্ত তদন্ত করে আসল
অপরাধীদের খুঁজে বের করুক। যারা এই কাজ করবে, তারা কী কোনও দিন থানায় আসবে! আমরা স্থানীয়ভাবে
জেনেছি ওরা নির্দোষ।
অন্যদিকে, তিন অভিযুক্তকেই এদিন সিউড়ি আদালতের বিচারক সৌম্য চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে
তোলা হয়। অভিযুক্তদের আইনজীবী শেখ দিনদার আলি জামিনের আবেদন করেন। যদিও সরকারি আইনজীবী
অনিন্দ কোনার জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে অভিযুক্তদের পাঁচদিনের পুলিস হেফাজতের
আবেদন জানান। বিচারক অভিযুক্তদের তিনদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা বধূর বাপের বাড়ি মহম্মদবাজারের ভূতুড়া
পঞ্চায়েত এলাকায়। ঝাড়খণ্ডে বিয়ে হলেও দুই সন্তান, স্বামীর সঙ্গে বাপের বাড়িতে থাকেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ থাকে যে গত শুক্রবারই এই জেলার পাড়ুইয়ে এক আদিবাসী কিশোরীকে গণধর্ষণের
অভিযোগ উঠেছিল। সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় পাঁচ জনকে।
No comments:
Post a Comment