Tuesday, July 31, 2018
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসককে ডেপুটেশন "ভারত জাকাত মাঝি মাডোয়া জুয়ান গাঁওতাঁ"-র।
বনধ,
অবরোধ করে নয়, আলাপ-আলোচনার
মাধ্যমেই আদিবাসীদের দাবি দাওয়া আদায় করতে চায় “ভারত জাকাত মাঝি মাডোয়া জুয়ান
গাঁওতা”।
গত সোমবার ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শাসকের নিকট ৫৪ দফা দাবী
পেশ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর মুরমুর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী সংগঠন “ভারত
জাকাত মাঝি মাডোয়া জুয়ান গাঁওতা”। প্রবীর মুরমু জানান যে বর্তমান রাজ্য সরকারের
অধীনে আদিবাসীদের উন্নতি হচ্ছে। তারাও সরকারের এই আদিবাসী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত
থাকতে চান। প্রবীর মুরমু আরও জানান যে বর্তমান সরকারের অধীনে সাঁওতালি ভাষা
শিক্ষার উন্নতি হচ্ছে। প্রবীর মুরমু চান বর্তমান শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রাথমিক থেকে
বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সাঁওতালি ভাষার পাঠক্রম চালু হোক। নিরক্ষরতা দূরীকরণে
সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি লিপি ব্যবহৃত হোক। প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়
সাঁওতালি মিডিয়াম উচ্চ-প্রাথমিক স্কুল চালু হোক। রাজ্য মন্ত্রীসভায় সাঁওতালি
শিক্ষা বিষয়ক পৃথক মন্ত্রী নিয়োগ করা হোক। প্রবীর মুরমু আশা প্রকাশ করেন যে সরকার
তাদের দাবী দাওয়া গুরুত্ব সহকারে শুনবেন এবং দাবী পুরনে সচেষ্ট হবেন।
সৌজন্য
– সংবাদ প্রতিদিন, ৩১/০৭/২০১৮। খাদ্যে বিষক্রিয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির হাইস্কুলে অসুস্থ ৪০ আদিবাসী অবাসিক ছাত্রী।
খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে গত সোমবার ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ল
কেশিয়াড়ির নছিপুর আদিবাসী হাইস্কুলের প্রায় ৪০ জন আদিবাসী অবাসিক ছাত্রী। এদের
মধ্যে ১৮ জনকে স্থানীয় খড়িকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এবং বাকি ৬ জনকে কেশিয়াড়ি
গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার তদন্ত শুরু করছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। এলাকায় পাঠানো হয়েছে মেডিক্যাল টিমও।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন স্কুল শুরু
হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ ছাত্রীদের পেট ব্যথা শুরু হয়, কারও
কারও বমিও হয়। রবিবার রাতে কয়েকজনের পায়খানা হয় বলে জানা গিয়েছে। এরপর এদিন একে
একে ছাত্রীরা অসুস্থ হতে শুরু করলে চাঞ্চল্য ছড়ায়। যদিও সঙ্গে সঙ্গে তাদের
চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ৩৫ জন ছাত্রীকে সুপার স্পেশালিটিতে ও ৬ জনকে গ্রামীণ
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে মেডিক্যাল টিম
পাঠানো হয়। খড়্গপুরের এসিএমওএইচ দেবাশিস পাল নিজে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্কুলে যান।
তিনি বলেন, পায়খানা, বমি, পেটব্যথা নিয়ে ছাত্রীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়। কোথায় রান্না হয়েছিল, কীভাবে খাবার আনা হয়েছিল, রান্না করার কতক্ষণ পরে
খাওয়া হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক স্বপন পড়িয়া বলেন, কয়েকজন
অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। অধিকাংশ ছাত্রীকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, হস্টেলে রান্না করা মাংস খেয়ে তারা অসুস্থ হয়ে
পড়ে।
সিএমওএইচ গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, ছাত্র
হস্টেল থেকে মাংস রান্না করে এনে ছাত্রীদের হস্টেলে খাওয়ানো হয়। দু’টি হস্টেলের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। সম্ভবত সকালের রান্না রাতে খাওয়ানো
হয়েছে। এর থেকেই বিষক্রিয়া হয়ে যায়। তিনি বলেন, এর আগেও
একবার একই ঘটনা ঘটেছিল। অনেকে অসুস্থ হয়েছিল। তাই খড়্গপুরের এসিএমওএইচকে তদন্ত করে
রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেরকম কিছু দেখলে সেই রিপোর্ট জেলাশাসক ও জেলা বিদ্যালয়
পরিদর্শককে পাঠানো হবে।
ছাত্রীরা জানায়, রবিবার রাতে হস্টেলে মাংস দেওয়া হয়েছিল।
সেই মাংস খাওয়ার পর থেকেই অসুস্থতা বোধ হয়, পেট ব্যথা ও বমি
হয়। এদিন স্কুলে আসার পর তা বাড়তে থাকলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সৌজন্য
– বর্তমান পত্রিকা, ৩১/০৭/২০১৮। Sunday, July 29, 2018
তপশিলী জাতি–উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন সংশোধন রুখতে বিজেপি জোট সরকারের শরিকরা সরব।
তপশিলী জাতি–উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন (SC/ST Attrocity Act) সংশোধন রুখতে বিজেপি জোট সরকারের শরিকরা সরব।
তপশিলী জাতি–উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন (SC/ST Attrocity Act) নিয়ে
মোদী সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ল৷ দলের সাংসদ উদিত রাজ আগামী ৯ অগস্টের বিক্ষোভকে সফল
করতে উঠেপড়ে লেগেছেন৷ সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে দলের দলিত মন্ত্রীদের ‘পরগাছা’ পর্যন্ত বলেছেন তিনি৷ এর থেকেই স্পষ্ট
বিজেপির দলিত সাংসদদের, বিশেষ করে উদিত রাজের মনোভাব।
এর
পাশাপাশি শরিকি চাপও বেড়েছে৷ রামবিলাস পাসোয়ান সরকারকে চরমসীমা বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, ৭
অগস্টের মধ্যে পুরনো তপশিলী জাতি–উপজাতি অত্যাচার
নিরোধক আইন (SC/ST Attrocity Act)-কে পুনর্বহাল
করতে হবে৷ নীতীশ কুমারের জেডিইউ সেই দাবি সমর্থন করেছে৷ এই অবস্থায় বিজেপির তরফে বলা
হচ্ছে, লোকসভার অধিবেশন শেষ হলে তপশিলী জাতি–উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন (SC/ST Attrocity Act)-কে লঘু করা রুখতে অর্ডিন্যান্স জারি করা হবে৷ তখন আর ক্ষোভ-বিক্ষোভ
থাকবে না৷
কিন্তু ঘটনা
হল, সংসদের বাদল অধিবেশন ১০ অগস্ট পর্যন্ত চালু থাকবে৷ অর্ডিন্যান্স আনতে গেলে
তার পর আনতে হবে৷ কারণ, সংসদের অধিবেশন চালু থাকলে অর্ডিন্যান্স
আনা যায় না৷ সংসদ চালু না থাকলে খুব দরকারি বিষয়ে অর্ডিন্যান্স আনা যায়৷ পরে সংসদ বসলে
বিল এনে তা পাশ করাতে হয়৷ এখন যে প্রশ্নটা উঠছে, তা হল,
সুপ্রিম কোর্টের রায় এসেছিল মার্চের শেষে৷ তারপর এপ্রিল, মে, জুন-তিন মাস হাতে
পেয়েছিল সরকার৷ তা হলে বাদল অধিবেশনে কেন বিল আনা হল না? দ্বিতীয়
প্রশ্ন, যিনি এই রায় দিয়েছিলেন, সেই
বিচারপতি আদর্শ গোয়েলকে কেন অবসরের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুন্যালের প্রধান
হিসাবে নিয়োগ করা হল?
এই শেষ সিদ্ধান্ত
নিয়েও বিজেপি জোট সরকারের দলিত নেতা উদিত রাজ থেকে রামবিলাস
পাসোয়ান সকলেই প্রশ্ন তুলছেন৷ এই সিদ্ধান্ত দলিতদের মধ্যে মোটেই ভালো বার্তা দেয়নি৷
দেশের প্রতিটি রাজ্যেই কমবেশি দলিত ও আদিবাসী ভোট রয়েছে৷ তার মধ্যে বেশি রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র,
ছত্তিসগড়, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, গুজরাট, রাজস্থানে৷
সেই সব রাজ্যেই এই দুই কারণে দলিতরা ক্ষুব্ধ৷ একেই দলিতদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে
দেশ মাঝে মধ্যেই উত্তাল হয়৷ তার ওপর তপশিলী জাতি–উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন (SC/ST Attrocity Act)-কে লঘু করার অভিযোগ যুক্ত হয়েছে৷ প্রাত্তন বিচারপতি আদর্শ গোয়েলের নিয়োগ সেই সমস্যাকে আরও বাড়িয়েছে৷
বিজেপিতেই এখন সবচেয়ে বেশি দলিত ও আদিবাসী সাংসদ রয়েছেন৷ তাঁরা প্রত্যেকেই চাপটা অনুভব
করছেন৷ উদিত রাজের মতো কেউ কেউ প্রকাশ্যে ক্ষোভটা জানাচ্ছেন৷ অন্যরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ
না জানালেও দলের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন৷ উদিত রাজ যেমন সাক্ষাৎকারে
জানিয়েছেন,
তিনি দলিতদের কথা এ ভাবে বলতে পারছেন, এটা
বিজেপির পক্ষে ভালো৷ এটা দলকে সাহায্য করছে৷ যদি সকলেই চুপ থাকতেন, তাতে দলের ক্ষতি হত৷ কংগ্রসের সময় দলিত নেতারা সরকারের কড়া সমালোচনা করতেন৷
তাই এত বছর ধরে দলিতরা কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন৷ তিনি বরং সেফটি ভালভের কাজ করেছেন৷
দলিতরা মনে করছেন, বিজেপিতে অন্তত একজন আছেন, যিনি তাঁদের জন্য লড়ছেন৷ দলও তাঁকে জায়গা দিচ্ছে৷ দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে
না৷
কিন্তু এর
পরই বিচারপতি গোয়েলকে নিয়ে উদিত রাজ বলেন, তাঁর মানসিকতাই দলিত-বিরোধী ও সংরক্ষণ-বিরোধী৷ তিনি এমন একটা পদে রয়েছেন,
যেখানে থেকে তিনি ক্ষতি করতে পারবেন৷ জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুন্যালের
প্রধান হিসাবে তিনি আদিবাসীদের ক্ষতি করতে পারেন৷ এই ধরনের ব্যক্তিকে গ্রিন ট্রাইবুন্যালের
প্রধান হওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়৷
এই কথাগুলো
নিঃসন্দেহে মোদী-শাহের পক্ষে অস্বস্তির কারণ।
এভাবেই
চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উদিতের মতন
সরকারপন্থী দলিত নেতা মন্ত্রীরা৷
এই দিকে শিবসেনার
পর এ বারে বিজেপির সঙ্গত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন রামবিলাস পাসোয়ানও।
আর
এনডিএ-শরিকদের অসন্তোষে সুরে মেলাল রাহুল গাঁধীর দলও। কয়েক দিন ধরেই রামবিলাস পাসোয়ানও দাবি করে আসছেন, তপশিলী জাতি–উপজাতি অত্যাচার নিরোধক আইন (SC/ST Attrocity Act) লঘু
করা যাবে না। সরকারকে অধ্যাদেশ
আনতে হবে। আর সুপ্রিম কোর্টের যে প্রাক্তন বিচারপতি আদর্শ
গোয়েলের বেঞ্চ এই আইনকে লঘু করেছিলেন, অবসরের দিনই তাঁকে উপহার দেওয়া
হয়েছিল জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান পদ।
সেই
পদ থেকেও তাঁকে সরাতে হবে। রামবিলাসের
পুত্র চিরাগ ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অসন্তোষ জানিয়েছেন।
তিনি
বলেন, সরকার দাবি না মানলে আগামী ৯ অগস্ট দলিতদের আন্দোলনে তাঁরাও সামিল হবেন।
মানুষ
ও সরকারের মধ্যে বাছতে হলে জনতার পাশেই থাকবেন।
সঙ্গে সঙ্গে
কংগ্রেস মন্তব্য করে,
‘‘যাক, সুমতি হয়েছে!’’ কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে দলিতদের অসন্তোষ নিয়ে লোকসভায় সরব
হয়েছিলেন। গ্রিন ট্রাইবুনাল থেকে বিচারপতি আদর্শ গোয়েলের
অপসারণও চেয়েছেন। শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে আগেই ‘একলা-চলো’র ঘোষণা করেছেন।
অমিত
শাহের মধ্যস্থতায়ও বরফ গলেনি। বরং অমিত শাহ
এখন দলকে একা লড়ার প্রস্তুতি নিতে বলছেন।
সুত্র – আনন্দবাজার পত্রিকা ও এই সময়।
বীরভূমে পাঁচ দিন ধরে অনাহারে এক আদিবাসী মা ও ছেলে।
বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর ১ নম্বর ব্লকের মল্লারপুর থানার তালোয়া গ্রামে গত পাঁচদিন
ধরে অনাহারে ছিলেন এক আদিবাসী মা ও ছেলে। আদিবাসী মহিলা লক্ষ্মী
মুর্মু ষাটোর্ধ হলেও পান না বার্ধক্যভাতা। সরকারি সাহায্য বলতে রেশনের চাল গম। কিন্তু
অর্থাভাবে সেই সামগ্রীও দোকান থেকে তোলার ক্ষমতা নেই। ফলে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছেলেকে
নিয়ে অর্ধাহার অনাহারে দিন কাটাচ্ছে আদিবাসী পরিবারটি। সংবাদ মাধ্যেমের কাছ থেকে খবর
পেয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চায়েতে প্রধান।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গিয়েছে যে বছর দশেক আগে আদিবাসী মহিলা লক্ষ্মী মুর্মুর
স্বামী রাম মুর্মু কাজের খোঁজে দিল্লি চলে যান। তারপর থেকে তাঁর সাথে পরিবারের কোন
যোগাযোগ নেই। স্বামীর অবর্তমানে দুই ছেলেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে বড় করে তুলেছিলেন লক্ষ্মী
মুর্মু। কিন্তু বড় ছেলে উপার্জন শুরু করতেই পৃথক থাকতে শুরু করে। ফলে পক্ষাঘাত রোগে
আক্রান্ত ছোট ছেলে সুকুল মুর্মুকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ লক্ষ্মী
মুর্মু। কয়েকদিন থেকে বৃষ্টি আর শারীরিক অসুস্থতায় ভিক্ষাবৃত্তিতে বের হতে পারছেন না
লক্ষী মুর্মু। ফলে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে অসহায় ভাবে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন পাঁচ দিন ধরে।
লক্ষী মুর্মু বলেন, "বয়সের ভারে সব দিন ভিক্ষা করতে বের হতে পারছি না। ফলে
পাঁচ দিন ধরে অনাহারে রয়েছি। বার্ধক্যভাতার জন্য বার বার পঞ্চায়েতে আবেদন করেছি। কিন্তু
কোন উত্তর পাইনি। সরকারি সাহায্য বলতে রেশন সামগ্রী। কিন্তু হাতে পয়সা না থাকলে সেই
সামগ্রী কিনব কিভাবে"? গ্রামের বাসিন্দা ফুলমনি হাঁসদা, লক্ষণ টুডুরা বলেন,
"আমরা মাঝে মধ্যে ওদের খাবার দিই। কিন্তু আমাদেরও সামর্থ্য কম। সারাদিন দিনমজুরি
খেটে বাড়ি ফিরে সব দিন ওদের খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে ওদের মাঝে মধ্যেই অনাহারে
থাকতে হয়"।
পঞ্চায়েত প্রধান হজ মহম্মদ শেখ বলেন, "আমি জানতাম না। সংবাদ মাধ্যমের কাছে
জানলাম। আজই আমরা চাল, টাকা দিয়ে সাহায্য করব। দিন কয়েকের মধ্যে বার্ধক্যভাতা সহ সরকারি
যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা আছে তা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো"।
অবশেষে অনাহার ক্লিষ্ট আদিবাসী পরিবারের বাড়িতে পৌঁছাল ব্লক প্রশাসন এবং খাদ্য
দফতরের আধিকারিকরা। একই সঙ্গে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল গ্রামে গিয়ে পরিবারের হাতে
খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়। বিষয়টি সোমবার বিধানসভায় তুলবেন বলে জানিয়েছেন হাঁসন কেন্দ্রের
কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ।
এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর রবিবার ওই বাড়িতে যান ময়ৃরেশ্বর ১ নম্বর ব্লকের জয়েন্ট
বিডিও দেবজ্যোতি বড়াল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রামপুরহাট
মহকুমা খাদ্য নিয়ামক রমেশ চন্দ্র রহমান।
ধীরেন্দ্রবাবু বলেন, "ওই পরিবারের একটি সরকারি বাড়ি পাওয়া উচিত ছিল। অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে রয়েছে। বার্ধক্যভাতা সহ আরও সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার
কথা। কিন্তু তা পায়নি। এটা দেখার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আশা কর্মীদের। কিন্তু কেউই
নজর না দেওয়ায় তাদের অনাহারে থাকতে হয়েছে। আমারা ২০ কেজি চাল, ১০ কেজি ডাল, সবজি
তেল পৌঁছে দিয়েছি। সোমবার বাড়ি এবং বার্ধক্যভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে"।
কংগ্রেসের পক্ষে এ এম কামরুজ্জামান ওই বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন।
বিধায়ক মিল্টন রশিদ বলেন, "এদিন আমাদের কর্মীরা খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে।
আমি জেলা শাসকের সঙ্গে কথা বললাম। ওই মহিলাকে বাড়ি এবং বার্ধক্যভাতা দেওয়ার আবেদন
করেছি। সোমবার বিষয়টি বিধানসভায় তুলব"।
সৌজন্য - আমাদের ভারত.কম।
আদিবাসী উন্নয়ন ও আত্মপরিচয়
লিখেছেন – এদেলশাঙ্কা হাঁসদা।
পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে উদ্ভূত অদ্ভুত এক রাজনৈতিক সমীকরণ যা শাসকদল সহ কম
বেশী যারা এই সব বিষয়ে মাথা ঘামান সকলেই বুঝতে পারছেন। খেরওয়াল সমাজে এই নিয়ে এক
আলোড়ন চলছে। এই আলোড়নটা দরকার। বদ্ধ পুকুরের জল যেমন এক স্থানে থেকে পচে যায়, আগাছায় ভরে যায়,
পাঁক জমে, তেমনেই মনে হয় যে কোনো
সমাজ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কারণে তার নিজের দ্বারা সৃষ্টি গন্ডির মধ্য আবদ্ধ হয়ে
থেকে থাকলেও তার মধ্যেও পঙ্কিলতার সৃষ্টি হয়। যদিও আমরা খেরওয়াল সমাজ তথা সাঁওতাল
সমাজ কে বা সাঁওতালি ভাষাভাষী মানুষ দের এই ভাবে ভাবতে পারি না। কারণ গ্রামাঞ্চল
ছেড়ে ছোট বড় নানান শহরে এখন অনেক সাঁওতালি ভাষাভাষী মানুষের বসবাস গড়ে উঠেছে যা
একটা উন্নয়নের মাপকাঠি। পরিসংখ্যান ভিত্তিতে যদিও এর কোনো নথি নেই, যা এখন খুব দরকার। এর ফলে বলা যায় সাঁওতাল তথা খেরওয়াল সমাজ বরাবর পঙ্কিলতার
মধ্যে আবদ্ধ থেকেছে বা নতূন কোনো ধারণা কে গ্রহন করেনি বা গ্লোবালাইজেশন এর প্রভাব
এর উপর পড়ে নি তা কিন্তু নয়। কিন্তু এই আন্তর্জাতিকতার ঢেউয়ের মধ্যেও এতদিন
খেরওয়াল সমাজ নিজেদের বৈশিষ্ট্য পরিচিতি আত্মপরিচয় কে এখনো পর্যন্ত বিলিয়ে দেয়
নি, ভূলে যায় নি। কিন্তু ভারতবর্ষ যত বেশি আধুনিকতার দিকে যাচ্ছে, উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত দেশে হবার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে তত বেশি খেরওয়াল
আত্মপরিচয় সংকুচিত হয়ে আসছে। সাঁওতাল আত্মপরিচয় ধীরে ধীরে বিলীয়মান। আজ শহরবাসী
খেরওয়াল সাঁওতাল তার সত্তা কে ভুলে "মূল স্রোতে" মিশে যাবার পথে। সেই
সুত্রে ধরে বরাবর, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিনবঙ্গে খেরওয়ালদের মধ্যে দুটি বিষয় সব সময় পরস্পরের
বিপরীতে অবস্থান করেছে। এক উন্নয়ন, দুই আত্মপরিচয়।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উন্নয়নের যে রুপরেখা তা
খেরওয়ালদের পরিচয় কে স্বীকার করে নয়, অস্বীকার করে।
খেরওয়াল বৈশিষ্ট্য কে বজায় রেখে নয়, দলন করে অবজ্ঞা
করে। ফলে উন্নয়নের যজ্ঞে সামিল হয়েও নিজেদের শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা
প্রবল ছিলো, যা এখন বাস্তবে দেখা দিচ্ছে। সেই কারনেই এই লেখাটি পর্যন্ত বাংলায়
লিখতে হচ্ছে। যেখনে এটি সাঁওতালিতে লেখার কথা। কারন পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে নতুন
প্রজন্মের সাঁওতালি যুবক যুবতীরা বর্তমানে সাঁওতালি ভাষার থেকেও বাংলা ভাষাতে বেশি
স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। শহরাঞ্চলে অ-খেরওয়ালী জাতিয়তাবাদ এতো বেশি প্রকট যে খেরওয়াল
জনগোষ্ঠী তাদের আত্মপরিচয়কেই হারিয়ে যেতে বসেছে। নিজের মাতৃভাষা আজ সাঁওতালি থেকে
পরিবর্তিত হয়ে বাংলা,
হিন্দি, ওড়িয়া হয়েছে। ফলে
নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকার মতো মানসিক দৃড়তা হারিয়ে ফেলছে খেরওয়াল
জনগোষ্ঠী। নিজেই এখন নিজের আসল পরিচয় কে ভয় পায়। যার ফলে খেরওয়াল আজ পরিচয়হীন।
সত্যি কথা বলতে খেরওয়াল তথা সাঁওতালরা "নিজের দেশ" এর সুযোগ সুবিধা
ও মাহাত্ম্য এখনো বুঝতে পারে নি। নিজের "ভাষাভিত্তিক রাজ্যের" মর্ম
খেরওয়াল সাঁওতাল বুঝতে এখনো পারেনি। অবশ্য ইতিহাস বলে যে, পশ্চিমবঙ্গে যখন ঝাড়খণ্ডী ভাবধারার আন্দোলন চলেছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের মাধ্যমে
নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ভাষিক সত্বা কে পরিপূর্ণতার সঙ্গে বিকশিত করার জন্য; সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল CPI(M) এই ঝাড়খণ্ডী আন্দোলনের ঘোর বিরোধীতা করে। এবং এ কথা মনে রাখা দরকার CPI(M) সমর্থিত সাঁওতালরা তখন কিন্তু বেশ সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। এই কথা পশ্চিমবঙ্গে
বসে আমাদের বার বার স্মরণ করা উচিত। নিজেদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। আজ আমরা কেন
সেই সব মানুষদের কুম্ভীরাশ্রু দেখে বিগলিত হব? তারাই আজ এই
ঝাড়খণ্ডী জাতিয়তাবাদী ভাবাবেগে তাদের রাজনৈতিক রুটি সেঁকতে ব্যস্ত।
পশ্চিমবঙ্গে খেরওয়াল সাঁওতালদের বর্তমানে যা পরিস্থিতি, এটি হবারেই ছিলো। যে জাতি নিজের স্বজাতির রাজ্যর মর্ম না বুঝে উন্নয়নের নেশায়
লাল ঝান্ডা ধরে স্বজাতির বিরোধীতা করেছে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ব এত সহজে হবে কি
করে??
খেরওয়াল সাঁওতালদের ওপর বাঙালি হেজিমনিক প্রভাব যা এখন আরো বেশি মাত্রায় প্রকট
হয়ে উঠছে তা ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বাম শাসন আমলে এই বিষয় গুলিকে দাবিয়ে রাখা
হতো কারন তারা ছিলো অনেক চতুর ও এই সম্পর্কিত তথ্যাদি প্রকাশের ঘোরতর বিরোধী। এখন
তা ক্রমশ প্রকাশ্যে। কারন বর্তমান শাসক দল খেরওয়াল আদিবাসীদের সেই ভাবে Manipulation করতে পারে নি। অবাকের বিষয় এটাই যে দক্ষিণবঙ্গের সংস্কৃতি কখনোই বাঙ্গালী
সংস্কৃতি নয়। এবং তা বুঝেও খেরওয়াল সাঁওতালদের তখন বুর্জোয়া প্রলেতারিয়েত এর
গোলোক ধাঁধায় ঘুরিয়ে তাদের আত্মপরিচয়কেই অস্বীকার করা হয়েছে। তার ফল এখন ভুগতে
হচ্ছে সাঁওতালদের।
আর ভুগতে হবেই। "কারণ বাংলায় যারা শাসন করেন (কংগ্রেস, বাম,
বা তৃণমূল) তারা সাঁওতাল ও সাঁওতালি ভাষা কে করুণার চোখে
দেখেন। যখন সাঁওতালি ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফশিলে অন্তর্ভুক্ত হল তখন বামপন্থীরা
জোরে জোরে প্রচার করলেন যে তাঁরা এই অন্তর্ভুক্তির পক্ষে লোকসভায় সংগ্রাম করেছেন।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতাল-মুন্ডারি-কুরুখ ভাষার প্রসারে তাঁদের ভূমিকা কতটুকু?
একসময় তো তাঁরা দাবি করতেন যে তাঁরা 'অলচিকি ভাষা' কে স্বীকৃতি দিয়েছেন"(রাজনীতির এক জীবন: সন্তোষ রাণা) কিন্তু এখন তো আমরা
বুঝতে পারছি যে তা ছিলো সম্পূর্ণ এক ভাঁওতাবাজি। এখনো একই ট্রাডিশন চলছে। শাসকের
পরিবর্তন হয় কিন্তু শোষণের পরিবর্তন হয় না।
তাই সংবিধান স্বীকৃত ভাষা হওয়া সত্বেও সাঁওতালি ভাষার বিকাশ নেই। সাঁওতালি
ভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। এবং তা পাবার জন্য এখনো SI, DI অফিস ঘেরাও করতে হয়,
তালা লাগাতে হয়। বর্তমানে মাঝি পারগানা মহল এই সমস্ত ঘেরাও
কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কিন্তু মহল থেকেও এই সমস্যার প্রকৃত প্রতিকার সম্পর্কে
পরিষ্কার কোনো ধারনা পাওয়া যায় না। আন্দোলনের রুপরেখা কি হবে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য কি তা এখনো পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছে ধোঁয়াশা পূর্ণ। এই
মূহুর্তে সব থকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন খেরওয়াল সাঁওতাল কি ভাবছে তার ভবিষ্যত নিয়ে?? উন্নয়নের পাশাপাশি আত্মপরিচয় কি তারা বজায় রাখতে পারবে? উন্নয়নের ধরণ ও রুপরেখা কি হলে খেরওয়াল সাঁওতালদের আত্মপরিচয় জীবিত থাকবে??
সংরক্ষণের ললিপপ নিয়ে তারা উন্নতি করে সাঁওতালি ভাষা কৃষ্টি নিজের আত্মপরিচয়
ভুলে শহুরে বাঙালি-সাঁওতাল এ পরিনত হবে না কি তারা তাদের ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক
সত্তা কে বজায় রেখে নিজের আত্মপরিচয় বাঁচানোর জন্য লড়াই করবে?? প্রথম সম্ভাবনা টি ইতিমধ্যেই অনেকটাই সফল। কারন আজ সাঁওতাল নব্য প্রজন্ম তার
সাঁওতালি ভাষা ভুলে যাচ্ছে। ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলা সংস্কৃতির আগ্রাসনে আজ
তামাম সাঁওতাল বাঙালি হবার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। যা সাঁওতালি ভাষা ও জাতির
ক্ষেত্রে এক অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসছে। এবং এই কাজ যাতে আরো সহজ হয় তাই Tribal ও Non-
Tribal দের মধ্যে বিবাহ হলে সরকার থেকে ভর্তুকি টাকা দেবার
ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ জাতিগত সত্তা কে মিশিয়ে দেবার প্রচেষ্টা আছে, ভাষিক বৈশিষ্ট্য কে দমন ও দলন করে চলা হচ্ছে কিন্তু এই সাঁওতালি ভাষা
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। সামান্য
প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতেও না। আর সাঁওতালি ভাষা পড়ানোর ক্ষেত্রে এতো আঞ্চলিকতা
কেন?? বাংলা ভাষায় পড়ানো সমস্ত খেরওয়াল সাঁওতাল অঞ্চলে চলতে পারে কিন্তু সাঁওতালি
ভাষায় পড়ানো পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে পারে না। শুধু মাত্র
সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলেই পড়ানো হবে কেন? এ থেকে বোঝা যায়
বর্তমান শাসক দল তো শুধু মাত্র তার পূর্বসূরির পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।
এই চলমান বাস্তবতা কবে বুঝবে শিক্ষিত সাঁওতাল সম্প্রদায়?? এই বিচ্ছিন্নতা সুপ্ত আছে গভীর গোপনে। সাঁওতালি জাতিসত্তা ভুলতে বসা, ভাষা ভুলতে বসা,
সংস্কৃতি ভুলতে বসা সেই সব সাঁওতালগণ, সচেতন হও। এগিয়ে আসুন। জাতিয়তাবাদের জন্ম হয় নিজের মাতৃভাষা থেকে। সংস্কৃতি
থেকে। আত্মপরিচয় হীন মানুষের উন্নয়ন হলেও তার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। উন্নয়নের ডঙ্কা
বাজিয়ে CPI(M) একবার সাঁওতালদের আত্মপরিচয়ের অধিকার কে ধ্বংস করেছে এখনো সেই একি লাইনে
শাসকদল চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান শাসক দল খেরওয়াল আদিবাসীদের প্রতি একটি স্টিরোটাইপ ধারণা
পোষন করে চলেছে যা বামপন্থী আমলের তৈরী করা। সাঁওতাল মানেই 2 টাকা কেজি চাল খেয়ে
বেঁচে থাকা মানুষ,
সাঁওতাল মানেই পূব খাটা (নামাল খাটা) সস্তা লেবার। সাঁওতাল
মানেই "মহুলিয়া ভাকু খাইয়ে" পড়ে থাকা মানুষ। এদের ভাষা সংস্কৃতি ও
জাতিয়তাবাদের কোনো মূল্য নেই। যদিও নাম মাত্র ভাষা স্বীকৃতি বর্তমান সরকারেরই দেন
কিন্তু তার প্রয়োগ বিশ বাঁও জলে।
খেরওয়াল সাঁওতাল জাতীয়তাবাদ ধ্বংসের মূলে আমরা সাঁওতালরাই আগে থেকেই আগে আগে।
আবার বলি,
এই প্রবণতার শুরু সেই বামফ্রন্ট আমলে। কারণ,"1986 সালে যখন দক্ষিণ বিহার, পশ্চিমবঙ্গের
পশ্চিমাঞ্চল,
উড়িষ্যার কয়েকটি জেলা এবং মধ্যপ্রদেশের কিছু জেলা নিয়ে
পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের আন্দোলন শুরু হয়, তখন পশ্চিমবঙ্গে
সরকারি ক্ষমতায় আসীন বামপন্থীরা বিশেষত CPI(M) তীব্রভাবে বিরোধীতা করে। তারা এই আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে নিন্দা করে।
যে এলাকাগুলি নিয়ে এই ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের আন্দোলন চলছিল সেই আদিবাসী প্রধান
এলাকাগুলিতে ছিল একটি সাধারণ সংস্কৃতি যা বাংলা, বিহার উড়িষ্যা বা মধ্যপ্রদেশের সংস্কৃতি থেকে আলাদা। পৃথক রাজ্য গঠিত হলেই যে
ওই পশ্চাদপদ এলাকার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যেত তা নয়, কিন্তু ভারতের গণতন্ত্রের প্রসারের জন্য এই পদক্ষেপ কাঙ্খিত ছিল। যে কারণে
1958 সালে বাঙালিরা বাংলা-বিহার সংযুক্তিকরণের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন, সেই একি কারণে ঝাড়খণ্ড সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের মানুষেরা আলাদা রাজ্য
চাইছিলেন।"(রাজনীতির এক জীবন: সন্তোষ রাণা)
ঝাড়খণ্ডী মানসিকতা,
ঝাড়খণ্ডী ভাবধারাই একমাত্র পথ যা খেরওয়াল সাঁওতালদের উন্নয়ন
ও অস্তিত্ব দুটোকেই বজায় রাখতে পারবে। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে ঝাড়খণ্ডী ভাবধারা কি? এককথায় ঝাড়খণ্ডী ভাবধারা হলো নিজের আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। ঝাড়খণ্ডী ভাবধারা
হলো ঝাড়খণ্ডী জাতিয়তাবাদ। খেরওয়াল সাঁওতাল জাতীয়তাবাদ। জাহের থানে বঙ্গা বুরু প্রার্থনাকারী
জাতির জাতীয়তাবাদ। যা আজ পশ্চিমবঙ্গে বিলীন।
সুতরাং খেরওয়াল সাঁওতাল ভাবো এখন। কি করবে? মাতৃভাষায়
শিক্ষা যে মুখের মোয়া নয় এবং সেই পূরানো আপ্ত বাক্য "Land less culture
does not survive" তা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন তো ?? শরশয্যায় শায়িত খেরওয়াল সাঁওতালের পশ্চিমবঙ্গে ভবিষ্যত কি, কেউ জানেনা।
তাই এখন দাবাং ঝাড়খণ্ডী ভাবধারার আন্দোলন না হলে খেরওয়াল সাঁওতালদের আত্মপরিচয়
বিস্তৃতির অতলে তলিয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান জেলার মতো জঙ্গলমহলেও সাঁওতাল
হারিয়ে যাবে। সেই সময় প্রায় আগত। কারণ খেরওয়াল সাঁওতালদের পাশাপাশি বসবাসরত অপর
একটি জনগোষ্ঠী তফশিলি উপজাতির পরিচয় পেতে হন্যে হয়ে আছে এবং তা যদি সফল হয় তাহলে
সাঁওতাল জাতি কে খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার মতো খুঁজতে হবে।
ডিসক্লেমার: লেখকের মতামত সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত।
Friday, July 27, 2018
সাউথ এশিয়ান গেমস এ সোনার পদক জিতেও দিনমজুরী করতে বাধ্য হয়েছিলেন আদিবাসী তিরান্দাজ অশোক সরেন।
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভুম জেলার দেওঘর গ্রামের বাসিন্দা অশোক সরেন। ২৯ বছর
বয়সী এই আদিবাসী তিরান্দাজ ২০০৮ সালে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে
দুটো সোনার পদক ও একটি রুপোর পদক জিতেছিলেন। তার আগে ২০০৭-এ রাজ্য স্তরের সিনিয়র
তিরন্দাজি চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছিলেন এই অশোক। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের মান তুলে
ধরলেও পরবর্তীকালে কোনরকম সরকারী বা বেসরকারি সাহায্য পাননি অশোক সরেন। খুবেই সাধারণ
ও দরিদ্র ঘর থেকে উঠে এসেছেন অশোক সরেন। বাবা মা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। বর্তমানে
কাকার সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি সেই কাকাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। দারিদ্র্যের অভাবে কাকা কে
ঠিক মতন চিকিৎসাও করাতে পারেননি। একটু সরকারী সাহায্যের আসায় দফতরে দফতরে ঘুরেছেন,
কিন্তু কোথাও সাহায্য পাননি। দারিদ্র্যের জ্বালায় নিজের প্রিয় তির-ধনুক টিকেও বিক্রি
করে দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে দিন মজুরির কাজ করতে শুরু
করেন। কখনও রাস্তা কাটার কাজ, তো কখনও পুকুর কাটার কাজ করছিলেন। তিরান্দাজিকে বিদায়
জানিয়ে ফেলেছিলেন।
কিন্তু সম্প্রতি ভাগ্য সহায় হয় অশোক সরেনের। সম্প্রতি সরাইকেলা-খোরসোয়া এলাকার
একটি স্কুলে তিরান্দাজি শেখানোর ৮০০০ টাকা মাইনের চাকরি পান। সম্প্রতি অশোক সরেনের
বিষয়ে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর জানতে পারেন। জানার পর কেন্দ্রীয়
ক্রীড়া মন্ত্রী অশোক সরেনকে ৫ লক্ষ টাকা সরকারী অনুদান দেবার কথা ঘোষণা করেন।
এর আগে অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত তিরন্দাজ লিম্বা রামের সঙ্গেও একই ব্যাপার হয়েছিল।
তিনি অসস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর দিকে সরকার ঘুরেও তাকায়নি। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার
পর, তাঁর অসুস্থতার খবর জানাজানি হওয়ার পর লিম্বা সরকারের তরফে অনুদান পান। এবারও অশোক
সরেনের খবর চাওর হতে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন।
আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর করা যাবে না বলে বিধানসভায় ঘোষণা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আদিবাসীদের সম্মান জানিয়ে বিধানসভায় যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথা আজ ঘোষণা করলেন
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বলেন, আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর হবে না। বস্তুত, পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা
গোটা দেশকে পথ দেখাবে।
শিল্পায়নের নামে বিভিন্ন রাজ্যে আদিবাসী ভূমিপুত্রদের উৎখাত করার অভিযোগ ওঠে।
বিভিন্ন অজুহাতে সামান্য অর্থের বিনিময়ে ভিটেমাটি ছাড়া হন আদিবাসীরা। এই ঘোষণায় সেই
ভয়াবহ ভবিতব্য থেকে মুক্তি পেলেন আদিবাসীরা। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, আদিবাসীদের জমি
হস্তান্তর হবে না ঘোষণার পর ভারতে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কাছে প্রেরণার উৎস
হয়ে উঠবে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলা ছাড়া কোনও রাজ্য এখনও আদিবাসীদের জন্য এমন সুচিন্তিত পরিকল্পনা
নেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আদিবাসীদের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
উন্নয়নে নজর দেন। আদিবাসী উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর
আমলেই মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলার পথে আদিবাসীরা শামিল হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসী শিক্ষার
হার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে সাঁওতালি ভাষায় প্রশ্নপত্র হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের নিজস্ব মুখপত্র ‘পশ্চিমবঙ্গ’ছাপা হচ্ছে সাঁওতালি ভাষা অলচিকি লিপিতে।
আরএসপি’র বিধায়ক বিশ্বনাথ চৌধুরী অভিযোগ করেন, আদিবাসীদের জমি হস্তান্তরিত হয়ে
যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা কী? অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রাজীব
বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে উঠলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে বলেন, আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর
করা যাবে না। কেউ বঞ্চিত হবে না। আমরা নির্দেশিকা জারি করেছি। কারও জমি দখল করা যাবে
না। রাজীব, তুমি সব বিধায়কের কাছে ওই নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেবে। সেইসঙ্গে দুলাল বরের
প্রশ্নের জবাবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখন চার সপ্তাহের
মধ্যে এসসি, এসটি, ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়টি সরলীকরণ
করা হয়েছে।
Tuesday, July 24, 2018
সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার পরিকাঠামোর দাবীতে অনির্দিষ্ট কালের অবস্থান বিক্ষোভ আদিবাসীদের।
আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার স্কুলগুলিতে সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার পরিকাঠামোর
দাবীতে অনির্দিষ্ট কালের অবস্থান বিক্ষোভ আদিবাসীদের। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার স্কুলগুলিতে সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক
নিয়োগ ও সাঁওতালি শিক্ষার পরিকাঠামোর দাবিতে গত সোমবার ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ থেকে অনির্দিষ্ট
সময়ের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস মেদিনীপুর শহরের শিক্ষা
ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করলেন আদিবাসীরা। আদিবাসীদের দুটি
জনপ্রিয় সামাজিক সংগঠন আদিবাসী সোশিও এডুকেশনাল কালচারাল অ্যাসোশিয়েশন
(Adibasi Socio-Educational & Cultural Association -
ASECA) ও ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহল (Bharat Jakat Majhi
Pargana Mahal - BJMPM) এর নেতৃত্বে আদিবাসীরা অবস্থান আন্দোলন শুরু
করেছেন সোমবার ২৩/০৭/২০১৮ সকাল দশটা থেকে। আদিবাসী সংগঠন দুটির দাবি, লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি
না পাওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান বিক্ষোভ চলবে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষার পর্যাপ্ত পুরোপুরি
পরিকাঠামোর দাবিতে সোমবার বেলা দশটা থেকে জেলার শিক্ষা ভবন ঘেরাও করে অবস্থান
বিক্ষোভ শুরু করেছেন কয়েক হাজার আদিবাসী পুরুষ ও মহিলা।
রাজ্যের অন্যান্য জেলার সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহলের ভিতরে
থাকা আদিবাসী এলাকায় বহু বিদ্যালয়ে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি হরফে পঠন-পাঠন শুরু করা হয়েছে। কিন্তু আদিবাসীদের অভিযোগ, প্রাথমিক
বিদ্যালয়গুলিতে এই পরিকাঠামো চালু করা হলেও সেখানে প্রকৃত সাঁওতালি শিক্ষক নেই। তা ছাড়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি থেকে বেরিয়ে আদিবাসী
ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলেই আর সাঁওতালি শিক্ষা পাচ্ছে
না। কারণ, উচ্চ
বিদ্যালয় স্তরগুলিতে সাঁওতালি শিক্ষা পরিকাঠামো নেই। তাই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এই বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর
দাবি উঠেছে।
ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা
কমিটির ‘গডেৎ’ তথা আহ্বায়ক রাইসেন হাঁসদা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন, জঙ্গলমহলের অনেক
উন্নতি করা হবে। কিন্তু কোথায় সেই প্রকৃত উন্নতি? যেখানে জঙ্গলমহলের
মূল বাসিন্দাদেরই তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত করার সঠিক উদ্যোগ নেই। সবাই আদিবাসীদের নিয়ে রাজনীতি করছে, কিন্তু আদিবাসীদের ক্ষোভ কোথায় সেটা সরকার বুঝতে চাইছে না। আমরা তাই এই শিক্ষার প্রকৃত পরিকাঠামো, শিক্ষক ও আলাদা সাঁওতালি
বোর্ড গঠনের দাবিতে এই অবস্থান শুরু করলাম। প্রকৃত অর্থে দাবি আদায় না হলে এই অবস্থান চলবে।"
মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানার পুলিশের পক্ষ থেকে আদিবাসী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে
কয়েক দফা কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে কোনও সুষ্ঠু সমাধানের রাস্তা এখনও বেরিয়ে আসেনি। ফলে অবস্থান বিক্ষোভ অব্যাহত। ডিআই (মাধ্যমিক) অমরকুমার শীল বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সৌজন্য – সারি কাথা।
Monday, July 23, 2018
আদিবাসীদের সংরক্ষণের স্থান দখল করার বিরুদ্ধে বাঁকুড়া জেলা শাসককে ডেপুটেশন AASSA-র।
অ-আদিবাসীরা আদিবাসীদের সংরক্ষণের স্থান দখল করার বিরুদ্ধে বাঁকুড়া জেলা
শাসককে ডেপুটেশন দিল আদিবাসী ছাত্র সংগঠন AASSA।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কিংবা চাকরিক্ষেত্রে আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত
স্থানেও দখলদারি করছে অ-আদিবাসীরা৷ এমন অভিযোগ তুলে সোমবার ২৩/০৭/২০১৮ আন্দোলনে
নামলেন অল আদিবাসী সানতাল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (All Adibasi Santal Students
Association - AASSA) এর সদস্যরা৷ এদিন সংগঠনের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্যরা বাঁকুড়া
শহরে একটি মিছিল করে জেলাশাসকের দফতরে পৌঁছন৷ সেখানে স্মারকলিপিও জমা দেন তাঁরা৷
রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ‘সংরক্ষিত আসনে সাধারণ প্রার্থীদের অন্তর্ভূক্তি’র মতো দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এদিনের মিছিল থেকে৷ ঘটনায় যুক্তদের
কঠোর শাস্তির দাবিও করেন আন্দোলনকারীরা৷ একই সঙ্গে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
সংরক্ষণনীতি সঠিক ভাবে কার্যকর করা, চাকুরীক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি
কঠোরভাবে কার্যকর করা, সাঁওতালি মাধ্যমে বিএড কলেজ চালুর দাবি-সহ একাধিক দাবি তোলেন
তাঁরা৷ বাঁকুড়া শহরে সেন্ট্রাল বয়েজ হোস্টেল ও লেডিজ হোস্টেলে আদিবাসীদের আসন সংখ্যা
বৃদ্ধির দাবিতেও সরব হন তাঁরা। এছাড়া রাজ্যের আদিবাসী হোস্টেলগুলি চালু করা হোক,
বাঁকুড়া শহরের কলেজগুলিতে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠনের দাবি করা হয়৷ এদিন অভিযোগ ওঠে,
টাকা দিয়ে নকল ST সার্টিফিকেট তৈরির একটি বড় চক্র কাজ করছে৷ তাদের খুঁজে বের করে
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীরা এদিন সরব হন৷
আন্দোলনকারীদের তরফে জাহিনা মুর্মু বলেন, ‘‘আমাদের সংরক্ষিত অধিকার থেকে আমাদের
বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের
অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি৷ এর পিছনে একটি বড়সড় অসাধু চক্র কাজ করছে৷”
স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর অল আদিবাসী সান্তাল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (AASSA)-র
পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলা প্রশাসন তাদের দাবি পূরণের প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে৷
তবে দাবি পূরণ না হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন সংগঠনের সদস্যরা।
ঋণ
স্বীকার – কলকাতা ২৪*৭Sunday, July 22, 2018
৯ ই আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ডাক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
৯ ই আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ডাক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
২১ শে জুলাই, ২০১৮ তৃণমূল কংগ্রেসের ২৫ তম শহীদ স্মরণ দিবসে কলকাতার ধর্মতলা
সমাবেশ থেকে ৯ ই আগস্ট, ২০১৮ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ডাক দিলেন তৃণমূল
কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই
আগে গত বুধবার ১১ ই জুলাই, ২০১৮ উত্তরবঙ্গের উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক সভা থেকেও ৯ ই
আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ডাক দিয়েছিলেন। এ বার তৃণমূল কংগ্রেস
সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে
সরকারী বেসরকারি উদ্যোগে বিপুল উৎসাহে ৩০ শে জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ ‘হুল’ দিবস পালন
করা হয়েছিল সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে।
৯ ই আগস্ট আদিবাসী দিবস কি ?
রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাতায় ৯ অগস্ট দিনটি ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব
ওয়ার্ল্ড ইন্ডিজেনাস পিপল’
হিসেবে স্বীকৃত। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা তথা
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই দিনটি ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ হিসেবে ১৯৯৪
সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে।
সংযুক্ত রাষ্ট্র সংঘ (United Nations Organizations - UNO) আদিবাসী
জনগোষ্ঠীর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৩ সালকে ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী বর্ষ’ ঘোষণা করে। ১৯৯৪
সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রতিবছর ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস
পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দশক’ ঘোষণা করা হয়।
যার উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র ২০০৭’
অনুসারে আদিবাসীদের ৪৬টি অধিকারের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। আদিবাসী
এলাকার খনিজ, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ আদিবাসীদের অনুমতি ছাড়া সরকার ব্যবহার করতে
পারবে না।
প্রতিবছর এ দিন সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের ৭০টি দেশের প্রায় ৩৭
কোটি আদিবাসী জনগণ দিবসটি পালন করছে। ভারতে প্রায় ১০.৪ কোটি আদিবাসী বসবাস করেন যা
ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৬ %। পশ্চিমবাংলায় প্রায় ৬০ লক্ষ আদিবাসীর বাস যা
পশ্চিমবাংলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ %। মূলধারার জনগোষ্ঠীর থেকে আদিবাসীদের পৃথক
জীবন, ঐতিহ্য,
সংস্কৃতি ও ইতিহাস আছে। পশ্চিমবাংলায় মোট ৪০ টি আদিবাসী
জনগোষ্ঠীকে ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’
হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সরকারী সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য।
পশ্চিমবঙ্গে তালিকাভুক্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ গোষ্ঠীগুলি – ১) ASUR, ২) KORWA, ৩) BAIGA, ৪) LEPCHA, ৫) BEDIA, BEDIYA, ৬) LODHA, KHERIA,
KHARIA, ৭) BHUMIJ, ৮) LOHARA, LOHRA, ৯) BHUTIA, SHERPA, TOTO, DUKPA, KAGATAY, TIBETAN, YOLMO, ১০) MAGH, ১১) BIRHOR, ১২) MAHALI, ১৩) BIRJIA, ১৪) MAHLI, ১৫) CHAKMA, ১৬) MAL PAHARIYA, ১৭) CHERO,
১৮) MECH, ১৯) CHIK BARAIK, ২০) MRU, ২১) GARO, ২২) MUNDA, ২৩) GOND, ২৪) NAGESIA, ২৫) GORAIT,
২৬) ORAON, ২৭) HAJANG, ২৮) PARHAIYA, ২৯) HO, ৩০) RABHA, ৩১) KARMALI, ৩২) SANTAL, ৩৩) KHARWAR,
৩৪) SAURIA PAHARIA, ৩৫) KHOND, ৩৬) SAVAR, ৩৭) KISAN, ৩৮) LIMBU, ৩৯) KORA, ৪০) TAMANG।
পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২ টি আসন আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের জন্য সংরক্ষিত –
ঝাড়গ্রাম ও আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসন দুটি। পশ্চিমবাংলার মোট ২৯৪ টি বিধানসভার আসনের
মধ্যে ১৬ টি বিধানসভা আসন আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের জন্য সংরক্ষিত – ১) Kumargram,
২) Kalchini, ৩) Madarihat, ৪) Mal,
৫) Nagrakata, ৬) Phansidewa, ৭) Tapan, ৮) Habibpur, ৯) Sandeshkhali, ১০) Nayagram, ১১) Keshiary,
১২) Binpur, ১৩) Bandwan, ১৪) Manbazar, ১৫) Ranibandh, ১৬) Raipur।
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে শিক্ষা, চাকরি ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৬% আসন আদিবাসী
জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের
জন্য সংরক্ষিত। প্রতিটি সরকারী প্রকল্প রুপায়নের ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule
Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের অগ্রাধিকার দেবার কথা সরকারী
গাইডলাইনে পরিষ্কার ভাবে বলা থাকে। এত সুযোগ সুবিধা ও সুরক্ষা কবচ থাকা সত্ত্বেও
আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি
উপজাতি’ দের যথাযথ উন্নয়ন হচ্ছে না। সরকারী পরিকল্পনা ও বঞ্চিত আদিবাসী জনগোষ্ঠী
তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ মানুষদের মধ্যে
বিশাল ফারাক থেকে যাচ্ছে।
কিন্তু
প্রথমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদাধিকারী ব্যক্তি ৯ ই আগস্ট আদিবাসী
দিবস পালনের ডাক দেওয়ায় আদিবাসী জনগোষ্ঠী তথা ‘Schedule Tribe (ST) বা তফশিলি উপজাতি’ দের মধ্যে আশার আলো জাগছে। এইবার সম্ববত আদিবাসীদের
সমস্যার প্রতি সরকারী দৃষ্টি যত্নবান হবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)