Tuesday, July 30, 2019

যাদবপুরে পাঁচ বছরের আদিবাসী শিশুকে ধর্ষণ করে খুন।


যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত নরেন্দ্রপুরে পাঁচ বছরের আদিবাসী শিশুকে ধর্ষণ করে খুন, প্রমাণ লোপাট করতে মৃতদেহ পোঁতা হল বাগানে।

যাদবপুর লোকসভার অন্তর্ভুক্ত কেয়াদহ ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বামনঘাটা এলাকায় এক ৫ বছরের আদিবাসী মুন্ডা মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ উঠল পড়শি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। প্রমাণ লোপাট করতে ছোট্ট একরত্তি মেয়েটির মৃতদেহ পাশের বাগানে পুঁতে দেয় অভিযুক্ত আজগর আলি। অভিযুক্ত আজগর আলি কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ১৫ জুলাই, ২০১৯ থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েটির। ২০ জুলাই খোঁজ মিলল, তবে মৃতদেহের। বাড়ির কাছেই একটি বাগানের মধ্যে পোঁতা ছিল দেহটি। মাটি খুঁড়তেই পচা গন্ধে সকলের হাত নাকে উঠে আসে। গর্ত থেকে পচা-গলা দেহটি বের করে আনে পুলিশ। পাঠানো হয় ময়না-তদন্তে। ধৃত আজগারকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
নরেন্দ্রপুরের উত্তর খেয়াদহে আজগার মোল্লার বাড়ির পাশেই থাকত মেয়েটি। আদিবাসী পরিবারটিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল আজগারের। আজগার পেশায় ট্রাক চালক। ট্রাক নিয়ে বেরনো না থাকলেই পড়শির বাড়িতে আড্ডা মারতে আসত সে। পড়শির পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে এ দিক ও দিক ঘুরতেও যেত।
১৫ জুলাই সন্ধে থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না পাঁচ বছরের মেয়েটির। আঁধার নেমে এলেও মেয়ে না ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান বাবা-মা। পরের দিন সকালেও মেয়ে ফেরেনি। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে দুপুরে সোনারপুর-বামনঘাটা রোড অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ এলেও উত্তজেনা কমেনি। ইতিমধ্যে পড়শিদের সন্দেহ গিয়ে পড়ে আজগারের উপর। প্রায়শই বাচ্চাটিকে নিয়ে তাকে ঘুরতে দেখেছে সকলে। আগের দিনও সন্ধের মুখে আজগারের সঙ্গেই মেয়েটিকে শেষ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আজগারের বাড়ি তালাবন্ধ। এক সময় গ্রামের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। সকলে মিলে আজগারের বাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের সামনেই আজগারের টালির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। ঘর থেকে সব কিছু বের করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বাচ্চার সন্ধানে এরপর চিরুনি তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। খেয়াদহের পরিত্যক্ত এলাকা, বনবাদাড় বাদ যায়নি কিছুই। নামানো হয় স্নিফার ডগ। বাদ ছিল না ড্রোনও। তাতেও পাঁচ বছরের মেয়েটির কোনও খোঁজ মেলেনি। একই সঙ্গে আজগারেরও খোঁজ চালাচ্ছিল পুলিশ। অবশেষে শনিবার বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ও নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ সোনারপুর স্টেশন চত্বর থেকে আজগারের খোঁজ পায়। লাগাতার জেরায় ভেঙে পড়ে আজগার। খুনের কথা স্বীকার করে নেয়। সেই সঙ্গে জানায়, খুনের আগে মেয়েটিকে ধর্ষণও করেছিল সে।
পুলিশ জেরায় জানা যায়, ঘটনার দিন বেশ ভালো মতো মদ খেয়ে আজগর আলি পাশের বাড়িতে গিয়েছিল। বাচ্চাটি তাকে দেখে পেয়ারা খাওয়ায় বায়না ধরে। মেয়েটিকে পেয়ারা দেবে বলে দ্রুত কোলে তুলে পাশের বাগানে চলে আসে। সেখানেই আজগারের উন্মত্ত লালসার শিকার হয় মেয়েটি। যন্ত্রণায় ডুকরে কেঁদে ওঠে দুধের শিশুটি। তার কান্নার আওয়াজ চাপতেই মুখ চেপে ধরে আজগার। তাতেই দমবন্ধ হয়ে মারা যায় বাচ্চাটি। উপায় না দেখে বাগানেই বাচ্চাটিকে পুঁতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আজগার। কয়েক দিন শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে ঘোরাঘুরির পর অবশেষে শনিবার রাতে ধরা পড়ে যায়।
সংবাদপত্রের মাধ্যমে এই ঘটনার কথা জানতে পেরে সন্তান হারানো পরিবারের পাশে দাঁড়াতে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন “সিধু কানহু বীরসা স্টুডেন্টস ফ্রন্ট” এর নেতা কর্মীরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে পরিচয় দিয়ে কেয়াদহতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এক ব্যাক্তি রাস্তার ওপর থেকেই মেয়েটির বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। তবে এই নৃশংস ঘটনা নিয়ে সেই ব্যক্তিটির মধ্যে সেরকম কোন ক্ষোভ বা খারাপ কোন অনুভূতি ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা লক্ষ্য করেননি। বেশ কিছুটা হাঁটার পর মেয়েটির বাড়ি। রাস্তার পাশে একটা এ্যাসবেসটাস দেওয়া দু কামরার বাড়ি। বাড়িতে তালা আটকানো। পাশের এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন যে ওরা এখানে সেদিনের পর থেকে আর থাকে না। তারা কুমোরপুকুরের দিকে একটি গ্রামে থাকছে। ঠিকানা জেনে ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা সেখানে পৌঁছলেন। গ্রামে ঢুকেই কিছু না বুঝতে পারায় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন। সেই ব্যক্তি পারমিশানের কথা জিজ্ঞেস করেন। ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলতে উনি নিয়ে গেলেন। তার কাছ থেকে জানা যায়, এই গ্রামে সবাই মুন্ডা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস করেন।
মেয়েটির বাড়ি গিয়ে দেখা গেল তিন জন ভদ্রমহিলা আর এক বাচ্চা আছেন। মেয়টির বাবা বা দাদা কেউই ছিলেন না। ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের দেখেই দুই মহিলা জোরে বলে ওঠেন যে “আমারা কিছু বলতে পারবো না, মানা আছে। পার্টিই সব দেখবে বলেছে।” এই বলেই তাদের মধ্যে যিনি বয়স্ক মহিলা ছিলেন তিনি মুখ ঘুরিয়ে কান্না শুরু করে দেন।ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের আাদিবাসী হওয়ার পরিচয় দিয়ে, কথাবার্তা শুরু করতে গেলেও তিনি কিছুই বলতে রাজি হন নি।
ওখান থেকে ফেরার পথে ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা ভাবতে থাকেন যে ওই সর্বহারা আদিবাসী মেয়েটির পরিবার সুবিচার পাবে তো? নাকি দিনের পর দিন তাদের সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে কুশমন্ডির আদিবাসী মেয়েটির মত। কেননা অনেক মানবাধিকার সচেতন সংগঠন এখনো ঘটনাটি নিয়ে তেমন সরব হয়নি। সত্যিই এই সরকার বিচার করবে তো? মেয়েটির পরিবার যেভাবে সন্ত্রস্ত, ভীত তারা কি সত্যিই বিচারের দাবিতে গলা উঁচু করতে পারবে? নাকি অভাবের সংসারে গরীব আদিবাসীদের নিরীহ মেয়েরা এভাবেই একে একে শেষ হয়ে যাবে ?
সংবাদ সৌজন্য – এই সময়, ২২/০৭/২০১৯ ও সিধু কানহু বীরসা স্টুডেন্টস ফ্রন্ট। ছবি - প্রতীকী

Monday, July 29, 2019

খেলার মাঠ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ আদিবাসীরা।


পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেস্বর ব্লকে আদিবাসী অধ্যুষিত মেটেল গ্রামে ফুটবল গ্রাউণ্ড, শেড ও স্টেজ নির্মাণের জন্য তিন বছর আগে শিল্যান্যাস করা হলেও এখনও নির্মাণ শুরু হল না। শিল্যান্যাস শিলাটি আগাছায় ঢেকে যাচ্ছে। চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকার আদিবাসীরা।
এলাকার আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এক খেলার মাঠের। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে দাবিটি উপেক্ষিত থাকলেও পালা বদলের পর তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে একটি ফুটবল গ্রাউণ্ড, শেড ও স্টেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই মত শিল্যান্যাসও করা হয়। মোট বাজেট ধরা হয় ২৩ লক্ষ টাকা। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের আর্থিক সহয়তায় এই ফুটবল গ্রাউণ্ড, শেড ও স্টেজ নির্মাণের কথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির। কিন্তু আজ তিন বছর হয়ে গেলেও ফুটবল গ্রাউণ্ড, শেড ও স্টেজ নির্মাণ হয়নি। বিষয়টি স্থানীয় বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওারির নজরে আনা হলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। 
সংবাদ সৌজন্য - সংবাদ প্রতিদিন, ৩০/০৭/২০১৯।

প্রয়াত নকশাল নেতা সন্তোষ রানার স্মরণসভায় একসঙ্গে ডান-বাম-ঝাড়খণ্ডী রাজনৈতিক নেতারা।

প্রয়াত নকশাল নেতা ও আনন্দ পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক সন্তোষ রানার স্মরণসভায় এক সঙ্গে যোগ দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী ডান-বাম-ঝাড়খণ্ডী রাজনৈতিক নেতারা।

সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন নকশাল নেতা ও আনন্দ পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক সন্তোষ রানা। গত শনিবার (২৭/০৭/২০১৯) প্রয়াত সন্তোষ রানার স্মরণসভার আয়োজন করলেন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা। শনিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরের দেবেন্দ্রমোহন মঞ্চে আয়োজিত ওই স্মরণসভায় ছিলেন বিভিন্ন বামপন্থী ও ঝাড়খণ্ডী সংগঠনের নেতারা। একই মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য নেতা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তাদের অনেকে তাঁদের সামনেই রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন।
এ দিন সিপিআইএমএল (রেড স্টার)-এর নেতা প্রদীপ সিংহঠাকুর তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘আট বছর আগে যাঁরা রাজ্যের ক্ষমতা দখল করেছেন, তাঁরাও জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীদের উন্নয়ন করতে পারেননি। একটা সবুজসাথী সাইকেল দিয়ে উন্নয়ন হয় না।’’ এত বছর পরেও জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা কেন মাতৃভাষায় উপযুক্ত ভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রদীপ। পরের বক্তা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু অবশ্য এই প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘‘সন্তোষদা নেই। তবে তাঁর কাছ থেকে আমাদের এখনও অনেক কিছু শেখার আছে। অন্যের দোষ দেখার আগে নিজেকে ভাল করে বিচার করা উচিত। সন্তোষদার কাছে থেকে এটা আমি শিখেছি।’’ পূর্ণেন্দুর মতে, শাসক না হলেও কমিউনিস্টরা এক ধরনের শাসন চালান এবং সেখানে গণতন্ত্র কন্ঠরুদ্ধ হয়। এটা সন্তোষ রানা নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।  তাঁর কথায়, ‘‘বিপ্লব বহমান, ঝটকা আসে। অনেক পরিবর্তন হয়। তার মধ্যে দিয়ে রাস্তা খুঁজে এগিয়ে চলা হচ্ছে বিপ্লবের দিকে এগোবার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় প্রশ্ন। সেই চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে সন্তোষদা সহায়ক হতে পারেন। এটাই তাঁর আজকের প্রাসঙ্গিকতা।’’
এ দিন অন্যদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের প্রবীণ নেতা ডহরেশ্বর সেন, ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রূপচাঁদ মুর্মু, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির নেতা আদিত্য কিস্কু, অসিত খাটুয়া, আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো প্রমুখ।
একই মঞ্চে অন্য বক্তা রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে গেলেও তিনি সেই সরকারের মন্ত্রী হিসেবে কিছু বললেন না কেন? এই প্রশ্নের জবাবে পূর্ণেন্দুর উত্তর, ‘‘সন্তোষ রানার স্মরণসভায় এসেছি। কারও বিরোধিতা করা আত্মপক্ষ সমর্থনের জায়গা এটা নয়। মানুষই শেষ কথা বলবে।’’
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮ জুলাই, ২০১৯।

আধুনিক বিলাসিতার লোভে স্বেচ্ছায় দেহব্যবসায় নামছে স্কুলছাত্রীরা, চিন্তা বাড়ছে পুলিশের।


বছর পনেরোর মেয়েটার বাবা নেই। মা শয্যাশায়ীদুই দিদি আছে, কিন্তু তারা কিছু করে না। তাই সংসার চালানোই দায়। ফলে মেয়েটাকে একদিন কাজের কথা বলে এক পড়শি। তার সঙ্গে মেয়েটিও এদিক সেদিক যাওয়া আরম্ভ করল। একদিন একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল মেয়েটিকে। তাকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে দেওয়া হল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুজন খদ্দের হাজির। মেয়েটি ধর্ষিত হল। ওর হাতে সামান্য টাকা গুঁজে দিয়ে চলে গেল দুটি লোক। মেয়েটিকেও বাড়ি যেতে দেওয়া হল। কিন্তু ভয় দেখানো হল, আবার না-এলে সবাইকে সব বলে দেওয়া হবে বলে। দিনে প্রায় কুড়ি জন খদ্দের সামলে এক বছর পর মেয়ে যখন অসুস্থ, তখন ব্যাপারটা ধরতে পারলেন তাঁর মা। খবর গেল কলকাতা পুলিশের মানব পাচার বিরোধী শাখায়। অতঃপর কলকাতা পুলিশ ও ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন মেয়েটিকে উদ্ধার করে একটি বাড়ি থেকে। গ্রেপ্তার হয় দুই যৌনকর্মী, যারা মেয়েটিকে দিয়ে দেহব্যবসা করাত।
এ ভাবেই শহর কলকাতা ও গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ছে কমার্শিয়াল সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়েটেশনবা সিএসই। তবে তা শুধু গরিব, অসহায় মেয়েদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এখানে সামিল মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত ঘরের স্কুলের মেয়েরাও। এবং তা ইচ্ছার বিরুদ্ধে নয়!
চমকানোর কিছু নেই। কলকাতা পুলিশের তথ্যই বলছে, হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে সিএসই। ১০ বছর আগে যা ছিল, সে তুলনায় লাফিয়ে বেড়েছে এই প্রবণতা। আগে যেখানে বিষয়টা এক্কেবারে আড়ালে-আবডালে হত, এখন রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে চলে এই ব্যবসা।
এই স্কুলের মেয়েদের কিন্তু কেউ ভুলিয়ে আনছে না। তারা আসছে নিজে থেকে। এটা তাদের পার্ট টাইমকাজ। এতে যা পয়সা রোজগার হয়, তা দিয়ে তারা তাদের শখ মেটায়। যেমন ফোন-ট্যাব কেনা, ভালো পোশাক কেনা, নামি পাঁচতারা হোটেলে খাওয়া, এক কথায় হাইফাই লাইফস্টাইলের জন্যই তারা এ পথ বেছে নিচ্ছে। আর এসব দেখে ওত পেতে থাকে দালালচক্রও। বছরখানেক আগে একটি মধুচক্রে হানা দিয়ে পুলিশ ১৬ জন স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে। তারা প্রত্যেকেই ছিল স্কুল ইউনিফর্মে। সাম্প্রতিক কালে এই ধরনের অভিযোগ বাড়ছে বলে জানাচ্ছে এ নিয়ে কাজ করা ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন।
পুলিশ সূত্র বলছে, এর বাইরেও মেয়েদের ফাঁদে ফেলার উপায় আছে। এক অফিসারের কথায়, ‘লক্ষ্য করে দেখবেন, আজকাল মনের মতো বন্ধু পানবলে মোবাইলে ও কাগজে নানা বিজ্ঞাপন আসে, মাস্যাজ পার্লারের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে থাকে রাস্তা ঘাট। এর অধিকাংশই সিএসই-র জন্য। যেখানে বেশ ভালো টাকার বিনিময়ে শরীর কেনাবেচা হয়। আর সেখানে টার্গেট মূলত স্কুলের মেয়েরাই।
সিএসই-র এই রমরমা কপালে ভাঁজ ফেলেছে পুলিশের। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘এর সঙ্গে ভোগবাদেরও যোগ রয়েছে। বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখন নানা গ্যাজেটে মজে। রয়েছে লাক্সারি জীবনের হাতছানি। যেই মুহূর্তে সেগুলো তারা পাচ্ছে না, তারা সহজে আয়ের পথ খুঁজছে। এবং সেখানে সিএসই-র মোকাবিলা করা খুবই কঠিন।
কাউন্সেলিং করাতে গিয়ে পুলিশের যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা ভয়াবহ। এই মেয়েরা মনেই করছে না, তারা কোনও অপরাধ করছে। তাদের সাফ কথা, এতে অন্যায়ের কী আছে! যারা ভুলটা বুঝতে পারছে, তাদের সংখ্যাটা হাতেগোনা।
পুলিশের মতে, একা কোনও পক্ষই কিছু করতে পারবে না। একসঙ্গে কাজ করতে হবে পুলিশ, এনজিও এবং অভিভাবকদের। নজর রাখতে হবে বিজ্ঞাপনে, বিভিন্ন পার্লার, লজ, হোটেল, প্রাইভেট রেসিডেন্স, সহ সর্বত্র। সর্বোপরি সচেতনতা বাড়াতে হবে স্কুলের বাচ্চাদের।
সংবাদ সৌজন্য – এইসময়, অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৯/০৭/২০১৯।

রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যৌন পল্লীতে বিক্রি হল ১৫ বছরের কিশোরী।


বাড়ি থেকে ঝগড়া করে পালিয়ে এসেছিল ১৫ বছরের কিশোরী মনীষা (নাম পরিবর্তিত)। এই ভুলের চরম মাসুল দিতে হল মেয়েটিকে। নিজের অজান্তেই চারটি যৌন পল্লীতে বিক্রি হয়ে যায়।
বাড়ি থেকে পালিয়ে শিয়ালদহ রেল স্টেশনে এসে মনীষা যখন এদিক-সেদিক ঘুরছে, তখন পাপ্পু নামে এক ব্যক্তি মনীষাকে চাকরির টোপ দেয়। বলে রাজস্থানের ঝুনঝুনুতে ভালো কাজআছে। গরিব পরিবারের মেয়েটি আপত্তি করেনি। সে পাপ্পুকে বিশ্বাস করে তার সঙ্গে সেখানে চলে যায়। গিয়েই বুঝতে পারে ভালো কাজমানে দেহব্যবসা। মনীষাকে পাপ্পু একটি যৌনপল্লিতে বিক্রি করে পালিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে বেশি দিন ঠাঁই হয়নি মনীষার। ফের তাকে বিক্রি করা হয়। এ বার এলাহাবাদে। সেখানে দিন কয়েক থাকার পর দিল্লির সোনাগাছিজি বি রোডে। সেখানে সপ্তাহ দুই কাটিয়ে এ বার ঠাঁই হয় এলাহাবাদের এক যৌনপল্লিতে। জি বি রোড থেকেও মনীষাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অবশেষে ফের হাতবদল হয়ে তার ঠাইহয় শিলচরের এক যৌনপল্লি।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজস্থান, সেখান থেকে এলাহাবাদ (প্রয়াগ রাজ), তার পরে দিল্লি, ফের এলাহাবাদ হয়ে শিলচর, ক্লাস নাইনে পড়া ১৫ বছরের মেয়েটার জীবনের গত দুই মাস এই ভাবেই যন্ত্রণার মধ্যে কেটেছে। একের পর এক হাতবদল হয়েছে। প্রত্যেক বারই সে যৌনপল্লিতে বিক্রি হয়ে গেছেঅতঃপর স্বাধীনতার স্বাদ এল গত ২৬শে জুলাই, যেদিন উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ ও অসম পুলিশের যৌথ অভিযানে ক্লাস নাইনের মেয়েটা উদ্ধার হল।
১৫ বছরের কিশোরী মনীষা এত জায়গায় বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তাকে খুঁজে পেতে পুলিশকে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়। সূত্র ছিল, একটি মাত্র মোবাইল নম্বর। মনীষা মে মাসের ২৩ তারিখে বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে যায়। তার পর বহু জায়গায় তার খোঁজ করে পরিবার। কিন্তু কোথাও মেয়েকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় থানায় এফআইআর দায়ের করে তারা। তবে প্রথম যাত্রায় পুলিশও কিছু করতে পারেনি। অবশেষে সূত্র মেলে। ১৮ জুন নাগাদ মনীষা অন্য কারও মোবাইল থেকে লুকিয়ে ফোন করে বাড়িতে, বাঁচানোর জন্য করুণ আর্তি জানাতে থাকে। সক্রিয় হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ ও মধ্যমগ্রামের এনজিও সৃষ্টির পথে।তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে জানা যায়, সেটি দিল্লির জি বি রোডের কোনও একটি অঞ্চল। গ্রাহকের নাম ও ঠিকানাও সেখান থেকে বের করে তারা। জানা যায়, ফোনটি নেহা নামে কারও এক জনের। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায় ঠিকানাটা ভুয়ো। এবং দিন কয়েকের মধ্যে মোবাইলটি অফ করে দেওয়া হয়। যদিও তাতেও হাল ছাড়েনি পুলিশ। তারা এ বার আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে ফোনের অবস্থানে নজরদারি চালাতে থেকে। ইতিমধ্যে চলতি মাসের ১৩ তারিখ দিল্লির জি বি রোডে হানা দেয় দিল্লি পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শক্তিবাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু মনীষাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। তার দুদিন পরে ১৫ তারিখ বাংলা পুলিশ জানতে পারে ওই মোবাইলে নয়া সিম ভরে ব্যবহার করছেন দিল্লির সাগরপুর এলাকার শান্তি বলে কেউ এক জন। বাংলা ও দিল্লি পুলিশ এবং শক্তিবাহিনী গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি জানান, জি বি রোডের কোঠা নম্বর ৫৬-র বাসিন্দা নেহা ওরফে রাধিকার থেকে তিনি ফোনটি কিনেছেন। তিনি আর কিছু জানেন না। ফলত, পরের দিন সেখানে হানা দেয় পুলিশ। এবং নেহাকে গ্রেপ্তার করে। শান্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নেহা জেরায় জানায়, মনীষাকে সে এলাহাবাদে বিক্রি করে দিয়েছে। পুলিশ চাইলে নেহাকে উদ্ধারে সে সহায়তা করবে।
এর পরের গন্তব্য ছিল এলাহাবাদে মৈলি তামাংয়ের বাড়ি। পুলিশকে মৈলি জানায়, মনীষাকে সে শিলচরে বিক্রি করে দিয়েছে। বাংলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এর দিন কয়েক পর ২৬ তারিখ এই ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার তাঁর টিম নিয়ে শিলচরে যান। সেখানে অসম পুলিশের সহায়তায় মেয়েটিকে যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় যৌনপল্লির অন্যতম মালকিন স্বপ্না দাসকে। তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, তাঁরা মনীষাকে নিয়ে ৩০ তারিখ ফিরবেন। ফিরে এসে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা হবে ও সিডব্লিউসি-র সামনে পেশ করা হবে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শক্তিবাহিনীর সদস্য ঋষিকান্ত বলেন, ‘পাচার যে কী সুসংহত ভাবে হচ্ছে, এটা তার প্রমাণ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অনুরোধ করব, পাচারকারীরা যেন কোনও মতেই জামিন না পায়, তাতে তদন্তে সমস্যা হয়। রাজ্য পুলিশ এ ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করেছে।
মনীষা এখনও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। তবে তার মধ্যেও সে জানিয়েছে, ফিরে এসেই ফের স্কুলে যেতে চায় সে। সেটাই তাকে আলো দেখাবে।
সংবাদ সৌজন্য – এইসময়, অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৯/০৭/২০১৯।

Sunday, July 28, 2019

পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলাতে বন্ধ বাড়ির ভেতর থেকে আদিবাসী যুবকের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলাতে বন্ধ বাড়ির ভেতর থেকে আদিবাসী যুবকের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ, খুনের অভিযোগ তুলে তির-ধনুক হাতে আন্দোলনে নামল স্থানীয় আদিবাসীরা।

গত শনিবার ২৭/০৭/২০১৯ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলার কুসুমদা পঞ্চায়েতের বীরসিংহপুর গ্রামের এক বন্ধ বাড়ির ভেতর থেকে স্থানীয় যুবক সূর্যকান্ত হেমব্রম (২৪)-এর দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত ২৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন সূর্যকান্ত। ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে বাড়ির মালিক শেখ মইদুল ও তাঁর বাবা শেখ মহসিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের মা সারমণি হেমব্রম।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। তাঁকে খুন করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় আদিবাসীরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশের আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেন আদিবাসীরা।
মৃত যুবককে ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও শুরু হয়ে গিয়েছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে এ দিন পিংলার মুণ্ডমারিতে গ্রামবাসীদের পথ অবরোধ চলাকালীন সেখানে পৌঁছন বিজেপির জেলা সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এলাকার লোক বলেছে ওই যুবক আমাদের দলের কর্মী। আর যাঁর বাড়ি থেকে দেহ পাওয়া গিয়েছে তিনি তৃণমূলের কর্মী। আমাদের ধারণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই খুন করা হয়েছে।” ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতারাও। দলের এরিয়া কমিটির সম্পাদক কালীপদ মান্ডির দাবি, “ওই যুবকের পরিবার আমাদের দলের সমর্থক। ওঁর কোনও শত্রু ছিল না। রাজনৈতিক অভিসন্ধি থাকতে পারে।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শেখ সবরাতির বক্তব্য, “যাঁর বাড়ি থেকে দেহ পাওয়া গিয়েছে তিনি পিংলায় থাকনে না। তাই আমাদের দলের কর্মী কিনা জানা নেই। অকারণে ঘটনায় তৃণমূলকে জড়িয়ে রাজনীতির চেষ্টা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাবা চরণ হেমব্রমের সঙ্গে চাষবাস করতেন সূর্যকান্ত। বছর তিনেক আগে তিনি বিয়ে করেছিলেন। বছর দু’য়েকের ছেলেও রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী এই পরিবার সিপিএমের কৃষক সংগঠনের সমর্থক। গত ২৪ জুলাই পাশের গ্রাম মোহনপুরে বন্ধুর বিয়েতে যাবে বলে বেরিয়েছিলেন সূর্যকান্ত। দু’দিন পরেও বাড়ি না ফেরায় শুক্রবার খোঁজখবর শুরু করে পরিবার। তবে খোঁজ মেলেনি। এ দিন ভোরে স্থানীয় ফুলচাষিদের কয়েকজন দেখেন, শেখ মইদুলের বন্ধ বাড়ি থেকে পচাগলা দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। অভিযোগ, পুলিস মৃতদেহ উদ্ধারের সময় বাসিন্দাদের কিছু জানায়নি। পরে জানা যায়, ওই মৃতদেহ এলাকার নিখোঁজ যুবক সূর্যকান্ত হেমব্রমের। পরে থানায় গিয়ে সূর্যকান্তের মা সারমণি দেহ শনাক্ত করেন। পরে বাড়ির মালিক শেখ মইদুল ও তাঁর বাবা শেখ মহসিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের মা সারমণি হেমব্রম। মৃতের পড়শি বিধান মান্ডি বলেন, “সূর্যকান্তকে প্রথমে মাথায় লাঠি দিয়ে মেরে তার পরে বিদ্যুতের তার হাতে জড়িয়ে খুন করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করুক।”
খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। যাঁর বাড়ি থেকে দেহ পাওয়া গিয়েছে তাঁকেও জেরা করা হচ্ছে। পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী মামলা হবে।”
মৃত যুবকের মা সারমণি বলেন, “গত বুধবার বিয়েবাড়ি যাবে বলে আমার থেকে দশ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল ছেলে। কিন্তু আর ফিরল না। মনে হচ্ছে ওকে খুন করেছে শেখ মইদুল ও তার বাবা মহসিন। ওদের শাস্তি চাই।”
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা ও বর্তমান পত্রিকা, ২৮ জুলাই, ২০১৯। ছবি সৌজন্য - সারি কাথা।

পশ্চিম মেদিনীপুরে ডাইন অপবাদে আদিবাসী দম্পতির উপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগ।


ডাইন অপবাদ দিয়ে এক আদিবাসী দম্পতির উপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সদর ব্লকের গুড়গুড়িপালের শিরিষডাঙায়। অভিযোগের তির পরিজনেদেরই একাংশের বিরুদ্ধে। গত শনিবার ২৭/০৭/২০১৯ এই ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘বিষয়টি নজরে এসেছে। উপযুক্ত পদক্ষেপই করা হচ্ছে।’’
পুলিশের কাছে শিরিষডাঙার বাসিন্দা গুরুদাস মান্ডি অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, দিন কয়েক ধরে ডাইন অপবাদ দিয়ে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী বুধন মান্ডির উপর অত্যাচার চালাচ্ছেন তাঁরই ভাই রঘুনাথ মান্ডি-সহ কয়েকজন। তাঁদেরকে ঘরছাড়াও করা হয়েছে। কিছুটা দূরে এক আত্মীয়ের ঘরে আছেন গুরুদাসরা। গুরুদাসের দাবি, দিন কয়েক আগে ভাই তাঁদের কেশিয়াড়ির খড়িকার কাছে এক গুণিনের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ওই গুণিন তাঁদের ডাইন ঠাওরেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের একাংশের অনুমান, ঘটনার পিছনে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ থাকতে পারে। গুরুদাসেরও অভিযোগ, ‘‘আমাদের ঘর থেকে তাড়িয়ে যাবতীয় সম্পত্তি দখল করতেই এ সব করছে ভাই।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, রঘুনাথের ছেলে জ্বরে ভুগছিল। ডাক্তার দেখিয়েও জ্বর সারেনি। এরপরই গুরুদাস এবং বুধনকে ডাইন সন্দেহ করেন রঘুনাথ। জোর করেই দাদা-বৌদিকে গুণিনের কাছে নিয়ে যান। আগামী সপ্তাহে ওই গুণিনের না কি শিরিষডাঙায় আসার কথাও রয়েছে।
ডাইন অপবাদে মারধর, নির্যাতনের ঘটনা হামেশাই সামনে আসে। এই কুসংস্কারে দাঁড়ি টানতে সরকারি উদ্যোগে প্রচারও হয়। তবে সেই প্রচার বা সচেতনতা শিবিরে যে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না, মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে শিরিষডাঙার ঘটনাই তার প্রমাণ। গুরুদাস বলেন, ‘‘ঘরে থাকলে হয়তো প্রাণেই মেরে দেওয়া হত।’’
স্থানীয় মণিদহ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অঞ্জন বেরা বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। সম্পত্তি হাতানোর পরিকল্পনা থেকে থাকতে পারে বলে শুনছি। পুলিশ সবদিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করছে। আমরা এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার করব।’’ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের আশ্বাস, ওই দম্পতিকে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা ও সংবাদ প্রতিদিন, ২৮ জুলাই, ২০১৯।

Saturday, July 27, 2019

ঝাড়খণ্ড পার্টির সাপ্তাহিক মুখপত্র "ঝাড়খণ্ড টাইমস"।


১৯৭০ সালে প্রকাশিত ঝাড়খণ্ড পার্টির সাপ্তাহিক মুখপত্র "ঝাড়খণ্ড টাইমস"। সম্পাদক ছিলেন ঝাড়খণ্ড পার্টির তৎকালীন সভাপতি এন ই হোরো।

Friday, July 26, 2019

মাঝি বাবাদের কাছে অনুরোধ গ্রামের 'জাহের থান' কে সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করুন।


সমস্ত আদিবাসী গ্রামের সামাজিক প্রধান বা মাঝি বাবাদের কাছে অনুরোধ, নিজের নিজের গ্রামের ধর্মীয় উপাসনাস্থল বা 'জাহের থান' কে সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করুন। সরকারি ভাবে নথিভুক্ত জাহের থান গুলিকে সরকারি খরচে বেড়া বা সংরক্ষণ করা হবে। খরচ দেবেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আদিবাসী কল্যাণ দফতর।

নথিভুক্ত জাহের থান সংরক্ষণ করবে রাজ্য সরকার।


পশ্চিমবঙ্গে বনভূমির ওপর অবস্থিত মাত্র ৩২৩ টি 'জাহের থান' সরকারি ভাবে নথিভুক্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী কল্যাণ দফতরের পক্ষ থেকে এই ৩২৩ টি জাহের থান কে বেড়া দিয়ে সংরক্ষণের খরচ বহন করা হবে।
যে সমস্ত জাহের থান এখনও সরকারি ভাবে নথিভুক্ত হয়নি সেই গ্রামের মাঝি বাবা বা সেই গ্রামের সামাজিক সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিরা অবিলম্বে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

Thursday, July 25, 2019

ঝাড়খণ্ড পার্টির পুনর্গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা।

আগামী জানুয়ারি, ২০২০ সালে ঝাড়খণ্ড পার্টির মহা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে ঝাড়খণ্ড পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পুনর্গঠন করা হল। জুলাই মাসে রাঁচি শহরে এক সভার মাধ্যমে এই ঘোষণা করা হয়।
১) এনোস এক্কা (সভাপতি), ২) কিরণ আইন্দ (কার্যকরী সভাপতি), ৩) অশোক কুমার ভগত (প্রধান সাধারণ সম্পাদক), ৪) দেব কুমার ধান (সহ-সভাপতি), ৫) ওম প্রকাশ আগরওয়াল (সহ-সভাপতি), ৬) শৈলেন্দ্র কুমার মইতি (সহ-সভাপতি), ৭) ওমরেন সামাদ (সহ-সভাপতি), ৮) উমেশ কুমার পাণ্ডে (সাধারণ সম্পাদক ও মুখমাত্র), ৯) পরমেশ্বর মাহাত, ১০) সুভাষ কংগারি, ১১) অমিত রঞ্জন, ১২) সিরিল হান্স (কোষাধ্যক্ষ), ১৩) সুগড় শ্যামুয়েল ডোডরায় (সম্পাদক), ১৪) ফিলিপ সোয় (সম্পাদক), ১৫) সুফল ওঁরাও (সম্পাদক), ১৬) প্রদীপ সরেন (সম্পাদক), ১৭) জেমস লুগুন (সম্পাদক), ১৮) বিজয় গুড়িয়া (যুগ্ম সম্পাদক), ১৯) প্রমোদ খেস (যুগ্ম সম্পাদক), ২০) সঞ্জীব মেইতি (যুগ্ম সম্পাদক), ২১) বিরেন্দ্র কুমার তিয়ারি (যুগ্ম সম্পাদক), ২২) গজাধর অহধার (যুগ্ম সম্পাদক), ২৩) হেরমন টোপ্পো (যুগ্ম সম্পাদক), ২৪) শেখায়াত আনসারি (যুগ্ম সম্পাদক), ২৫) মেনান এক্কা (মহিলা শাখার সভানেত্রী), ২৬) অর্পণা হন্স (মহিলা শাখার সাধারণ সম্পাদিকা), ২৭) নিরল টোপনো (যুব শাখার সভাপতি), ২৮) আইরিন এক্কা (যুব শাখার কার্যকরী সভাপতি), ২৯) মদন কুমার গঞ্ঝু (যুব শাখার সাধারণ সম্পাদক), ৩০) লালকেশ্বর দাস (আই টি সেলের সংযোজক), ৩১) রিঙ্কু কুমার আগরওয়াল (আই টি সেলের সংযোজক), ৩২) ডমরুধর দাস (সাংস্কৃতিক মঞ্চের সভাপতি), ৩৩) প্রোফেসর দিপক প্রসাদ (বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি), ৩৪) মসীহ দাস গুড়িয়া (বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক), ৩৫) শৈলেন্দ্র কুমার মেইতি (ঝাড়খণ্ড মজদুর সংঘের সভাপতি)।  

কয়লাখনির জন্য জঙ্গল ধ্বংসের বিরুদ্ধে বিশাল জমায়েত করে বিডিওকে স্মারকলিপি আদিবাসীদের।


কয়লাখনির জন্য জঙ্গল ধ্বংসের বিরুদ্ধে বিশাল জমায়েত করে বিডিওকে স্মারকলিপি আদিবাসীদের।

বীরভূম জেলার খয়রাশোলে কয়লাভূমির জন্য নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে বনভূমি বলে অভিযোগ আদিবাসীদের। তাই জমি-জঙ্গলের অধিকার সুরক্ষিত করতে এলাকার আদিবাসী সমাজ গড়ে তুলেছে ‘বির বানচাও কমিটি’। যার অর্থ জঙ্গল রক্ষা কমিটি। এই ডাক দিয়েই বৃহত্তর আন্দোলনে নামলেন বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী দশটি গ্রামের আদিবাসীরা। গত বৃহস্পতিবার ২৫/০৭/২০১৯ এই সব গ্রামের মহিলারা স্থানীয় বিডিও অফিসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। নিজেদের দাবি জানিয়ে ডেপুটেশনও দেন। এতে কাজ না হলে আগামিদিনে সারা জেলার আদিবাসীরা জেলাশাসকের অফিস দখল করবে বলেও হুমকি দিলেন আদিবাসী নেতারা।
কয়েক বছর আগেই খোলামুখ কয়লা খনি করার ছাড়পত্র মিলেছে বীরভূম জেলার খয়রাশোলের গঙ্গারামপুরচক মৌজায়। ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা ওই এলাকায় খনি তৈরির জন্য জঙ্গল কাটা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই খবর কানে পৌঁছতেই জল-জমি-জঙ্গলের অধিকার হারানোর আশঙ্কায় দিশেহারা খয়রাশোলের গঙ্গারামপুরচক, বাস্তবপুর, সগরভাঙা, গাংপুর, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া, দেবগঞ্জের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের বাসিন্দারা।
কয়লাখনির জন্য এলাকার প্রায় সাড়ে সাতশো বিঘারও বেশি ঘন বনভূমি চিহ্নিত হয়েছে। শুরু হয়েছে বনভূমি সাফাইয়ের কাজও। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আদিবাসীরা। তাই এককাট্টা হয়েছেন খয়রাশোলের গঙ্গারামপুরচক, বাস্তবপুর, সগরভাঙা, গাংপুর, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া, দেবগঞ্জের মানুষ। ইতিমধ্যেই ‘বির বানচাও কমিটি’ গড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। কমিটির নেতা বাবুরাম পাউরিয়া বলেন, ‘বনভূমি কেটে ফেলায় আমাদের জীবন-জীবিকায় টান পড়বে। এই জঙ্গল থেকে আমরা জ্বালানি কাঠ, শালপাতা, কেন্দু পাতা, মধু, জাম, খেজুর, পিয়াল, মহুয়া সংগ্রহ করি। দৈনন্দিন জীবনে এর কোনওটা আমাদের পেট ভরায়। আবার কোনও কোনও জিনিস বিক্রি করে আমাদের চাল-ডাল জোটে। জঙ্গল কেটে কয়লা খনি হলে না খেয়ে মরতে হবে।’
স্থানীয় আদিবাসী সংগঠন ‘বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা’-র নেতা সুনীল সোরেন বলেন, ‘অরণ্যের উপর নির্ভরশীল আদিবাসীরা কয়লাখনির নামে অবিচারে ব্যাপক হারে সবুজ ধ্বংসের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন। ‘বনাধিকার আইন ২০০৬’-কে মান্যতা না দিয়ে এবং গ্রামসভা ছাড়াই কী ভাবে ১০১ একর প্রাকৃতিক অরণ্যকে ধংস করে আদিবাসীদের জীবন জীবিকা বিপন্ন করার মতো গুরুতর ও মারাত্মক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল, তার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন।’
খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস বলেন, ‘যেখানে কয়লাখনি তৈরি হবে, সেই এলাকার বাসিন্দাদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা আমরা খতিয়ে দেখব। কয়লা খনির জন্য জঙ্গল নিয়ে সিদ্ধান্ত আমার নেওয়ার কথা নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাকি দাবি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখব।’
২০১৪ সালে কয়লার ব্লক-বণ্টন বাতিল হওয়ার আগে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর-বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার মাটির নীচে কয়লা উত্তোলনের বরাত পায় ‘এমটা’। সেই কয়লা বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল ওই সংস্থার। ২০১১ সালের পর থেকে কৃষ্ণপুর-বড়জোড় অঞ্চল এবং তার পরে গঙ্গরামচকে কিছু অংশে খোলামুখ খনি গড়ে কয়লা উত্তোলন শুরু করেছিল তারা। কিন্তু ২০১৪ সালে সারা দেশে ২০৪টি কোল-ব্লক বাতিলের তালিকায় ছিল খয়রাশোলের দুটি ব্লক-ও।
কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৫ সালে নয়া কয়লা ব্লক বণ্টন আইন প্রনয়ণ করে দেশের বহু কয়লা ব্লক বণ্টন করে। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (পিডিসিএল) রাজ্যে পাঁচটি কোল ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি পায়। সেই পাঁচটির মধ্যে দুটি ব্লক রয়েছে খয়রাশোলের বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার। কোল ব্লক থেকে কয়লা তোলার অনুমতি পেলেও পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন না মেলায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেখানে কয়লা উত্তোলনের কোনও উদ্যোগ নিতে পারেনি পিডিসিএল। তবে এর মধ্যে প্রয়োজনীয় এনওসি নিয়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর-বড়জোড় মৌজা থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রস্ততি শুরু হয়ে যায়। তবে জটিলতা থেকে যায় গঙ্গারামচক মৌজা নিয়ে। কারণ এই মৌজার একটি বড় অংশে রয়েছে বিশাল জঙ্গল। প্রায় সাড়ে সাতশো বিঘারও বেশি ঘন বনভূমি চিহ্নিত হয়েছে ওই এলাকায়। ফলে প্রথমে বাদ সাধে বন দপ্তর।
বন দপ্তর জানিয়ে দেয়, যে পরিমাণ বনভূমি নষ্ট হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার সমপরিমাণ জমি দিতে হবে। শুধু তাই নয়, সেখানে গাছ লাগানোর যাবতীয় খরচ বহন করতে হবে পিডিসিএলকে। এর জন্য বন দপ্তরের ‘কমপেনসেটারি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথরিটি’ কর্মসূচির বিস্তারিত নিয়ম জানিয়ে দেওয়া হয়। গত কয়েক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ নিগম ওই স্কিমের আওতায় উত্তরবঙ্গের বৈকণ্ঠপুরে সমপরিমাণ এলাকা ‘কপমেনসেট’ করেছে বন দপ্তরকে। সেখানে গাছ লাগানোর খরচও দিয়েছে তারা। কিন্ত বীরভূমের ওই অঞ্চলের ১০১ হেক্টর বনভূমি শূন্য হয়ে যাচ্ছে। বিকল্প হিসাবে খরাপ্রবণ এই জেলার খয়রাশোল ব্লকে নতুন করে সমপরিমাণ বনভূমি গড়ে ওঠার বিষয়ে বীরভূমের এডিএফও বিজন কুমার নাথ বলেন, ‘যে অঞ্চলে কয়লাখনি করার জন্য বনভূমি নষ্ট করা হচ্ছে, সেখানে নিয়ম মেনে সমপরিমাণ জমি এবং তাতে বন সৃজনের খরচ দিয়েছে পিডিসিএল। তবেই বন দপ্তর অনুমতি দিয়েছে।’
তবে আদিবাসীরা পরিষ্কার ভাবেই জঙ্গল ধ্বংস করে কয়লাখনি তৈরির বিরুদ্ধে তাদের অনড় মনোভাবের কথা জানিয়ে দিয়েছে। তাদের সাফ কথা, জঙ্গল ধ্বংস করে কয়লাখনি নয়। সেটা করতে হলে তাঁদের জীবন জীবিকা সুরক্ষিত রেখেই করতে হবে। এই জোড়া শর্ত সামনে রেখেই গত বৃহস্পতিবার ২৫/০৭/২০১৯ বিশাল জমায়েত করে খয়রাশোলের বিডিওকে স্মারকলিপি দিল আদিবাসীদের দুটি সংগঠন, বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা ও বীর বানচাও কমিটি। বৃহস্পতিবার ওই জঙ্গল কাটা বন্ধ করার আর্জি নিয়ে খয়রাশোলে বিশাল জমায়েত বুঝিয়ে দিল আলোচনা না করে কাজ হাত দিলে সমস্যা রয়েছে।
এ দিন খয়রাশোলের গোষ্টমেলার মাঠে আদিবাসীদের জমায়েত হবে বলে আগাম খবর ছিল স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। সেই জন্য প্রস্তুত ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। খয়রাশোলের ব্লক ও জেলার অন্য প্রান্ত থেকেও সংগঠনের সদস্যরা এসেছিলেন। বেলা ২টো নাগাদ মিছিল করে বিডিও অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। নেতৃত্বে ছিলেন বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার নেতা সুনীল সরেন। তবে খনির জন্য জঙ্গল ধ্বংস ছাড়াও, জীবিকা সুরক্ষিত রাখা, এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট, রাস্তাঘাটের উন্নতি, জাহের থান সংস্কার সহ আদিবাসীদের সঙ্গে বঞ্চনার নানা অভিযোগ তুলে ধরেন আদিবাসীরা।
আদিবাসীদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে না বলে পিডিসিএল বেমালুম প্রস্তাবিত কয়লাখিনি ঘেঁষে থাকা লোকজনের কথা ভুলে যাচ্ছে। সেটা হতে দেব না। সুনীল সরেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত খনি এলাকা সংলগ্ন বাস্তবপুর, সগড়ভাঙ্গা, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া গঙ্গারামচক, দেবগঞ্জ এলাকার আদিবাসীদের বসতে এখনই হাত পড়বে না, কিন্তু যে ভাবে জঙ্গল কেটে কয়লাখনি তৈরির কাজ চলছে, তাতে ঘুরিয়ে তাঁদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাই করা হয়েছে। কারণ জঙ্গল না থাকলে জীবিকা কী ভাবে হবে। দুদিন বাদে খনিতে বিস্ফোরণে ঘর ফেটে গেলে উচ্ছেদ হতে হবে। তাই আলোচনার ভিত্তিতে সহমতে না আসা পর্যন্ত জঙ্গল কটা চলবে না।’
প্রশাসন সূত্রে খবর, অশান্তির ভয়ে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রেখেছে পিডিসিএল।
সংবাদ সৌজন্য - এই সময় ও আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬/০৭/২০১৯।

ঝাড়খণ্ড পার্টি (প্যারা মুণ্ডু গোষ্ঠী)-র সভা।



গত মঙ্গলবার (২৩/০৭/২০১৯) রাঁচি জেলার নামকুম ব্লকে ঝাড়খণ্ড পার্টি (প্যারা মুণ্ডু গোষ্ঠী)-র কেন্দ্রীয় কমিটি, রাঁচি জেলা কমিটি ও নামকুম ব্লক কমিটি যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হল। সভায় সভাপতিত্ব করলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (প্যারা মুণ্ডু গোষ্ঠী)-র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রুবেন ডাং মহাশয়। এই সভায় নামকুম ব্লক কমিটি পুনর্গঠন করা হয় – শ্রী পত্রাস মাহালি (সভাপতি), শ্রী রাজেন কেরকেটা (সম্পাদক), শ্রী অঙ্কিত তিরকি (কোষাধ্যক্ষ), শ্রী প্রকাশ চম্পিয়া (সহ-সভাপতি), শ্রী জর্জ টোপনো (সহ-সভাপতি), শ্রী মঙ্গল পাহান (সহ-সভাপতি) এবং জগন মুণ্ডা (সহ-সম্পাদক)। নামকুম ব্লক কমিটির সভায় বিশেষ বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্যারা মুণ্ডু মহাশয় ও গুমলা জেলা কমিটির সভাপতি দিলিপ বিরহোর মহাশয়। 
নামকুম ব্লক কমিটির সভা শেষ হবার পর ঝাড়খণ্ড পার্টি (প্যারা মুণ্ডু গোষ্ঠী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য পেশ করেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (প্যারা মুণ্ডু গোষ্ঠী)-র কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী প্যারা মুণ্ডু মহাশয়, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি শ্রী সবন হোরো, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্রী বুধরাম তিরকি, শ্রী রুবেন ডাং, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী কিশোর হোরো, শ্রী সুখরাম হেরেঞ্জ, কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক শ্রী বিশ্রাম বাগে, কেন্দ্রীয় মহিলা সভানেত্রী শ্রীমতী সুগন্ধিত বাগে, শ্রী পত্রাস মাহালি, শ্রী জগন মুণ্ডা, শ্রীমতী মুন্না দেবী, শ্রীমতী হোলিমা দেবী ও অন্যান্য পদাধিকারীরা।         

Wednesday, July 24, 2019

জলাভাবে পেশা পরিবর্তন আদিম আদিবাসী শবর জনগোষ্ঠীর।


ঝাড়গ্রামে জলাভাবে পেশা পরিবর্তন করে চাষি থেকে দিনমজুর হতে বাধ্য হলেন আদিম আদিবাসী শবর জনগোষ্ঠী।

ঝাড়গ্রাম শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রান্তিক এলাকা চাঁদাবিলায় বাস করে ১২০ টি শবর পরিবার। এলাকায় ৬০ টি শবর পরিবারের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২০ একর। শবরদের চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে বাম আমলে ২০০৮-২০০৯ সালে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচের বন্দোবস্ত করা হয়। এলাকায় সরকারি জমি না মেলায় পাম্প হাউস তৈরির জন্য জমি দান করেন শবর সম্প্রদায়ের স্থানীয় বাসিন্দা কুনু মল্লিক। প্রকল্প চালু হওয়ার পরে পাম্প হাউস থেকে সরাসরি জল পড়ত জমিতে। শবরদের অভিযোগ, প্রকল্পে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জমিতে-জমিতে জল দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে সে সব কিছুই হয়নি। তবে সেচের জল কাঁচা নালা দিয়ে জমিতে পড়ায় চাষাবাদ শুরু করেন শবররা। মরসুমে ধান, আলু, সর্ষে ও তৈলবীজ চাষও করতেন শবররা।
পাম্প হাউসের জমিদাতা প্রয়াত কুনু মল্লিকের ছেলে পঞ্চানন মল্লিক বলেন, ‘‘আমাকে সেচ পাম্পটি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিল মেটানোর কথা ছিল ঝাড়গ্রাম পুরসভার। কিন্তু ঝাড়গ্রাম পুরসভা বিল না মেটানোয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে পাম্প হাউসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা।’’
স্থানীয় বাসিন্দা মেথরা মল্লিক, নির্মল মল্লিক, চিত্ত মল্লিক, খোকন মল্লিকদের অভিযোগ, আচমকা পাম্প হাউস যে বার বন্ধ করে দেওয়া হয়, ওই বছর তাঁরা আলু চাষ করেছিলেন। জলের অভাবে পুরো চাষ নষ্ট হয়ে যায়। পঞ্চানন মল্লিকের কথায়, ‘‘পাম্প হাউসের বিলের প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ দফতর।’’
বিল মেটাতে পারেনি ঝাড়গ্রাম পুরসভা। তাই সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা। আর তার জেরে পেশাই বদলে গিয়েছে বেশ কয়েকটি শবর পরিবারের। চাষি থেকে তাঁরা হয়ে গিয়েছেন দিনমজুর।
সেচের জলের অভাবে প্রায় সাড়ে তিন বছর চাষাবাদ বন্ধ থাকাতেই এই পেশা-বদল। ঝাড়গ্রাম শহরের বুকে শবরদের এই দুর্গতি পুরসভারও অজানা নয়। তবে মেটেনি। বামেদের তরফে পুর-কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়ে অবিলম্বে সেচ পাম্প সচলের দাবি জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি দেন তাঁরা। কিন্তু সুরাহা হয়নি।
দরিদ্র শবররা জানাচ্ছেন, চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের বেশির ভাগই এখন ঝাড়গ্রামে দিনমজুরের কাজ করেন। আরও অভিযোগ, বাম আমলের প্রকল্প হলেও পাম্প হাউসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় বর্তমান সরকারের আমলে। খোকন মল্লিক, চিত্ত মল্লিকরা বলেন, ‘‘নিজেদের উদ্যোগে শ্যালো টিউবওয়েল বসিয়ে সেচের ব্যবস্থা করার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই আমাদের।’’
বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার এক আধিকারিক জানান, বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। এখন উপায়? ঝাড়গ্রাম পুরসভার প্রশাসক সুবর্ণ রায় অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুর-প্রশাসনের এক প্রতিনিধি দল পাম্প হাউস পরিদর্শন করে এসেছেন। সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩/০৭/২০১৯।

Tuesday, July 23, 2019

কাটমানির টাকা ফেরতের থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু মানুষেরা।

কাটমানির টাকা ফেরতের দাবিতে শাসকদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন ক্যানিং এর আদিবাসী ও সংখ্যালঘু মানুষেরা।

কাটমানি ফেরতের দাবিতে এ বার থানার দ্বারস্থ হলেন বেশ কিছু আদিবাসী ও সংখ্যালঘু মানুষেরা। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূলের দুই নেতা লীলা সর্দার ও রেজাউল শেখ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নানা প্রকল্পে কাটমানি খেয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে দুই নেতার বিরুদ্ধে ক্যানিং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ক্যানিংয়ের গোপালপুর পঞ্চায়েতের বেশ কিছু আদিবাসী ও সংখ্যালঘু মানুষেরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার গ্রামের মানুষ কাটমানি ফেরতের দাবিতে পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য লীলা সর্দারের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। প্রায় শখানেক গ্রামবাসী ঘণ্টা দুয়েক ঘেরাও করে রাখেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সরিয়ে দেয়। কোনও অভিযোগ থাকলে পুলিশের তরফ থেকে তা থানায় গিয়ে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
সেই মতোই মঙ্গলবার প্রায় কুড়িটি আদিবাসী ও সংখ্যালঘু পরিবার ক্যানিং থানায় অভিযোগ দায়ের করে। স্থানীয় পাটাভাঙি বুথের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য লীলা ও পাশের গোপালপুর বুথের পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী রেজাউল শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের। অভিযোগকারী শেফালি সর্দার, সমতুল দাস, শম্ভুনাথ মণ্ডলদের অভিযোগ, “সরকারি প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এক একজনের কাছ থেকে দশ থেকে চোদ্দো হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরেও সকলে ঘর পাননি। কেউ ঘর তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা পেলেও পরবর্তী কিস্তির টাকা পাননি।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে রেজাউল বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বদনাম করার চেষ্টা করছেন কিছু মানুষ।’’ লীলাকে অবশ্য এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি বলে জানা যায়।
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৪ জুলাই, ২০১৯। 

কয়লাখনি তৈরির জন্য জঙ্গল কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন আদিবাসীরা।


বীরভূম জেলায় কয়লাখনি তৈরির জন্য জঙ্গল কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন আদিবাসীরা।

বীরভূম জেলার খয়রাশোল ব্লকের গঙ্গারামচক মৌজায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম খোলামুখ কয়লাখনি তৈরির জন্য সম্প্রতি ১০১ হেক্টর বনভূমি সাফাইয়ের কাজে হাত দিয়েছে। কিন্তু এলাকার আদিবাসীরা জঙ্গল ধ্বংস করার বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার হয়েছেন। প্রথমে প্রতিবাদে বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছিলেন বনভূমি সংলগ্ন এলাকার  কয়েকটি আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এতে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ নষ্ট হচ্ছে, তাতে আঁচ পড়তে পারে স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকায়। প্রস্তাবিত খনিএলাকা সংলগ্ন বাস্তবপুর, সগড়ভাঙ্গা, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া গঙ্গারামচক, দেবগঞ্জ এলাকার আদিবাসীরা গত মঙ্গলবার (১৬/০৭/২০১৯) বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর বক্তব্য, এখনই হয়তো তাঁদের বসতে হাত পড়বে না, কিন্তু যে ভাবে জঙ্গল কেটে কয়লাখনি তৈরির কাজ চলছে, তাতে ঘুরিয়ে তাঁদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাই করা হয়েছে। অথচ এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি।
খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস আদিবাসীদের প্রতিবাদপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলছেন, ‘‘কয়লা খনি তৈরির জন্য কারও বসতে হাত পড়ছে না। তবে কয়লা খনি লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের যাতে সমস্যা না হয়, তা নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের  দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কথা বলা হবে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও।’’
স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে কয়লার ব্লক-বণ্টন বাতিল হওয়ার আগে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর-বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার মাটির নীচে কয়লা উত্তোলনের বরাত পায় এমটা। সেই কয়লা বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল ওই সংস্থার। ২০১১ সালের পর থেকে কৃষ্ণপুর-বড়জোড় অঞ্চল এবং তার পরে গঙ্গরামচকে কিছু অংশে খোলামুখ খনি গড়ে কয়লা উত্তোলন শুরু করেছিল তারা। কিন্তু ২০১৪ সালে সারা দেশে ২০৪টি কোল-ব্লক বাতিলের তালিকায় ছিল  খয়রাশোলের দুটি ব্লক-ও।
২০১৫ সালে নয়া কয়লা ব্লক বণ্টন আইনের আওতায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুত উন্নয়ন নিগম রাজ্যে যে পাঁচটি কোল ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব পায়, সেই তালিকায় নাম ওঠে খয়রাশোলের বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার। কিন্তু পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন না মেলায় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেখানে কয়লা উত্তোলন করা যায়নি। জট কাটিয়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর-বড়জোড় মৌজা থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রস্ততি শুরু করলেও জটিলতা ছিল গঙ্গারাপুর নিয়েই। কারণ এই মৌজার একটি বড় অংশে ছিল বিশাল জঙ্গল। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম মেনে ১০১ হেক্টর জায়গা নিজেদের নামে নিয়ে সেখানে জঙ্গল কাটাচ্ছে নিগম।
তা নিয়েই আপত্তি তুলছেন প্রস্তাবিত কয়লাখনি লাগোয়া এলাকার আদিবাসীরা। বাবুরাম পাঁউরিয়া, সুমিতা সরেন, তাপস মারান্ডি, মলিন্দ টুটু, সোমনাথ হেমব্রমের মতো এলাকাবাসীর অভিযোগ, বনভূমি কেটে ফেলায় তাঁদের জীবন-জীবিকায় আঘাত আসবে। জ্বালানি কাঠ, শালপাতা, কেন্দু পাতা, খেজুর, মধু, পিয়াল ফল সবই তাঁরা সংগ্রহ করেন জঙ্গল থেকে। জঙ্গল না থাকলে সেই পথ বন্ধ হবে। পাশাপাশি থাকবে না প্রচুর বন্যপ্রাণ।
তাঁদের আরও আশঙ্কা, কয়লাখনি থেকে তাঁদের বসতের দূরত্ব মাত্র ২-৩ কিলোমিটার। আগামী দিনে কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ার পরে বিস্ফোরণ ঘটালে ফাটল ধরতে পারে তাঁদের মাটির বাড়িতে। দূষিত হবে পরিবেশও।
বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জিএম অমরকুমার পাল বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কানে কিছু আসেনি।’’ বন দফতর জানিয়েছে, বনভূমি নষ্ট হয়েছে, তাই কমপেনসেটারি অ্যাফোরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথরিটিকর্মসূচির আওতায় সম-পরিমাণ এলাকায় নতুন করে গাছ লাগানো হবে। তবে এটাও ঠিক, সেখানে ঘন জঙ্গল তৈরি হতে কয়েক বছর সময় লাগবে।
কিন্তু জঙ্গলভূমি ধ্বংস করে কয়লাখনি তৈরি বিরুদ্ধে আদিবাসীরা তাদের বিরোধিতায় অনড়। আর তাই বীরভূমের জোড়া কয়লা প্রকল্পের শুরুতেই জট। এবার সরাসরি রাস্তায় নেমে দেওচা-পাচামি কয়লা প্রকল্প ও খয়রাশোলে গঙ্গারামচক খোলামুখ কয়লা খনি ঘিরে আন্দোলনে নামল আদিবাসীরা। জঙ্গল কেটে এবং আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে কয়লা শিল্প করা যাবে না দাবি জানিয়ে বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে সামিল হলেন তারা।
দিন চারেক আগে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন বীরভূমের দেওচা-পাচামি কয়লা শিল্প সংক্রান্ত ফাইল কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে হস্তান্তর করেছে। তাঁর ঘোষণার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বীরভূমে। লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের আশায় শিল্পকে স্বাগত জানায় যুব সমাজ। যদিও পাথর খাদান ও ক্রাশার মালিকরা ছাড়াও এলাকার আদিবাসীরা এই ঘোষণায় আশঙ্কাই দেখছে বেশি।
আদিবাসীরা যে শুধু মুখে স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার কথা বলেছেন এমনটা নয়। তাদের দাবিতে আগামী দিনেও যে অনড় থাকবেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন গত সোমবার (২২/০৭/২০১৯)। এ দিন একযোগে বীরভূমের তিনটি জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। মহম্মদবাজারের জয়পুরে, সিউড়ির আব্দারপুর, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন আদিবাসী সংগঠন বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা। একই সঙ্গে রামপুরহাটের বড়পাহাড়িতেও রামপুরহাট-দুমকা রাস্তা অবরোধ করা হয়।
খয়রাশোল ব্লকে গঙ্গারামচক মৌজায় পিডিসিএল খোলামুখ কয়লা খনির জন্য ১০১ একর বনভূমি কাটার কাজ শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত খনি এলাকার বাস্তবপুর, সগরভাঙ্গা, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া, গঙ্গারামচক, দেবগঞ্জ এলাকার আদিবাসীরা ইতিমধ্যেই এই নিয়ে একজোট হতে শুরু করেছেন। আদিবাসীদের অভিযোগ, বনভূমি কেটে নিলে তাঁদের রুজিতে টান পড়বে। কারণ, জঙ্গল থেকে কাঠ, মধু, কেন্দুপাতা, শালপাতা, সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে আদিবাসী সমাজ। এলাকার বাসিন্দা বুধন হেমব্রম, রবি টুডুদের বক্তব্য, “জঙ্গল ধ্বংস করে কয়লা খাদান হলে আমাদের উচ্ছেদ হতে হবে। যদি তা নাও হয় তবে খাদানে বিস্ফোরণ হলে আমাদের মাটির বাড়ি ভেঙে পড়বে।” যদিও বন দপ্তরকে পিডিসিএল আশ্বাস দিয়েছে ওই পরিমাণ এলাকায় বনসৃজন করবে তারা।
স্থানীয় আদিবাসী সংগঠন “বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা”-র সম্পাদক রবীন সরেন বলেন, “খয়রাশোলের গঙ্গারামচকে জঙ্গল ধ্বংস করে কয়লা খাদান করা হচ্ছে। কয়লা শিল্প হলে সেখানেও কেটে ফেলা হবে প্রচুর জঙ্গল। প্রায় তিরিশটি আদিবাসী গ্রামকে উচ্ছেদ করা হবে। ফলে কয়লা শিল্প হোক তা আমরা চাই না।” বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার আন্দোলনে দেওচা-পাচামি কয়লা শিল্প ঘোষনার পর বড় আঘাত এল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার নেতাদের বক্তব্য, “আমরা শিল্পের বিপক্ষে নয়। কিন্তু আদিবাসী স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে হবে সরকারকে। কয়লা শিল্প নিয়ে এখনও মানুষ কিছুই জানে না। তাদের কাছে সমস্ত বিষয় স্পষ্ট করতে হবে।” যদিও এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “জেলার যে কোনও উন্নয়নের কাজে আদিবাসীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় আমরা তা খতিয়ে দেখব।”
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা (১৮/০৭/২০১৯) ও এইসময় (২৩/০৭/২০১৯)।

Monday, July 22, 2019

পশ্চিম বর্ধমানের হীরাপুরে প্রেমিককে বেঁধে রেখে আদিবাসী তরুণীকে গণধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৬।


প্রেমিককে মারধর করে বেঁধে রেখে আদিবাসী তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগে শনিবার তিনজন যুবককে ও রবিবার আরও ৩ জন সমেত মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। গত বুধবার (১৭/০৭/২০১৯) রাতে হীরাপুর থানার সূর্যনগর এলাকায় এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল দক্ষিণ থানার কুমারপুর এলাকার এক আদিবাসী তরুণী ও হীরাপুর থানার বেগুনবাড়ি এলাকার এক আদিবাসী যুবকের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা বুধবার সন্ধ্যায় হীরাপুর থানার সূর্যনগর এলাকায় দামোদর নদের তীরে ঘুরতে যান। অভিযোগ, রাতে ওখানে তাঁদের আটকায় পাঁচ যুবকপ্রেমিক যুগলকে জোর করে কাছেই একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ব্যাপক মারধর করে। এরপর প্রেমিকের সামনেই প্রেমিকাকে গণধর্ষণ করে তারা।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে শনিবার হীরাপুর থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয় এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, যে পাঁচজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজনকে স্থানীয় পাঠমোহনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের একদিন পরেই গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয় এবং গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। এডিসিপি(পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, একটি গণধর্ষণের অভিযোগ হয়েছে। পাঁচজনের নামে অভিযোগ রয়েছে।
গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে সুনীল বাউরি, রুপ লাহিড়ী, কাটি হাঁসদা, চিরঞ্জিত দাস, রাজেশ কর্মকার, টোটোই হেমরম। গণধর্ষণের ঘটনার মূল পাণ্ডা টোটোই হেমরম। সব অভিযুক্ত ধরা পড়ায় খুশি আদিবাসী সংগঠনের নেতা কর্মীরা। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন স্থানীয় আদিবাসীরা। দুই সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বে স্থানীয় আদিবাসীরা ধামসা মাদল নিয়ে হীরাপুর থানা ঘেরাও করায় চরম চাপে ছিলেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। সব অভিযুক্ত ধরা পড়ায় হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা।
সংবাদ সৌজন্য – বর্তমান (২১/০৭/২০১৯)। ছবি - প্রতীকী। 

শোনভদ্রে জমি বিবাদে ১০ জন আদিবাসী মারা যাবার চার দিন পরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্রে জমি বিবাদে ১০ জন আদিবাসী মারা যাবার চার দিন পরে অবশেষে সেখানে পা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

গত বুধবার (১৭/০৭/২০১৯) উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্রে দশ আদিবাসীর মৃত্যুর চার দিন পরে অবশেষে সেখানে পা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ওই ঘটনার পরেই কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার সফরকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। অবশেষে চাপের মুখে সোনভদ্রে যাওয়ার কথা গত কাল জানান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথএবং চার দিন পরে ঘটনাস্থলে পা রেখে টেনে আনলেন সেই দলীয় রাজনীতিই।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ঘোষণার পাশাপাশি গোটা ঘটনার দায় চাপালেন রাজ্যে তিন দশক আগে শেষ বার ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস সরকারের ঘাড়ে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের দলিত-বিরোধী মনোভাব নিয়ে বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে যোগীর দাবি, শোনভদ্রের ঘটনা আসলে সরকারের বিরুদ্ধে একটি বড় মাপের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। যার পিছনে রয়েছে কংগ্রেস। মূলত যার সঙ্গে পাল্লা দিতে যোগীর আজকের সফর বলে মনে করা হচ্ছে, সেই প্রিয়ঙ্কা এই সফরকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও পীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের কর্তব্য।’’
গত শুক্রবার নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে যে ভাবে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী উত্তরপ্রদেশে ছুটে বেড়িয়েছেন, তাতে ঘুম ছুটেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। বিশেষ করে গত কাল যে ভাবে নির্যাতিতরা প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে দেখা করার জন্য জোট বেঁধেছিলেন, তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছে গেরুয়া শিবির। তাই দিল্লির সদর দফতর থেকে আদিত্যনাথকে বার্তা দেওয়া হয়, দ্রুত পীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই আজ সোনভদ্রে পৌঁছন আদিত্যনাথ। কংগ্রেস নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে টেক্কা দিতে সাড়ে ১৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন যোগী। শুরুতে ক্ষতিপূরণের এই অঙ্কটাই ছিল মাত্র ৫ লক্ষ টাকা।
কিন্তু তাতেও মানুষের ক্ষোভ কমছে না। আজ আদিত্যনাথের সামনেই অনেক গ্রামবাসী নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান, কী ভাবে পুলিশের মদতে সে দিন হামলা চালানো হয়েছিল। অবিলম্বে গ্রামে নিরাপত্তার বাড়ানোর দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা। দাবি উঠেছে পলাতক অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারেরও। অন্যদিকে রাজীব-কন্যা টুইট করে বলেন, ‘‘নির্যাতিতদের সমর্থনে কয়েক হাজার কংগ্রেস কর্মী পথে নামার পরেই উত্তরপ্রদেশ সরকার বুঝতে পারে যে, বিষয়টি গুরুতর। দেরিতে হলেও যোগীর সোনভদ্র সফরকে স্বাগত। সরকারের উচিত পীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ওই গ্রামটি ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষায় রয়েছে। আশা করি, তাঁদের পাঁচ দফা দাবি মেনে আজ মুখ্যমন্ত্রী যা ঘোষণা করেছেন, তা দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। আদিবাসীদের জমির মালিকানা দেওয়ার পাশাপাশি দোষীদের দ্রুত সাজা এবং গ্রামবাসীরা যেন পূর্ণ সুরক্ষা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’
মোদী সরকারের প্রথম পর্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত ও আদিবাসীদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গো-রক্ষার নামে দলিতদের উপর আক্রমণ, মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁও সংঘর্ষ, উত্তরপ্রদেশের মুজফফ্‌রনগরের দলিত ও উচ্চবর্ণের সংঘর্ষের একের পর এক ঘটনায় ব্যাপক মুখ পোড়ে বিজেপির। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে মোদী যতই সবকা সাথ, সবকা বিকাশের পাশাপাশি সবকা বিশ্বাসজেতার দাবি করুন না কেন, দেশের নানা প্রান্তে দলিত-নির্যাতনের ঘটনা কিন্তু ঘটেই চলেছে। তার মধ্যেই শোনভদ্রের ঘটনা নতুন করে অস্বস্তির মুখে ফেলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। ফিরিয়ে এনেছে মোদী সরকারের প্রথম পর্বের স্মৃতিকেই।
সরকারের দায় এড়াতে গত কাল থেকেই গোটা ঘটনার জন্য তিন দশক আগের কংগ্রেস সরকারের নীতিকে দায়ী করে দফায় দফায় সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী ও তাঁর দুই উপ-মুখ্যমন্ত্রী।। আজও শোনভদ্রে দাঁড়িয়ে আদিবাসী হত্যার পিছনে বড় মাপের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব তুলে যোগী বলেন, ‘‘ওই জমিটি ১৯৫৫ সালে একটি ট্রাস্টকে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন ফের ওই জমি ব্যক্তিগত মালিকদের ফিরিয়ে দেয়। সেই ব্যক্তিগত মালিকেরা ২০১৭ সালে জমিটি গ্রামপ্রধানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।’’ যোগীর দাবি, তাতে মদত দিয়েছিল কংগ্রেসই। যোগীর মতে, কংগ্রেসের সেই পাপের ফলই ভোগ করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
শোনভদ্রে জমি হিংসায় নিহত দশ আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের চরম বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। তবু নাছোড় থেকে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। সমর্থন করেছিলেন তাঁদের দাবিদাওয়াকে। রাজনৈতিক চাপে পড়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সে ঘটনার ঠিক পর দিনই পৌঁছে গেলেন এলাকায়। আশ্বাস দিলেন ক্ষতিপূরণের, ন্যায়বিচারের।
ইতিহাস বলছে, আদিবাসী কৃষকরা বহু বছর ধরে ওই জমিতে অর্থের বিনিময়ে চাষ করে আসছেন। সেই নিয়ে গন্ডগোলের জেরেই যজ্ঞ দত্তের লোকজন গুলি চালায়, যাতে দশ জনের মৃত্যু হয়। আদিত্যনাথ এ দিন আশ্বাস দেন, ওই জমিতে যে সব আদিবাসী চাষ করছিলেন তাঁরাই করবেন। নিহত ও আহতদের বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশ্বাস-ও মিলেছে। আদিত্যনাথের কটাক্ষের পর অবশ্য টুইটারে সরব হন প্রিয়াঙ্কা। লেখেন, ‘ন্যায়বিচারের জন্য কংগ্রেস কর্মীদের দাবিদাওয়ার পরই সরকার বুঝেছে বিষয়টি ঠিক কতটা গুরুতর। আশা করব, সরকার যে সব ঘোষণা করেছে তা পূরণ করবে। আদিবাসীদের জমির মালিকানা পাওয়া উচিত।
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা ও এইসময়, ২২/০৭/২০১৯।