বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশে ধুতি, চাদর, উত্তরীয় দিয়ে জেলার আদিবাসী সমাজ প্রধান ‘মাঝি’-দের সংবর্ধনা জানাবে
তৃণমূল কংগ্রেস। গীতাঞ্জলী প্রকল্পে প্রতি গ্রামে বরাদ্দ বাড়ির ৫০ শতাংশ আদিবাসীদের
দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে নির্দেশ দেবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেস তাদের দলীয়
বিধায়কদের নির্দেশ দেবেন, তাঁদের বিধায়ক তহবিলের টাকায় গ্রামে আদিবাসীদের পুজোর স্থান
‘জাহের থান’-কে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা আদিবাসী সেলের সঙ্গে
বৈঠক করে এই পদক্ষেপগুলির ঘোষণা করেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত
মণ্ডল। বোলপুরে ওই বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘আদিবাসীরা দেশ স্বাধীন করার জন্য লড়াই
করেছেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্ত তাঁদের কেউ মনে রাখেনি। আমরা প্রথম তাদের সম্মান
দিতে চলেছি।’তাঁর বক্তব্য, ‘আদিবাসীদের বাড়ি কম দেওয়া
হয়েছে। সেটা দেখতে হবে। প্রত্যেক ব্লক সভাপতিকে বলছি, প্রতিটি ব্লক যা বাড়ি পাবে, তার
৫০ শতাংশ যেন আদিবাসীদের জন্য রাখা হয়।’
তবে শুধু ধুতি-পাঞ্জাবির উপহার, আর জাহের থান বাঁধিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে খুশি
হচ্ছেন না আদিবাসী সমাজ। তাঁরা আদিবাসী সমাজ প্রধান তথা ‘মাঝি’-দের ভাতা দেওয়ার দাবি
তুলেছেন। বীরভূম জেলার আদিবাসী সংগঠন ‘বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা’-র নেতা সুনীল সোরেন বলেন,
‘পঞ্চায়েত ভোটে আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক যেভাবে বিজেপির দিকে গিয়েছে, তাতে আতঙ্কিত হয়ে
এখন শাসকদলের আদিবাসী প্রীতি জেগে উঠেছে। বামফ্রন্ট আমলে বঞ্চিত হয়ে আদিবাসীরা ৭ বছর
আগে তৃণমূলকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্ত তৃণমূল কিছু করেনি। তাই আদিবাসীরা এখন একজোট হচ্ছেন।
এই সব সংবর্ধনার প্রলোভনে আদিবাসীরা আর ভুলবে না। সত্যিই কিছু করতে হলে আমরা চাই ‘মাঝি’-দের
ন্যায্য ভাতা দেওয়া হোক।’
বীরভুমের পাথর খাদান এলাকায় শালবাদরা গ্রামের ‘মাঝি’ লক্ষ্মীরাম হেমব্রম বলেন,
‘সাত বছর পর আমাদের কথা মনে পড়েছে। সংবর্ধনা দিলে ভালো। কিন্ত আমরা ভাতা চাই।’রামপুরহাট থানার শালতলা গ্রামের ‘মাঝি’ লাল মুর্মু বলেন, ‘সরকার
এতদিন আদিবাসীদের উপেক্ষা করেছে। মাঝিদের জন্য কিছু করেনি। এখন এত দরদ কেন। আমরা একজোট
হয়ে বলছি, দিতে হলে আমাদের ভাতা দেওয়া হোক।’ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে যে ২৩ শতাংশ
আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে মহম্মদবাজার-সহ বেশ কিছু আদিবাসী এলাকা ছিল। সেখানে কোথাও
কোথাও ভোটের ফল তৃণমূলের পক্ষে ততটা ভালো হয়নি।
যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভোটের সঙ্গে মাঝিদের সংবর্ধনা দেওয়ার
কোনও সম্পর্ক নেই। বোলপুরে রবিবার তৃণমূলের দপ্তরে যে বৈঠক হয়েছে, তাতে অনেক আদিবাসী
নেতা উপস্থিত ছিলেন। রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকেই অনুব্রত মণ্ডল ঘোষণা করেন, আদিবাসী মাঝিদের
নিয়ে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে খুব শিগগিরই একটি সম্মেলন করা হবে। সেই সম্মেলন থেকে প্রায়
৩,৫০০ আদিবাসী ‘মাঝি’-কে উত্তরীয়, পাঞ্জাবি ও ধুতি দিয়ে সম্মান জানানো হবে। পাশাপাশি,
জেলার প্রতিটি আদিবাসী গ্রামে এক কাঠা করে সরকারি জমি দেওয়া হবে। সেই জমিতে আদিবাসীদের
দেবতার থান বাঁধানোর জন্য এলাকার বিধায়কের তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হবে। অনুব্রত জানান,
বীরভূমের ১৯ টি ব্লক ও সব ক’টি পুর এলাকায় পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম, কেতুগ্রামের ‘মাঝি’-দের ডেকেও
সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আদিবাসী সমাজের পাশে থাকতে চাই।’
আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, তাঁদের প্রতিটি গ্রামে একটি করে ‘জাহের থান’ গড়তে
এক কাঠা করে জমি লাগবে। ‘জাহের থান’আদিবাসীদের উপাসনাস্থল। তাঁদের সেই দাবি পূরণ করেন শাসক দলের জেলা সভাপতি। দলের
বিধায়কদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, জায়গা নির্বাচন হয়ে গেলে সেই জায়গা যেন ঠিক করে ঘিরে
দেওয়া হয়।
এই ঘোষণায় আনন্দিত বীরভূম জেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা
আদিবাসী সেলের সভাপতি সুনীল টুডু এবং সম্পাদক রবিন মুর্মূ বলেন, ‘‘এই সরকার আমাদের
জন্য যা ভেবেছে, এর আগে কোনও সরকার ভাবেনি। আজ আবারও তা প্রমাণ হল।”
আদিবাসীদের শ্মশানের অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। অনুব্রত
মণ্ডল বলেন, ‘‘যেখানে যেখানে এ রকম সমস্যা হয়েছে, সেখানকার ব্লক সভাপতিকে বিষয়টি জানাতে
হবে। জবরদখল মুক্ত করা হবে শ্মশানগুলিকে। জবরদখলকারী যদি ব্লক সভাপতি নিজেও হন, তাঁকেও
রেয়াত করা হবে না।” তিনি আরও বলেন, ‘‘সামান্য এক কাঠা জমি চেয়েছিলেন। সেটা পূরণ না
করলে হবে!’’ তিনি জানান, আদিবাসী সম্প্রদায়ের কৃতীদের সংবর্ধনায় একটি করে ধুতি, কুর্তা,
পাগড়ি বাঁধার কাপড় এবং মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া হবে।
সুত্র – আনন্দবাজার পত্রিকা ও এই সময়, ২৭/০৮/২০১৮।
No comments:
Post a Comment