Thursday, August 30, 2018

আদিবাসী নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে৷


বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে বন্ধুদের সাথে মিলে গণধর্ষণের অভিযোগ আদিবাসী নাবালিকাকে।

আদিবাসী নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে৷ খড়গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত কয়তা গ্রামের ওই নাবালিকাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে গিয়ে গ্রামের পাশে একটি পাম্প হাউসে আটকে রাখা হয়েছিল৷ রাজু মান্ডি নামে এক ব্যক্তি নাবালিকাকে সেখানে তিনদিন আটকে রাখে। ৬ বন্ধু মিলে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ৷ ৯ অগস্ট সকালে গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তার পাশে অচৈতন্য অবস্থায় ওই নাবালিকাকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দিয়ে উদ্ধার করে৷ অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ৪ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে৷
খড়গপুরের ২ নম্বর ব্লকের কয়তা গ্রামের এক আদিবাসী নাবালিকাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬ অগস্ট, ২০১৮ বাড়ি থেকে নিয়ে যায় ওই গ্রামের বাসিন্দা রাজু মান্ডি৷ রাজুর সঙ্গে ওই নাবালিকার পুরনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয়রা জানান৷ ৬ তারিখ থেকে মেয়েকে নিখোঁজ দেখে আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ করছিলেন ওই নাবালিকার মা৷ কোথাও কেউ তাঁর সন্ধান দিতে পারছিলেন না৷ এর পরে ৮ অগস্ট খড়গপুর গ্রামীণ থানাতে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন তিনি৷ পুলিশও খোঁজ শুরু করে৷ এরই মাঝে ৯ অগস্ট গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে ওই নাবালিকাকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা৷ গ্রামবাসীদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে৷ সেখানে পুলিশের কাছে ওই নাবালিকা সমস্ত কিছু খুলে বলে৷
ওই নাবালিকা পুলিশকে জানায়, পুরনো প্রেমের সম্পর্ক থেকেই রাজু মান্ডি তাঁকে বিয়ে করবে বলে ডেকেছিল৷ সেই মতো ৬ অগস্ট রাজুর সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল বাড়ি থেকে৷ রাজু সন্ধার সময়‌ে গ্রামের পাশে একটি পাম্প হাউসে তাঁকে নিয়ে ওঠে৷ সেখানে রাতে তাঁকে ধর্ষণ করে৷ পরে আরও ৫ বন্ধু মিলে তাকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ৷ সেদিন থেকেই তিন দিন ধরে ওই পাম্প হাউসে তাকে আটকে রেখে গণধর্ষণ চালায় ৬ জন আদিবাসী যুবক৷ পরে ওই নাবালিকার পরিস্থিতি খারাপ মনে হওয়াতে রাস্তার পাশে ফেলে পালায় তারা৷ ওই নাবালিকার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাজু মান্ডি-সহ চর যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ বাকি দুজন অভিযুক্ত ফেরার৷
সৌজন্য - এবেলা.ইন, ১১ অগস্ট, ২০১৮।

বীরভূম জেলার আবাসিক স্কুলে শিক্ষার নামে আদিবাসী নাবালক ছাত্রদের বেদম মারধরের অভিযোগ, প্রতিবাদ স্থানীয় বাসিন্দাদের।


আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা সামাজিক উন্নয়নে কেন্দ্রের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক বিদ্যালয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলে তাদের আর্থিক সাহায্য করছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই রকমেই এক বিদ্যালয়েই শারীরিক অত্যাচারের শিকার আদিবাসী শিশুরাঘটনাটি বোলপুরের মির্জাপুরের বিবেকানন্দ এডুকেশনাল কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল ইনস্টিটিউটনামের এক বেসরকারি বিদ্যালয়ে। এখানে শিশুদের গরুর গোয়াল পরিষ্কার, বালি সিমেন্ট মাখানোর কাজ করানো হচ্ছে। এমনকী, লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে বাচ্চাদের। পুরো বিষয়টির ভিডিও সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের সম্পাদক শৈলেন্দ্রনাথ ডিঙ্গল শিশুদের মারধরের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, তিনি স্থানীয় শাসক দলের রাজনীতির শিকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে ১৩ নভেম্বর মির্জাপুরে বিবেকানন্দ  এডুকেশনাল কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল ইনস্টিটিউটবিদ্যালয়ের উদ্বোধন হয়। বর্তমানে এখানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আদিবাসী শিশুদের ইংরেজি মাধ্যামে পড়ানো হয়। ১৯০ জন ছাত্র রয়েছে এবং ২৩ জন স্থায়ী-অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই আদিবাসী শিশুদের পারিবারিক এবং আর্থিক অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বিদ্যালয়ের ভিতর বিভিন্ন ধরনের কাজ করানো হয়।
সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাচ্চারা গরুর গোয়াল ঘর পরিষ্কারের কাজ করছে। কয়েকটি বাচ্চা বালি-সিমেন্ট মাখাচ্ছে। সব থেকে নির্মম অত্যাচার, ৮-১০ জন বাচ্চাকে পরপর সারি দিয়ে দাঁড় করিয়ে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। বাচ্চারা অনেকেই চিৎকার করছে। আর এই কাজ করছেন বিদ্যালয়ের সম্পাদক শৈলেন্দ্রনাথ ডিঙ্গল।
এদিকে এই বিষয়টি সামনে আসতেই  ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসী আনন্দ গোপাল রক্ষিত বলেন, ‘‘বাচ্চাদের পরিমাণ মতো খাবার দেওয়া হয় না। বিভিন্ন কাজ করানো হয়, না করলেই মার। ছোট ছোট বাচ্চাগুলি প্রাণের ভয়ে চিৎকার করতে পারে না।’’
স্থানীয় আদিবাসী নেতা ভিম কিসকু বলেন, ‘‘বিদ্যালয় যখন তৈরি হয়, তখন শুনেছিলাম অনাথ আদিবাসী বাচ্চাদের পড়ানো হবে। কিন্তু এখন দেখছি বাচ্চাদের মারধর করা হচ্ছে, কাজ করানো হচ্ছে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।’’
অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের সম্পাদক শৈলেন্দ্রনাথ ডিঙ্গল বলেন, ‘‘বাচ্চারা দুষ্টমি করেছিল। তাই তাদের একটু মারধর করা হয়েছে। গোপনে সেই ছবি তোলা হয়েছে। আমি তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠীর রাজনীতির শিকার।’’
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মৎস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ প্রথম থেকে এই বিদ্যলয়কে সাহায্য করেছেন। সম্প্রতি তিনি ৫ বিঘা জমি বিদ্যালয়কে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তার পর থেকেই এই আশ্রম দখলের চেষ্টা চলছে।
বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোধারা বলেন, পুরো বিষয়টি শুনেছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার ভিডিও লিংক –
সৌজন্য – এবেলা, ২০/০৮/২০১৮। 

Wednesday, August 29, 2018

ছত্তিসগড়ে মাওবাদী দমনের নামে সাধারণ আদিবাসী খুনের অভিযোগ।

গত ৬ অগস্ট, ২০১৮ কাকভোরে ছত্তিসগড়ের গোম্পদে ১৫ জন মাওবাদীকে গুলি করে খতম করার খবর পাওয়া জায়। জঙ্গলে অভিজান চালিয়ে মাওবাদীদের গুলির লড়াইয়ে খতম করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। খবরটা এ ভাবেই এসেছিল। মাও-সন্ত্রাস দমনে ছত্তিসগড় পুলিশের সাফল্যেঅভিভূত হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু, যত সময় যাচ্ছে ততই প্রকট হয়ে পড়ছে এই মাওবাদী দমন-অভিযানের আসল চেহারাটা। আদিবাসী এই গ্রামের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সেই সকালে কোন মাওবাদীদের শেষ করেছিল পুলিশ!
পাঁচ মাওবাদীর তো ১৮ বছর বয়সই হয়নি। আরেক মাওবাদীর বয়স আরও কম, ১২! ছত্তিসগড় পুলিশের দাবি অনুযায়ী, এরাই জড়ো হয়েছিলেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে। গ্রামবাসীদের দাবি, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র নয়, ওই রাতে চাষের জমির কাছে খাটিয়া বিছিয়ে একসঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁরা। ভোরে ওই ঘুমন্ত আদিবাসী মানুষগুলোর উপরই নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। সংসারের একমাত্র রোজগেরে খুঁটি, তাঁর ১৭ বছরের ছেলেকে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মুচাকি লাকমা। সেই সকালের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গ্রামের অন্য এক বাসিন্দা জানান, ঘটনার পর একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গ্রামে এসেছিল। মানবাধিকার কর্মী থেকে সমাজকর্মী, অনেকেই ছিলেন ওই দলে। কিন্তু, দলটি গ্রামে ঢোকার আগেই পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের জঙ্গলে পাঠিয়ে দেয়। তাঁদের শাসিয়ে বলা হয়, মানবাধিকার কর্মী কিংবা সাংবাদিক, কারও সঙ্গেই যেন গ্রামবাসীরা কথা না বলেন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জঙ্গলেই ঘুরে বেড়াতে হয় অসহায় মানুষগুলোকে। তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেই ফিরে যেতে হয় কমিটিকে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে।
আদিবাসী গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ঘটনার দুদিন আগে গ্রামে আসে পুলিশের বিরাট বাহিনী। গ্রামের রীতি হল, পুরুষেরা হয় চাষের জমির কাছে তৈরি অস্থায়ী ছাউনিতে থাকেন, না হলে পাশের গ্রামে কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে। সে দিনও পরিস্থিতি তেমনই ছিল। পরের দিন কয়েকজন গ্রামে ফিরে পুলিশ দেখে আবার ওই চাউনিতে চলে যান। ৬ তারিখ গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামের। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, তাঁরা ছাউনির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সরিয়ে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এমনকী, দেহ পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে ময়নাতদন্তের পর নিজেদেরই ব্যবস্থা করে মৃতদেহ ঘরে ফেরাতে হয় গ্রামবাসীদের। তাতেও প্রশাসন কোনও সাহায্য করেনি বলেই অভিযোগ। নিহত সোয়াম চন্দ্রর বাড়ির লোকের দাবি, নিজেকে পঞ্চায়েতের সদস্য পরিচয় দিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারেননি সোয়াম।
ঘটনা হল, এই অভিযানের পরই প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের মাওবাদী তত্ত্ব ঘিরে। কংগ্রেস বিধায়ক কাওয়াসি লাখমা দাবি করেছিলেন, ‘নিহত ১৫ জনই সাধারণ গ্রামবাসী। বিজেপি সরকার নিরীহ আদিবাসীদের হত্যা করছে।কড়া প্রতিক্রিয়ায় তখন বিজেপি বলেছিল, এমন কথা বলে নিরাপত্তা বাহিনীর কৃতিত্বকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস। কিন্তু, এবার সেই কথাই শোনা গেল গ্রামবাসীদের মুখে। রক্তাক্ত নাল্কটং এখন বিচারের অপেক্ষায়।
সংবাদ ও ছবি সৌজন্য – এই সময়, ৩০/০৮/২০১৮।
খবরের লিংক -

ঝাড়খণ্ড পিপলস পার্টি (Jharkhand Peoples Party - JPP) – এর দাবিপত্র পেশ।


বাঁকুড়ার খাতরা কলেজ কতৃপক্ষের কাছে দাবিপত্র পেশ করল ঝাড়খণ্ড পিপলস পার্টি (Jharkhand Peoples Party - JPP) – এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।
দাবিগুলি -  
১) আদিবাসী মহাকবি সাধু রাম চাঁদ মুরমুর মূর্তি স্থাপন,
২) কলেজের একটি ভবনকে স্বাধীনতা সংগ্রামী “বাবা তিলকা মুরমু”-র নামে নামাঙ্কিত করতে হবে,
৩) মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর নায়ক “সিধু মুরমু ও কানহু মুরমু” –র প্রতি সন্মান প্রদর্শন করতে হবে।

Tuesday, August 28, 2018

বীরভূম জেলার রামপুরহাটে আদিবাসী পরিবারকে গ্রামে ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ।

গ্রামছাড়া এক আদিবাসী পরিবারকে ফেরানোর দাবিতে গত মঙ্গলবার ২৮/০৮/২০১৮ দুপুরে রামপুরহাটের ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পাথর শিল্পাঞ্চলের চাদনি গ্রামে অবস্থান-বিক্ষোভ ও মিছিল করে এলাকার শতাধিক আদিবাসী। মিছিলে ছিলেন বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার কনভেনর সুনীল সোরেন। তিনি বলেন, বাইকা সোরেনের বিরুদ্ধে তোলাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। এমনকী তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। তাই এলাকাবাসীর সঙ্গে এই আন্দোলনে শামিল হয়েছি।
জানা গিয়েছে, পাথর লোড করতে আসা গাড়ির চালকদের কাছ থেকে জোর করে দীর্ঘদিন ধরে তোলা আদায় করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তোলা না দেওয়ায় শিল্পাঞ্চলে যাওয়ার রাস্তায় ঠাকুরপুরা গ্রামের কাছে বাঁশ পুঁতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এলাকার বাসিন্দা বাইকা সোরেন ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে শিল্পাঞ্চল। কর্মহীন হন কয়েক হাজার শ্রমিক। মাস তিনেক আগে বাইকাকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। পরে তিনি জামিন পান। বাইকার বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। প্রাণভয়ে গ্রামছাড়া হন বাইকা ও তাঁর পরিবার। এদিন চাঁদনি গ্রামে অবস্থান-বিক্ষোভে ওই পরিবারকে গ্রামে ফেরানোর দাবি জানান এলাকার আদিবাসীরা।
বিক্ষোভের জেরে এদিন বিকেলে রামপুরহাট-১-এর বিডিও নীতীশ বালা ও রামপুরহাট থানার আইসি সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে বৃহস্পতিবার সবপক্ষকে নিয়ে এসডিও অফিসে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। বিডিও বলেন, দ্রুত সবপক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
সৌজন্য – বর্তমান, দক্ষিণবঙ্গ পাতা, ২৯/০৮/২০১৮।

দলিত-আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষায় কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দে বঞ্চনা কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের।

অতি বিলম্বে, অতি সামান্য। দলিত-আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের অনুদান দিবার ইহাই যেন নীতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের। সংবাদে প্রকাশ, ২০১৫ সাল হইতে পর পর তিন বৎসর তফসিলি জনজাতির জন্য উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বৃত্তি দেওয়া হয় নাই। ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর নামাঙ্কিত ওই বৃত্তিটির নাম পরিবর্তন করিয়া গত বৎসর ফের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু যত জনকে বৃত্তি দিবার ঘোষণা ছিল, তালিকায় নাম উঠিয়াছে তাহার অর্ধেকের। বৃত্তি পাইবার আশায় যাঁহারা ইতিমধ্যে গবেষণা শুরু করিয়াছিলেন, তাঁহাদের অধিকাংশই নিরাশ হইয়াছেন। অনেকেই গবেষণা সম্পূর্ণ করিতে পারিবেন না, তাহা প্রায় নিশ্চিত। মোদীর শাসনকালে দলিত-আদিবাসীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে সরকারের কার্পণ্য ও দীর্ঘসূত্রিতা লইয়া বারংবার অভিযোগ উঠিয়াছে। দলিত-আদিবাসীদের উন্নয়ন ও সামাজিক সহায়তার বরাদ্দ পড়িয়া আছে, অথচ সেই অর্থ তাঁহাদের নিকট পৌঁছাইতে সরকার ব্যর্থ। ‘পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপখাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রাখিয়াছে কেন্দ্র। সামাজিক ন্যায় ও সক্ষমতা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট অনুসারে, ওই খাতে আট হাজার কোটি টাকারও অধিক বকেয়া রহিয়াছে কেন্দ্রের। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, দলিত ও আদিবাসী মিলিয়া দরিদ্রতম ছাত্রদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তির খাতে তিন বৎসরে বকেয়া ছাড়াইয়াছে তেরো হাজার কোটি টাকা। ‘প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপলইয়াও একই অভিযোগ। দলিতদের ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশও রাজ্যগুলিকে পাঠায় নাই কেন্দ্র। এই হিসাব গত আর্থিক বৎসরের।
কিন্তু অর্থের অঙ্ক দিয়া ক্ষতির হিসাব করিয়া লাভ কী? প্রকৃত ক্ষতি মানবসম্পদের অপচয়ে। দলিত-আদিবাসীরা সমাজের দরিদ্রতম দুই বর্গ। সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করিতে হইলে যে দীর্ঘ বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাহা জোগান দিবার সামর্থ্য অধিকাংশ দলিত-আদিবাসী পরিবারের নাই। তাহা স্পষ্ট হইয়াছে ২০১১ সালের জনগণনার ফলেও। দলিতদের মধ্যে স্নাতকের হার দেশের গড় হারের অর্ধেক, আদিবাসীদের মধ্যে তাহার চাইতেও কম। দুই সম্প্রদায়েই তরুণীদের মধ্যে সে হার আরও সামান্য। নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, দলিত-আদিবাসী ছাত্রদের অধিকাংশই আসে গ্রাম হইতে, তাহারা পড়াশোনা করে ভারতীয় ভাষায়। স্বভাবতই, উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করিতে হইলে নানা প্রকার সহায়তা তাহাদের একান্ত প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলিত-আদিবাসী ছাত্রদের জন্য সংরক্ষণ নূতন সুযোগ তৈরি করিয়াছে, কিন্তু সরকারি অসহযোগিতা ও সামাজিক অমর্যাদা তাহাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করিতেছে। ২০১৬ সালে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা সেই বঞ্চনা ও অমর্যাদার পরিণাম। কত দলিত ছাত্রের এই পরিণাম হইয়াছে, কেন হইতেছে, তাহাদের কী সহায়তা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সরকারি তরফে অনুসন্ধান করিয়া রিপোর্টও জমা পড়িয়াছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সরকারের যাহা ন্যূনতম কর্তব্য, ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্য সহায়তা যথাসময়ে তাহাদের নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া, সে কাজটুকু করিতে সরকার ব্যর্থ। অপর দিকে, দূরশিক্ষার সুযোগকে সঙ্কুচিত করিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইহা নিঃসন্দেহে দরিদ্র ও প্রান্তবাসী ছাত্রছাত্রীদের সর্বাধিক বিপন্ন করিবে। শিক্ষায় সংস্কার আনিতে হইবে ঠিকই, কিন্তু এই কি তাহার উপায়? ভারতে দরিদ্রের উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রসারিত হইবার পরিবর্তে সঙ্কুচিত হইতেছে। তফসিলি জাতি ও জনজাতির প্রতি মোদী সরকারের বঞ্চনা বহুমুখী। কিন্তু শিক্ষাবঞ্চনার ফল দেশের পক্ষে সর্বাধিক সুদূরপ্রসারী হইবে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮/০৮/২০১৮।

সমবায়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের।


সমবায়ের মাধ্যমে অভাবী মানুষকে উপার্জনের পথ করে দিতে বদ্ধপরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলিকে ধান সংগ্রহের কাজে নামিয়ে ব্যাপক সুফল মিলেছে। এ বার সমবায়ের মাধ্যমে এক লক্ষ পরিবারের একজন মহিলাকে পশুপালনের জন্য ১৮ হাজার টাকা করে ঋণ দেবে সরকার। অন্য দিকে, ধানের অভাবী বিক্রি বন্ধ করতে খরিফ মরসুমে সমবায়গুলিকে নিয়ে সরকার কোমর বেঁধে নামছে। গত সোমবার ২৭/০৮/২০১৮ কলকাতার নজরুল মঞ্চে এক আলোচনাসভায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় এবং রাজ্য খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁদের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
রাজ্যের বিভিন্ন সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির হাজার তিনেক সদস্য এসেছিলেন। সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘এক লক্ষ পরিবারকে সমবায় সমিতির মাধ্যমে ১৮ হাজার টাকা করে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে। ওই টাকায় হাঁস-মুরগি, ছাগল কিনে প্রতিপালনের জন্য।এই পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে অরূপ বাবু বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই স্বামীজির ওই কথাটি বলেন, না-জাগিলে ভারত ললনা এ ভারত জাগে না। গাঁয়েগঞ্জে প্রকৃত অভাবী পরিবারের মহিলাদের এই ঋণ দেওয়া হবে। হাঁস-মুরগি-ছাগল পালন করে এক জন মহিলা অন্তত সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা মাসে আয় করতে পারবেন বলে আমাদের আশা। মহিলারা নিয়মিত আয় করলে তার সুফল সুদূরপ্রসারী। এই প্রকল্প অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। একটি পরিবারের এক জন মহিলাকে অনুদান দেওয়া হবে।
রাজ্যে এখন সমবায়গুলির আওতায় প্রায় ২ লক্ষ ১৮ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে ২০ লক্ষেরও বেশি মহিলা সদস্য আছেন। গত সাত বছরে গ্রামীণ অর্থনীতিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মহিলাদের অবদান অনস্বীকার্য। ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০০ সমবায়কে কৃষি-যন্ত্রপাতি কিনে দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই ‘কৃষি-যন্ত্রপাতি হাবথেকে কম ভাড়ায় কৃষকরা চাষের যন্ত্র পাবেন।
এই মঞ্চেই খাদ্যমন্ত্রী জানান, ১ নভেম্বর থেকে (মূলত কালীপুজোর আগে থেকেই) ধান সংগ্রহ করতে নামছে সরকার। তাঁর কথায়, ‘বাংলায় এখন আর অভাবী বিক্রি হয় না। এই বছর ধান কেনার জন্য তিন হাজার সমবায় সমিতিকে আমরা মাঠে নামানোর টার্গেট করেছি।তবে কেন্দ্রীয় অসহযোগিতা এখনও অব্যাহত বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘মিড ডে মিলের জন্য এফসিআই চাল নিয়েছে অথচ দুবছর ধরে কেন্দ্র একটা টাকাও দেয়নি। ৩০০ কোটি টাকা পাই। একবার কেন্দ্রীয় খাদ্য দপ্তরের কাছে বিল পাঠাই। একবার এফসিআইয়ের কাছে বিল পাঠাই। গত বছরও চাল দিয়েছি। এই বছরও দিচ্ছি। চাইলে আরও চাল দেব। কিন্তু টাকা তো এখনও দিচ্ছে না। কেন্দ্র বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সমবায় মন্ত্রী জানিয়েছেন, কয়েকটা রাইস মিল ধান কিনে চাল ফেরত দিচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই মঞ্চেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘বাংলার চাষিদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজকে দিল্লিও মেনে নিয়েছে।কেন্দ্র এ রাজ্যর ধান কেনার পদ্ধতিকে ‘রোল মডেলকরছে বলে দাবি খাদ্যমন্ত্রীর। আলোচনাসভায় উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, ‘শাক-সব্জি সংরক্ষণের ব্যবস্থা ঠিক মতো নেই। চাষিরা সঠিক ভাবে জানে না কোথায় রাখতে হবে। সেখানে ফড়েরা সব নিয়ে চলে যাচ্ছে। তাই সমবায়ের মাধ্যমে ধান সংগ্রহের যেমন ব্যবস্থা করা গিয়েছে, সেই রকম ভাবে যদি আলু, টম্যাটো, পান, উচ্ছে-সহ অন্য শাক-সব্জি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় সেটা দেখা হোক। সংরক্ষণের অভাবে শাক-সব্জি নষ্ট হয়ে যায় বছর বছর।

এক নজরে –
�� রাজ্যের এক লক্ষ মহিলাকে ১৮,০০০ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। হাঁস, মুরগি-ছাগল প্রতিপালন করার জন্য।
�� অর্থসাহায্য দেওয়া হচ্ছে দুহাজার সমবায়কে। সব মিলিয়ে ১০০০ কোটি টাকার প্রকল্প--- ‘কৃষি যন্ত্রপাতি হাব’।
�� ১ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহ করতে নামছে সরকার। ধান কেনার জন্য তিন হাজার সমবায় সমিতিকে নামাতে চলেছে রাজ্য।
সৌজন্য – এই সময়, ২৮/০৮/২০১৮।

Monday, August 27, 2018

ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটি গঠন।





গত রবিবার ২৫/০৮/২০১৮ মেদিনীপুর শহরে এক আলোচনার মাধ্যমে "ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া"-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটি গঠন কর্মসূচি সম্পন্ন হল। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিশম মাঝি মানতান পূর্ণচন্দ্র সরেন, দিশম গোডেৎ মানতান সলিল মান্ডি, দিশম পারানিক মানতান মানু হাঁসদা, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মানতান প্রদীপ কুমার হাঁসদা, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মানতান কার্ত্তিক হাঁসদা, রাজ্য সভাপতি মানতান পিকু মান্ডি, ঝাড়গ্রাম জেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত মানতান রূপচাঁদ সরেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বীরভূম জেলায় আদিবাসী সমাজের প্রধান ‘মাঝি’-দের সংবর্ধনা ও উপাসনাস্থল ‘জাহের থান’ নির্মাণ করবে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস।


বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশে ধুতি, চাদর, উত্তরীয় দিয়ে জেলার আদিবাসী সমাজ প্রধান ‘মাঝি’-দের সংবর্ধনা জানাবে তৃণমূল কংগ্রেস। গীতাঞ্জলী প্রকল্পে প্রতি গ্রামে বরাদ্দ বাড়ির ৫০ শতাংশ আদিবাসীদের দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে নির্দেশ দেবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেস তাদের দলীয় বিধায়কদের নির্দেশ দেবেন, তাঁদের বিধায়ক তহবিলের টাকায় গ্রামে আদিবাসীদের পুজোর স্থান ‘জাহের থান’-কে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা আদিবাসী সেলের সঙ্গে বৈঠক করে এই পদক্ষেপগুলির ঘোষণা করেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বোলপুরে ওই বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘আদিবাসীরা দেশ স্বাধীন করার জন্য লড়াই করেছেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্ত তাঁদের কেউ মনে রাখেনি। আমরা প্রথম তাদের সম্মান দিতে চলেছি।তাঁর বক্তব্য, ‘আদিবাসীদের বাড়ি কম দেওয়া হয়েছে। সেটা দেখতে হবে। প্রত্যেক ব্লক সভাপতিকে বলছি, প্রতিটি ব্লক যা বাড়ি পাবে, তার ৫০ শতাংশ যেন আদিবাসীদের জন্য রাখা হয়।
তবে শুধু ধুতি-পাঞ্জাবির উপহার, আর জাহের থান বাঁধিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে খুশি হচ্ছেন না আদিবাসী সমাজ। তাঁরা আদিবাসী সমাজ প্রধান তথা ‘মাঝি’-দের ভাতা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। বীরভূম জেলার আদিবাসী সংগঠন ‘বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা’-র নেতা সুনীল সোরেন বলেন, ‘পঞ্চায়েত ভোটে আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক যেভাবে বিজেপির দিকে গিয়েছে, তাতে আতঙ্কিত হয়ে এখন শাসকদলের আদিবাসী প্রীতি জেগে উঠেছে। বামফ্রন্ট আমলে বঞ্চিত হয়ে আদিবাসীরা ৭ বছর আগে তৃণমূলকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্ত তৃণমূল কিছু করেনি। তাই আদিবাসীরা এখন একজোট হচ্ছেন। এই সব সংবর্ধনার প্রলোভনে আদিবাসীরা আর ভুলবে না। সত্যিই কিছু করতে হলে আমরা চাই ‘মাঝি’-দের ন্যায্য ভাতা দেওয়া হোক।
বীরভুমের পাথর খাদান এলাকায় শালবাদরা গ্রামের ‘মাঝি’ লক্ষ্মীরাম হেমব্রম বলেন, ‘সাত বছর পর আমাদের কথা মনে পড়েছে। সংবর্ধনা দিলে ভালো। কিন্ত আমরা ভাতা চাই।রামপুরহাট থানার শালতলা গ্রামের ‘মাঝি’ লাল মুর্মু বলেন, ‘সরকার এতদিন আদিবাসীদের উপেক্ষা করেছে। মাঝিদের জন্য কিছু করেনি। এখন এত দরদ কেন। আমরা একজোট হয়ে বলছি, দিতে হলে আমাদের ভাতা দেওয়া হোক।’ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে যে ২৩ শতাংশ আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে মহম্মদবাজার-সহ বেশ কিছু আদিবাসী এলাকা ছিল। সেখানে কোথাও কোথাও ভোটের ফল তৃণমূলের পক্ষে ততটা ভালো হয়নি।
যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভোটের সঙ্গে মাঝিদের সংবর্ধনা দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। বোলপুরে রবিবার তৃণমূলের দপ্তরে যে বৈঠক হয়েছে, তাতে অনেক আদিবাসী নেতা উপস্থিত ছিলেন। রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকেই অনুব্রত মণ্ডল ঘোষণা করেন, আদিবাসী মাঝিদের নিয়ে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে খুব শিগগিরই একটি সম্মেলন করা হবে। সেই সম্মেলন থেকে প্রায় ৩,৫০০ আদিবাসী ‘মাঝি’-কে উত্তরীয়, পাঞ্জাবি ও ধুতি দিয়ে সম্মান জানানো হবে। পাশাপাশি, জেলার প্রতিটি আদিবাসী গ্রামে এক কাঠা করে সরকারি জমি দেওয়া হবে। সেই জমিতে আদিবাসীদের দেবতার থান বাঁধানোর জন্য এলাকার বিধায়কের তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হবে। অনুব্রত জানান, বীরভূমের ১৯ টি ব্লক ও সব কটি পুর এলাকায় পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম, কেতুগ্রামের ‘মাঝি’-দের ডেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আদিবাসী সমাজের পাশে থাকতে চাই।’
আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, তাঁদের প্রতিটি গ্রামে একটি করে ‘জাহের থান’ গড়তে এক কাঠা করে জমি লাগবে। ‘জাহের থানআদিবাসীদের উপাসনাস্থল। তাঁদের সেই দাবি পূরণ করেন শাসক দলের জেলা সভাপতি। দলের বিধায়কদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, জায়গা নির্বাচন হয়ে গেলে সেই জায়গা যেন ঠিক করে ঘিরে দেওয়া হয়।
এই ঘোষণায় আনন্দিত বীরভূম জেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা আদিবাসী সেলের সভাপতি সুনীল টুডু এবং সম্পাদক রবিন মুর্মূ বলেন, ‘‘এই সরকার আমাদের জন্য যা ভেবেছে, এর আগে কোনও সরকার ভাবেনি। আজ আবারও তা প্রমাণ হল।”
আদিবাসীদের শ্মশানের অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘যেখানে যেখানে এ রকম সমস্যা হয়েছে, সেখানকার ব্লক সভাপতিকে বিষয়টি জানাতে হবে। জবরদখল মুক্ত করা হবে শ্মশানগুলিকে। জবরদখলকারী যদি ব্লক সভাপতি নিজেও হন, তাঁকেও রেয়াত করা হবে না।” তিনি আরও বলেন, ‘‘সামান্য এক কাঠা জমি চেয়েছিলেন। সেটা পূরণ না করলে হবে!’’ তিনি জানান, আদিবাসী সম্প্রদায়ের কৃতীদের সংবর্ধনায় একটি করে ধুতি, কুর্তা, পাগড়ি বাঁধার কাপড় এবং মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া হবে।
সুত্র – আনন্দবাজার পত্রিকা ও এই সময়, ২৭/০৮/২০১৮।

Friday, August 24, 2018

সরকারী চাকরিতে এসসি/এসটি (SC/ST) দের পদোন্নতিতে সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টে।


গত শুক্রবার ২৪ ই আগস্ট ২০১৮ সংরক্ষণ সংক্রান্ত এক মামলায় প্রশ্ন উঠল যে তফশিলি জাতি-উপজাতিরা কি আজীবনই পিছিয়ে থাকবেন? সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় ‘কোটা’ কি যথেষ্ট নয়, যে জীবনভর পদোন্নতিতেও ‘কোটা’ দিয়ে যেতে হবে?
সরকারী চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ‘ক্রিমি লেয়ার’ অর্থাৎ অবস্থাপন্ন তফশিলি জাতি-উপজাতিদের বাদ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েই এ দিন সওয়াল-জবাব চলছিল শীর্ষ আদালতে। পদোন্নতিতে সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল করছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, ইন্দিরা জয়সিং-সহ তাবড় আইনজীবীরা। প্রত্যেকেরই দাবি, বদল আনা হোক ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নাগরাজ রায়ে, কারণ তা এসসি-এসটিদের পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাত বিচারপতির বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চকে দিয়ে এই রায় পুনর্বিবেচনা করানোর পক্ষে তাঁরা।
সওয়াল চলাকালীনই প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, ‘পিছিয়ে পড়ার নিরিখেই চাকরিতে ঢোকার সময় সংরক্ষণ দেওয়া হয়। এতে কারও কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু, কোনও দিক বিচার না করে যে ভাবে একই কারণে এসসি-এসটি কর্মীদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে, এটা উদ্বেগের।’ এর পর বিচারপতিরা বলেন, ‘ধরুন কোনও ব্যক্তি সংরক্ষণের জোরে আইএএস পরীক্ষায় পাশ করলেন, পরে পদোন্নতিতে সংরক্ষণের জেরে সচিব পর্যায়ে উন্নীত হলেন। ওই ধরনের বর্ষীয়ান আমলার নাতিকেও কি পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ধরে নিয়ে আজীবন পদোন্নতিতে সংরক্ষণ দিয়ে যেতে হবে?’
যে নাগরাজ রায় নিয়ে এই মামলা, তার মূল বক্তব্য হল, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত কর্মীদের সংরক্ষণের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া যেতেই পারে কিন্তু কোনও কর্মীকে ‘কোটা’য় ‘প্রোমোশন’ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে তিনটি বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে - প্রথমত ওই কর্মী কতটা পিছিয়ে রয়েছেন, দ্বিতীয়ত ওই চাকরিতে এসসি-এসটি কর্মীর অনুপাত কত, তৃতীয়ত এর জেরে প্রশাসনের সার্বিক মান এবং কর্মক্ষমতায় কোনও প্রভাব পড়বে কি না। এই রায় পুনর্বিবেচনার দাবি নিয়ে আদালতে যায় কেন্দ্র। একই দাবি জানায় তফশিলি জাতি-উপজাতিদের সংগঠনও। তাদের বক্তব্য, কেউ কতটা পিছিয়ে তার কোনও সার্টিফিকেট হয় না। এই বক্তব্যকে সমর্থন করে এ দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল শীর্ষ আদালতে বলেন, কোনও জাতি বা উপজাতিকে একবার ‘পিছিয়ে পড়া’ তালিকায় যুক্ত করা হলে এবং রাষ্ট্রপতি তাতে সিলমোহর দিয়ে দিলে, তাঁদের নতুন করে পিছিয়ে পড়ার প্রমাণ দিতে হয় না। পাল্টা সওয়ালে আইনজীবী শান্তি ভূষণ বলেন, ‘সরকার চাইলে শীর্ষস্থানীয় পদগুলির জন্য সরাসরি বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক চাইতে পারে, সেক্ষেত্রে সংরক্ষণ দেওয়া হোক। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু, শুধুমাত্র সংরক্ষণের নিরিখে শীর্ষপদ বিলি করলে দেশে বিপর্যয় নেমে আসবে।’ শান্তি ভূষণকে সমর্থন করে আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান বলেন, ‘সংরক্ষণ থেকে ধনীদের সরিয়ে রাখা আসলে সাম্যপ্রতিষ্ঠারই নামান্তর। বহু শতাব্দী ধরে যাঁরা বঞ্চনার শিকার নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের ফলে সেই সব মানুষ উপকৃত হন। কিন্তু, চাকরি পাওয়ার পর যাঁরা পিছিয়ে পড়া পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের কখনওই পদোন্নতিতে সংরক্ষণ দেওয়া উচিত নয়।’ আইনজীবী ধাওয়ান তাঁর সওয়ালে আরও বলেন, ‘সংরক্ষণকে অমরত্ব দিয়ে দিলে ভবিষ্যতে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হতে পারে। যে কারণে ওবিসি-রাও এসসি-এসটির মধ্যে সামিল হতে চাইছেন।’ ধাওয়ানের কথায়, ঠিক ভাবে আলোচনা ছাড়াই লোকসভা পদোন্নতিতে সংরক্ষণের বিষয়টি পাশ করে দিয়েছিল। ফলে এ নিয়ে আপত্তি উঠতেই পারে। আগামী সপ্তাহে ফের এ নিয়ে শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।
সৌজন্য – এই সময়, ২৫/০৮/২০১৮।

Thursday, August 23, 2018

মুক্তিধারা প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতীদের উপার্জনের দিশা দেখাতে ৮টি গ্রামকে মডেল ভিলেজ বানাবে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।


মুক্তিধারাপ্রকল্পে পূর্ব বর্ধমান জেলার আটটি গ্রামকে মডেল ভিলেজ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কৃষি, উদ্যানপালন, প্রাণিপালন, মাছ চাষ প্রভৃতি কাজের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং বেকার যুবক-যুবতীদের আয়ের দিশা দেখানোই মূল লক্ষ্য। জেলা স্বনিযুক্তি ও স্বনির্ভর দপ্তরের উদ্যোগে মুক্তিধারা প্রকল্পে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গ্রামে পুরুষ ও মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পাশাপাশি বেকার যুবক-যুবতীরাও কাজ করবেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অফিসারদের ওইসব গ্রামে সমীক্ষা করে একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। ইতিমধ্যে প্রতিটি দপ্তর থেকে সমীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি মহকুমা থেকে দুটি করে গ্রামকে মডেল ভিলেজ তৈরির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। জেলায় চারটি মহকুমায় আটটি গ্রামকে প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত করা হয়েছে। জামালপুর ব্লকের বেড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের সালিমডাঙা, মেমারি-২ ব্লকের বোহার-১ পঞ্চায়েতের মহিষপুর, আউশগ্রাম-১ ব্লকের দিগনগর পঞ্চায়েতের হাটকৃষ্ণপুর, আউশগ্রাম-২ ব্লকের ভাল্কি পঞ্চায়েতের প্রেমগঞ্জ, পূর্বস্থলী-১ ব্লকের দোগাছি পঞ্চায়েতের হরিপুর, মন্তেশ্বর ব্লকের বাঘাসন পঞ্চায়েতের হোসেনপুর, কাটোয়া-১ ব্লকের শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের শ্রীখণ্ড এবং কাটোয়া-২ ব্লকের পলসোনা পঞ্চায়েতের রোণ্ডা গ্রামকে মডেল ভিলেজ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওই আটটি গ্রামকে মডেল ভিলেজ হিসেবে গড়ে তোলার পর আবারও বেশকিছু গ্রামকে বেছে নেওয়া হবে।
বোহার-১ পঞ্চায়েতের মহিষপুর, বাঘাসনের হোসেনপুর, ভাল্কির প্রেমগঞ্জ, কাটোয়া-১-এর শ্রীখণ্ড, পলসোনার রোণ্ডা গ্রামে মাছ চাষে কোনও আগ্রহ নেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের। তবে, বেড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের সালিমডাঙায় ২৫জনকে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। দিগনগর পঞ্চায়েতের হাটশ্রীকৃষ্ণপুরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য দুবিঘা জমি আছে এবং মৎস্যদপ্তর সেখানে সবরকম সহযোগিতায় প্রস্তুত বলে রিপোর্ট দিয়েছে। দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের হরিপুরে অবশ্য মাছের খাবার তৈরির প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে এবং ১০৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
জেলা স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি প্রকল্পের অফিসার ইনচার্জ সৌমনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মহিলা ও পুরুষ স্বনির্ভর দল এবং বেকার যুবক-যুবতীরা কৃষি, প্রাণিপালন, উদ্যানপালন, মাছ চাষ প্রভৃতি কাজে যুক্ত থাকবেন। উপার্জনের পথ তৈরি করাই মুক্তিধারা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন দপ্তরকে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারও এর সঙ্গে যুক্ত। আপাতত চারটি মহকুমা থেকে দুটি করে গ্রামকে বছে নেওয়া হয়েছে। এভাবেই মডেল ভিলেজ তৈরি করা হবে। প্রতিটি দপ্তর থেকে সমীক্ষা করে রিপোর্ট জমা করা হয়েছে। সব গ্রামে সমস্ত দপ্তরের কাজ হবে, এমনটা নয়। সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
সৌজন্য – বর্তমান, ২৩/০৮/২০১৮।

Wednesday, August 22, 2018

উত্তরবঙ্গের আদিবাসী এলাকায় অনুদান ২ কোটি বরাদ্দ করবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর।


পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের গেরোয় আদিবাসী অধ্যুষিত যে সব এলাকার উন্নয়ন থমকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে সাময়িকভাবে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিডিওদের ২ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। এই টাকা দেওয়া হবে দফতরের নিজস্ব তহবিল থেকে। উত্তরকন্যা সূত্রের খবর, আর পাঁচটা ব্লক পিছু ১ কোটি টাকা দিলেও আদিবাসীরা যেখানে সংখ্যায় বেশি রয়েছেন, সেখানে তা দ্বিগুণ দেওয়া হবে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছেন, ‘‘আদিবাসী অধ্যুষিত বেশ কিছু গ্রামে উন্নয়নের কাজে আরও গতি আনা দরকার। যতক্ষণ না পঞ্চায়েত গঠন হচ্ছে, ততক্ষণ বিডিওদের বাড়তি উদ্যোগী হতে হবে। সে জন্য আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লকে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হবে। সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসকদের মাধ্যমে প্রকল্প পেলেই টাকা পৌঁছে যাবে।”
উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহের অন্তত ১১টি ব্লক আদিবাসী অধ্যুষিত। উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারেও বিস্তীর্ণ এলাকায় আদিবাসীদের বসবাস। গত পঞ্চায়েত ভোটে ওই সব এলাকায় তৃণমূল সর্বত্র ভাল ফল করতে পারেনি। বহু জায়গাতেই আদিবাসীরা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। বেশ কয়েকটি এলাকায় তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতলেও মামলার জেরে সেখানে বোর্ড গঠন সম্ভব নয়। অথচ সামনে লোকসভা ভোট রয়েছে। ফলে, উন্নয়ন থমকে থাকা নিয়ে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি জোর প্রচারে নেমেছে।
আদিবাসী অধ্যুষিত হবিবপুর ব্লকের আকতৈল, বৈদ্যপুর, মঙ্গলপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতে পানীয় জলের চরম সমস্যা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের টাকায় পানীয় জলের জন্য সাব মার্সিবাল পাম্প বসাতে উদ্যোগী হয়েছেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। হবিবপুরের জেলা পরিষদের সদস্য প্রভাস চৌধুরী বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সরাসরি ব্লকে টাকা দেওয়ায় কাজে গতি আসবে।”
বিরোধীরা অবশ্য এখনও সমালোচনা করছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির জেলা সভাপতি বিভূতি টুডু বলেন, ‘‘এ সব সিদ্ধান্তই ভোটের কথা মাথায় রেখে।” তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আসনে নতুন করে ভোট দরকার। শুধু বিডিও-র মাধ্যমে উন্নয়ন করার চেষ্টা ঠিক নয়। এতে প্রকৃত উন্নয়ন হবে না। জনপ্রতিনিধিরাই শুধু বোঝেন এলাকার সমস্যা কী ও কোন কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।”
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, কিশোর সাহা, ১৮ অগস্ট, ২০১৮। ছবি - প্রতীকী।

বাংলার আবাস যোজনায় বঞ্চিত যোগ্য উপভোক্তাদের খুঁজে বের করবেন বিডিওরা, আগামী সপ্তাহে শুরু সার্ভে।

পশ্চিম বাংলার আবাস যোজনায় নাম নেই, অথচ ঘর পাওয়ার যোগ্য, গ্রামে গ্রামে এমন উপভোক্তাদের খুঁজে বের করবেন বিডিওরা। আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হচ্ছে এই সার্ভে। সম্প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশে পশ্চিমবাংলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর এমনই একটি নির্দেশিকা জেলায় জেলায় পাঠিয়েছে। সেখানেই এব্যাপারে একটি সার্ভে করতে বলা হয়েছে। এরজন্য ‘অ্যাওয়াস প্লাস’ নামে একটি অ্যাপও চালু করা হয়েছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এর মধ্যে কোন ব্লকে এমন কতজন রয়েছেন তার তালিকা তৈরি করে ফেলতে হবে। এব্যাপারে বিডিওদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সচিব তথা এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রবীর ঘোষ বলেন, নির্দেশিকা পেয়েছি। আগামী সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু হবে। এতে বহু মানুষ উপকৃত হতে চলেছেন। বিডিওদের সার্ভে বা এব্যাপারে তদন্ত করার ব্যাপারে বলা হচ্ছে। তাঁরাই টিম গঠন করে এই কাজ শুরু করবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে সোশিও ইকোনমিক সার্ভে হয়। সেই ভিত্তিতে ২০১৫-’১৬ সালে আবাস যোজনায় উপভোক্তার তালিকা হয়। গ্রামসভায় উপভোক্তার তালিকাগুলি স্বীকৃতিও পায়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সোশিও ইকোনমিক সার্ভে রিপোর্টে নাম থাকা সত্ত্বেও যারা উপভোক্তার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছেন, সঙ্গে যাঁরা সত্যিই বাড়ি পাওয়ার যোগ্য তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ আবেদন করলে তাও খতিয়ে দেখতে হবে, সে যোগ্য কি না। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, সমস্ত বিডিও অফিসেই বহু মানুষ এসে আবেদন করেন। বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের বৈঠকেও বিভিন্ন জেলার কর্তারা বিষয়টি বারবার তুলে ধরেছেন। অবশেষে এর একটা স্থায়ী সমাধান হতে চলেছে।
উল্লেখ্য, ‘বাংলার আবাস যোজনা’য় উপভোক্তা ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পান। এর মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ৪২ হাজার টাকা, পরের কিস্তিতে ৩৪ হাজার টাকা, তৃতীয় কিস্তিতে ৪২ হাজার টাকা এবং শেষ কিস্তিতে ১২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট কাজ পূরণ হয়ে যাওয়ার পরেই এক এক কিস্তির টাকা মেলে। বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ছবি আপলোডও (জিও ট্যাগিং) করতে হয়।
২০২২ সালের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার মতো বাড়ি হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে অথবা কাজে হাত দেওয়া হয়েছে সব মিলিয়ে সেই সংখ্যাটা ৭২ হাজার।
এর সঙ্গে আগামীদিনে নতুন উপভোক্তাদের নামও যুক্ত হতে চলেছে। অ্যাপের মাধ্যমে এই সার্ভে বা তদন্তের কাজ চলবে। সেখানে বেশকিছু বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। যেমন বাড়ির দেওয়ালের প্রকৃতি, ছাদের প্রকৃতি, শৌচালয় আছে কি না, ঘরের সংখ্যা, মোটর সাইকেল, চাষের যন্ত্রপাতি আছে কি না, অ্যানড্রয়েড ফোন কেউ ব্যবহার করে কি না প্রভৃতি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, এই প্রকল্পের প্রাথমিক শর্তই হল কাঁচা বাড়ি হতে হবে। ঘরের সংখ্যা হতে হবে দুই, নিজের জমি থাকতে হবে তবেই মিলবে এই প্রকল্পের সুবিধা। প্রবীরবাবু বলেন, যোগ্য একজনের নামও যাতে বাদ না যায় তা আমরা দেখব। সে রকম নির্দেশ বিডিওদের দেওয়া হয়েছে।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ২২ আগস্ট, ২০১৮। 

Tuesday, August 14, 2018

“ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)”-র পক্ষ থেকে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে দাবিপত্র পেশ।







“ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)”-র পক্ষ থেকে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠিত আদিবাসী উন্নয়ন কোর কমিটির চেয়ারম্যান সাংসদ শ্রী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে দাবিপত্র পেশ।

পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠিত আদিবাসী উন্নয়ন কোর কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ (Member of Parliament) এর নিকট আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন দাবী দাওয়া পেশ করলেন আদিবাসী সামাজিক সংগঠন “ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)”। মঙ্গলবার (14.08.2018) কলকাতায় শ্রী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে এই দাবী দাওয়া পেশ করেন “ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)”-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। “ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)”-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দিশম মাঝি মাননীয় শ্রী পূর্ণচন্দ্র সরেন মহাশয়, দিশম গোডেৎ মাননীয় শ্রী সলিল মান্ডি মহাশয়, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাননীয় শ্রী প্রদীপ কুমার হাঁসদা মহাশয়, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাননীয় শ্রী কার্ত্তিক হাঁসদা মহাশয়, কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মাননীয় শ্রী জগন্নাথ সরেন মহাশয়, মহিলা মোর্চার পক্ষে মাননীয়া শ্রীমতি সুমিতা সরেন, ছাত্র-যুব মোর্চার পক্ষে মাননীয় শ্রী হালি হাঁসদা মহাশয়।
“ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)”-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আদিবাসী উন্নয়ন কোর কমিটির চেয়ারম্যান মাননীয় শ্রী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে বিস্তারিত জানান। বর্তমান সময়ে আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাঁওতালি শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষক নিয়োগ, জাল ST Caste Certificate, স্কুল-কলেজে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যা, প্রভৃতি বিষয়ে “ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)”-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাংসদ শ্রী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবগত করান। সাংসদ শ্রী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় মনোযোগ সহকারে “ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া (Bharat Disom Majhi Madowa)”-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দাবী দাওয়াগুলি শোনেন এবং সেই দাবী দাওয়াগুলি পুরন করার যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস জানান। যে দাবী দাওয়া পুরনে সাংসদ শ্রী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্তিয়ারের বাইরে, সেই দাবী দাওয়াগুলি উনি মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোচরে আনবেন বলে জানান।

Monday, August 13, 2018

বালুরঘাটে খাবারের অভাবে ধুঁকছেন আদিবাসী মা ও মেয়ে!

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের চকভৃগু অঞ্চলের দক্ষিণ কুয়ারন গ্রামের বাসিন্দা এক আদিবাসী বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়ে খাবারের অভাবে ধুঁকছেন। বেশিরভাগ দিন তাদের শাকপাতা সেদ্ধ করে খেতে হয়। আদিবাসী বৃদ্ধা আনে গুড়িয়া ও তাঁর মেয়ে রেনুকার অর্ধাহার ও অনাহারে রুগ্ণ শরীর নিয়ে কোনও মতে চলাফেরা করেন। অসহায় ভূমিহীন ওই পরিবারের অন্ত্যোদয় কার্ডে আছে দুটাকা কেজি চাল। কিন্তু রেশন তোলার আর্থিক সামর্থ্য নেই। আগে ১০০ দিনের মজুরির কাজ ছিল। এখন কাজ বন্ধ। অপুষ্টিতে মা ও মেয়ের জীর্ণ দুর্বল শরীর দেখে কেউ কাজেও ডাকেন না। স্বামী গাবরেল কাউয়া বেঁচে থাকার সময় পঞ্চায়েত থেকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ইটের দেয়াল উঠেছিল। লিংটেল অবধি হয়েই বাড়ি শেষ। টিনের ছাউনি দিয়ে ইট বের করা ছোট দুটি ঘরে মেয়েকে নিয়ে থাকেন বৃদ্ধা আনে গুড়িয়া। এলাকার কাটনা হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে মেয়ে রেনুকা। বৃদ্ধার কথায়, স্কুল খোলা থাকলে মিড ডে মিলে মেয়ের খাবার জুটে যায়। স্কুল বন্ধ থাকলে পুরো দিন না খেয়ে থাকতে হয়। এলাকার আশপাশের বাসিন্দারাও গরিব। ফলে লোকের বাড়িতে রোজ হাত পাততে সঙ্কোচ করেন আনে। তখন জলা থেকে কলমিশাক তুলে সেদ্ধ করে খেতে হয় মা মেয়েকে।
দুঃস্থ মা মেয়েকে কতটা কী সাহায্য করা যায়, দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিদায়ী পঞ্চায়েত সভাপতি প্রবীর রায়।
তীব্র অপুষ্টির শিকার রেনুকা ঠিক মতো কথা বলতে পারে না। স্কুলের খাতায় নাম রয়েছে। কিন্তু লেখাপড়ার মতো অবস্থা নেই। বাড়িতে নেই কোনও জলের ব্যবস্থা। বিদ্যুৎও নেই। সবুজসাথী থেকে পাওয়া সাইকেল চালাতে গিয়ে মেয়েটা হাঁপিয়ে ওঠে। এলাকার বাসিন্দা হাকিম কিস্কু বলেন, ‘‘ওদের দুরবস্থা দেখেও আমরা কিছু করতে পারি না। পঞ্চায়েতে বলেও বার্ধক্যভাতার ব্যবস্থা হয়নি। না খেতে পেয়ে শীর্ণ বৃদ্ধা জল বয়ে আনতে পর্যন্ত এক এক দিন পারেন না।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩ অগস্ট, ২০১৮।