Tuesday, May 15, 2018

পাহারা দিয়ে স্ট্রং রুম অবধি ভোটবাক্স পৌঁছে দিল আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের সদস্যরা।


এ যেন জান কবুল লড়াই! ভোটের সময় মাটি কামড়ে পড়ে থাকা। এর পর ভোট ব্যালট বাক্স পাহারা দিয়ে ‘রিসিভিং সেন্টারবেলপাহাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। সোমবার রাতে ভোট মিটতে দেখা গেল, ভোটকর্মীদের গাড়িগুলির পিছনে আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের লোকজনের বাইকের ‘কনভয়’। বেলপাহাড়ির রিসিভিং সেন্টার পর্যন্ত গেল সেই ‘কনভয়’। ব্যালট বাক্সগুলি স্ট্রং রুমে ঢোকানো পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন মঞ্চের লোকজন। এক সেক্টর অফিসারের কথা।, “এতদিন ভোটের ডিউটি করছি, এমন কাণ্ড আগে কখনও দেখিনি।
কেন এই নজরদারি? আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের নেতা ধর্মাল মান্ডি বলেন, “বঞ্চনা আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোটাররা এ বার সমাজের ডাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। আমাদের আশঙ্কা ছিল, প্রশাসনের সহযোগিতায় মাঝপথে ব্যালট বাক্স বদলে দেওয়া হতে পারে। তাই এই বন্দোবস্ত।” তৃণমূলের বেলপাহাড়ি ব্লক কার্যকরী সভাপতি বিকাশ সিংহের কটাক্ষ, ‘‘ওরা (আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের সদস্যেরা) স্ট্রং রুমের বাইরে হাস্যকর ভাবে নজরদারি চালাচ্ছে। মঞ্চের মধ্যে সিপিএমের লোকজনও আছে। বাম আমলে ওরা মাঝ রাস্তায় ব্যালট বাক্স বদলে দিত। আমরা ওদের মতো নই।”
ভোটের দিনই ধর্মালবাবুর দাবি ছিল, ব্যালট বাক্স বদলে না দেওয়া হলে বেলপাহাড়ি থেকেই বদলের সূচনা হবে। নিজের দাবিতে অনড় তিনি। তাই শুধু নজরদারি নয়, কারচুপি রুখতে অন্য কৌশলও নিয়েছে আদিবাসী মঞ্চ। ধর্মালবাবু জানান, ভোটদানের সময় প্রতিটি ব্যালট বাক্সে সংকেতযুক্ত দশটাকা ও পাঁচটাকার নোটও ঢোকানো হয়েছে। গণনার সময় সেগুলি পাওয়া গেলে বোঝা যাবে ব্যালট বাক্স ‘অক্ষতআছে কি না।
শিমূলপাল অঞ্চলের বুড়িঝোর, বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলের চাকাডোবা ও কাশমারের মতো বেশ কিছু বুথে ভোট হয়েছে কোথাও রাত দশটা কোথাও রাত ১১ টা পর্যন্ত। ভুলাভেদা অঞ্চলের শিয়াড়বিঁধা বুথে রাত পৌনে বারোটা পর্যন্ত ভোট হয়েছে। বাঁশপাহাড়ির এক ভোটকর্মী বলেন, “রাতে ফেরার সময় আমাদের গাড়ির পিছনে অন্তত গোটা দশেক বাইকে সওয়ার আদিবাসী সমাজের লোকজন ছিলেন।”
বুথ থেকে ‘রিসিভিং সেন্টারপর্যন্ত নজরদারির প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “যাঁরা ভোট কর্মীদের গাড়িগুলিকে অনুসরণ করছিলেন, তাঁরা ঠিক কাজ করেননি। ব্যালট বাক্স সুরক্ষিত অবস্থায় রাখার সব রকম বন্দোবস্ত রয়েছে। আশঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।”
আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চকে আশায় রেখেছে ভোটদানের হার। এক সময়ের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার এক একটি বুথে নব্বই থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের দাবি, বেশি ভোট দানের হার থেকেই স্পষ্ট পরিবর্তন হচ্ছে। তবে আশা হারাতে নারাজ শাসকও। বিকাশবাবুর কথায়, ‘‘কয়েকটি বুথে সমস‍্যা আছে। তবে অধিকাংশ আসনে আমরা ভাল ফল করব।”
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, কিংশুক গুপ্ত, ১৬ ই মে, ২০১৮।

No comments:

Post a Comment