Tuesday, May 15, 2018

আদিবাসী মহিলাদের প্রতিরোধে গ্রামে ঢুকতেই পারল না তৃণমূলের বহিরাগত সমর্থকেরা।


প্রতিরোধের সামনের সারিতে আদিবাসী মহিলা বাহিনি, গ্রামে ঢুকতেই পারল না শাসকদল তৃণমূলের বহিরাগত সমর্থকেরা।

পঞ্চায়েত ভোটে বীরভূমের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে শাসকদলের নো এন্ট্রি! সৌজন্যে আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মহিলারা৷ মহম্মদবাজারে প্রমীলাবাহিনীর প্রতিরোধে অনেক এলাকাতেই দাঁত ফোটাতে পারল না ঘাসফুল৷
বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমান্ত ঘেঁষা আদিবাসী গ্রাম টাংশুলি৷ শালের জঙ্গলে ঘেরা গ্রামে ঢোকার মুখে কয়েকটি গাছে ঝুলতে দেখা গেল তৃণমূলের পতাকা৷ কিন্তু ব্যস, ওই পর্যন্তই! এর পর থেকে একনাগাড়ে বিজেপির পতাকা৷ কারও কারও বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া কাগজের পোস্টার৷ ফুলমণি অবশ্য চেনেন না কাগজের লোকটাকে৷ পোস্টারে নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই, জবাব এল, ‘উ কে বটে জানি না কো’৷ তবে ওই পোস্টারেই থাকা পদ্মফুল অবশ্য খুব চিনেছেন ফুলমণি৷ পদ্মফুল দেখিয়ে বললেন, ‘তব্যে পদ্মফুলটোতে ছাপ দিতে বলেছে৷’
সকাল থেকে ঘরে ঘরে ঘুরছেন কালোমণি৷ গাঁয়ের মেয়ে-বৌদের জড়ো করেছেন স্কুলে লাইন দেওয়ানোর জন্য৷ নিজেই ঠিক করছেন লাইন৷ তাঁর কথায়, ‘রাতে তৃণমূলওয়ালারা এসেছিল৷ গাঁয়ের অনেককেই টাকার লোভ দেখিয়েছে৷ অনেকের ঘরের দেওয়ালে ছবি লাগাতে গিয়েছিল৷ কিন্তু গাঁয়ের সবাই তেড়ে গিয়েছে৷ যে কঘর তৃণমূল করে, তাঁদের দেওয়ালে লাগিয়েছে৷’
টাংশুলি প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে সকাল থেকে মহিলাদের লম্বা লাইন৷ গাঁয়ে আজ কেউ কাজে যায়নি৷ উল্টে নিজের ভোট দিয়ে অন্য মেয়ে-বৌদের ডেকে এনেছেন ফুলমণি-কালোমণি, জবাব, বুধি, মালতীরা৷ গাঁয়ে আজ ভাত রাঁধা হয়নি৷ দিনের বেলা মুড়ি খেয়ে কাটিয়েছেন ওঁরা৷ ভোট শেষ হলে এক্কেবারে রাতে ভাত রাঁধা হবে৷ পাশের গ্রাম কদমহিরের ত্রিসীমানায় নেই তৃণমূলের পতাকা৷ গাঁয়ের সবাই এককাট্টা৷ বাগাল মার্ডির কথায়, ‘ভোটপ্রচারের সময় আসতে পারে নাই৷ শেষ রাতে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু জনকে টাকাপয়সা দিতে গিয়েছে৷’
চারি দিকে শুধু বিজেপির পোস্টার আর পতাকা৷ গাঁয়ে ঢোকার মুখে কদমহির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গাছতলায় বসে গাঁয়ের লোক৷ দুয়ারে শিকল তুলে গাঁয়ের প্রবেশপথে পাহারা দিচ্ছেন যাতে বাইরের কেউ ঢুকতে না পারে৷ সেখানেই দাঁড়িয়েছিলেন বুদি হেমব্রম, সুমি মার্ডিরা৷ তাঁদের একরোখা মন্তব্য, ‘গাঁয়ে আজ যদি বাইরের কেউ আজ আসত, তাহলে ওদের মেরে এলাকাছাড়া করতাম৷’
শুধু টাংশুলিই নয়, আশপাশের ফুলবেড়িয়া, শিউলি, পাহাড়ির মতো আরও অনেক গ্রামেই দেখা গিয়েছে এই চিত্র৷ শিউলি-পাহাড়ির বাসিন্দা বুধন হেমব্রম বলেন, ‘শাসকদল অস্বস্তিতে আছে৷ ওরা গাঁয়ের জন্য কিছু করে নাই৷ কোন মুখে আসবে ? এলেই এলাকাছাড়া করবে গাঁয়ের মানুষ৷’
মহম্মদবাজারের চরিচা অঞ্চলের নিমদাসপুর, দাসপুর এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে এতটাই ক্ষোভ যে, ভোট প্রচার পর্বে হাজার চেষ্টাতেও তা মেরামত হয়নি৷ তারই প্রমাণ মিলল এ দিন গ্রামে ঢুকে৷ শাসকদলের পতাকার কোনও অস্তিত্বই নেই এখানে৷ শুধু বিরোধীদের পতাকা চার দিকে৷ ক্যাম্প অফিসে কয়েক জন তৃণমূল কর্মীর দেখা মিললেও গাঁয়ের লোক তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে৷ গ্রামের বাসিন্দা সূবল মার্ডি বলেন, ‘গাঁয়ের মানুষের খুব ক্ষোভ তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ তাই কেও ওদের কাছে যাচ্ছে না৷’
একই অবস্থা বীরভূমের পাথর বলয় পাঁচামি ভাঁড়কাটা গ্রামে৷ ভোটারদের প্রভাবতি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার নেতা রবীন সোরেন৷ তাঁর কথায়, আমরা এ বার ভোটে লড়াই করিনি৷ আবার নির্দিষ্ট কোনও দলকে ভোটও দিতে বলিনি৷ যার যেখানে ইচ্ছা, ভোট দিন৷ তবে যেহেতু আদিবাসীরা বহু গ্রামে বঞ্চিত, তাই তাঁরা এককাট্টা এ বার৷ তবে বহু প্রলোভন দেওয়া হয়েছে ওদের৷’
বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘বনবাসী ভাইবোনেরা যে ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, তাতে আমরা দেখেছি, ওরা এককাট্টা হয়ে শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন৷ তবে ওঁরা অনেক প্রলোভন দেখিয়েছে৷’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তাপস সিনহা বলেন, ‘বেশ কিছু আদিবাসী গ্রামে আমাদেরই নিচুতলার নেতাকর্মীদের আচরণে প্রচারে সমস্যা হয়েছিল৷ তবে আমরা তা সামলে ফেলেছি৷ এখনও টাংশুলি ও কদমহির মতো গ্রামে একটু সমস্যা আছে৷ তবে জিতে যাব মনে হয়৷’
সৌজন্য – এইসময়, হেমাভ সেনগুন্ত, ১৫ ই মে, ২০১৮।

No comments:

Post a Comment