আদিবাসী বলেই কি সম্ভব ? তৃনমূল কংগ্রেসের দেখানো পথে হেঁটেই আদিবাসী সমর্থকের
মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি বিজেপির।
প্রশ্ন এটাই যে আদিবাসী বলে কি মৃতদেহেরও সন্মান থাকবে না? মৃত্যুর পরেও কি আদিবাসীকে
রাজনীতির পুতুল হতে হবে? আর রাজনীতির মায়াজালে অন্ধ হয়ে আদিবাসী পরিবার অন্ধ হয়ে রাজনৈতিক
নেতাদের কথা অনুসরণ করবে? এ কোথায় চলেছে আদিবাসী সমাজ? এ কেমন উন্নয়ন হয়েছে আদিবাসী
সমাজের?
পথ দেখিয়েছিল তৃনমূল কংগ্রেস। জঙ্গল মহল অশান্তির সময় হার্মাদ বাহিনীর হামলায় লালগড়ে
নিহত আদিবাসীর মৃতদেহ নিয়ে খোদ রাইটার্স অভিযান হয়েছিল। সেই সময় তৃনমূল কংগ্রেসের আদিবাসী
নেতারা বলেছিলেন যে মৃত আদিবাসীর নাকি সন্মান প্রাপ্তি হয়েছে। জীবিত অবস্থায় না হলেও
মৃত অবস্থায় তিনি রাইটার্সে পৌঁছেছিলেন। আর আজ তৃনমূল কংগ্রেসের দেখানো পথেই হাঁটল
বিজেপি। সোমবার পঞ্চায়েত ভোটের দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির বারিদা প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের বুথের সামনে বিজেপি তাঁর আদিবাসী কর্মীর মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ দেখিয়ে সহানুভূতি
ভোট আদায়ের অপচেষ্টা চালাল। ধিক এই রাজনীতি। রাজনীতি হোক, কিন্তু সন্মান রেখে। অন্তত
মৃতদেহের সন্মান রেখে।
১৪ ই মে, ২০১৮ সোমবার সকাল ৭টায় পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির বারিদা প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে এসে ভোটাররা দেখলেন, ভোটগ্রহণকেন্দ্রের সামনে রয়েছে মৃতদেহ। সে দেহ ঘিরে
রয়েছে অনেকে। হাতে লাঠিসোটা।
প্রচারের শেষ দিনে মারধরে জখম হয়েছিলেন বিজেপি সমর্থক মনু হাঁসদা। রবিবার কটকের
হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর পরই নিহত কোন দলের সমর্থক, তা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক
চাপানউতোর। এর জের গ়ড়াল সোমবারও। এই দিন ভোটগ্রহণকেন্দ্রের সামনে মনু হাঁসদার দেহ
রেখে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। সঙ্গে ছিলেন নিহতের পরিবারের সদস্যেরা।
বিক্ষোভের জেরে প্রথমে শুরুই হয়নি ভোট। প্রায় একঘণ্টা পর পুলিশের হস্তক্ষেপে শুরু হয়
ভোটগ্রহণ। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণকেন্দ্রের বাইরেই পড়েছিল দেহ। ওই অবস্থাতেই
নিহতের পরিবারের সদস্যেরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন। তারপর দেহ নিয়ে গেলেন অন্তেষ্টির
উদ্দেশ্যে।
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় বিজেপির বিরুদ্ধে দেহ নিয়ে
রাজনীতির অভিযোগ করেছে তৃণমূল। কেশিয়াড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জগদীশ দাস বলেন, ‘‘মৃতদেহ
না পুড়িয়ে নাটক করছে বিজেপি। ভয়ের সঞ্চার করে ভোট বন্ধ করে দেয় কিছুক্ষণ। আমরা পুলিশে
জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম।’’ বিজেপির উত্তর মণ্ডলের সভাপতি জগন্নাথ বসু কথায়,
‘‘প্রতিহিংসার রাজনীতি আমরা করি না। দেহ নিয়ে রাজনীতিও করি না। স্থানীয় আদিবাসীরা রাজনৈতিক
প্রতিহিংসার বলি হওয়া মনুকে নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তবে ভোট বন্ধ থাকার কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
বারিদা গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বাণেশ্বর মাইতি অবশ্য বলেন, ‘‘এসে দেখি ভোটকেন্দ্রের
সামনে দেহ। প্রায় একঘণ্টা পর ভোট দিতে পেরেছি।”
বারিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থী সুলোচনা মাহাতো এবং তাঁর স্বামী এ দিন
ভোট শুরুর কিছুটা আগেই হাজির হয়েছিলেন ভোটগ্রহণকেন্দ্রে। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের কয়েকজন
বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে। অভিযোগ বসতে দেওয়া হয়নি পোলিং এজেন্টদের। গ্রামে
ঘিরে এ কথা জানান সুলোচনাদেবী। এরপরই মৃতদেহ নিয়ে বিজেপি সমর্থকেরা হাজির হন ভোটগ্রহণকেন্দ্রে।
বিক্ষোভে সামিল বিজেপির মহিলা সমর্থকেরা বলেন, ‘‘অবিলম্বে মনু খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার
করতে হবে। অপরাধীরা বহাল তবিয়তে ঘুরছে। তাদের ধরার দাবিতে আমাদের বিক্ষোভ।” নিহতের
ছেলে কার্তিকও বলেন, ‘‘বাবার খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতেই মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছি।”
বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বসতে না দেওয়া, তাদের কর্মীদের মারধরের অভিযোগ মানতে নারাজ
তৃণমূল। দেহ রাজনীতি নিয়েই বারবার সরব হয়েছে তারা।
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, রবিবার রাত ১০টা নাগাদ কটক থেকে ফেরে দেহ। রাতে বৃষ্টি
হচ্ছিল। ফলে পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় সকালে ভোট দেওয়ার পর দেহ সৎকার করা হবে। তবে সিদ্ধান্ত
বদলে যায় অচিরেই। শ্মশান নয়। দেহ পৌঁছয় ভোটগ্রহণকেন্দ্রে।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, বিশ্বসিন্ধু দে, ১৫ মে, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment