পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি আদিবাসী সমাজের বিরূপের
কারণ জানতে সিভিক পুলিশ দিয়ে সমীক্ষা জঙ্গলমহলে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহল তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করলেও কাঁটা হয়েছে আদিবাসী অধ্যুষিত
অঞ্চলগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের হার ও বিজেপির উত্থান। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসী অধ্যুষিত
অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের হার ও বিজেপির উত্থানে আদিবাসীদের উন্নয়নের সুফল পেতে কোন
ফাঁক ছিল কিনা তা জানতে সিভিক পুলিশদের দিয়ে সমীক্ষা করানো শুরু করল রাজ্য সরকার। সিভিক
পুলিসেরা আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আদিবাসীদের কাছে জানতে চাইছেন যে
দু’টাকা কেজি চাল পাচ্ছেন? পরিবারের স্কুল পড়ুয়ারা সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়েছে? আর সরকারি
প্রকল্পে বাড়ি?
ভোট মিটতেই জঙ্গলমহলের দোরে দোরে এ সব প্রশ্ন নিয়ে হাজির সিভিক ভলান্টিয়াররা। খুঁটিনাটি
তথ্য লিখেও নিচ্ছেন তাঁরা। জেলা পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রামের ৮টি ব্লকের
৯টি থানা এলাকায় শুরু হয়েছে সমীক্ষা। এলাকাবাসী কী কী সরকারি পরিষেবা পেয়েছেন, না পেলে
সমস্যার কারণ, পরিষেবা পেতে কাউকে টাকা দিতে হয়েছে কি না— যাবতীয় তথ্য সিভিক ভলান্টিয়ার
জানছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি ঝাড়গ্রামের জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর। মুখ
খোলেননি জেলাশাসক আর অর্জুনও। তবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিক পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনে’র রাজ্য
সভাপতি সঞ্জয় পড়িয়া বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই আজ এত বেকার যুবক সিভিক ভলান্টিয়ারের
কাজ পেয়েছেন। তাঁরা সরকার ও প্রশাসনের অঙ্গ। ফলে, সরকার ও প্রশাসনের তরফে তাঁরা সমীক্ষা
করতেই পারেন।’’
ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ ও ৮টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ছ’টিতেই তৃণমূল জিতেছে। কিন্তু
বিশেষত আদিবাসী এলাকায় বিজেপির তুলনামূলক ভাল ফল চিন্তায় ফেলেছে শাসকদের। তৃণমূলের
প্রাথমিক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, দলের একাংশের ঔদ্ধত্য, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি ও গোষ্ঠী
রাজনীতিই নিচুতলার জনসমর্থনে ধাক্কা দিয়েছে। তাই পোক্ত সংগঠন না থাকা সত্ত্বেও পদ্ম
ফুটিয়েছে গেরুয়া শিবির। আদিবাসী এলাকায় এই ক্ষোভের তল পেতেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে
সমীক্ষার সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে।
ইতিমধ্যে গোপীবল্লভপুর, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম, ঝাড়গ্রাম থানা এলাকায় সমীক্ষা শুরু
হয়েছে। সাঁকরাইলের রোহিণী এলাকার নয়াগাঁর বাসিন্দা সাবিত্রী সিংহ মানছেন, “সিভিকরা
জেনে গিয়েছেন, বাড়ির সদস্যরা সরকারি প্রকল্পের কোন কোন সুযোগ পেয়েছেন।”
বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে যেখানে শাসকদলের প্রার্থীরা হেরেছেন, বেছে
বেছে সেখানেই তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষ বলেন,
“সিভিকদের হাতে লাঠি ধরিয়ে প্রথমে ভোট লুট করল তৃণমূল। এখন তাদের দিয়ে সমীক্ষা করাচ্ছে।
এতেও রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি অবশ্য দোষের কিছু
দেখছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘সর্বত্র সমান ভাবে উন্নয়ন পৌঁছেছে কি না, তার খোঁজ নিতেই এই
উদ্যোগ।”
অন্যদিকে আদিবাসী সমাজের নেতৃত্বরা অবশ্য রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে
প্রশ্ন তুলেছেন। তারা পরিষ্কার জানাছেন যে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকার আদিবাসী সমাজের
মূল ক্ষোভের কারণ হয় মানতে চাইছে না বা বুঝতে চাইছে না। তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকার
আদিবাসীদের স্বাভিমানের প্রশ্নটিকে উন্নয়নের প্রশ্ন দিয়ে গুলিয়ে ফেলছে বা গুলিয়ে দিতে
চাইছে। আদিবাসী সমাজের নেতৃত্ব পরিষ্কার জানাছেন যে একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য
সরকার আদিবাসী সমাজের সাথে বিমাতৃসুলভ আচরন করছে আর অন্য দিকে দুটাকা কিলো চাল দিয়ে
আনুগত্য কিনতে চাইছে, যা কোনদিনও সম্ভব নয়। আদিবাসী এলাকার স্কুল কলেজগুলিতে সাঁওতালি
ভাষায় পঠন পাঠন চালু করতে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের চরম অনীহা, আদিবাসী সমাজের
মাঝি–পারগানা স্বশাসন ব্যবস্থাকে শেষ করতে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের চেষ্টা,
ঘোষণা করেও আদিবাসীদের উপাসনা স্থল “জাহের থান” এর পাট্টা না দেওয়া, লাগাতার আদিবাসী
নারী ও নাবালিকাদের ধর্ষণ ও তৃণমূল কংগ্রেসের আদিবাসী নেতা নেত্রীদের নীরবতা ও ধামাচাপা
দেবার প্রচেষ্টা, ঝাড়গ্রাম ও সুসুনিয়া একলব্য স্কুলে আদিবাসী ছাত্রীদের ধর্ষণ ও শ্লিলতাহানির
অভিযোগকে ধামাচাপা দেবার প্রচেষ্টা আদিবাসী সমাজ ভালভাবে নেইনি। তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য
সরকার এই বিষয়গুলি ধামাচাপা দিয়ে শুধুমাত্র দুটাকা কেজি চাল বা সাইকেল বিলি করে আদিবাসী
সমাজের আনুগত্য কেনা চেষ্টা করে সফল হতে পারবে না।
ঋণস্বীকার – আনন্দবাজার পত্রিকা, কিংশুক গুপ্ত, ২৫ মে, ২০১৮।
kolkatate age samikha hok keno TMC nijeder madhyei nijera nijerai SARER Mato larai kore morchhe?
ReplyDelete