Tuesday, May 15, 2018

এবারের পঞ্চায়েত ভোটে প্রথমবার ভোট দিলেন ৮০ বছরের আদিবাসী বৃদ্ধা বেবি মুর্ম।


৮০ বছর বয়সে প্রথম ভোট দিলেন বেটি মুর্ম। এবছরই তার ভোটার তালিকায় প্রথম নাম উঠেছে। সোমবার সকাল ১১টায় ডাক্তার মারডির বাইকে চেপে বাড়ি থেকে পাশের হাটগাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নামলেন বেটি। নিজের হাতে ভোট দিয়ে চরম আনন্দ অশীতিপর এই ভোটারের। এ জীবনে নিজের হাতে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পেরে বেজায় খুশি তিনি। অন্যদিকে, ভাঁড়কাটা পঞ্চায়েতে তেঁতুলবাঁধি গ্রামে নতুন ভোটার হিসাবে বেটি মুর্মুকে ভোট দেওয়াতে পেরে খুশি প্রশাসনও।
বেটি মুর্মুর ৭৯ বসন্ত পেরিয়ে গেলেও নিজের হাতে ভোট দেওয়ার স্বপ্নপূরণ হয়নি। কারণ, বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর ভাল করে বাংলা না জানা। এতদিন তাঁর নিজের তেমন কোনও পরিচয়পত্র ছিল না। ঝাড়খণ্ডে বিয়ে হওয়ার পর তিনি সেখানেই ছিলেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর আবার ফিরেছেন নিজের ভিটেতে। তেঁতুলবাধি গ্রামে। বেটি মুর্মু বলেন, “ভাইপোদের দেখতাম ভোট দিতে যাচ্ছে। খোপে ঢুকে ছাপ দিচ্ছে। ভাবতাম এ জীবনে আর হয়ত এ সুযোগ হবে না। সোমবার নিজের হাতে ভোট দিলাম।বাঁহাতের তর্জনী তুলে ভোটের কালি দেখিয়ে বললেন, এ যেন তাঁর কাছে সম্মানের গহনা। পরপর দুটো ছাপ দিয়েছেন। নিজের কাঁপা হাতে ভাঁজ করেছেন। ঠিক ফেলেছেন ভোটের বাক্সে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি বলে জানালেন বেটি।
৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে পাথর শিল্পাঞ্চলের আঁকাবাঁকা পথের শেষে তেঁতুলবাধি গ্রাম। গ্রামে দুটি পাড়া। নামো পাড়ার বাসিন্দা বেটি মুর্মু। তাঁর ভাঙাচোরা ঘর। তিনি বাংলা বুঝতে পারেন। কিন্তু বলতে পারেন না। সকাল থেকেই ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। কিন্তু কাউকে পাচ্ছিলেন না। আদিবাসী গাঁওতার সদস্য ডাক্তার মারডি বিষয়টি জানতে পেরে নিজের বাইক নিয়ে আসেন। ৮০ বছরের বৃদ্ধা ভোট দেওয়ার আনন্দে ডাক্তারকে চেপে ধরে বাইকে চড়লেন। স্কুলে এসে তাঁকে লাইনে দাঁড়াতে হল না। সবাই নতুন ভোটারকে পথ করে দিলেন। অশক্ত হাত। লাঠি ধরে চলা ফেরা। সেভাবেই ভোট দিলেন তিনি।
হাটগাছি এক নম্বর এলাকার তৃণমূল প্রার্থী সোমেল মুর্মু ও বিজেপির প্রার্থী মহিদাস সোরেন জানান, এবার যারাই জয় হোক, বেটি মুর্মুর হাতে এবার নতুন কার্ড তুলে দিতে পেরে তাঁরা খুশি। বেটির ভাইপো লবাই মুর্মু জানান, পিসি মারা যাওয়ার আগে নিজের ইচ্ছেপূরণ করে গেলেন।
সৌজন্য – সংবাদ প্রতিদিন, নন্দন দত্ত, ১৪ ই মে, ২০১৮।

No comments:

Post a Comment