Thursday, November 30, 2017

হকি শিখিয়ে আদিবাসী মেয়েদের ভবিষ্যত্‍ গড়ার লড়াই চালাচ্ছেন খেতমজুর মহাদেব টুডু।


তিনি ছিলেন ফুটবলার। ২৭ বছর আগে বর্ধমানের ঝাপানডাঙা গ্রাম থেকে তিনি কলকাতায় আসতেন একটি অনামী তৃতীয় ডিভিশন ক্লাবে খেলতে। ফুটবল তাঁর ভবিষ্যত্‍ গড়তে পারেনি। সেখান থেকে আজ মহাদেব টুডু একজন হকি কোচ। গত ন'বছর ধরে সেই ঝাপানডাঙা গ্রামেই তিনি তৈরি করে চলেছেন মহিলা হকি খেলোয়াড়। ঝাপানডাঙা এবং তার চারপাশের গ্রামগুলোয় ঘুরে ঘুরে মেয়েদের নিয়ে আসেন গ্রামের একমাত্র জনপ্রিয় মহিলা হকি ক্লাব ঝাপানডাঙা আদিবাসী জুমিদ গাঁওতায়। হকির জন্য পাগল তিনি। বুধবার ঝাপানডাঙা থেকে ফোনে তাঁর মন্তব্য, ''ক্লাবের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আশেপাশের গ্রামগুলোয় ঘুরে বেড়িয়েছি। দিনের পর দিন। দেখেছি আদিবাসী মেয়েগুলো পড়াশুনো না করে শুধু মাঠে চাষের কাজ করে বেড়ায়! কিন্তু ওদের ধরেবেঁধে ক্লাবে এনে হকি স্টিক হাতে তুলে দেওয়ার পর দেখেছি অনেকেই প্রতিভাবান।''
মহাদেবেরও তো নিদারুণ দারিদ্র! পেশায় খেতমজুর। অন্যের জমিতে চাষের কাজ করে স্ত্রী আর চার সন্তানের সংসারে তাঁর রোজগার। বললেন, ''কাজ না পেলে উপার্জন বন্ধ। কিন্তু এভাবেই চলছে।'' তার মধ্যেও ক্লাবের মেয়েদের জন্য খরচ আছে। কাউকে হকি স্টিক কিনে দিচ্ছেন। কারও জন্য কলকাতা থেকে খেলার জুতো আনাচ্ছেন। ৫০'এর ঘরে পৌঁছে যাওয়া মহাদেবের সহাস্য মন্তব্য, ''গত ন'বছরে যে পকেট থেকে কত টাকা চলে গিয়েছে মেয়েদের জন্য তার হিসাব নেই!'' মহাদেব হকি খেলেননি। ফুটবল ছাড়ার পর থেকেই তিনি কোচ! কোচিংয়ের স্বীকৃত কোনও ডিগ্রিও তাঁর নেই। বাংলার প্রাক্তন মহিলা খেলোয়াড় ও কোচ সুরভি মিত্রের উৎসাহে হকির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন মহাদেব। বললেন, ''হকির নিয়ম সংক্রান্ত বই পড়তাম। নিয়মিত কলকাতায় আসতাম বাংলার হকি লিগ দেখতে। টিভি আছে এরকম কারও বাড়ি গিয়ে আন্তর্জাতিক হকি টুর্নামেন্টের ম্যাচ দেখে খেলাটা সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছিলাম। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেকে প্রত্যেকদিন উন্নত করছি।'' মহাদেবের ঝাপানডাঙা ক্লাবের মুখ সাথী দলুই। বাংলার মহিলা হকি লিগে একাধিকবার সেরা খেলোয়াড় হওয়া এই খেলোয়াড় তিন বছর আগে জাতীয় জুনিয়র মহিলা শিবিরে ডাক পেয়েছিলেন। সাথী ছাড়াও আরও অন্তত দশজন মেয়ে খেলোয়াড় আছেন যাঁরা নিয়মিত বাংলার জার্সি পরে ন্যাশানলে অংশ নিয়েছেন। তবু এটা মহাদেবের প্রাপ্তি নয়! তাঁর আনন্দ, চাষের খেত থেকে তুলে আনা মেয়েগুলোর জীবন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ন্যাশানলে খেলা মেয়েরাও চাকরি পাননি। সাথী দলুইয়েরও চাকরি হয়নি এখনও। তবু, মহাদেবের মন্ত্র, ফলের কথা না ভেবে ভাল খেলে যাও। একদিন নিশ্চয়ই ভাগ্যদেবতা মুখ তুলে তাকাবেন!
সৌজন্য – ডেইলি হান্ট ও এবেলা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের অফিসে আদিবাসীদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান।


২৭/১১/২০১৭, মেদিনীপুর।

সাঁওতালি মাধ্যম বিদ্যালয়ে অলচিকির শিক্ষক নিয়োগ, বুক ডে তে বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রদান, মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাঁওতালি মাধ্যমের প্রশ্নপত্র অলচিকি লিপিতে করা সিলেবাস কমিটি ও সাঁওতালি ভাষার পঠন-পাঠনের জন্য পৃথক শিক্ষা পর্ষদ গঠন প্রভৃতি দাবিতে সোমবার জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন, রাস্তা অবরোধ, ও জেলা শাসককে ডেপুটেশন দিল ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল ও আদিবাসী কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার আদিবাসী মানুষজনের আগমনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত শহরের প্রাণকেন্দ্র স্তব্ধ হয়ে যায়। সংগঠনের বক্তব্য, অলচিকি হরফে পঠন পাঠন খাতায় কলমেই শুরু হয়েছে মাত্র। সিংহভাগ স্কুলে পাঠদানের জন্য শিক্ষ-শিক্ষিকা নেই, সিলেবাসও সঠিক ভাবে তৈরি হয়নি। সিলেবাস কমিটিও নেই। সংগঠনের পক্ষে অর্জুন হেমরম ও রবীন টুডু বলেন, একই দাবি নিয়ে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। জেলা শাসকদের ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। রাজ্যপালও মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই কর্মসূচি। তাঁদের কাছেও দাবিপত্র পাঠনো হয়েছে। দ্রুত আমাদের সমস্যা সমাধ্যানের উদ্যোগ নেওয়া না হলে লাগাতার আন্দোলন চলবে।
সংগঠনগুলির নেতৃবৃন্দের বক্তব্য বামেদের আমলেও আমরা বঞ্চিত হয়েছিলাম। বারবার আবেদন নিবেদন করলেও বাম সরকারের আমলে তেমন ভাবে দেখা হয়নি। নতুন সরকার আসার আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু এত বছর পরেও আমাদের সামাজিত ও অর্থনৈতিক উন্নতি হয়নি। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে আদিবাসীদের দাবি মেনে অলচিকি লিপিতে পঠন পাঠন শুরু করা হয়েছে। অথচ বই নেই, শিক্ষক নেই, সিলেবাস নেই, কাগজে কলমে চালু হলেই কি হয়ে গেল ? আদিবাসীদের এই দাবি অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগেও একই দাবি নিয়ে তাঁরা প্রতিটি জেলায় আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সোমবার জেলার প্রতিটি ব্লকে থেকে কয়েক হাজার আদিবাসী মানুষজন টাঙ্গি, তিরধনুক, লাঠি নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন। দীর্ঘক্ষণ ধরে কালেক্টরেট মোড় অবরোধ করে রাখেন। অবরোঢে বাস, লরি, অটো, টোটো অন্যান্য চারচাকার গারি আটকে যায়। পরে অবরোধ উঠে গেলেও যাঞ্জট কাটাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। যদিও কয়েকশ গারিতে করে সমর্থকরা এলেও গাড়িগুলি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত রাখা হয়েছিল।
রবীনবাবু জানান গত ১৫ তারিখে জেলায় জেলায় বিডিওদের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছিল। এবার জেলাশাসকদের । এদিনের কর্মসূচিতে অর্জুনবাবু ও রবীনবাবু ছাড়াও ছিলেন রাইসেন হাঁসদা, জয়রাম কিস্কু, কেশব সরেন, দিলীপ মান্ডি, সুবোধ হেমরম প্রমুখ। ছিলেন সমস্ত ব্লকের নেতৃত্বরাও।
এদিন ঝাড়গ্রাম জেলার জেলাশাসকেও একই ভাবে এই সব দাবিতে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।
সৌজন্য – বিপ্লবী সব্যসাচী।

বঞ্চনার বিরুদ্ধে জঙ্গলমহল অচল করার হুমকি আদিবাসীদের।


২৮ নভেম্বর, ২০১৭

জঙ্গলমহলের উন্নয়ন তাঁর সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বলে প্রায়ই দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়যদিও রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য কিছুই করেনি বলে সোমবার ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিল আদিবাসীদের সংগঠনভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। দিন কয়েক হাজার আদিবাসী তির-ধনুক-টাঙি নিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরে জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখানপশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহর পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকেও বিক্ষোভ দেখান আদিবাসীরা
সাঁওতালি এডুকেশন বোর্ড গঠন, সাঁওতালি মাধ্যমে উপযুক্ত শিক্ষার পরিকাঠামো গড়া, সাঁওতালি উন্নয়ন পর্ষদ গঠন, ২০১৮ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাঁওতালি মাধ্যমের পরীক্ষার্থীদের জন্য সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করা-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজের দাবিতে দিন আদিবাসীরা মিছিল করে ডিএম অফিসের চত্বরে ঢুকতে যানঅভিযোগ, ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরে যাওয়ার রাস্তায় দিন দুপুরে পুলিশের তিনটি ব্যারিকেড ভেঙে দেন আদিবাসীরাপুলিশের সঙ্গে মহিলা বিক্ষোভকারীদের রীতিমতো ধস্তাধস্তি হয়বিক্ষোভের জেরে জেলাশাসকের অফিস লাগোয়া রাস্তাগুলিতে বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হয়ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিত মাহাতোর নেতৃত্বে পুলিশ আধিকারিকরা আদিবাসীদের বুঝিয়ে  নিরস্ত করেনমাঝি পারগানা মহলের সর্বোচ্চ নেতাদিশম পারগানানিত্যানন্দ হেমব্রম, জেলা নেতাজগ পারগানারবিন টুডু-সহ আদিবাসী সমাজের পাঁচ জন প্রতিনিধি জেলাশাসকের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ২৭-দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি জমা দিতে যান
আদিবাসী নেতারা দিন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করেন, সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষা নিয়ে কিছুই করেনি রাজ্য সরকারআদিবাসীরা চরম ভাবে বঞ্চিত অত্যাচারিতআদিবাসীদের দাবিগুলি নিয়ে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকার কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরাবিক্ষোভ জমায়েতে আদিবাসী নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, রাজ্য সরকারের তরফে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা না হলে ২০ ডিসেম্বরের পরে জঙ্গলমহলে অচল করে দেওয়া হবে।” ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “আদিবাসী সংগঠনের দাবির বিষয়টি শিক্ষা দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হবে।”
অন্য দিকে, মেদিনীপুর শহরের কালেক্টরেট মোড়েও বিক্ষোভ দেখায় আদিবাসীরাবিক্ষোভের জেরে দীর্ঘক্ষণ কালেক্টরেট মোড় অবরুদ্ধ ছিলঅনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিলদুপুরের দিকে কালেক্টরেট মোড়ে যান চলাচলও ব্যাহত হয় দিনই দুপুরে তমলুক শহরে জেলাশাসকের অফিসের সামনেও জড়়ো হয়ে আদিবাসীয়া বিক্ষোভ দেখায়তমলুকে সংগঠনের নেতৃত্ব অলক বেসরা দাবি করেন, প্রাথমিক মাধ্যমিক স্তরে সব আদিবাসী  পড়ুয়ার জন্য অলচিকি লিপির পাঠ্যবই দিতে হবেখাস জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানান তিনি
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮/১১/২০১৭।

http://www.anandabazar.com/state/tribal-communities-protest-in-jhargram-1.714563