তিনি ছিলেন ফুটবলার। ২৭ বছর আগে বর্ধমানের ঝাপানডাঙা গ্রাম থেকে তিনি কলকাতায় আসতেন
একটি অনামী তৃতীয় ডিভিশন ক্লাবে খেলতে। ফুটবল তাঁর ভবিষ্যত্ গড়তে পারেনি। সেখান থেকে
আজ মহাদেব টুডু একজন হকি কোচ। গত ন'বছর ধরে সেই ঝাপানডাঙা গ্রামেই তিনি তৈরি করে চলেছেন
মহিলা হকি খেলোয়াড়। ঝাপানডাঙা এবং তার চারপাশের গ্রামগুলোয় ঘুরে ঘুরে মেয়েদের নিয়ে
আসেন গ্রামের একমাত্র জনপ্রিয় মহিলা হকি ক্লাব ঝাপানডাঙা আদিবাসী জুমিদ গাঁওতায়। হকির
জন্য পাগল তিনি। বুধবার ঝাপানডাঙা থেকে ফোনে তাঁর মন্তব্য, ''ক্লাবের কয়েকজনকে সঙ্গে
নিয়ে আশেপাশের গ্রামগুলোয় ঘুরে বেড়িয়েছি। দিনের পর দিন। দেখেছি আদিবাসী মেয়েগুলো পড়াশুনো
না করে শুধু মাঠে চাষের কাজ করে বেড়ায়! কিন্তু ওদের ধরেবেঁধে ক্লাবে এনে হকি স্টিক
হাতে তুলে দেওয়ার পর দেখেছি অনেকেই প্রতিভাবান।''
মহাদেবেরও তো নিদারুণ দারিদ্র! পেশায় খেতমজুর। অন্যের জমিতে চাষের কাজ করে স্ত্রী
আর চার সন্তানের সংসারে তাঁর রোজগার। বললেন, ''কাজ না পেলে উপার্জন বন্ধ। কিন্তু এভাবেই
চলছে।'' তার মধ্যেও ক্লাবের মেয়েদের জন্য খরচ আছে। কাউকে হকি স্টিক কিনে দিচ্ছেন। কারও
জন্য কলকাতা থেকে খেলার জুতো আনাচ্ছেন। ৫০'এর ঘরে পৌঁছে যাওয়া মহাদেবের সহাস্য মন্তব্য,
''গত ন'বছরে যে পকেট থেকে কত টাকা চলে গিয়েছে মেয়েদের জন্য তার হিসাব নেই!'' মহাদেব
হকি খেলেননি। ফুটবল ছাড়ার পর থেকেই তিনি কোচ! কোচিংয়ের স্বীকৃত কোনও ডিগ্রিও তাঁর
নেই। বাংলার প্রাক্তন মহিলা খেলোয়াড় ও কোচ সুরভি মিত্রের উৎসাহে হকির প্রেমে পড়ে
গিয়েছিলেন মহাদেব। বললেন, ''হকির নিয়ম সংক্রান্ত বই পড়তাম। নিয়মিত কলকাতায় আসতাম বাংলার
হকি লিগ দেখতে। টিভি আছে এরকম কারও বাড়ি গিয়ে আন্তর্জাতিক হকি টুর্নামেন্টের ম্যাচ
দেখে খেলাটা সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছিলাম। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেকে
প্রত্যেকদিন উন্নত করছি।'' মহাদেবের ঝাপানডাঙা ক্লাবের মুখ সাথী দলুই। বাংলার মহিলা
হকি লিগে একাধিকবার সেরা খেলোয়াড় হওয়া এই খেলোয়াড় তিন বছর আগে জাতীয় জুনিয়র মহিলা
শিবিরে ডাক পেয়েছিলেন। সাথী ছাড়াও আরও অন্তত দশজন মেয়ে খেলোয়াড় আছেন যাঁরা নিয়মিত
বাংলার জার্সি পরে ন্যাশানলে অংশ নিয়েছেন। তবু এটা মহাদেবের প্রাপ্তি নয়! তাঁর আনন্দ,
চাষের খেত থেকে তুলে আনা মেয়েগুলোর জীবন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ন্যাশানলে
খেলা মেয়েরাও চাকরি পাননি। সাথী দলুইয়েরও চাকরি হয়নি এখনও। তবু, মহাদেবের মন্ত্র, ফলের
কথা না ভেবে ভাল খেলে যাও। একদিন নিশ্চয়ই ভাগ্যদেবতা মুখ তুলে তাকাবেন!
সৌজন্য – ডেইলি হান্ট ও এবেলা।