কয়লা খনি নির্মাণের জন্য ১২ বছর আগে ইসিএল (ECL) কতৃপক্ষকে জমি দিয়েও চাকরি না মেলায় ছেলেকে নিয়ে আমরণ অনশনে বসলেন
আদিবাসী মঙ্গলা মান্ডি।
পুরুলিয়া জেলার নিতুড়িয়ার সড়বড়ি মৌজায় দুবেশ্বরী গ্রামের প্রান্তে খোলমুখ খনি
তৈরির জন্য বারো বছর আগে ইসিএল (Eastern Coal Fields - ECL) কতৃপক্ষ
কে জমি দিয়েছিলেন আদিবাসী বিধবা মহিলা মঙ্গলা মান্ডি। ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে
একটি চাকরি দাবী করেছিলেন। সেই সময় নাকি ইসিএল খনি কতৃপক্ষ চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছিলেন। কিন্তু বারো বছর পরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ, মেলেনি চাকরি। অনেক বার ইসিএল কর্তৃপক্ষের
দরজায় ঘুরেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ মঙ্গলা মান্ডির। তাই চাকরির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ থেকে নিতুড়িয়ার পারবেলিয়া কয়লা খনির অফিসের সামনে ছেলে বিদ্যাসর
মান্ডিকে নিয়ে অনশন শুরু করেছেন তিনি। তবে ইসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, মঙ্গলা তাঁর জমির
কিছু নথিপত্র জমা করতে না পারায় জটিলতা হয়েছে।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বারো বছর আগে নিতুড়িয়ার সড়বড়ি মৌজায় দুবেশ্বরী গ্রামের
প্রান্তে খোলমুখ খনি তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময়েই এলাকার অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে জমি
গিয়েছিল দুবেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা বিধবা মঙ্গলা মান্ডির। অন্য লোকজন জমির ক্ষতিপূরণ
হিসাবে টাকা নিলেও মঙ্গলা চাকরি দাবি করেছিলেন। জটিলতার শুরু সেই সময় থেকেই।
মঙ্গলার দাবি, বারো বছর আগে খোলামুখ খনির জন্য তাঁর ২ একর ৩৫ ডেসিমিল জমি গিয়েছিল।
তাঁর বাবার বাড়ি দুবেশ্বরী গ্রামে। পারবেলিয়া কয়লাখনির অফিসের সামনে বসে মঙ্গলা মান্ডি
বলেন, ‘‘খোলামুখ খনির জন্য ইসিএল যে জমি নিয়েছিল তার সবটাই ছিল আমার নামে। আমি সেই
সময়ে চাকরির শর্তে জমি দিতে রাজি হয়েছিলাম। ইসিএলের আধিকারিকেরা চাকরি দেবেন বলে প্রতিশ্রতি
দিয়েছিলেন। কিন্তু জমি নেওয়ার পরে চাকরির ব্যাপারে টালবাহানা শুরু হয়।”
কয়লা তুলে নেওয়ার পরে ওই খোলমুখ খনি এখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। বালি, ছাই দিয়ে
খনি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। জমিতে চাষও হয় না। এই অবস্থায় কোনও মতে ছেলেকে নিয়ে দিন
গুজরান করেছেন বলে দাবি মঙ্গলার। মঙ্গলা মান্ডির বছর বাইশের ছেলে বিদ্যাসর মান্ডি বলেন,
‘‘কয়লা খনির জন্য দেওয়া জমিটুকুই আমাদের সম্বল ছিল। বারো বছর আগে সেই জমি যাওয়ার পরে
মাকে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতে হয়েছে। এখন আমি দিনমজুরি করি।”
ইসিএল কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী, চাকরি পেতে হলে নিদেন পক্ষে দু’একর জমি দিতে হয়। ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার এমকে
যোশী জানান, দুবেশ্বরীতে খোলামুখ খনি তৈরির সময়ে প্রথমে মঙ্গলা মান্ডির থেকে ১ একর
৭০ ডেসিমিল জমি নেওয়া হয়েছিল। তার বদলে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয় বলে আরও ৩০ ডেসিমিল জমি
নেওয়া হয়। কিন্তু মোট দু’একর জমির মালিকানা সংক্রান্ত কয়েকটি নথি
ওই মহিলার কাছে না থাকায় চাকরি দিতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
সমস্যা নিয়ে অনেক বার ইসিএল কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়ে লাভ না হওয়াতেই অনশন শুরু
করেছেন বলে দাবি করেছেন মঙ্গলা মান্ডি। তবে ইসিএল কর্তৃপক্ষের জিএম বলছেন, ‘‘আমরা জমি
সংক্রান্ত সমস্ত নথি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে আরও কিছু নথি
চাওয়া হয়েছে। সেই নথি আমরা তাঁকে জমা করতে বলেছি।”
দেখা যাক কবে নাগাদ মঙ্গলা মান্ডি বা তার ছেলে ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে চাকরি
বা ক্ষতিপূরণ পান।
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment