স্কুলে যাওয়ার সুযোগ ঘটেনি সৌরবি টুডুর, অক্ষরজ্ঞান নেই তাঁর।
কিন্তু আদিবাসী মহিলা সেই সৌরবি টুডুই এবার শিশুদের শিক্ষার আঙিনায়
আসার সুযোগ করে দিলেন। তাঁর দান করা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। যার
আনুষ্ঠানিক সূচনাও সৌরবি টুডু নামে ওই আদিবাসী মহিলার হাত দিয়েই করালেন প্রশাসনের কর্তারা।
আর সৌরবির দেখানো পথে হাঁটলেন এলাকার আর এক বাসিন্দা বাসুদেব গুহ। তিনিও অঙ্গীকার করলেন
আরও একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র গড়তে জমি দান করবেন বলেন।
শিক্ষার আলো ফোটাতে আদিবাসী রমণীর এমনই এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল পূর্ব বর্ধমানের
রায়না-২ ব্লকের উচালন গ্রামের বড় চৌকপাড় আদিবাসী পাড়া। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়
জেলার ১৫৭ তম শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের। অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প
আধিকারিক মৌলি সান্যাল, বিডিও দীপ্যময় মজুমদার, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পার্বতী ধাড়া
ও সহকারী সভাপতি আনসার আলি খান। বিডিও জানান, এই শিশু শিক্ষাকেন্দ্র গড়ার জন্য সৌরবিদেবী
তাঁর সম্বল দুই কাঠা জমি দান করেন। বিডিও বলেন, “দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ওই মহিলা।”একজন আদিবাসী মহিলা যিনি স্কুলের গণ্ডিতে পা রাখেননি তিনি শিশুদের
শিক্ষার আঙিনায় টেনে আনতে যে কাজ করেছেন তার প্রশংসা করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
সৌরবি জানান, খুবই দরিদ্র পরিবার ছিল তাঁদের। ইচ্ছা থাকলেও তিনি স্কুলে যেতে পারেননি।
নিজে পড়াশোনা করার সুযোগ না পেলেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেই সুযোগ করে দিতেই এলাকার শিশুশিক্ষা
কেন্দ্র গড়তে নিজের জমি দান করেছেন তিনি। পঞ্চায়েতের তরফে এলাকায় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র
গড়ার জন্য জমির খোঁজ শুরু হতেই নিজে এগিয়ে যান জমি দান করতে। নিজের শেষ সম্বল বলতে
ছিল ওই দুই কাঠা জমি। তা দিতে কার্পণ্য করেনি তিনি। সরকারি অর্থে শিশুশিক্ষাকেন্দ্র
গড়ে ওঠার পর খুব খুশি হয়েছেন সৌরবি। তাঁর দান করা জমিতেই এবার আদিবাসী শিশুদের জীবনে
শিক্ষার আলো ফুটবে। উচালন গ্রামে আরও একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র গড়া হবে জানতে পেরে
সৌরবির পথেই হাঁটলেন গ্রামের বাসুদেব গুহ। তিনি ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্র গড়ার জন্য তাঁর
প্রয়াত বাবা কৃষ্ণমোহন গুহর নামে দেড় কাঠা জমি দান করার অঙ্গীকার করেন৷
সৌজন্য
– সংবাদ প্রতিদিন, ৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment