ডাইনি সন্দেহে তিন আদিবাসী মহিলাকে হত্যার দায়ে ৭ অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশ রদ করে
ডাইনি-প্রথা লোপে রাষ্ট্রেরই দায় মনে করালেন কলকাতা হাইকোর্ট।
ডাইনি তকমা দেগে তিন আদিবাসী মহিলাকে খুনের ঘটনায় নিম্ন আদালত ৭ জন অভিযুক্তকে
ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল। আরও ৬ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল মেদিনীপুর আদালত। কিন্তু
কলকাতা হাইকোর্ট সাজাপ্রাপ্তদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ জনেরই ফাঁসি রদ করে যাবজ্জীবন
সাজা ঘোষণা করল। আর আগে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে দু’জনকে খালাস করে বাকিদের আগের সাজাই বহাল রাখল। কলকাতা হাইকোর্ট
মনে করছে, যেখানে এমন ঘটনা ঘটে সেখানে বিচার বিভাগের থেকেও রাষ্ট্রের ভূমিকা অনেক বড়।
ঘটনা থেকে স্পষ্ট, শিক্ষার আলো সব আঁধার ঘোচাতে পারেনি।
ডাইনি প্রথার মতো কুসংস্কার বন্ধে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের
পিছিয়ে পড়া জেলাগুলি থেকে অশিক্ষা দূর করতে জোরদার পদক্ষেপের জন্য রাজ্যকে নির্দেশ
দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। পশ্চিম মেদিনীপুরের দুবরাজপুর ও হরিদাসপুর গ্রামে মুন্ডা আদিবাসী
জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২০১২ সালের ঘটনায় ৪৮২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। বিচারপতি
জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ ডাইনি প্রথা রদে ২০১৬ সালে
আদালতের নির্ধারিত গাইড লাইন মেনে শিক্ষা বিস্তার-সহ পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে জোর
দিয়েছে। এমন এলাকায় নিবিড় নজরদারি এবং ঘটনার শিকার মহিলা বা পুরুষদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও
পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।
গ্রামের ঘরে ঘরে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তোবা সিং নামে এক যুবকের নেতৃত্বে কয়েকশো
গ্রামবাসী তিন মহিলাকে ডাইনি চিহ্নিত করে। তোবা সিং এখনও ফেরার। গ্রামের মোড়লরা তিন
মহিলাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে। কিন্তু ওই মহিলারা এতই গরিব যে তা দেওয়ার ক্ষমতা
ছিল না। ৩ জনকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। এই ঘটনা সমাজের পিছিয়ে পড়ার নজির বলে মনে করে
কলকাতা হাইকোর্ট।
সৌজন্য – এই সময়, ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮।
No comments:
Post a Comment