Thursday, December 20, 2018

বাংলার উঠতি ফুটবলার বান্দোয়ানের কুচিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির আদিবাসী ছাত্রী কাজলি টুডু।

প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বাংলার হয়ে খেলতে গিয়ে গোল করে নজর কাড়ল বান্দোয়ানের কুচিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির আদিবাসী ছাত্রী কাজলি টুডু।

গত বুধবার ১৯/১২/২০১৮ কাজলি টুডুকে সংবর্ধনা জানিয়ে কুচিয়া হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করলেন, তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে স্কুল সবরকম ভাবে সাহায্য করবে। স্কুল সূত্রে আরও জানা যায়, ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পচাপানি গ্রামে কাজলির বাড়ি। সেখান থেকে রোজ আড়াই কিলোমিটার পথ উজিয়ে স্কুলে আসে সে। গ্রামে ছেলেদের ফুটবল খেলতে দেখলেও কোনও দিনই সে ভাবে তাদের সঙ্গে খেলা হয়ে ওঠেনি। স্কুলে এসেই ফুটবল খেলা শুরু করে। বছরখানেক হল স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাবের হয়ে ব্লক ভিত্তিক ম্যাচে তার খেলার দক্ষতা সবার নজর টানে। স্কুলের গ্রন্থাগারিক তুহিনশুভ্র পাত্র জানান, স্কুলের কর্মী আদিত্য সহিসকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পড়ুয়াদের শরীরচর্চা করান। সেখানেই তাঁরা কাজলির মধ্যে প্রতিভা খুঁজে পান। তাঁর কথায়, ‘‘কাজলির বড় গুণ হল, মিডফিল্ডার হিসাবে বল নিয়ে দুরন্ত গতিতে উঠে আসতে পারে।’’
বান্দোয়ানের বাসিন্দা জেলার অন্যতম ফুটবল কোচ প্রমোদ মাহাতো স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কাজলিদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘কাজলির বল নিয়ে ক্ষিপ্রতা নজরে পড়ে। তখনই বুঝেছিলাম এই ছাত্রী নিয়মিত অনুশীলন করলে অনেক দূর যাবে।’’ ফলও মিলতে শুরু করে। সুব্রত কাপের জেলা স্তরের প্রতিযোগিতায় বান্দোয়ানের দল চ্যাম্পিয়ন হয়। বর্ধমানে রাজ্য স্তরের অনূর্ধ্ব ১৭-র খেলায় পুরুলিয়া রানার্স আপ হয়। তবে, বিচারকেরা কাজলিকে বাংলার দলের হয়ে মনোনীত করেন।
পুরুলিয়া জেলা স্কুল ক্রীড়া কমিটির সম্পাদক শান্তিগোপাল মাহাতো বলেন, ‘‘১১-১৩ ডিসেম্বর ত্রিপুরায় জাতীয়স্তরের খেলায় কোয়ার্টার ফাইনালে হরিয়ানার কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয় বাংলা। তার আগে অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে গোল করেছিল কাজলি। এটা কম কৃতিত্বের নয়।’’
সেই সূত্র ধরে স্কুলের প্রধানশিক্ষক শিবশঙ্কর সিং বলেন, ‘‘কাজলি আমাদের স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে। সে জন্য তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ আমরা বহন করব।’’ এ দিন মেয়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন বাবা পাঁচু টুডুও। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ের যাবতীয় উত্তরণের মূলে এই স্কুলের শিক্ষকেরা রয়েছেন। তাঁরা পাশে না দাঁড়ালে মেয়ে বাইরে খেলতে যেতে পারত না।’’ বিডিও (বান্দোয়ান) শুভঙ্কর দাসও আশ্বাস দেন, কাজলির পড়াশোনা ও ফুটবলের অনুশীলন চালিয়ে যেতে পঞ্চায়েত সমিতি সব রকম ভাবে সহযোগিতা করবে। পাশে থাকার আশ্বাস দেন বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীব সোরেন, সহ-সভাধিপতি প্রতিমা সোরেন।
কাজলিও এগোতে চায়। কাজলি বলে, ‘‘স্বপ্নেও ফুটবল খেলি। ফুটবলই আমার চারপাশটা বদলে দিয়েছে। ফুটবলকে কখনও ছাড়ব না।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮।

কর্নাটকে ৫২ জন আদিবাসীকে জোর করে আটকে রেখে অমানুষিক পরিশ্রম করানোর অভিযোগ।


কর্নাটকের হাসান এলাকায় ৫২ জন আদিবাসীকে জোর করে আটকে রেখে অমানুষিক পরিশ্রম করানোর অভিযোগ, অবাধ্য হলে জুটত চাবুকপেটা, মহিলাদের যৌন নির্যাতন।

কর্ণাটকের হাসান এলাকায় ৫২ জন আদিবাসীকে জোর করে আটকে রেখে ক্রীতদাসের মতন খাটানোর ঘটনা সামনে এসেছে। কোন আদিবাসী কাজ করতে না চাইলে বা অবাধ্য হলে কপালে জুটত অমানুষিক মারধোর, চামড়ার চাবুকের মার, মহিলাদের ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন। ১৯ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম। বিনিময়ে শুধু দুবেলা কোনওক্রমে খিদে মেটানোর মতো খাবার। রাত কাটানো আরও ভয়ঙ্কর। ছোট্ট একটি চালাঘরে গাদাগাদি করে ৫০-৫২ জন। বাইরে থেকে তালাবন্ধ। ভিতরের এক কোণে একটি গর্ত। টয়লেটের ব্যবস্থা সেটাই। বাইরে প্রহরায় চার রক্ষী। কাজে ফাঁকি বা পালানোর চেষ্টা করলেই জুটত চাবুক দিয়ে নির্মম প্রহার। মহিলাদের যৌন অত্যাচার।
মধ্যযুগীয় দাসপ্রথাকেও কার্যত হার মানানো হাড় হিম করা নির্যাতনের এই ঘটনা কর্নাটকের হাসান এলাকার। ৫২ জন আদিবাসী ও দলিতকে উদ্ধারের পর পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদেরও কার্যত চোখ কপালে উঠেছে। উদ্ধার ৫২ জনের মধ্যে ১৬ জন মহিলা এবং চার জন শিশুও রয়েছে। বেশিরভাগই কর্নাটকের বাসিন্দা হলেও কয়েক জনের বাড়ি সংলগ্ন রাজ্য তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে। সবচেয়ে প্রবীণ বৃদ্ধার বয়স ৬২ বছর। আর সবচেয়ে ছোট বছর ছয়েকের দুই শিশু। কেউ তিন বছর, কেউ বা তার কম সময় ধরে নির্যাতনের শিকার।
ঘটনা সামনে এসেছে নাটকীয় ভাবে। ওই শেডে বন্দি এক শ্রমিক কোনওক্রমে রক্ষীদের নজর এড়িয়ে ১২ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে পালান। থানায় গিয়ে আর্জি জানান সাহায্যের। রবিবার পুলিশ ওই খামারবাড়িতে অভিযান চালায়। উদ্ধার হয় ওই ৫২ জন। তারপরই গোটা ঘটনা জানতে পারে পুলিশ। ভারতীয় দন্ডবিধির ৩২৩, ৩২৪ (বেআইনি ভাবে বন্দি করে রাখা), ৩৪৪ (চুরি) এবং ৩৫৬ ধারার (যৌন নির্যাতন) পাশাপাশি দাস প্রথা অবলুপ্তি আইন, তফসিলি জাতি ও উপজাতি সুরক্ষা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘আমাদের আশঙ্কা, ওই এলাকায় আরও কোনও জায়গায় এরকম দাসপ্রথা চলতে পারে।’’ সেই কারণেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে মুনেশা, কৃষ্ণগৌড়া, বাসবরাজা, প্রদীপ এবং নাগরাজা নামে পাঁচ জনের নাম। যে জমির উপর খামারবাড়িটি, তার মালিক কৃষ্ণগৌড়া বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। আর গোটা অপারেশন চালাত মুনেশা। তদন্তে নেমে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্তরা ফেরার। দুটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই গাড়ি দুটি শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার কাজ চলত।
কীভাবে অপারেশন চলত, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাসানের এক পদস্থ পুলিশকর্তা বলেছেন, ‘‘দুজন অটো চালক সেজে স্থানীয় রেল স্টেশনে ঘোরাফেরা করত। কাজের খোঁজে কেউ এলেই, তাদের টার্গেট করত তারা। নিয়ে যাওয়া হত সেই খামারে। সেখানে ঢোকার পরই জামা-কাপড় সঙ্গের জিনিসপত্র, মোবাইল, পরিচয়পত্র সব কেড়ে নেওয়া হত। কাউকে আবার দিনে ৬০০ টাকার কাজের টোপ দিয়ে তুলে নিয়ে যেত দুই অটো চালক। টার্গেট করা হল মূলত ভিন রাজ্য বা অন্য এলাকা থেকে কাজের খোঁজে আসা শ্রমিকদের।’’
আর এভাবে একবার ভিতরে ঢোকাতে পারলেই দাসহয়ে যেতেন এই সব আদিবাসী-দলিতরা। পুলিশ জানিয়েছে, চাষের জমি, ইটভাটা, নির্মাণ প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিক সরবরাহের বরাত নিত অভিযুক্তরা। গাড়িতে গাদাগাদি করে চাপিয়ে ভোর রাতে নিয়ে যাওয়া হত জমিতে, ইটভাটায় কর্মস্থলে। আবার সন্ধ্যার পর সেভাবেই ফিরিয়ে আনা হত খামারবাড়িতে। খাবার বলতে কর্মস্থলেই দুবেলা সামান্য যা জুটত, সেটাই। মাঝে মধ্যে দেওয়া হত দেশি মদের পাউচ।
এতদিন ধরে এরকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও শ্রমিকদের কেউ মুখ খুলতে পারেননি। কারণ হিসেবে তদন্তকারীর বলছেন, কেউ পালানোর চেষ্টা করলে বা কাজে আপত্তি বা অন্য কোনও অপরাধকরলে সবার সামনেই জুটত বেধড়ক মারধর। ঘোড়ার চাবুক দিয়ে পেটানো হত। বন্ধ করে দেওয়া হত খাবার। মহিলাদের ক্ষেত্রে ছিল অকথ্য যৌন নির্যাতন। চোখের সামনে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা দেখে আর প্রতিবাদ করার সাহস পেত না কেউ। শ্রমিকদের বাধ্যরাখতে এটা ছিল অভিযুক্তদের কৌশল।
ওই খামারবাড়ি পরিদর্শন করেছেন ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশনের সদস্য এম প্রতিমা। তিনি বলেন, ‘‘রাতে একটি ঘরে ওঁদের আটকে রাখা হত। আগে টয়লেটও ছিল না। কয়েক জন এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় শেষমেষ ওই ঘরেরই এক কোণে একটি পাইপ বসিয়ে দেওয়া হয়। সেটাকেই বাথরুম হিসেবে ব্যবহার করতে হত। মহিলারা গেলে কোনও পুরুষ শ্রমিক গামছা-তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে আড়াল করে রাখতেন। এমনই অমানবিক দাসপ্রথার শিকার হয়েছেন ওই আদিবাসীরা।’’
সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮।

Thursday, December 13, 2018

নরেন হাঁসদার জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শুভ জন্মদিনে মহান ঝাড়খণ্ডী নেতা প্রয়াত নরেন হাঁস দাকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই। নরেন হাঁসদা ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দুই বারের বিধায়ক। 

Tuesday, December 11, 2018

ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে পুলিশের উদ্যোগে পাঁচ আদিবাসী পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ।


ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে পুলিশের উদ্যোগে পাঁচ আদিবাসী পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেবার জন্য গ্রামে পৃথক ট্রান্সফর্মার বসাল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা।

প্রায় পাঁচ-সাত বছর আগে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের কেন্দুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনারিমারা গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছিল। গ্রামের অন্য ঘরে আলো জ্বললেও এতদিন আঁধারেই ছিল গ্রামের পাঁচ আদিবাসী পরিবারগুলি। গ্রামের একপ্রান্তে ওই পাঁচ আদিবাসী পরিবারের বাস।
কিন্তু এ বার ওই পাঁচ আদিবাসী পরিবারের ঘরে আঁধার ঘুচল। স্থানীয় থানার সুপারিশে বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর ওই প্রান্তিক পাঁচ আদিবাসী পরিবারের জন্য পৃথক একটি ট্রান্সফর্মার বসাল।
জঙ্গলমহলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে পুলিশ-প্রশাসনকে একযোগে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওড়িশার সীমানা ঘেঁষা জঙ্গল ঘেরা সোনারিমারা গ্রামের এই নয়া ট্রান্সফর্মার সেই সক্রিয়তার ফল। স্থানীয় পুলিশ সূত্রের অবশ্য দাবি, বিষয়টি নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অনেক আগে। চলতি বছরের জুলাইয়ে এলাকা পরিদর্শনের সময় গোপীবল্লভপুর থানার আইসি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আসে সোনরিমারা গ্রামের পাঁচটি আদিবাসী পরিবারে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ওই বাসিন্দারা জানান, অনেক চেষ্টা করেও তাঁরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি। কারণ, গ্রামের একপ্রান্তে থাকা ওই পাঁচটি পরিবারের বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে গেলে পৃথক একটি ট্রান্সফর্মার বসাতে হতো। সেই জটিলতায় ওই পরিবার গুলিকে আঁধারে থাকতে হচ্ছে। অবশেষে আঁধার মু্ক্তি। গত রবিবার ০৯/১২/২০১৮ আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্রান্সফর্মারটি চালু করেন গোপীবল্লভপুর থানার আইসি এবং বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার গোপীবল্লভপুরের স্টেশন ম্যানেজার অজয়কুমার। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঝাড়গ্রামের ডিভিশনাল ম্যানেজার উজ্জ্বল রায় বলেন, “ওই বাসিন্দারা আবেদনপত্র ও কোটেশন জমা দেওয়ার সাতদিনের মধ্যে ট্রান্সফর্মার বসিয়ে তাঁদের বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে।” একজন বাসিন্দার সংযোগ নেওয়ার জন্য খরচ দেওয়ার সামর্থ ছিল না। ওই টাকা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
সোনারিমারা গ্রামে ৪৫ টি পরিবারের বাস। আদিবাসী অধ্যুষিত ওই গ্রামে বেশ কয়েক বছর আগে বিদ্যুতের সংযোগ এলেও সুনীল সরেন, কুনারাম সরেন, মুচিরাম সরেন, কুমারচন্দ্র সরেনদের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। ওই পরিবারগুলি প্রান্তিক চাষি। এ ছাড়া জঙ্গলের শালপাতা ও কেন্দুপাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, গোপীবল্লভপুর থানার পক্ষ থেকে স্থানীয় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু মাঝপথে বিদ্যুৎ বিভাগের স্থানীয় আধিকারিক বদলি হয়ে যান। ফের গত অক্টোবরে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ৫টি পরিবারের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলো পেয়ে খুশি সুনীলবাবু, কুনারামরা। তাঁরা বলছেন, “সাত বছর চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। অবশেষে পুলিশ সাহেবকে জানানোর পরে বিদ্যুৎ পেলাম।”
সুত্র – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮।

সাঁওতালি বইমেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে।


মিশন ২০২৫: একশো বছরে অলচিকি, একশো শতাংশ অলচিকি এই স্লোগানকে সামনে রেখে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে শুরু হল সাঁওতালি বইমেলা। গত সোমবার ১০/১২/২০১৮ দুপুরে ধামসা-মাদলের বোলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সাঁওতালি বইমেলার সূচনা হয়। সন্ধ্যায় গোয়ালতোড় হাইস্কুল মাঠে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাঁকুড়া জেলার রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাঁওতালি শিক্ষক গোরাচাঁদ মুর্মু। ছিলেন অন্য অতিথিরাও।
গোয়ালতোড় সিদো-কানহো হুল গাঁওতার পরিচালনায় এই সাঁওতালি বইমেলা এ বার তৃতীয় বর্ষে পড়ল। বইমেলা কমিটির সভাপতি চুনকা মুর্মু বলেন, ‘‘মেলা চলবে পাঁচদিন ধরে। সাঁওতালি সাহিত্য প্রকাশনা ও পত্রপত্রিকার ৪৮টি স্টল থাকছে মেলায়। আদিবাসী সংস্কৃতির নানান সরঞ্জামেরও স্টল রয়েছে। মূল মঞ্চে প্রতিদিন সাঁওতালি সাহিত্যভাবনা নিয়ে আলোচনা, বই-পত্রপত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠান রয়েছে।’’ এ দিন দুপুরে মিশন ২০২৫: একশো বছরে অলচিকি, একশো শতাংশ অলচিকিস্লোগান লেখা ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রা বেরোয়। ধামসা, মাদল বাজিয়ে তাতে পা মেলান গোয়ালতোড়ের আদিবাসী পুরুষ-মহিলা, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। গোয়ালতোড় হাইস্কুল মাঠে চলছে মেলা। এ দিন উদ্বোধনী মঞ্চে প্রকাশিত হয়েছে বইমেলা কমিটির একটি স্মরণিকা।
গোয়ালতোড় সাঁওতালি বইমেলায় এ বারের বইমেলার থিম অলচিকি হরফের একশো বছরে একশো শতাংশ অলচিকি হরফ প্রয়োগ। উদ্যোক্তারা জানালেন, একশো বছর আগে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু অলচিকি হরফের প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু এখনও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বহু মানুষ অলচিকি হরফ জানেন না। অনেকে পড়তেও পারেন না। তাই ২০২৫ সালের মধ্যে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একশো শতাংশ মানুষ যাতে অলচিকি লিপি জেনে লেখাপড়া করতে পারে তার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সাঁওতালি বইমেলাতেও সেই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে। সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যিক খেরওয়াল সরেন, যদুমণি বেসরা গোয়ালতোড়ে সাঁওতালি বইমেলায় এসে বলেন, ‘‘সাঁওতালি সাহিত্য এখন অনেক সমৃদ্ধ। সাঁওতালিতে এখন অনেক বই, পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও সাহিত্যচর্চা বাড়ছে।’’
বইমেলায় পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতালি সাহিত্য প্রকাশনা সংস্থার স্টল রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক স্টল। পুরুলিয়ার সুটু বুক স্টল, বাঁকুড়ার এসটি পাবলিকেশন সাঁওতালি বই, পুস্তিকার সম্ভার নিয়ে এসেছেন গোয়ালতোড়ে। যদু হেমব্রম, মঙ্গল হাঁসদা-সহ কয়েকজন স্টল মালিক বলেন, ‘‘গতবারও এসেছিলাম। বই বিক্রি ভালই হয়েছিল। এ বার মনে হচ্ছে বিক্রি বাড়বে।’’
সুত্র – আনন্দবাজার পত্রিকা, ১১/১২/২০১৮।

Saturday, December 8, 2018

জঙ্গলমহলে প্রাইমারি পড়ুয়াদের ভালো করে ইংরাজি শেখাতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা দপ্তর।

গত শনিবার ০৮/১২/২০১৮ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামে বলেন, ‘এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ ও আদিবাসী ভাইবোনেরা যাতে ইংরেজি শিখতে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ইংরেজি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যাতে তারা অন্যদের সঙ্গে সমান ভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে৷
প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট ১২৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে৷ ইতিমধ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করেছে৷ তাতে দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছিল৷ স্কুল শিক্ষকদের ইংরেজিতে দক্ষতা এবং ছাত্রদের ইংরেজি বিষয়ের প্রতি আগ্রহ। সেই সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক মডিউল তৈরি করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল৷ সেই মডিউলের মাধ্যমে ইংরেজি পাঠদানের সিদ্ধান্ত হয়৷
এতে আরও ভালো করে প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি শিখতে এবং বলতে পারবে বলে শিক্ষা দপ্তরের অভিমত৷ প্রতিটি স্কুল থেকে এজন্য একজন করে শিক্ষকের নাম স্থির করা হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে থেকে ২৫ জন শিক্ষক নিয়ে একটি করে ব্যাচ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাচকে প্রশিক্ষণ দেবে ব্রিটিশ কাউন্সিল৷ জেলায় চারটি স্কুলে ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, ‘আমাদের জেলায় এটা পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে নতুনত্ব ও পড়ুয়াদের উৎসাহী করার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রশিক্ষণ দেবে৷ শিগগির প্রশিক্ষণ শুরু হবে৷শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রসংখ্যা যেখানে যেমন আছে, তার ভিত্তিতে শিক্ষকদের মনোনীত করতে হবে বলেছি৷ আমরাও চেষ্টা করছি সেই সংখ্যায় শিক্ষক দিতে৷
সৌজন্য – এই সময়, ০৯/১২/২০১৮। 

জঙ্গলমহলের মানুষের পাশে সরকার রয়েছে, ঝাড়গ্রামে বার্তা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।

ব্যক্তির উপর রাগ থাকতে পারে। কিন্তু, সরকারের উপর রাগ করবেন না। সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে। গত শনিবার ০৮/১২/২০১৮ ঝাড়গ্রাম শহরে কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনের মাঠে জেলা প্রাথমিক বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের যে গতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনেছেন, যদি কোথাও মনে হয়, অসুবিধা হচ্ছে তাহলে আমাদের জানাবেন। আমরা আপনাদের পাশে থাকব। কেউ অভিমান করবেন না। জঙ্গলমহলকে নতুন করে যারা অশান্ত করার চেষ্টা করছে, সমবেতভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিহত করুন।
শিক্ষামন্ত্রী এদিন জানান, এই অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ ও আদিবাসী ভাইবোনদের জন্য ব্রিট্রিশ কাউন্সিলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ইংরেজি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁরা যাতে সর্বভারতীয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সমানভাবে অংশ নিতে পারেন এজন্য এই উদ্যোগ। প্রাথমিক শিক্ষায় পড়ুয়াদের জন্য সরকার অনেক কিছু করছে। জুতো, পোষাক, বইখাতা, ব্যাগ সব দেওয়া হয়েছে। বড়দেরও সাইকেল ও বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। যেখানে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, তা মিটে যাবে বলে আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা নিয়ে দুটো মিটিং করেছি। আমি বলেছি, ছাত্রছাত্রী অনুপাতে শিক্ষকদের মনোনীত করতে হবে। পড়ুয়াদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নিয়মিত ক্লাস করো। শিক্ষক-শিক্ষিকরা আছেন অথচ তোমরা স্কুলে যাচ্ছ না, এটা দেখলে তোমাদের অভিভাবকরাও লজ্জায় পড়ে যাবেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি স্কুলে পানীয় জল ও শৌচাগার তৈরি নিশ্চিত করতে হবে। সব দিক থেকে শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পড়ুয়ার যেদিকে প্রতিভা রয়েছে তাকে সেদিকে নিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনা ও জ্ঞানের কোনও বিকল্প নেই। সবার মধ্যে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো দিতে হবে। তাহলে সে তার নিজেরটা বুঝে নিতে পারবে।
এদিন ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। রবিবার পর্যন্ত এই খেলা চলবে। জেলার ১৮টি চক্রের ১২৯১টি প্রাথমিক স্কুল ও ৬২০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের সাড়ে চারশো প্রতিযোগী ২৮টি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে। এদিন এক পড়ুয়া মশাল হাতে নিয়ে মাঠ পরিক্রমা করার পর শিক্ষামন্ত্রীর হাতে সেটি তুলে দেয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি কোনও বাচ্চাকে হাতে মশাল নিয়ে এতটা দৌড়াতে দেখিনি। ওই বাচ্চাকে সাহায্য করা হোক। যেন কোনও রকম কার্পণ্য করা না হয়। আমি এই প্রথম জেলাস্তরীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগদান করলাম। উৎসাহের সঙ্গে বার্ষিক ক্রীড়া প্রমাণ করছে জঙ্গলমহল শান্ত।
এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক আয়েষা রানি এ, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সচিব শুভাশিস মিত্র, ঝাড়গ্রাম সংসদ সদস্য উমা সরেন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস সহ জেলার বিধায়ক ও শিক্ষিক-শিক্ষিকারা। কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনের বিল্ডিং নির্মাণ করার আশ্বাস দেন তিনি।
সৌজন্য – বর্তমান পত্রিকা, ০৯/১২/২০১৮। 

Tuesday, December 4, 2018

নদিয়া জেলায় পুলিশ লক-আপে আদিবাসীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ।

নদিয়া জেলায় পুলিশ লক-আপে আদিবাসীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে চাকদহ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের চিঠি দিয়েছে নদিয়া জেলা আদিবাসী সংগঠন। তার পরই তদন্ত শুরু করেন কল্যাণীর এসডিপিও। গত বুধবার ২৮/১১/২০১৮ আদিবাসীদের ডেকে পাঠান কল্যাণীর এসডিপিও। তাদের বক্তব্য নথিভুক্ত করার পাশাপাশি চিকিৎসার নথিপত্র নেওয়া হয়েছে বলে জানান আদিবাসী সংগঠনের নেতারা। তবে, লক-আপে অত্যাচারের কথা অস্বীকার করেছেন পুলিশকর্তারা।
নদিয়া জেলা আদিবাসী সমাজ বিকাশ ও কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, গত সেপ্টেম্বর মাসে ভূমিজ সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের উপর অত্যাচার চালায় পুলিশ। থানার লক-আপে মেরে এক আদিবাসীর হাত ভেঙে দেওয়া হয়। থানার আইসি জ্যোতির্ময় বোস বিষয়টি আদালতে না-জানানোর জন্য হুমকি দেন। আদিবাসী মহিলাদেরও হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানিয়েছে সংগঠন। পুলিশ সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে চাকদহ থানায় নিরীহ গ্রামবাসীদের তিন দিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। আদালতে পেশ করা হয়নি তাদের। তার রেশ কাটতে না-কাটতেই ফের অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয় এসডিপিওকে। চাকদহ থানার আইসি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘একটা গন্ডগোল হয়েছিল। তাতে ধরপাকড়ের সময় পুলিশকে হেনস্থা করা হয়েছিল। লক-আপে মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি।এসডিপিও কল্যাণী সুব্রত কংসবণিক জানান, ‘পুলিশ লক-আপে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।স্থানীয় সাংসদ তাপস মণ্ডল বলেন, ‘ঘটনা সত্যি হলে তা নিন্দনীয়। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
সৌজন্য - এই সময়, ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৮।