Thursday, June 20, 2019

জেলাশাসকের উদ্যোগে বার্ধক্য ভাতা পেলেন আদিবাসী বৃদ্ধা সুমিতা মুর্মু।


পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের উদ্যোগে চার দিনেই আদিবাসী বার্ধক্য ভাতার কাগজ নিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ের জিলিংটাঁড় গ্রামে আদিবাসী বৃদ্ধা সুমিতা মুর্মুর বাড়িতে দিয়ে এলেন বাঘমুণ্ডির বিডিও উৎপল দাস মুহুরী।

পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের জিলিংটাঁড় গ্রামে আদিবাসী বৃদ্ধা সুমিতা মুর্মুর দিনগুলি হঠাৎ ঘটনাবহুল হয়ে উঠেছে। গত শনিবার ১৫/০৬/২০১৯ হঠাৎ গাড়ি নিয়ে এক দল লোক এসেছিলেন তাঁর বাড়িতে। শুনেছিলেন, তাঁরা সব প্রশাসনের বড় বড় কর্তা। গত বুধবার ১৯/০৬/২০১৯ বাড়িতে হাজির বাঘমুণ্ডির বিডিও উৎপল দাস মুহুরী একটা কাগজ নিয়ে। এ বার থেকে নাকি মাসোহারা টাকা পাবেন সুমিতা মুর্মু
যে সমস্ত সুযোগসুবিধা মানুষের হকের পাওনা, লাল ফিতের ফাঁস ছাড়িয়ে দোরগোড়ায় সে সব পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। প্রতিটি ব্লকের দায়িত্ব দিয়েছেন জেলার এক এক জন আধিকারিককে। এ বার থেকে তাঁরা নিয়মিত ব্লকে যাবেন। প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রকল্প ধরে ধরে বিভিন্ন কাজের তদারক করবেন। শুক্রবার তিনি নিজে গিয়েছিলেন বাঘমুণ্ডিতে। বৈঠক করে রাতে থেকেছেন ব্লক অফিসে। সকালে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখেছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগে কতটা সুবিধা হচ্ছে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকায়।
গত শনিবার ১৫/০৬/২০১৯ জিলিংটাঁড় গ্রামে সুমিতা মুর্মুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল জেলাশাসকের। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাইরে ছায়ায় খাটিয়া পেতে বসেছিলেন বৃদ্ধা। শরীরে অপুষ্টির ছাপ। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। হাঁটতে হলে লাঠির জোর লাগে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শন সেরে বেরিয়ে বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘বার্ধক্য ভাতা পান?’’ দেখা যায়, বার্ধক্য ভাতা কী, সেই ব্যাপারেই বিশেষ ওয়াকিবহাল নন তিনি। পড়শিরা জানান, বৃদ্ধার এক ছেলে রয়েছে। আর প্রতিবন্ধী এক মেয়ে। হতদরিদ্র পরিবার। কোনও ভাতার জন্য আবেদনই করেননি। কী খেয়েছেন সকাল থেকে? জানতে চাওয়ায় বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ভাতের মাড়। আর কি খাব?’’ জানা যায়, সেটাই মোটের উপর নিত্যদিনের জলখাবার তাঁর।
সেই ঘটনার চার দিন পরে, গত বুধবার ১৯/০৬/২০১৯ জিলিংটাঁড় গ্রামে গিয়েছিলেন বিডিও (বাঘমুণ্ডি) উৎপল দাস মুহুরী। আদিবাসী ভাতার অনুমোদনপত্র তুলে দেন তাঁর হাতে। বৃদ্ধা অবশ্য এ দিনও নির্বিকার ছিলেন। বিডিও বুঝিয়ে বলেন, এ বার ব্যাঙ্কে তাঁর নামে খাতা খোলা হবে। তাতে মাসে মাসে টাকা আসবে। বলেন, ‘‘এই কাগজটা ভাল করে রাখবেন।’’ সে কথা পড়শিরা আরও খোলসা করে বোঝান বৃদ্ধাকে। এত ক্ষণে হাসি ফোটে মুখে।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘সে দিন পাহাড়ে গিয়ে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি কোনও ভাতা পেতেন না। স্পেশ্যাল কেস হিসেবে তাঁর আবেদন রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল।’’ তিনি জানান, অনুমোদন মিলেছে। এ বার থেকে প্রতি মাসে হাজার টাকা করে তফসিলি উপজাতি ভাতা পাবেন বৃদ্ধা। সুমিতা মুর্মুর মতো জেলার অনেক বৃদ্ধাই এখন প্রশাসনের এ হেন সক্রিয়তায় আশার আলো দেখছেন।
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রশান্ত পাল, ২০ জুন, ২০১৯

Wednesday, June 5, 2019

আদিবাসীদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সরব নন্দকুমার সাই ও রাহুল গাঁধী।

অরণ্যভুমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সরব হলেন জাতীয় জনজাতি কমিশনের (এনসিএসটি) চেয়ারম্যান নন্দকুমার সাই ও জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী।

অরণ্য থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অথচ কেউই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সরব হলেন জাতীয় জনজাতি কমিশনের (এনসিএসটি) চেয়ারম্যান নন্দকুমার সাই। পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রাহুলের টুইট, ‘‘পরিবেশের ব্যাপক অবক্ষয় লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর জীবন ধ্বংস করছে। পরিবেশের যতটা গুরুত্ব পাওয়া উচিত, তা দেওয়া হয় না। কারণ, পরিবেশ কখনও রাজনীতির বিষয় হয় না।’’ পরিবেশের অবক্ষয় নিয়ে ফেসবুকেও লিখেছেন তিনি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ উঠছে, আদিবাসীদের জঙ্গল থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তাঁদের অরণ্যের অধিকার নিয়েও। আজ ওই প্রসঙ্গে নন্দকুমার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। প্রচণ্ড গরমে মানুষ মারা যাচ্ছেন। উন্নয়নের নামে গাছ কাটা হচ্ছে, আদিবাসীদের বনাঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এই মানুষগুলিই বন-জঙ্গলের কাছাকাছি থাকেন। অরণ্যকে পুজো করেন, রক্ষা করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ওই মানুষগুলির অঙ্গীকার সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে রাজি নন।’’
বনাঞ্চলে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কয়েকটি মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নন্দকুমার বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার অধিকার ওঁদের কে দিয়েছে? দশকের পর দশক ধরে আদিবাসীরা অরণ্যে বসবাস করছেন। নিরীহ মানুষগুলি আইনের খুঁটিনাটি জানেন না।’’ লোকসভার নবনির্বাচিত সাংসদদের প্রতি এনসিএসটির চেয়ারম্যানের আবেদন, বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনই যেন তাঁরা (সাংসদেরা) পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ জুন, ২০১৯। 

রাজস্থানে মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করায় দলিত কিশোরের হাত-পা বেঁধে বেদম মার।


গত ১ জুন, ২০১৯ রাজস্থানের পালি জেলার ধানেরিয়া গ্রামে মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করায় এক দলিত কিশোরের হাত-পা বেঁধে নৃশংস ভাবে পেটানোর অভিযোগ উঠল। ১ লা জুন ঘটনা ঘটলেও ব্যাপক হারে তা প্রচারে আসে গত ৩ জুন, ২০১৯ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পর।
কিন্তু নির্যাতনের এখানেই শেষ হয়নি। এক নাবালিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগে ওই কিশোরকেই আটক করে জুভেনাইল হোমে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের যুক্তি, ওই নাবালকের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করেছেন তারই এক কাকা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পকসো (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে তাকে আটক করে হোমে পাঠানো হয়েছে। উল্টে নিগ্রহকারীদের এক জনও ধরা পড়েনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ওই কিশোরের হাত ও পা একসঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাকে ঘিরে এক দল যুবক। অনেকেরই গেরুয়া পোশাক। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাটিতে শুয়ে পড়া ওই কিশোরকে পেটানো শুরু করল দু’-তিন জন। অসহায়ের মতো আর্তনাদ করে চলেছে ওই কিশোর। সঙ্গে রাজস্থানী ভাষায় বারবার কিছু বলার চেষ্টা করছে। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ‘ভুল হয়ে গিয়েছে’, ‘আর কখনও হবে না এই জাতীয় কথা বলছিল ওই কিশোর। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে বেধড়ক পেটাচ্ছে ওই যুবকরা।
কিন্তু পরের পর্ব আরও ভয়ঙ্কর! পুলিশ ওই কিশোরকেই আটক করে নিয়ে যায়। নাবালক হওয়ায় পাঠিয়ে দেয় জুভেনাইল হোমে। অথচ অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম ও টিভি চ্যানেল-সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করার কারণেই ওই নাবালককে পেটায় অভিযুক্ত ওই যুবকরা।
স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের ভুমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। নাবালিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগে কিশোরকে গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ। কিন্তু যারা ওই কিশোরকে এ ভাবে হাত-পা বেঁধে নৃশংস ভাবে পেটাল, এবং সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পরও কেন পুলিশ তাদের গ্রেফতার করল না, তা নিয়ে সরব স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ জুন, ২০১৯।

Tuesday, June 4, 2019

রায়গঞ্জে বিজেপি সমর্থক আদিবাসী কর্মীকে অপহরণের অভিযোগ।

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে বিজেপি সমর্থক আদিবাসী কর্মীকে অপহরণের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে, অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের।  

গত রবিবার ০২/০৬/২০১৯ রাত থেকেই খোঁজ মিলছে না গোপীনাথ ওরফে গুটিন মূর্মূ নামে এক আদিবাসী যুবকের। গুটিনের স্ত্রী ও পরিবারের দাবি, বিজেপিকে সমর্থন করার জন্যই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে তুলে নিয়ে গেছে। বিজেপির এস টি মোর্চার তরফেও এই ঘটনায় শাসক দলের উপরেই দোষ চাপানো হয়েছে। সংগঠনের দাবি, গুটিনকে অপহরণ করা হয়েছে, আর সেটা করেছে এলাকারই তৃণমূলের কিছু গুণ্ডা। যদিও অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
এই ঘটনা ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার বারিদুয়ারি এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গোপীনাথ মূর্মূ নামে ওই যুবক রায়গঞ্জ শহরের কাছে বারিদুয়ারি এলাকায় একটি কারখানায় ড্রাইভারের কাজ করতেন। রবিবার সন্ধে ৭টা নাগাদ ডিউটি শেষ করে বাইরে আসতেই ৬-৭ জন যুবক আচমকাই তাঁর উপর চড়াও হয়। অভিযোগ, তাঁকে বেধড়ক মারধর করে বাইকে উঠিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
গোপীনাথ ওরফে গুটিনের স্ত্রী সনকা মার্ডি জানিয়েছেন, ঘটনার দিনই বিকেলে তাঁদের বাড়িতে ঢুকে হুমকি দেয় দুর্গা হেমব্রম নামে এক স্থানীয় যুবক। তার সঙ্গে আরও জনা সাত যুবক ছিল। সনকার কথায়, “বাড়িতে ঢুকেই ওরা আমার স্বামীর খোঁজ করছিল। কারখানায় আছে শুনে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল আমাদের উচিত শিক্ষা দেবে।এর পর থেকেই গুটিনের আর কোনও খোঁজ মিলছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
যুবকের পরিবারের দাবি, রবিবার অনেক রাতে অজানা নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। সেখানে বলা হয় গুটিনকে অপহরণ করে রাখা হয়েছে। এর পরই ফোন কেটে যায়। গুটিনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরেও বার বার ফোন করা হয়েছে, সেই নম্বরও বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিজেপির এস টি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক বাবলু সোরেন বলেছেন, দুর্গা হেমব্রম নামের ওই যুবক এলাকায় শাসকদলের দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। সে তার দলবল নিয়ে রবিবার ওই কারখানার গেট থেকেই গোপীনাথকে মারধোর করার পরে অপহরণ করে। অপহৃত ওই যুবক এলাকায় একজন সক্রিয় বিজেপি কর্মী। বিজেপি করার অপরাধেই তাকে শাসকদল অপহরন করেছে।” তিনি আরও বলেন, পুলিশকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ওই যুবককে উদ্ধার করা না গেলে এলাকার সমস্ত আদিবাসীদের নিয়ে অভিযান চালানো হবে।
ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃনমূল নেতা তথা রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মানষ ঘোষ বলেছেন, আমাদের দলের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই এলাকায় বিজেপিই শক্তিশালী। এই ঘটনা পুরোপুরি ওই যুবকের পারিবারিক বিষয়। বিজেপি এই ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।’’
সংবাদ সৌজন্য – দ্য ওয়াল, জুন ৩, ২০১৯।

Sunday, June 2, 2019

সংবাদমাধ্যম থেকে জেনে আদিবাসী ছাত্রী বাসন্তী কিস্কুর পাশে দাঁড়ালেন দুই প্রবীণ।

আদিবাসী ছাত্রী বাসন্তী কিস্কুর জীবন সংগ্রাম, উচ্চমাধ্যমিকে সাফল্য ও উচ্চ শিক্ষার আগ্রহের খবর সংবাদমাধ্যমে জেনে পাশে থাকার আশ্বাস কলকাতার দুই বাসিন্দা রনধীশ চৌধুরী ও শিশির করের।  

এক সময় ডাইনি অপবাদে মার জুটেছে, সপরিবারে ভিটে ছাড়া হতে হয়েছে, তবু হাল ছাড়েনি বোলপুরের মেধাবী আদিবাসী ছাত্রী বাসন্তী কিস্কু। লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছেটাই তাকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্য এনে দিয়েছে। সামাজিক, আর্থিক সবরকম প্রতিকূলতার মধ্যে এই সাফল্যের মুকুট তাকে পরিচিতিও দিয়েছে।
বোলপুরের বিনুড়িয়া সুমিত্রা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী বাসন্তী কিস্কুর জীবন সংগ্রাম ও উচ্চমাধ্যমিকে সাফল্যের পাশাপাশি তার উচ্চ শিক্ষার আগ্রহের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পরে কলকাতা থেকে বিনোদপুরে বাসন্তীর বাড়িতে গিয়েছিলেন রনধীশ চৌধুরী ও শিশির কর। দুজনেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে। কিন্তু খবরের কাগজে বাসন্তীর কথা পড়ে তাঁরা তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে চান। গত রবিবার ০২/০৬/২০১৯ রনধীশবাবু ও শিশিরবাবুকে নিয়ে বাসন্তীর বাড়িতে যান পেশায় ব্যবসায়ী এলাকায় সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত স্বপন সরকার এবং বাসন্তীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অদিতি মুখোপাধ্যায় মজুমদার। দুই প্রবীণ তাঁদের অবসরভাতা থেকে বাসন্তীর হাতে মিষ্টি আর পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন। বাসন্তী তাঁদের জানায় সাঁওতালি বিষয় নিয়ে পড়তে চায় সে। রনধীরবাবু বলেন, ‘‘এখনও সমাজে কুসংস্কারের বলি হন কতজন। কিন্তু বাসন্তীর মতো মেয়ে এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে সেই কুসংস্কার কাটিয়ে যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে এবং সফল হয়েছে তা এক দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। বাসন্তীর পাশে আমরা আছি। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই ধরনের কুসংস্কারের যোগ্য জবাব দিক ও, এটাই আমরা চাই।’’
আর দুই প্রবীণের এই আত্মিকতায় আপ্লুত বাসন্তী। স্কুলের প্রধানশিক্ষিকাই আলাপ করিয়ে দেন। মিষ্টি আর আর্থিক অনুদান পেয়ে লজ্জা পেয়ে দুই বৃদ্ধকে প্রণাম করে। চোখের কোল ভেজে। খানিক চুপ করে বাসন্তী বলে, ‘‘আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’’
সংবাদ সৌজন্য – আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩ জুন, ২০১৯।

সাঁওতালি মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্রীদের মধ্যে যুগ্ম ভাবে প্রথম অনিমা মুর্মু ও সনকা হেমব্রম।

উচ্চমাধ্যমিকে সাঁওতালি মাধ্যমে রাজ্যের মেধা তালিকায় ছাত্রীদের মধ্যে যুগ্ম ভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে জঙ্গলমহলের অনিমা মুর্মু ও সনকা হেমব্রম।

অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু মনোবলে কখনও চিড় ধরেনি এতটুকু। হাজার প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে বাজিমাত জঙ্গলমহলের দুই দিনমজুর পরিবারের কন্যার। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে সাঁওতালি মাধ্যমে রাজ্যের মেধা তালিকায় ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে অনিমা মুর্মু ও সনকা হেমব্রম। বাঁকুড়ার রাইপুর ব্লকের পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুলের এই দুই ছাত্রীরই প্রাপ্ত নম্বর ৪৪৫। ছাত্রীদের জন্য স্কুলের যেমন গর্বের অন্ত নেই, তেমনই মেয়েদের এই সাফল্যে মুখে হাসি ফুটেছে অভাবের সংসারেও। যদিও ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগানো নিয়ে চিন্তায় দুই পরিবার।
বাঁকুড়ার রাইপুর ব্লকের লোয়াবেড়িয়া গ্রামে বাড়ি অনিমার। বাবা শিবু মুর্মু দিনমজুর। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কোনও রকমে চালান অভাবের সংসার। রানিবাঁধ ব্লকের বনশোল গ্রামের বাসিন্দা সনকা হেমব্রম। তাঁর দিনমজুর বাবা আবার প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারেন না। অভাবী পরিবারের দুই কন্যা রাইপুরের পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুলের ছাত্রী। সেখানে হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করেছে তারা। অনিমা প্রথম ভাষা সাঁওতালিতে পেয়েছে ৯০ নম্বর। এছাড়া দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজিতে ৬৬, ভূগোলে ৮০, দর্শনে ৯৪ এবং সংস্কৃতে ৯৩ নম্বর পেয়েছে সে। অন্য দিকে সনকা হেমব্রম প্রথম ভাষা সাঁওতালিতে পেয়েছে ৮৮ নম্বর। দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজিতে ৫০, ভূগোলে ৮৫, দর্শনে ৯৩ এবং সংস্কৃতে ৮৪ নম্বর পেয়েছে সে। আগামী দিনে সাঁওতালি ভাষাতেই গবেষণা করতে চায় অনিমা। আর সনকার প্রিয় বিষয় ভূগোল। তাই নিয়েই পড়তে চায় সে। স্বপ্ন দেখে আগামী দিনে শিক্ষিকা হওয়ার।
এই দুই ছাত্রীর সাফল্যে গর্বিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুলের পথ চলা শুরু ২০১০ সালে। স্কুলটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয় ২০১২ সালে। আবাসিক এই স্কুলে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা ৭৯৫। যার মধ্যে ৯৮ শতাংশই তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ১৩ জন। সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক এক জন। স্কুলের পরিকাঠামোও বেশ নজরকাড়া। প্রধান শিক্ষক কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যেকেই আবাসিক। স্কুলের বাইরে কাউকে আলাদা করে টিউশন নিতে হয় না। শিক্ষক-শিক্ষিকারাই ক্লাসের বাইরেও আলাদা করে কোচিং দেন ছেলেমেয়েদের।' প্রতি বছরই নজরকাড়া রেজাল্ট করে পড়ুয়ারা। স্কুলে এ বারও বাংলা ও সাঁওতালি মাধ্যম মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ৯৭ জন। তারা প্রত্যেকেই পাশ করেছে। সেই সঙ্গে সাঁওতালি মাধ্যমে রাজ্যের মেধা তালিকায় ছাত্রীদের মধ্যে যুগ্ম ভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে অনিমা ও সনকা। দু'জনেরই চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন। একটা সাফল্যের পর নতুন লক্ষ্যে এগোনো। তাও আবার দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
সংবাদ সৌজন্য – এইসময়, দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ০১/০৬/২০১৯। ছবি সৌজন্য – সারি কাথা।