পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় রাতে টিউশন থেকে ফেরার পথে মাধ্যমিক পড়ুয়াকে গণধর্ষণের
অভিযোগ, গ্রেফতার দুই। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছে ভারত
দিশম মাঝি মাডোয়া।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ এর রাতে।
গ্রাম লাগোয়া প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় কোনও আলো নেই। সন্ধের পরেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।
রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ টিউশন থেকে ফেরার সময় সেই আঁধার
পথেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই গ্রামের
দুই যুবক। দু’জনেই বিবাহিত এবং মেয়ের বাবা।
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে গত বৃহস্পতিবার ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাতে বছর সাতাশের কাঞ্চন
মুর্মু ও গুরুচরণ হেমব্রমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে নির্যাতিতা ওই কিশোরী। তার
মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত দুই অভিযুক্তের কেউ ধরা পড়েনি।
অন্ধকার ওই মোরাম রাস্তা নিয়ে ডেবরার এই গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের।
বিপদ এড়াতে কিশোরী-যুবতীরা ওই পথে দল বেঁধে পড়তে যায়। বুধবার রাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী
ওই ছাত্রীও টিউশন শেষে দুই বন্ধুর সঙ্গে ফিরছিল। তবে বাড়ির কাছের ৫০ মিটার রাস্তা
একাই ফিরছিল মেয়েটি। সেখানেও কোনও পথবাতি নেই। কিশোরীর অভিযোগ, সাইকেলে যাওয়ার সময়
তার পথ আটকায় কাঞ্চন ও গুরুচরণ। তারপর মুখ চেপে ছুরি দেখিয়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সামনে নিয়ে যায়। সেখানেই ওই দুই যুবক তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
এ দিকে, রাত হয়ে গেলেও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় খোঁজ শুরু করে ছাত্রীর পরিবার। কিশোরীর
বাবা বাইক নিয়ে বেরোন। বাইকের আলোতেই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মেয়েকে পড়ে
থাকতে দেখেন তিনি। ওই ছাত্রীর মা বলেন, “মাধ্যমিকের কটা দিন বাকি। মেয়ে পুরোপুরি ভেঙে
পড়েছে। ওই দুই যুবকের কঠোর শাস্তি চাই আমরা।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, গুরুচরণ এবং কাঞ্চন দু’জনেই আগে ভিন রাজ্যে সোনার কাজ করত। তবে বছর দুয়েক হল গ্রামে
ফিরে চাষবাস করছে। গুরুচরণের দুই শিশুকন্যা আর কাঞ্চনের বছর দুয়েকের এক মেয়ে রয়েছে।
গ্রামে এমন কাণ্ড ঘটে যাওয়ায় সকলেই হতবাক। আর মহিলারা আতঙ্কিত। স্থানীয় বাসিন্দা সানোয়ারা
বিবি বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে পথবাতি বসায়নি। সন্ধের পরে ওই রাস্তা অন্ধকারে ডুবে থাকে।
চলতে ভয় করে।”ওই ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরও
বক্তব্য, “ওই পথে বহু পড়ুয়া যাতায়াত করে। আলো লাগানো সত্যি জরুরি।”
সমস্যা মানছেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত প্রধান মহম্মদ জুলফিকর। তিনি
বলেন, “গ্রামে বিদ্যুৎ থাকলেও পথবাতি এখনও বসাতে পারিনি। তবে রাস্তা পিচের হচ্ছে। পরে
পথবাতিও বসানো হবে।”
শুক্রবার গভীর রাতে পালানোর সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল গণধর্ষণে অভিযুক্ত দুই
যুবক। শুক্রবার গভীর রাতে ডেবরার গোলগ্রাম থেকে ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করে ডেবরা থানার
পুলিশ। ধৃত বছর সাতাশের গুরুচরণ হেমব্রম ও কাঞ্চন মুর্মুর বাড়ি ডেবরাতেই। তাদের বিরুদ্ধে
‘প্রোটেকশন অফ চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেস’ বা পকসো আইনে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক
ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে।
শনিবার ধৃতদের মেদিনীপুরে জেলা পকসো আদালতে হাজির করানো হয়। যদিও এ দিন বিচারক
না থাকায় তাদের ফের সোমবার আদালতে তোলা হবে। তার আগে পর্যন্ত ধৃতদের জেল হেফাজতে রাখা
হবে। বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই কিশোরী। এখনও থমথমে গ্রামের
পরিস্থিতি।
ঘটনার পর থেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় ওই দুই যুবক। গোলগ্রাম থেকে ওই দুই যুবককে
গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই যুবকেরা কোনওভাবে বালিচক গিয়ে ট্রেন ধরার পরিকল্পনা করছিল বলে
পুলিশের দাবি। অবশ্য ওই দুই যুবক ধরা পড়লেও তাদের মোবাইল পাওয়া যায়নি।
ওই নির্যাতিতা কিশোরীর বাবা বলেন, “অভিযুক্তদের দু’জন গ্রেফতার হওয়ায় খুশি। তবে আমরা চাই ওই দু’জনের কঠোর শাস্তি। মেয়ের যে সর্বনাশ ওরা করেছে তার ক্ষমা নেই।
মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে বলছে। তাই আপাতত মেয়েকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া এখন
মূল লক্ষ্য।”
সমস্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে আদিবাসী সামাজিক সংগঠন “ভারত দিশম মাঝি মাডোয়া”।
সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রদীপ হাঁসদা ও দিশম গোডেৎ সলিল মান্ডি মহাশয়
ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের কাছে।
সৌজন্য
– আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ ও ৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯।
No comments:
Post a Comment