রাজনীতির ময়দান সামলে খেলার মাঠেও সোনা জয় প্রাক্তন বিধায়ক ও ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন
গোষ্ঠী)-র সভানেত্রী চুনীবালা হাঁসদার।
এক সময়ে বিনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ডাকাবুকো বিধায়ক ছিলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন
গোষ্ঠী)-র সভানেত্রী চুনিবালা হাঁসদা। বিনপুর বিধানসভা থেকে জিতেছেন দু’ বার, ২০০০
আর ২০০৬ সালে। সেই চুনীবালা হাঁসদা এখন সোনাজয়ী অ্যাথলিট।
পঞ্চান্ন ছোঁয়া চুনীবালা সর্বভারতীয় ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) গোষ্ঠীর সভানেত্রী।
দলের কাজে ছুটে বেড়াতে হয় বাংলা, ঝাড়খণ্ড, বিহারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তার মধ্যেই
নিয়ম করে প্রতিদিন দৌড়ন, লাফান, জ্যাভলিন ছোড়েন। ছোটবেলায় অ্যাথলিট হওয়ার ইচ্ছে ছিল।
সেই ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে প্রবীণদের টুর্নামেন্টে।
এক বছর আগেই বাংলাদেশে এশীয় স্তরের পদক জিতে এসেছেন। দিল্লিতে জাতীয় স্তরে তিনটি
সোনা জিতেছেন হাইজাম্প, লং জাম্প এবং জ্যাভলিন থ্রো-তে। কয়েক দিন আগে ইছাপুরে রাজ্য
মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সে অনূর্ধ্ব ৫৫ বিভাগে নেমে তিনটি সোনা (শটপাট, লং জাম্প ও ট্রিপল
জাম্প) জিতে ফের চমকে দিয়েছেন। জেতার পর সাঁওতালি
ভাষায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে মাতিয়ে দিয়েছেন প্রতিযোগিতা।
বিনপুর থেকে ফোনে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদক রতন চক্রবর্তীকে বললেন, ‘‘আমার
ঘরে এত পদক আছে যে, গুনে শেষ করতে পারবেন না। কিন্তু ইটালিতে মাস্টার্স অলিম্পিক্সে
অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হওয়াটা এখনও যন্ত্রণা দেয়। একটা আন্তর্জাতিক পদক পাওয়াই এখন
লক্ষ্য আমার।”
চুনীবালা হাঁসদার কথাগুলো শুনে মনে হয়, কোনও মিলখা সিংহ, পি টি ঊষা, জয়দীপ কর্মকার
বা দীপা কর্মকার কথা বলছেন। অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য চতুর্থ হয়েছিলেন ওই চার জনই। আর
ইটালিতে মাস্টার্স অলিম্পিক্সের পোলভল্ট ইভেন্টে ২৭টি দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে পাল্লা
দিয়ে অল্পের জন্য ব্রোঞ্জ জিততে পারেননি চুনীবালাও।
সপ্তাহে দু’দিন নিয়ম করে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে যান
অনুশীলনে। ‘‘প্রতিদিন সকালে অন্তত দশ কিলোমিটার দৌড়ই। রাস্তার পাশে, বনের ভিতর দিয়ে।
দু’দিন স্টেডিয়ামে যেতে হয় জ্যাভলিন থ্রো
আর হাই জাম্প, লং জাম্প অনুশীলন করতে। ওগুলো তো রাস্তায় করা যায় না” — চুনীবালার গলায় অদ্ভুত তৃপ্তি। গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘‘জানেন,
হাইজাম্পে রেকর্ড আছে আমার। পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চি লাফিয়েছিলাম।”
স্বামী জনপ্রিয় ঝাড়খণ্ডী নেতা নরেন হাঁসদার নামেই তাঁর দল। নরেন হাঁসদাই প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)। নব্বই এর দশকে জঙ্গল মহলের তিন জেলা মেদিনীপুর, পুরুলিয়া,
বাঁকুড়া জেলায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)। জঙ্গল মহলে তৎকালীন
রাজ্যের শাসক দল সিপিএমের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)। নরেন হাঁসদা
নিজেও দুই বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬
সালে।
চুনিবাল দেবীও স্বামীর বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই জিতেছেন দু’বার। ২০১১-তে হেরে যান সিপিএমের কাছে। বিধায়ক থাকার সময়েই গিয়েছিলেন
ইটালিতে। ২০০৭-এ। সে বার পদক আসেনি। এখন আবার পদকের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ‘‘তখন
যে বিভাগে নেমেছিলাম, এখন নামতে হবে অন্য বিভাগে। কিন্তু যে ভাবে অনুশীলন করছি, আশা
রাখছি পদক পাব।”
বিধায়ক হওয়ার পরেও লক্ষ্মীরতন শুক্ল ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছেন। বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসও
খেলেছেন মহমেডানে। ভাইচুং ভুটিয়া, রহিম নবিরা ভোটে দাঁড়ানোর পরেও মাঠে নেমেছেন। কিন্তু
পঞ্চাশ পেরিয়ে বাংলার কোনও বিধায়ক আন্তর্জাতিক স্তরে তো বটেই, জাতীয় স্তরেও খেলেননি।
চুনীবালা সে দিক থেকে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
ফের বিধায়ক পদ, না আন্তর্জাতিক পদক — কোনটা অগ্রাধিকার এখন? চুনীবালা চমকে দিয়ে জবাব দেন, ‘‘বিধায়ক তো করবে জনগণ। ওখানে
আমার কোনও হাত নেই। কিন্তু পদক জয় নির্ভর করবে আমার চেষ্টা ও পরিশ্রমের উপর।”
সৌজন্য
– আনন্দবাজার পত্রিকা, রতন চক্রবর্তী, ৬ জানুয়ারি, ২০১৯।
No comments:
Post a Comment